ভালবাসা শব্দটার মানে কি?
লিখেছেন লিখেছেন আমিনুল হক ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৪:৪৪:১৩ বিকাল
প্রশ্ন করেছিলাম খুব কাছের কিছু বন্ধুদের। ভালবাসা মানে ফিলিংস, অপ্রকাশ্য অনুভূতি। কেউ বলে ভালবাসা সীমাহীন তাই একে ডিফাইন করা যাবেনা এক শব্দে। প্রেমিক-প্রেমিকার ভালবাসা বুঝতে হলে তোকে প্রেম করতে হবে। ফিলিংস কি কখনও শেয়ার করা যায়? এটা হচ্ছে উপলব্ধির ব্যাপার। আর সেই উপলব্ধি তখনি আসবে যখন তুই প্রেমে পড়বি। এভাবে অনেকভাবে তারা আমাকে ভালবাসার মানে বোঝাতে চেষ্টা করে।
খুবই আচার্য লাগে যখন দেখি এই ভালবাসার জন্য কেউ তার ফ্যামিলি ত্যাগ করে, বন্ধুদের ত্যাগ করে। ভাললাগে এই কারণে যে ভালবাসার শক্তি আসলে অপরিসীম। তা না হলে সবচেয়ে কাছের মানুষদের কিভাবে ত্যাগ করা যায় শুধুমাত্র বিপরীত লিঙ্গের আকর্ষণে? এই ভালবাসা নিয়ে আসে ভালবাসা দিবস। প্রেমিক-প্রেমিকাদের কাছে এই দিবসের গুরুত্ব ভয়াবহ। আর যারা ভালবাসা কনসেপ্টকে পছন্দ করেনা তাদের নিকট ভালবাসা দিবস শুধুমাত্রই বাণিজ্যিক, বাহ্যিক। আমি অবশ্য এই দুই দলের কোনটার মধ্যেই পড়িনা। কারণ ভালবাসা ব্যাপারটা আমার কাছে খুব একটা খারাপ লাগেনা। এই কারণে ভালবাসা দিবসের মানে আমি এই বুঝিনা যে শুধু এই দিন ভালবাসার দিন, বাকি দিন নয়। আসলে দিনটা একটা উপলক্ষ্য, তবে এই উপলক্ষ্যের কার্যাবলী সারাবছর ব্যাপী থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই ভালবাসা দিবসকে আমি বাকা চোখে নেইনা। যদিও ভালবাসা দিবসের শুরুর কাহিনী আমাকে ইন্সপায়ার করেনা ভালবাসার জন্য ! বাট ভালবাসা আমাকে ইন্সপায়ার করে ভাল কিছু করার জন্য।
প্রেমিক-প্রেমিকার ভালবাসা আমার কাছে কিছুটা আজব মনে হয়। একজনের প্রতি ভাললাগা আসতেই পারে কিন্তু তার জন্য আমার সারাটা দিন ব্যয় করা, তার সাথে ভালবাসার ফিলিংস শেয়ার করা, রাত জেগে মোবাইলে কথা বলা, ছুটির দিনে ঘুরতে বের হওয়া ইত্যাদি এসব কনসেপ্ট আমার ভাল লাগেনা। সবচেয়ে যে ব্যাপারটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ তা হল অন্যের প্রতি আমার ফিলিংস কিভাবে আসিতেছে? আমি কি তার ক্যারিয়ার, স্মার্টনেস, আউটলুক দেখে ভালবাসার প্রতি ইন্সপায়ার হচ্ছি? নাকি অন্য কিছু? যদিও যারা প্রেম করে তাদের কাছে এই প্রশ্ন করলে তারা বলে, ওর মনটা অনেক ভাল, তাই ওকে আমি অনেক ভালবাসি। কিন্তু তাদের প্রেমে পড়ার কাহিনী শুনলে দেখে যায় তারা কখনও মন দেখে একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়নি। তাদের প্রেমে পড়ার ইতিহাস থেকে দেখা যায় কেউ কোন অনুষ্ঠানে গিয়েছে সেখানে প্রথম দেখাতেই প্রেম। কিংবা একই সাথে লাইব্রেরিতে পড়াশুনা করে সেই থেকেই প্রেম। কিংবা আননোন মোবাইল থেকে ম্যাসেজ/ভয়েস শুনে প্রেম।
এভাবেই বেসিক্যালি আজকের যুগে ভালবাসা শুরু হয়। সেখানে দুইজন মানুষের আদর্শিক মিল খুব কমই হয়। তাই প্রেমিক-প্রেমিকার মন কষা-কষি লেগেই থাকে। পরে অবশ্য তারা বলে যে এই মন কষা-কষি নাকি তাদের ভালবাসার ফিলিংস আরো বাড়িয়ে দেয়।
বিশ্বাস,
হ্যা বিশ্বাসের অভাব। আজকাল ভালবাসার মধ্যে কোন বিশ্বাস নাই। তাই তো একে অপরের প্রতি সন্দিহান সর্বদা। কোথায় গেল, কি করল, কার সাথে মোবাইলে কথা বলল, কার সাথে কলেজে মেলামেশা করে ইত্যাদি হাজারো রকম সন্দেহ।
যদি বিশ্বাস অর্জন না করা যায় তাহলে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা আসেনা। তাই আজকাল ভালবাসা খুব সংকীর্ণ হয়ে গেছে। ভালবাসা মানেই কেবল ঘোরাঘুরি, রাত জেগে কথা, চ্যাটিং, সন্দেহ আর মন কষা-কষি। এই সার্কেলেই চলছে বর্তমান ভালবাসা। খুব অবাক হই এক্ষেত্রে চিন্তার ম্যাচিউরিটি খুব কম মানুষের মধ্যেই আছে। ম্যাচিউরিটি আজকাল শুধু বয়স দ্বারা হিসাব করা হয়। ছেলে-মেয়েরা চিন্তা করে তারা এখন বড় হয়েছে, যথেষ্ট মাচিউরড সো তারা ভালবাসতেই পারে!
সত্যি কথা বলতে কি চিন্তার ম্যাচিউরিটি ধর্মীর অনুশাসন ছাড়া পূর্ণতা পায়না। এতে অনেকেই আমার সাথে আপত্তি জানাতে পারে। কিন্তু আমি দেখেছি খুব সচেতন মানুষ যে মৌলিক গুনাবলি সম্পন্ন তার সচেতনতা অনেক সময় তার পরিবার, তার আত্মীয়, বন্ধুদের জন্য কোন উপকার আনে বরং সেই মানুষও কোন এক সময় এমন ভুল করে যা তার দ্বারা অসম্ভব ছিল। মানুষ ভুলের উর্দ্ধে নয় কিন্তু এই ভুল তার অপূর্ণ ম্যাচিউরিটির সাক্ষ্য বহন করে।
আজকাল ছেলে-মেয়েদের অবসর সময় কাটে লাভারের সাথে গল্প করে, আড্ডা দিয়ে। ভালবাসার মানে যে কেবল এগুলো নয় এটা তাদের চিন্তায় ঢুকেনা। এফ.এম রেডিও শুনলে দেখা যায় ইয়াং জেনেরেশান এর খুব কঠিন সমস্যা হচ্ছে এসব এফেয়ার জনিত সমস্যা। অথচ এখনও পৃথিবীতে মানুষ অনাহারে মারা যাচ্ছে, প্রতিদিন হাসপাতালে মানুষ মৃত্যু যন্ত্রনায় কষ্ট পাচ্ছে, কেউবা অভাবের তাড়নায় খারাপ পথে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে, কত ছোট ছোট নিষ্পাপ শিশু হাতে বই-খাতার বদলে ফুল নিয়ে রাস্তায় বিক্রি করতে পথে নামছে এসব সমস্যা যেন তাদের ভালবাসার সমস্যার কাছে কিছুই না। তাদের ভালবাসার ভাগিদার কেবল বয়/গার্লফ্রেন্ড। ভালবাসার মানুষের সাথে গল্প করার বিষয় কেবল কখন কি করল, কি দিয়ে খাইল, কে কাকে কতটুকু ভালবাসে ইত্যাদি।
কেন একটু ভালবাসা কি আমরা সেই সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য রাখতে পারিনা? আমরা কি পারিনা ভালবাসা দিবসে তাদের সাথে আমাদের ভালবাসা শেয়ার করতে? সংকীর্ণ ভালবাসাকে আকাশের মত উদার করতে আমরা কেন এত কার্পণ্য করি? কেন আমরা আদর্শিক কনসেপ্ট এর মিল না খুজে শুধুমাত্র আউটলুক দেখে অন্যের প্রতি ভালবাসায় ইন্সপায়ারড হই?
বিয়ের আগে প্রেমকে আমি কখনই সাপোর্ট করিনা। সেক্ষেত্রে আমার লজিক হচ্ছে আমি কেন এমন কারো সাথে আমার ফিলিংস শেয়ার করব যে সেই ফিলিংস শেয়ার করার অধিকারই রাখেনা?
পৃথিবী আজ আমার ভাল লাগেনা। ভাল লাগেনা অপরের সাথে শুধুই যান্ত্রিক কোন সম্পর্ক।
না, কোন অভিমানে নয় চরম বাস্তবতায় আজ আর আমার সত্যি পৃথিবী ভাল লাগেনা। এখানে কি আছে? হয়তবা হাতের মুঠোয় আমার পুরা পৃথিবী আছে কিন্তু কি লাভ সেই পৃথিবী দিয়ে? যেখানে মায়ের পরকীয়ার বলি হয় ভালবাসার সন্তানের। নিজ অস্তিত্ব কি আজ হুমকির সম্মুখিন? দশ মাস দশ দিন সুগভীর নিরাপত্তার মধ্যে থেকে শিশুটি যখন নিরাপত্তাহীন পৃথিবীতে পদার্পন করে তখন তার একমাত্র নিরাপত্তা তার মা। সেই নিরাপত্তার স্থানও আজ নিরাপত্তাবিহীন। এরকম পরকীয়ার বলি কেবল একজন নয়, হয়ত আরো বেশি। ভবিষ্যতে কি হবে ভাবতে ভয় পাচ্ছি…
প্রেমিক-প্রেমিকার ভালবাসার গভীরতাও আজ আর নেই।
বিষয়: সাহিত্য
৬০২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন