হাওড় পাড়ের কৃষকের কান্না: তুমি শুনতে কি পাও?
লিখেছেন লিখেছেন আমিনুল হক ২৩ এপ্রিল, ২০১৫, ০৬:৪২:৩২ সন্ধ্যা
আমি আজ প্রবাসি, সেটা আমার কাছে গৌরবের নয়। আমি এক কৃষকের ছেলে সেটাই আমার কাছে গৌরবের। আমার রক্তে আমার অস্তিত্বের সাথে সম্পর্ক হল ধানের শুধুই ধানের। প্রাইমারী স্কুল থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক এবং প্রবাসি হওয়া যা কিছু অর্জন সম্ভব হয়েছে এর পিছনে একমাত্র যোগানদাতা ছিলেন আমার কৃষক বাবা। আর সব এসেছে এই সোনালী ধান থেকে । তাই আমার অস্তিত্বের সবটুকুই জুড়েই শুধু ধান আর ধান।
কয়েকদিনের বৃষ্টির পানিতে কষ্টের ( দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার সাংহাই হাওড়) সোনালী ধান আজ পানির নিচে। গতকাল রাত ৩টার সময় যখন বাবা-মায়ের কান্না ভরা কণ্ঠে শুনলাম আর বোধ হয় ধান তুলা গেলনা। যত তারাতারি সম্ভব টাকা পাঠা বাবা। মানুষ রোজ লাগিয়ে ধান কাটতে হবে। খবর শোনা মাত্রই নিজেকে আর সংযত করতে পারছিলাম না। মন চাইছিল তখনই বাড়ী চলে যাই। কিন্তু চাইলেই আমি বাড়ি যেতে পারবনা। কারন আমি যে অনেক দূরে প্রবাসে আছি। একদিকে বাড়িতে যেতে না পারার যন্তনা, অন্যদিকে মাসের মধ্যখানে টাকা পাটানোর ব্যবস্থা করা নিয়ে টেনশনে পরে গেলাম। ফোনে কথা বলা শেষে আমার ২/৩টা বন্ধুকে ফোন দিলাম। কিন্তু কারো কাছ থেকে কোন আশা পেলাম না। উপায়ন্তর না দেখে আমার কোম্পানির ম্যানাজারের সাথে কথা বললাম। সে আমাকে সাহায্য করল। পরে আম্মার সাথে কথা বলে টাকা পাঠিয়েছি বললাম। এই কথা শুনে আম্মার মুখে যেন হাসি ফুটল। আব্বার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম যে আমাদের অনেকটা ধান কাটা হয়ে গেছে। যদি বৃষ্টি না আসে এবং হাওরের পানি বেড়ে না যায় তাহলে ইনশিআল্লাহ সব ঠিকটাক মত উঠাতে পারব। আমার অনেক আত্বীয়ের ধান বৃষ্টির পানির নিচে চলে গেছে। অনেক কৃষক আজ কাদছে। এই কান্না গোটা হাওড়পাড়ের। এই কান্না দেখার কেউ নেই। একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই দুর্দশা থেকে সবাইকে রক্ষা করতে পারেন।
গতকাল বুধবার ছবি গুলো জামলাবাদ গ্রামের পুর্ব পাশের সাংহাই হাওড় থেকে তুলে পাঠিয়েছে ছোট ভাই জয়নুল হক জয়। গতকালের ছবি গুলো শুধু ছবিই রয়ে যাবে, কারন আজ বৃহস্পতিবার এই ধান আর ভেসে নেই। পানির নিছে তলিয়ে গেছে।
নববর্ষের দিনে একটি পোষ্ট লিখেছিলামঃ
পহেলা Boishak এর শুভেচ্ছা সবাই জানালেন, আনন্দ করলেন, প্রেমিক-প্রেমিকা নিয়ে পূর্তি করলেন, কিন্তু কেউ কি বলতে পারবেন যে আমি একজন গরীব কৃষককে সাথে নিয়ে ভাত খেয়েছি, একজন গরীবকে কিছু টাকা দিয়েছি অথবা আমার ১ম Boishak এর জন্য জমানো টাকা নষ্ট না করে একজন এতিম কে দিয়েছি। আমার মনে হয় কেউ কিছুই বলতে পারবেনা। যদি পহেলা Boishak গল্প বলতে বল, তাহলে সারা রাত্রি গল্প বললেও শেষ হবেনা, বিশেষ করে ধনীর দুলালিদের।
আসলে পহেলা Boishak কৃষকের নয়, গরীবের নয়, তা শুধু ধনী ও বিত্তবানদের জন্য। জানিনা এর অবসান কোথায়.. . .. . . . . . !! !! !! !! !!
কবে আমরা বুজতে শিখব.. . .. . .. . .
পোষ্টটি আবেগ থেকে লিখেছিলাম। তোমরা পহেলা বৈশাখে বর্ষবরনের নামে বস্ত্রহরন সহ কত নারকীয় তান্ডব করেছআ, তোমরা ক্রিকেট খেলায় বাংলাদেশের বিজয়ে আনন্দ উল্লাসে মিছিল করেছ, কিন্তু যখন সোনালী ধান পানির নিছে তলিয়ে গেল তখন তোমরা নিরব থাকতে তোমরা পার, কিন্তু আমি আর নিরব থাকতে পারিনা। আমি যে এক কৃষকের ছেলে। তাই বিবেকের তাড়নায় আজ কিছু লিখার চেষ্টা করছি। আর আজ থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লিখব। বৈশাখের নামে তোমরা নগ্ন উৎসবে মেতে উঠে আসমানী গজব নিয়ে এসেছো। তোমরা ইলিশ মাছ আর পান্তা ভাতের নামে গরীব অসহায় কৃষকের সাথে উপহাস করেছো। তোমরা বিত্তবান তোমরা হাই সোসাইটির মানুষ। তোমাদের প্রজন্ম এই কৃষকের কষ্ঠার্জিত ধান তোলার ইতিহাস কোনদিন জানতে চাইবেনা। কিন্তু আমি এক কৃষকের ছেলে, সারাজীবন কৃষক সমাজের পক্ষে কথা বলেই যাব। আল্লাহ যেন সেই তৌফিক দান করেন সবার কাছে এই দোয়া কামনা করছি। আর সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে বিনীত আবেদন করছি। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপুরন দেয়া হোক। আর না হলে এই অসহায় কৃষকের অশ্রু আপনাদের ধ্বংস অনিবার্য করে তুলবে। আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠবে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পুলিশী পাহারায় নারীর বস্ত্রহরনের মত নগ্ন উল্লাস করেছো। এবার রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় সারাদেশের মসজিদে মসজিদে বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করুন। যে কয়টা হাওড় তলিয়ে গেছে তাদের ক্ষতিপুরনের ব্যাবস্থা করুন। আর যে কয়টা এষনও বাকী আছে তা রক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করুন। আল্লাহ আমাদের প্রকৃত বাস্থবতা উপলব্দি করার মাধ্যমে অসহায় কৃষকের পাশে দাড়াঁনোর তৌফিত দিন, আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৭৭৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভাল লাগল অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন