সংযুক্ত আরব আমিরাতে কবে খুলবে বাংলাদেশি ভিসা ?
লিখেছেন লিখেছেন আমিনুল হক ১২ জুলাই, ২০১৬, ০২:২২:১২ দুপুর
'সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের বন্ধ ভিসা খোলা হবে কবে?' এ প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে। বিগত আগস্ট ২০১২ থেকে প্রায় চার বছর হয়ে গেল আমিরাত সরকার বাংলাদেশি শ্রমিকদের ভিসা বন্ধ করে দেয়। একই সাথে রিলীজ বা ট্রান্সপারেবল ভিসাও বন্ধ হয়ে যায়।
ভিসা বন্ধ হওয়ার কারণ হিসেবে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানা না গেলেও পববর্তী সময়ে বিভিন্ন সুত্র থেকে অনেক কিছুই জানা যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো 'বাঙ্গালী তথা বাংলাদেশিদের অপরাধ প্রবণতা বেশি'। এটাই ভিসা বন্ধের অ্ন্যতম প্রধান কারণ। এখনও পর্যন্ত সবাই ধরে নিয়েছে বিভিন্ন রকমের অপরাধ মূলক কাজের জন্য বাঙালিদের ভিসা বন্ধ রয়েছে।
উলেখ্য যে, আমিরাতের বর্তমানে বাংলাদেশিদের সংখ্যা প্রায় দশ লক্ষ। এক জরিপে দেখা যায় ২০১০ থেকে ২০১২ তে প্রতি মাসে গড়ে ত্রিশ থেকে তেত্রিশ হাজার পর্যন্ত বাংলাদেশি আমিরাতে আসতো। আর সেই ধারা এখনো অব্যাহত থাকলে আমিরাতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সংখ্যা কত হত তা বলার অবকাশ থাকেনা ।
এদিকে অন্য আরেক সুত্রে বলা হয় যে, আমিরাতে বাংলাদেশিদের ভিসার যে কোটা ছিলো সেই কোটা শেষ। তাই ভিসা বন্ধ। তবে যা-ই বলা হোক না কেন এই সব বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া যায় না। আজ থেকে সাড়ে তিন বছর আগে ফিরে তাকালে বুঝতে পারি কি কঠিন সময় যে আমরা অতি্ক্রম করে আসছি। এক শ্রেনীর দালাল চক্র সাধারণ মানুষকে দুবাইতে ভালো চাকুরী ও বেতনের লোভ দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে তিন- চার লক্ষ টাকার বিনিময়ে তাদেরকে ৫০০ থেকে ৬০০ দেরহাম বেতনের চাকুরী দিতো। এই সব গরিব মানুষ গুলো জমি জমা, বাডি ভিটা বন্ধক রেখে বেশি টাকা রোজগারের আশায় দুবাই তথা আমিরাতে আসতো। আমিরাতে আসার পর সেই মানুষ গুলো ভালো কাজ না পেয়ে বুঝতে পারত তারা প্রতারিত হয়েছে । তাই নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের ভিসার টাকা শোধ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠতো।
এ ধারাবাহিকতায় কম সময়ে বেশি টাকা উপার্জনের লোভে এখানে বিভিন্ন রকমের অপরাধ মূলক কাজের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যেত নিন্ম আয়ের এই মানুষগুলো। এক্ষেত্রে মহিলা গৃহকর্মী বা নারী শ্রমিক আর বিভিন্ন ক্লিনিং কোম্পানীতে আসা শ্রমিকদের কথা উল্লেখযোগ্য।
২০১২সালের আগস্টের শেষের দিকে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ভিসা বন্ধ হয়ে যাবার পর থেকে আমিরাতে অবস্থানরত প্রবাসীরা বিভিন্ন রকমের সমস্যায় সময় অতিক্রম করে চলছে। অনেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধও করে দিয়েছে। ভালো বেতনের চাকরি থাকলেও ভিসা না থাকায় চাকুরী পরিবর্তন করতেও পারছেন না অনেকে।
অন্যদিকে নতুন প্রজন্ম ভিসার জন্য এইখানে পড়ালেখা শেষ করতে পারছেনা । যেসব ছাত্রের বয়স ১৮ হয়ে গেছে তাদের ভিসা লাগানোর কোন সুযোগ নেই। যারা পড়ালেখা শেষ করেছে তারাও আবার চাকুরীর সুযোগকে কাজে লাগাতে পারছে না। এসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যদিয়ে প্রবাসী এসব ছাত্রদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে দেশের প্রতি নেতিবাচক ধারণা। বড় বড় ব্যবসায়ীদের ছেলে মেয়েদের কথা একটু ভিন্ন। তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে সন্তানকে সম্পৃক্ত করে ব্যবসায়িক পার্টনারের ভিসা নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব ব্যবসায়িক পার্টনার ভিসা ব্যয়বহূল, তাই এটা সবার ক্ষেত্রে হয়ে উঠে না । যারা নিন্ম আয়ের চাকুরীজীবি তাদের এই ভিসা নেয়া দুরহ ব্যাপার। বলতে গেলে আমিরাতের ভিসা দিন দিন বাংলাদেশিদের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে যাচ্ছে।
এখানেও শেষ নয় আজ থেকে দু'মাস পূর্বে একটি লাইসেন্সের বা কোম্পানির উপর আট থেকে দশটি পার্টনার ভিসা করার নিয়ম ছিলো। তবে কিছুদিন ধরে সেই ভিসাও কমিয়ে দুইয়ে নিয়ে এসেছে। এই ভিসা জটিলতা দূর করতে গত চার বছরের মধ্য কূটনিতিক তত্পরতাও কম হয়নি। দূতাবাস ও বিভিন্ন প্রবাসী সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সব সময় বলা হচ্ছে অপরাধ মূলক কাজ থেকে বিরত থাকতে আর প্রবাসী দেশের ভাবর্মূতি উজ্জ্বল করতে।
আমিরাতের ভিসার সমস্যা ব্যাপারে এখন সকলে অবহিত আছেন। বাংলাদেশের প্রতিটি নেতা, এমপি, মন্ত্রী, সর্বোপরি মাননীয় প্রধান মন্ত্রীও অবগত আছেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর ২০১৪ সালের অক্টোবরে আমিরাত সফরের সময় এখানকার প্রবাসীরা অনেক আশা করে ছিলো- এ বার মনে হয় ভিসা খুলবে। অনেক চুক্তিও করা হয়েছিল কিন্তু আশানুরুপ কোন সংবাদ না পাওয়াতে অনেকে বলে উঠলো 'ভাংগা কপাল আর জোড়া লাগলনা'।
সম্প্রতি ঢাকাতে আমিরাতের ভিসা সেন্টার খোলাকে কেন্দ্র করে দেশবাসী ও প্রবাসীরা নতুন আশায় বুক বেধে ছিলো। নতুন বছরে ভিসা খুলবে, নয়তবা রিলিজ চালু হবে। কিন্তু সব আশাই গুড়েবালি। এখনো পর্যন্ত ভিসা চালু হবার কোনো খবর নেই। সত্যিই আমরা বড় দুর্ভাগা। ভিসা খোলার নিদিষ্ট কোনো খবর দেবার মত আমরা কাউকে পেলাম না । আমিরাতে নিয়োজিত রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান ইতিমধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, 'ভিসা খোলার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।' কথাটা শুনে প্রবাসীরা আনন্দিত হল। এবার বুঝি ভিসা খুলবে। এখন আমিরাতে বাংলাদেশিদের অপরাধের পরিমানও কমে এসেছে। প্রবাসীর আশা করেন, এবার ভিসাটা চালু হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি যেন গুরুত্ব সহকারে দেখেন। এখানে এখনো অনেক সুযোগ সুবিধা আছে। আর এই সুযোগ সুবিধার মধ্যদিয়ে দেশের রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধিসহ প্রবাসী ও বাংলাদেশিদের নতুন কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে।
প্রবাসী অভিজ্ঞ মহলের মতে, এই কয় বছরে দেশের মন্ত্রী, এমপি, আমলা, রাজনৈতিক নেতারা যে পরিমাণে সংযুক্ত আরব আমিরাতে রাষ্ট্রীয় সফর বা ব্যক্তিগত সফরে এসেছেন, সেই অনুপাতের ৫ ভাগ আমিরাতের মন্ত্রী, এমপি বা শেখ যদি বাংলাদেশ সফরে যেতেন তাহলে দেশ, জাতি ও প্রবাসীর অবস্থার অনেক উন্নতি হত।
আবার অনেকের মতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে আবুধাবীর ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ বা দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশীদের বাংলাদেশ সফরের বিকল্প নেই। তাদের বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে নব দিগন্তের সূচনা করা সম্ভব। শিগগিরই তাঁদের বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রন জানানো দরকার। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন প্রবাসীরা।
বিষয়: বিবিধ
১৯১১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন