XXXXX ক্রসফায়ার XXXXX
লিখেছেন লিখেছেন লিচু চোর ০০৭ ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৭:১৫:৩৩ সন্ধ্যা
XXXXক্রসফায়ারXXXX
( যে লেখাটি চুরি করতে গিয়ে কান্না চেপে রাখতে পারি নি )
গুলিবিদ্ধ লাশটা পড়ে আছে সামনে। অবিকৃত শরীরে চোখ দুটো খোলা... মুখের কোনে হাসিটা তখনো লেগে আছে। চোখদুটো বন্ধ করার মৃত্যু তাকে এতটুকু সময় দেয়নি। কেবল বুকের মাঝখানটায় নয়ঠি ছিদ্র। প্রতিটা গুলিই পিঠ দিয়ে একটা বড়সড় অংশ নিয়ে বেরিয়ে গেছে। হয়ত খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে বলে স্থানীয় এক প্রবীন মন্তব্য করলেন। সঙ্গে সঙ্গে পাশের সকলেই তাকে সমর্থন জানালো। বড় ভাল ছেলে ছিল বলে সকলেই আফসোস করতে লাগলেন। পাশে বসা এক প্রবীন হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন দু হাত উঁচু করে...“আল্লা তুমি এর বিচার কর।” ইনি আজাদের বাবা। তার তিন ছেলের মধ্যে এই মৃত ছেলেটাই ছিল সবার বড়। সর্বদা প্রান চঞ্চল সাদা হাস্য এই ছেলেটা পড়ালেখায় বেশ ভাল হলেও অর্থাভাবে বেশিদুর এগিয়ে নিতে পারেননি। জীবনের শেষ ধাপে এসে এখন নিজেও আর কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। তাই নিজের কিছু জমি বিক্রি করে পাশের বাড়ির এক দালালের মাধ্যমে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে দেবার সব বন্দোবস্ত করেছেন। আশ্বাস মিলেছে আগামী এক মাসের মধ্যেই ভিসা হয়ে যাবে বলে।
“তোমারে আর কাজ করতে হইবো না... আমি প্রতি মাসে টাকা পাঠামু... খরচ করতে কার্পন্য করবানা কিন্তু...”... বৃদ্ধ বাবা আশায় বুক বাধেঁন। ছেলের উপর তার বিশ্বাস অনেক। ছেলেটা কখোনো তার বিশ্বাস ভাঙ্গেনি। কিন্তু এই প্রথমবার ছেলে তার বিশ্বাস ভেঙ্গেছে জন্ম জন্মান্তরের মত...। আর সে শোনাবেনা কোন আশার বানী। পাশেই এক বৃদ্ধা বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন। যখনই জ্ঞান ফিরছে ফের বিলাপ করছেন আর মূর্ছা যাচ্ছেন। গত পরশু থেকে একমুঠো খাবারও মুখে তোলেননি। ছেলেকে রেখে তিনি কি করে খাবার মুখে তুলবেন? ছেলেটা তার ইলিশ মাছের ডিম ভাজা খাবে বলে একটা বড়সড় ডিম ওয়ালা ইলিশ মাছ নিয়ে এল পরশু সকালে। ইলিশের ডিম ভারী পছন্দ ওর। ডিমের ভাগ সে কাউকেই দেয়না। এ নিয়ে ছোট ভাইদের অভিযোগও কম শুনতে হয়না মাকে। সেদিনও বলে গিয়েছিল...“ডিমগুলো লুকাইয়া রাইখো মা... সবুজ যেন না দ্যাহে” বাইরে যেতে যেতে বলে “আগের মাছটার ডিমগুলান ভাঙ্গা পাইছি... নিশ্চয়ই সবুজ খাইছে”
জননী হাসেন। বলেন...“কৈ যাস বাপ”।
“হাটে। দুপুরেই আসমু”
“কলিমের ফার্মাসী থাইক্যা একখান গ্যাস লইয়া আহিছ... অরে কবি ভালা গ্যাস দিতে... এত তাড়াতাড়ি শেষ হয় ক্যামনে?”... কদিন থেকে ম্বাসের ব্যমোটা বড্ড বেড়েছে। ডাক্তার বলেছে নিয়মিত গ্যাস নিতে।
ছেলেটা হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল। ফিরলো তবে লাশ হয়ে। গ্যাসটা ওর পকেটেই ছিল। মাছের ডিমগুলোও যেমনি ভেজে রেখেছে তেমনি আছে। শুধু খাবার লোকটা নেই।
সবার অলক্ষ্যে আড়ালে একটি মূর্তি দন্ডায়মান। নিরাবেগ দৃষ্টি মেলে দাড়িয়ে আছে। চোখ দুটো শুকনো। হয়তো চোখের পানি ফুরিয়ে গেছে। নয়তো বড্ড অভিমান হয়েছে গত দুদিন থেকে একটি বারের জন্যও চিবুকে হাত রেখে “তোমাকে ভালবাসি” না বলার কারনে। জানে সে আর কখোনো শোনাবেনা ভালবাসার কথা। কখোনো গাইবেনা হেড়ে গলায় ভালবাসার গান। ভিড়ের মধ্যে একটি দেড় বছরের শিশুকে ছুটে বেড়াতে দেখা গেল। কিচুক্ষন পরপর সে বাবার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছিল। নতুন একটা জামা পড়েছে সে। সেটা বাবাকে দেখাতে হবে তো...! সে আজ মহা খুশি। দুদিন পর বাবাকে কাছে পেয়েছে। “আব্বু... সুন্নু...সুন্নু” বারবার একটি কথাই বলছে সে। তাকে সরিয়ে দেয়া হলেও বারবার ফিরে আসছে। মা জানে ততক্ষন পর্যন্ত সে ক্ষান্ত দেবেনা যতক্ষণ তার বাবা তাকে কোলে তুলে দু গাল টেনে আদর করে না দিবে। পাশেই দাড়িয়ে আছে আঠারো কুড়ি বছরের দুটি ছেলে। ওরা লাশের আদরের ছোট ভাই। ওরা নির্বাক দাড়িয়ে আছে। দরবিগলিত তপ্ত অশ্রু দু চোয়াল বেয়ে ভুমে গড়িয়ে পড়ছে ফোটায় ফোটায়। দু জোড়া চোখে প্রতিশোধের আগুন যেন জ্বলছে দাউ দাউ করে। এক বৃদ্ধা গঞ্জ থেকে একটা পত্রিকা নিয়ে এসেছেন। জাতীয় দৈনিকে স্থান হয়নি... স্থানীয় দৈনিকে ছোট করে শিরোনাম হয়েছে “পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সন্ত্রসী আজাদ নিহত।” ........ এম এ আরমান(ফেসবুক পোষ্ট)
বিষয়: বিবিধ
২৩৮৯ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাবাব শোনবে না এখন, আল্লাহ চাহেতো সেদিন ছোট্ট বাবুটির ডাক শোনে খুশিতে বুকে চেপে ধরে চুমুয় চুমুয় ভরে দেবে।
আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার সৎ বান্দাদের তিনি পুরুষ্কৃত করবেন, হয় এ জীবনে নয়ত পরলোকে।
পত্রিকার পাতায় নাই বা আসল আজাদের নিহতের খবর, হলুদ মিডিয়া নাই বা তাকালো আজাদের ক্ষত বিক্ষত লাশের দিকে। তাতে কি বা দুঃখ করার আছে, আল্লাহ নিশ্চয় তাকে শহিদদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছেন।
তার শাহাদাতের স্বীকৃতি দুনিয়ার মানুষের কাছে পাওয়া জরুরী নয়, যদি আল্লাহ সম্মানিত করে শহীদি মর্যাদায়।
আল্লাহ্ তাদের জীবনের বিনিময়ে বাংলার জমিনে ইসলামকে বিজয়ী করুন, আমাদের এই সব ভাইদেরকে কবুল করে জান্নাত দান করুন। আমীন, আমীন, আমীন ।
ফেরাউন, নম্রুদের চেয়েও ভয়ানক পরিণতি হবে এই নব্য জালিম ফেরাউনের।
ধন্যবাদ ,ধন্যবাদ, ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন