মহান মুক্তিযোদ্ধা জাফ্রিকবাল ষাঁড়ের “লেফট রাইট” ট্রেনিং ও কিছু কথা .....
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ বিন সিরাজ ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০১:২১:১৯ রাত
আজ বাসার পুরাতন পত্রিকা গুলো দেখতে গিয়ে হঠাৎ নজরে পড়ল ড. জাফর ইকবালের 'ইতিহাসের ইতিহাস' নামে একটি প্রবন্ধের দিকে । যা প্রকাশিত হয়েছিল ২৬.৯.১৪ তারিখে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় । লেখাটি যদিও অনেক পুরাতন তবুও কিছু না লিখে পারছি না এই কারণে যে, উক্ত প্রবন্ধে তিনি এমন কিছু কথা লিখেছেন যা পড়লে একজন দেশপ্রেমিক নাগরিকের কাছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে একটি ফালতু ও কৌতুক হিসেবেই মনে হবে । লেখাটি মূলত এ কে খন্দকারের '১৯৭১: ভেতরে বাইরে' বই নিয়ে লেখা । প্রসঙ্গক্রমে তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন নিজের কিছু স্মৃতির বর্ণনা করেছেন এবং নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রকাশের ব্যর্থ অপচেষ্টা চালিয়েছেন । লেখাটি পড়লে স্পস্টতই বোঝা যায় তার জ্ঞান কত সংকীর্ণ । নাম্বার ওয়ান চাটুকার । একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তার চিন্তার আরো পরিপক্কতা থাকা দরকার তা বলার অপেক্ষা রাখে না । এমন ফালতু লেখা তিনি আগেও লিখেছেন । এমন ছাগল প্রকৃতির কিছু লোকের কারণেই আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ আজ অপমানিত । এই ছাগলদের লেখা পড়লে মনে হয় আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ঝুম বৃষ্টিতে অবুঝ দুই বালকের মধ্যে পাটশোলা দিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা । মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে এক সময় অনেক আবেগ অনুভব করতাম । মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কোন বই পেলেই এক নিঃশ্বাসে তা পড়ে ফেলতাম । এর উপর অনেক বই পড়েছি । কিন্তু এই ছাগলদের অতিমাত্রায় তিরিংবিরিং , অতি কথন আর অতিরঞ্জিত চাটুকারিতার জন্য আমার মত হাজারো তরুণ মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আবেগ হারিয়ে ফেলছে । এদের জন্যই আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে । প্রতিটি ধর্মের ধর্মীয় অনুভূতি আহত হচ্ছে । এদের জন্যেই আমাদের দেশে শান্তি শৃংখলা , স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির মুখে ।
তিনি তার উক্ত প্রবন্ধে লিখেছেন, তিনি নাকি মনে প্রাণে মুক্তিযুদ্ধে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সে সময় তাকে তার পরিবারকে নিয়ে দেশের অনাচে কানাচে পশুর মত ছুটে বেড়াতে হয়েছে । তিনি অন্তত এ সময় যা করতে পেরেছিলেন তা হল পিরোজপুরের খেলার মাঠে দুই-একদিন “লেফট রাইট” করেছেন । এরপরেই নাকি পাকবাহিনী ১৩ দিনের যুদ্ধে পরাজিত হয় । তার সারা জীবনের আফসোস তিনি যুদ্ধে যেতে পারেন নি । তার সমবয়সী কোন মুক্তিযোদ্ধাকে দেখলে তার হিংসা লাগে ।’ আচ্ছা, তাহলে মুক্তিযুদ্ধটা কি একটা ছেলে খেলা নাকি মদনের কলা খাওয়া ? যদি সকাল বিকেল ‘লেফট রাইট’ করেই দেশটা স্বাধীন হত তবে আজকের দিনে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত হাকডাক কেন ? আজকের দিনে আমরা যুদ্ধাহত পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যাদেরকে দেখছি তারা কি ৭১সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে হাডুডু খেলতে গিয়ে আহত ও পঙ্গু হয়েছিলেন ? তিনি তার এই মন্তব্যের মাধ্যমে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশের সূর্য সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগকে অপমান করেছেন এবং আমাদের রক্তাক্ত স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে তিনি একটি ফালতু রসিকতা করেছেন । আজ যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে এত কথা বলেন এবং যে সকল মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকারের ফাঁসি চাই শ্লোগান দিতে দিতে গলা শুকিয়ে ফেলেন তারা কি এই প্রবন্ধ পড়ে দেখেন নি ?
এ কে খন্দকার সাহেবকে নিয়ে সবাই তিরস্কার করছেন বলে তিনি অনেক কষ্ট পেয়েছেন । সেই সাথে খন্দকার সাহেব কেন এমন (সত্য) কথা বলতে গেলেন তা নিয়েও তিনি বেশ আশ্চর্য হয়েছেন । তিনি মনে করেন এহেন কর্মের জন্য শুধু লেখক কেন সাথে প্রকাশককেও অপদস্ত হতে হবে । এমনকি ঐ বইয়ের লেখাগুলো খন্দকার সাহেবের কিনা তা নিয়েও তিনি সন্দেহ পোষন করেন । এ সন্দেহ দূর করতে তিনি বইটির প্রকাশনা সংস্থা ‘প্রথমার’ সাথে কথা বলেছেন । তিনি তাদের কাছে বইয়ের মূল পান্ডুলিপি চাইলে তারা নাকি ইতস্তত হয়ে বলেছে , "সেভাবে হাতে লেখা পুরো পান্ডুলিপি তাদের কাছে নেই । কিছু আছে । তবে তার সঙ্গে কথা বলে পুরোটা প্রস্তুত করা আছে এবং এ বইয়ের পুরো বিষয়বস্তুর সঙ্গে তিনি পুরোপুরি একমত সে রকম সাক্ষ্য প্রমান তাদের কাছে আছে ।" এ কথা শুনে তিনি একেবারে ভেবাচেকা খেয়ে গেছেন । কারণ বইটি ‘লেখা’ হয়নি বরং ‘প্রস্তুত’ করা হয়েছে ! তার এই নতুন 'প্রস্তুত' থিওরী কতটুকু বাস্তবসম্মত তা আমরা জানি না, তবে আমাদের কাছে মনে হয় এই নব্য থিওরীর মাধ্যমে তিনি জাতিকে কিছুটা হলেও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন । যেহেতু এটি ‘প্রথমার’ মাধ্যমে 'প্রস্তুত' হয়েছে তাই তিনি খন্দকার সাহেবের সাথে উক্ত প্রকাশনা সংস্থাটিও অপমানিত হোক তা তিনি কামনা করেন ।
প্রকাশনা সংস্থাকেও অপমানিত হতে হবে এই মর্মে তিনি একটি উদাহরণ পেশ করার প্রয়াস পেয়েছেন । তিনি বলেছেন, "হুবহু এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের দেশে এর একটি 'ক্লাসিক' উদাহরণ আছে । ২০০৭ সালে প্রথম আলোর রম্য সাপ্তাহিকী আলপিনে একটা “অত্যন্ত নিরীহ কার্টুন” ছাপা হয়েছিল । এ দেশের ধর্মান্ধ গোষ্ঠী সেই নিরীহ কার্টুনটিকে একটা ইসলামবিরোধী রূপ দিয়ে হাঙ্গামা শুরু করে দেয় এবং আমরা সবিস্ময়ে আবিস্কার করি অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে কার্টুনিস্টকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয় । শুধু তাই নয় , এটা প্রকাশ করার অপরাধে আলপিনের সম্পাদক সুমন্ত আসলামকে বরখাস্ত করা হল । এখানেই শেষ নয় , আমরা দেখলাম প্রথম আলো সম্পাদক স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে পরিচিত বায়তুল মোকাররমের খতিবের (তৎকালীন খতীব মুফতি ওবায়দুল হক) কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়ে নিস্কৃতি পেলেন ।" তিনি আরো উল্লেখ করেছেন ঐ স্বাধীনতাবিরোধীর কাছে মতির ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে নাকি সংবাদপত্রের আদর্শ ও নীতির মাথা নত হয়ে গেছে । আমার একটি কথা কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না যে, বাংলাদেশের যে কোন মানুষকেই নানা কারণে রাজাকার কিংবা স্বাধীনতা বিরোধী বানানো যেতে পারে কিন্তু সর্বোজন শ্রদ্ধেয় এই মানুষটিকে কিভাবে স্বাধীনতা বিরোধী বলা যেতে পারে !!! যদি তাই হয়, তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়ে যদি তাদের নীতি আদর্শের এতই অপমান হয়ে থাকে তবে বর্তমান অবৈধ ও স্বৈরাচার সরকারের আমলে মিডিয়ার নীতি ও আদর্শের অবস্থান কোথায় ? তিনি কি এখন অন্ধ ? এই লোকটি কত বড় স্টুপিড ও বেয়াদব, দেশের পরম শ্রদ্ধেয় আলেম হাজার হাজার আলেমের উস্তাদ মুহতারাম মুফতী উবায়দুল হক (র) এর ব্যাপারেও স্বাধীনতাবিরোধী অপবাদ দিতে তার একটুও বুক কাঁপলো না !
আমরা যতটুকু জানি , 'আলপিনের' সেই সংখ্যায় বিড়ালের ছবি আঁকা হয় এবং সেখানে 'মুহাম্মদ বিড়াল' নামে কিছু ব্যঙ্গ কথাবার্তা ছাপা হয় । পত্রিকা কর্তৃপক্ষ হয়ত সরাসরি মুহাম্মদ (স) কে ব্যঙ্গ করতে চায়নি কিন্তু তারা তাতে রাসূলের(স) নাম ব্যবহার করায় তা বাংলাদেশের ১৬কোটি মুসলমানের কলিজায় আঘাত লাগে । মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত হয় বাংলার প্রতিটি রাজপথ । নূন্যতম ঈমান যার মধ্যে বিদ্যমান ছিল সেও প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হয়েছিল । কিন্তু মি. জাফর ইকবাল এই ঘটনাকে 'নিরীহ কার্টুন' বলে আবারো ১৬কোটি মুসলমানের ঈমানী আবেগের সাথে তামাশা করলেন বলেই মনে হয় । এই কথা বলে তিনি কতটুকু ঈমানের অধিকারী তাও তিনি চরম নোংরা ভাবে উপস্থাপন করলেন ।
পরিশেষে বলব, এরা মূর্খ , প্রতারক । এরাই প্রকৃত ধর্ম ব্যবসায়ী । দেশ জাতি ও ইসলামের চরম দুশমন । সারা জীবন ইসলামের সাথে দুশমনী করবে আবার জনগণকে বোকা বানানোর জন্য সাংবাদিক সম্মেলন করে হজ্জও করে আসবে । স্বার্থের লোভে এরা সব কিছুই করতে পারে । দেশপ্রেম বা ধর্মীয়মূল্যবোধ এদের কাছে উপেক্ষীত সর্বাবস্থায় । স্বার্থই এদের সব । এরা তিলকে তাল বানাতে পারে আবার সেই তালকে অদৃশ্যও করতে পারে । ভিনদেশী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই এদের আসল উদ্দেশ্যে থাকে । বর্তমানে জাতির বিভাজন এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যত বিতর্ক ও দেশের সকল অশান্তির মূল এই পরজীবি মার্কা ছাগলদের জন্য । মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তাদের এই দরদ আজ শুধুই মেকি অভিনয় মাত্র । যুদ্ধে যাওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যারা যায় নি , যারা পাকিস্তানি মিলিটারী ক্যাম্পে মুরগি সাপ্লাই দিত , নিজ দেশ ছেড়ে যারা জীবনের ভয়ে হিন্দুস্তানে পালিয়ে ছিল আজ তাদের মুখেই বড় বড় কথা । এই চেতনা ব্যবসা আর কতদিন ? জাতি আজ এদের থেকে মুক্তি চায় ।
সুতরাং দেশ ও জাতির কল্যাণে এই ধরনের সুবিধাবাদী পরজীবিদের বয়কট করা এখন সময়ের দাবী ।
বিষয়: বিবিধ
১৩০০ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কখন তাকেই না জাতির পিতা দাবি করা হয়!
বোকা বাংলাদেশের মানুষেরা এটাও গিলবার জন্য হা করে আছে যেমন উনার সাইন্স ফিকশন গিলে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন