রমজানে মুমিনের আমল
লিখেছেন লিখেছেন তেজোদীপ্ত আমজাদ ২২ জুন, ২০১৫, ০২:৪০:১৪ দুপুর
রমজান মাস আল্লাহর দেয়া একটি নেয়ামত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই নেয়ামত প্রাপ্তির জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করতেন।
তাই আল্লাহকে পাওয়ার মৌসুমকে যেন আমরা অবহেলায় না কাটাই, বরং যত্নবান হই এ জন্য রমযানে করণীয় এবং বর্জনীয় কিছু আমল মুমিনের সামনে পেশ করা হল। কিছু আমল বিশেষত নিম্নের আমলগুলো করার জন্য চেষ্টা করি, তাহলে কিছুটা হলে এ নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় হবে।
#রোযা
এ মাসের অন্যতম আমল হল দিনের বেলা রোযা রাখা। প্রত্যেক সুস্থ মস্থিস্ক সাবালক মুসলিমের উপর রমযানের রোযা
ফরয। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই এ রমযান মাস পাবে সে যেন অবশ্যই রোযা রাখে। {সূরা বাকারা, আয়াত নং-১৮৫} সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্থ পর্যন্ত নিয়তের সাথে পানাহার ও স্ত্রী সঙ্গম থেকে বিরত থাকাকে রোযা বলে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রোযা রাখবে আল্লাহ তাআলা তার সকল গোনাহ মাফ করে দিবেন।{বুখারী,হাঃ ৩৮, মুসলিম, হাঃ ৭৭০} শরয়ীত কৃর্তৃক অনুমোদন কারণ ছাড়া রোযা না রাখা নাজায়েজ ও হারাম।
#সাহরী খাওয়ার আমল
সাহরী খাওয়া সুন্নত। পেট ভরে খাওয়া জরুরী নয়। এক ঢোক পানি পান করলেও সাহরীর সুন্নত আদয়া হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা সেহরী খাও। কেননা, সাহরতে বরকত রয়েছে। [সহীহ মুসলিম-১/৩৫০ পৃষ্ঠা}
#ইফতারী
সূর্যাস্থের সাথে সাথে ইফতারী করা মুস্থাহাব। রাসূল সাঃ মাগরিবের নামায পড়ার আগে তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাজা খেজুর না পেলে এক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করতেন।{তিরমিজী, হাঃ ৬৯২}
#নামায
নামাযের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের প্রতি বার মাসই যত্নবান হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের দুর্বলতার দরুন অন্য মাসে ফরজ নামায ছাড়া অন্য নামাযের সুযোগ না থাকলেও পবিত্র রমযান মাসে অবশ্যই সুযোগ বের করতে হবে। সুযোগ বের করে যেসব নামায আমরা পড়তে পারি তার সংক্ষিপ্ত একটি বিবরণ দেয়া হল।
#দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামায আদায় করা
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায প্রত্যেক মুমিনের উপর ফরজ। সুতরাং এক ওয়াক্ত নামাযও কাযা করা তথা ছেড়ে দেয়া মুমিনের জন্য কখনোই কাম্য নয়। ইসলাম ধর্মের অন্যতম বুনিয়াদ ও স্থম্ভ হল নামায। কিয়ামত দিবসে সর্ব প্রথম নামাযের হিসাব নেয়া হবে। কিয়ামতের দিন যার নামাযের হিসাব ঠিক হবে, তার অন্যান্য আমলের হিসাবও সহজ হয়ে যাবে। সুতরাং এখনই আমি সিদ্ধান্ত নেই যে, জীবনে আর নামায তরক করবো না। আপ্রাণ চেষ্টা করবো জামাআতে তাকবীরে উলার সাথে নামায পড়তে। কারণ নামায ছাড়া মুক্তির কোন উপায় নেই। অতএব ফরজ নামাযের প্রতি যত্নবান হওয়া সবচেয়ে বেশি জরুরী। রমযান মাসে এবং অন্য মাসে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়তে সচেষ্ট থাকা প্রত্যেকটি মুমিনের কর্তব্য।
#তাহাজ্জুদের নামায
পবিত্র রমযান মাসে শেষ রাতে সাহরী খাওয়া একটি ইবাদত। এই সাহরী খেতে যখন ঘুম থেকে উঠব তখন পবিত্রতা হাসিল করে আমি কমপক্ষে দুই বা চার রাকাত তাহাজ্জুদ নামায পড়ে নিব। তাহাজ্জুদ নামায আল্লাহওয়ালা বা আল্লাহ তাআলা প্রিয়ভাজন হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সহায়ক আমল। এক বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তাহাজ্জুদ নামায আদায়কারী হিসাব-কিতাব ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করবে। [বায়হাকী}
ইশরাকের নামায
সূর্যোদয়ের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাতের সাথে আদায় করার পর সূর্যোদয়ের পর দু’রাকাত নফল নামায পড়ে, সে পূর্ণ হজ্ব ও ও উমরার সওয়াব লাভ করে। [তিরমিজী হাঃ ৫৮৬] পবিত্র রমযান মাসে সাহরীর পর ফজরের নামায পড়ে যারা শুয়ে পড়েন, তারা দুই আড়াই ঘন্টা বিশ্রামের পর উঠে অফিসের যাওয়ার আগে দুই চার রাকাত ইশরাক নামায পড়ে বের হতে পারেন।
#আউয়াবিন নামায
মাগরিব নামাযের ফরজ ও সুন্নতের পর আউয়াবিন নামায পড়ার সময়। দুই রাকাত করে ছয় রাকাত বিশিষ্ট এই নফল নামাযের অনেক ফযীলত রয়েছে। কথা না বলে যে এই ছয় রাকাত নামায আদায় করবে সে বার বৎসরের সমপরিমাণ ইবাদতের সওয়াব পাবে। [তিরমিজী হাঃ ৪৩৫}
#তারাবীহ নামায
এশার নামাযের ফরজ ও সুন্নতের পর বিশ রাকাত তারাবীহ নামায পড়ারও অনেক ফযীলত রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানে সাথে রমজানের রাতে কিয়াম তথা তারাবীহ পড়বে, তার সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। {বুখারী,হাঃ ৩৭, মুসলিম, হাঃ ৭৫৯} । তারাবীর নামায পবিত্র রমযান মাসের বিশেষ একটি আমল। এ আমল অন্য মাসে নেই। তাই গুরুত্ব সহকারে বিশ রাকাত তারাবীতে কমপক্ষে এক খতম কুরআর পড়া সকলের জন্য জরুরী।
#দুআ কবুলের বিশেষ সময়
পবিত্র রমযান মাসের দিন ও রাতের প্রত্যেকটি মুহুর্তই গুরুত্বপূণ এবং দুআ কবুলের সময়। তার পরও বিশেষ কিছু সময় দুআ করার প্রতি যতœবান হওয়া জরুরী। তার একটি হল ইফতারের সময় আরেকটি হল সাহরীর সময়। হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ রমযান মাসে প্রত্যেহ রাতে ও দিনে আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের কয়েদীদের মুক্তি দিয়ে থাকেন এবং প্রত্যেক মুসলমানের কমপক্ষে একটি দুআ প্রত্যেক রাতে ও দিনে কবুল করে থাকেন। সুতরাং বিশেষত উল্লেখিত দুই সময়ে আমরা যেন গাফেল না থাকি। বরং দুহাত তুলে আল্লাহর দরবারে কাকুতি মিনতির সাথে দু’চোখের পানি ফেলে নিজের গুনাহের জন্য মাফ চাই তাওবা করি। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, সম্মিলিত ভাবে দু’আ করাকে যেন মূখ্য না বানাই বা ফর্মালেটিতে নিয়ে না যাই।
#দিনে রাতে চারটি আমল বেশী বেশী করা
পবিত্র রমযান মাসে চারটি আমল বেশী বেশী করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন জনাব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহলোঃ
১. বেশী বেশী কালিমায়ে তাইয়্যেবা তথা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়া।
২. এস্তেগফার তথা আস্থাগফিরুল্লাহ বেশী বেশী পড়া।
৩. জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা।
৪. জান্নাত পাওয়ার কামনা ও দরখাস্থ আল্লাহর দরবারে বেশী বেশী করা।
#পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত ব্রত হওয়া
পবিত্র কুরআন শরীফ হলো বর্তমানে আল্লাহ তাআলার প্রেরিত একমাত্র অবিকৃত গ্রন্থ, যা এই উম্মতের পথ নির্দেশিকা। আর এই মাসেই পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হয়েছে। তাই প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক মহামূল্য এই গ্রন্থ সবসময় পাঠ করা। ছোট ছোট আয়াত বা সূরা গুলোর তরজমাও পড়ে নেয়া অত্যন্ত প্রশংসনীয় আমল। কম পক্ষে রমযান মাসে দু’এক খতম না করাটা একেবারেই না শুকরীর নামান্তর। তবে যারা কুরআন তিলাওয়াত করতে পারেন না তারাও যেন সকাল-বিকাল নিজেদের শিখা সূরাগুলো তথা সূরা ফাতেহা, সূরা নাস, সূরা ফালাক, সূরা এখলাস ইত্যাদী পাঠ করে। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে ব্যক্তি কুরআনের কোন একটি হরফ পড়বে আল্লাহ তাআলা তার আমল নামায় দশটি নেকী দান করবেন। আর তা রমযানে পড়ার কারনে আরো সত্তর গুন বেশী হওয়ার সুসংবাদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই প্রদান করেছেন। তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও রমযান মাসে জিব্রাইল আ. এর সাথে কুরআনের দাওর তথা একে অপরকে তিলাওয়াত করে শুনাতেন। এই সুন্নতটি আমরা জিন্দা করার চেষ্টা করব।
#দান সদকা
আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের আরেকটি মাধ্যম হলোঃ গরীব দুখী অসহায় কে টাকা পয়সা দ্বারা এবং পেরেশান গ্রস্থ ব্যক্তিকে সুপরামর্শ দ্বারা সহযোগিতা করা। নিজ সম্পদের ফরজ যাকাত প্রদান করব এটা মুসলমানের জন্য বলার অপেক্ষা রাখে না। এর থেকে আগে বেড়ে আল্লাহকে পাওয়ার এই মৌসমে আমি আরো বেশী দান করব। প্রত্যেক দিনেই নিজের জন্য সহজ পথ এভাবে বেছে নিতে পারি যে, দৈনিক মসজিদে কমপক্ষে ১০(দশ) টাকা ও গরীব-মিসনিকে দশটাকা দান করি। রমযানের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত এ আমলটা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করি।
#রোযাদারকে ইফতার করানো
কোন একজন রোযাদারন কে ইফতার করালে আল্লাহ তাআলা তার আমল নামায় একটি রোযার সাওয়াব দান করবেন। তবে এর জন্য অনেক আই টেমের বস্তু খাওয়াতে হবে তা নয়। একটি খেজুর বা এক ঢোক পানি পান করানের মাধ্যমেও এ সাওয়াব হাসেল করা যায়। সুতরাং পবিত্র রমযান মাসে একজন নেককার রোযাদার বা আলেম হাফেজকে দু’বেলা খানা খাওয়ানের আমলটাও তো আমরা করতে পারি আর অধিক সাওয়াবের অধিকারী হতে পারি।
#শবে কদর
রমযান মাস মহামূল্যবান হওয়ার অন্যতম কারণ হলো এই মাসে একটি রজনী রয়েছে যাকে লাইলাতুল কদর বা শবে কদর বলা হয়। পবিত্র কুরআনে এই রাতের ইবাদতকে হাজার মাসের ইবাদত থেকেও বেশী কল্যাণের বলা হয়েছে। আর সেই মূল্যবান রাত অন্বেষণ করতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতের কথা বলেছেন। সুতরাং ২১,২৩,২৫,২৭,২৯ ই রোযার রাতকে আমরা অনেক বেশী গুরুত্ব দিব। আল্লাহকে পাওয়ার জন্য কোমড় বেঁধে লেগে যাব ইনশা আল্লাহ।
#ইতিকাফ
রমযান মাসের ই’তিকাফ একটি গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব সময় রমযানের শেষ দশকে ই’তিকাফ করতেন। ই’তিকাফ কারী শবে কদরের ফযীলত পাওয়াটা প্রায় নিশ্চিত। সুতরাং শেষ দশকের জন্য নিজের সময়কে ফারেগ করে নেব আর যারা অবসর তারা নিয়তকে দৃঢ় করে নেব, এটাই বিচক্ষনতা।
#রোযা অবস্থায় গোনাহ বর্জন
গোনাহ ও নাফরমানী এর অর্থই হল এমন কাজ করা যার দ্বারা আল্লাহ নারাজ অসুন্তষ্ট হন। তাহলে আল্লাহকে অসুন্তষ্ট করা কোন মুমিনের জন্য উচিৎ নয়। বরং সব সময় সতর্ক থাকা উচিৎ যেন এমন কোন কথা কাজ আমল না হয়ে যায়। বিশেষ করে এই সতর্কতাকে আরো অনেক গুন বেশী বৃদ্ধি করতে হবে। যেন রোযা রাখা অবস্থায় হাত মুখ চোখ বা শরীরের অন্য কোন অংগ দ্বারা গোনাহ না হয়। তাই তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে ব্যক্তি রোযা রেখে মিথ্যা কথা, অসৎ কাজ ও মূর্খতা সূলভ আচরণ পরিহার না করে তার পানাহার বর্জনের কোন প্রয়োজন আল্লাহর কাছে নেই। (বুখারী শরীফ, হাঃ ১৯০৩)
সুতরাং টেলিভিশন দেখা, পর নারীর প্রতি দৃষ্টি দেয়া, সুদ-ঘুষ, দুর্নীতি ইত্যাদি গোনাহের কাজ থেকে বিরত থাকি।
#ঝগড়া পরিহার
রোযার অন্যতম শিক্ষা হল সবর ও ধৈর্যধারণ করা। আর ঝগড়া ফাসাদ কাউকে গালমন্দ করা রোযার পরিপন্থি কাজ। সুতরাং রোযা রেখে আমরা তা করব না। এই শিক্ষা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতকে এভাবে দিয়েছেন যে, (হে রোযাদার) কেউ যদি তোমাকে গালি দেয় তাহলে তার উত্তরে বলে দাও আমি রোযাদার। (মুআত্তা মালেক, হাঃ ৯২৩)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে এসকল বিষয়ের উপর আমল করার তাউফিক দান করুক। আমীন। #সংগ্রহীত
বিষয়: বিবিধ
১৩৩২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকিল্লাহ খাইরান ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন