কোরান অর্থই আল্লাহ-রাছুলের হাদিছ
লিখেছেন লিখেছেন শুভ্র ১৮ জানুয়ারি, ২০১৫, ১২:১৭:২৭ দুপুর
কোরানের ব্যাখ্যা কোরান নিজেই; তা কোরানের পাতায় পাতায় সাক্ষী আছে। মহানবীর জীবিতাবস্থায় ‘হাদিছ’ শব্দটির অর্থ ছিল একমাত্র অহি; হাদিছ বলতে তখন কোরানকেই বুঝাতো এবং বুঝতো। তার প্রমাণস্বরূপ নিম্নবর্ণিত আয়াতগুলো লক্ষণীয় :
১. আল্লাহু...মাছানিয়া [৩৯: যুমার-২৩] অর্থ: আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন উত্তম বাণী (হাদিছ) সম্বলিত গ্রন্থ যা সুসামঞ্জস্য এবং যা পুনঃ পুনঃ আবৃত্তি করা হয়...।
২. ফামা-লি-হা... হাদিছা। [৪: নিছা-৭৮] অর্থ: এ জাতির হল কী! যে তারা একেবারেই কোনো কথা (হাদিছ/অহি) বোঝে না!
৩. ফালা’আল্লাকা... হাদিছা আছাফা। [১৮: কাহফ-৬] অর্থ: তারা এই বাণীতে (হাদিছ/অহি/কোরান) বিশ্বাস না করলে সম্ভবত তাদের পেছনে ঘুরে তুমি দুঃখে আত্মহত্যা করে ফেলবে!
৪. ফালইয়া‘তু...ছাদিকীন। [৫২: তুর-৩৪] অর্থ: তারা যদি সত্যবাদীই হয় তবে এই বাণীর (হাদিছ/অহি/কোরানের) সাদৃশ্য (হাদিছ) উপস্থিত করুক না!
[শরিয়ত আল্লাহর অহির বিরুদ্ধে কূট-কৌশলে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে ৬ খানি গায়রে মতলু অহি (পড়ার অযোগ্য হাদিছ) রচনা করেছে]
৫. মা কা না হাদিছা...ইউমিনুন। [১২: ইউসুফ-১১১] অর্থ: তাদের কাহিনীতে (কিচ্ছায়) রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য শিক্ষা। এটা এমন বাণী (হাদিছ/অহি/কোরান) যা মিথ্যা রচনা নয়। এবং বিশ্বাসীদের জন্য এটা অতীত গ্রন্থে যা আছে তারই সমর্থক ও বিশদ ব্যাখ্যা বিবরণপূর্ণ হেদায়েত ও রহমত।
৬. ফাবিআয়্যি...ইউমিনুন। [৭: আরাফ-১৮৫] অর্থ: ...তবে এরপর তারা কোন্ কথায় (হাদিছে) বিশ্বাস করে!!
৭. আফামি...হাদিছি তা’জ্বাবুন। [৫৩: নজম-৫৯] অর্থ: তোমরা কি এই কথায় (হাদিছে) বিস্ময় বোধ করছো?
৮. হাল আতা-কা হাদিছু...মুক্রামীন। [৫১: যারিয়াত-২৪] অর্থ: তোমার নিকট ইব্রাহিমের সম্মানিত মেহমানদিগের সম্বন্ধে বৃত্তান্ত (হাদিছ) এসেছে কী?
৯. অ হাল...হাদিছু মূছা। [২০: ত্বহা-৯; ৭৯: নাজিয়াত-১৫] অর্থ: মূছার বৃত্তান্ত (হাদিছ) তোমার নিকট পৌঁছেছে কি?
১০. হাল...সেইয়াত। [৮৮: গাসিয়া-১ ] অর্থ: তোমার নিকট আবৃত করার (কেয়ামত) সংবাদ (হাদিছ) এসেছে কি?
শরিয়ত আল্লাহর হাদিছ কোরানের বিরুদ্ধে কূট-কৌশলে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে ৬ খানি গায়রে মতলু অহি (পড়ার অযোগ্য হাদিছ) রচনা করেছে।
সম্পূর্ণ কোরানখানিই আল্লাহর অহি এবং মহানবীর পবিত্র মুখ নিঃসৃত হাদিছ: ‘ইন্নাহু লা কাউলু রাছুলিন কারীম’। [৬৯: হাক্কা: ৪৪; ৮১: তাকবীর-১৯] অর্থ: অবশ্যই ইহা (কোরান) সম্মানিত রাছুলের হাদিছ/বাণী। মহানবীই বলেছেন যে এটা আল্লাহর অহি/হাদিছ।
পূর্বে বহুবার আলোচিত হয়েছে যে, রাছুলের মৃত্যুর প্রায় ২৫০/৩০০ বৎসর পরে ব্যক্তি ও দলের রচিত হাদিছকে আল্লাহর কোরানের ব্যাখ্যা হিসেবে প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন। কথিত হয় যে, রাছুলের জীবিতাবস্থায়ই কোরান লিখিত হওয়ার পরেও একবার নয়, দুইবার জিব্রাইল কর্তৃক পরীক্ষিত ও সংশোধিত হয় (কাল্পনিক)। পক্ষান্তরে প্রচলিত হাদিছ রচিত হয় রাছুলের ওফাতের পাঁচ/ছয়টি পুরুষ অতিবাহিত হওয়ার পরে। হাদিছ যাদের নামের বরাতে বর্ণিত হয়েছে, তাদের দাদা-পরদাদা এবং তাদের দাদা-পরদাদাগণও রাছুলকে দেখেননি। অতঃপর জিব্রাইল রাছুল এমনকি তার একান্ত ছাহাবা, খোলাফায়ে রাশেদ্বীন কর্তৃক অনুমোদন তো দূরের কথা দেখেননি পর্যন্ত! আর দেখলে অবশ্যই পূর্বের মতোই জ্বালিয়ে দিতেন [দ্র: হা: স: খোলাফায়ে রাশেদ্বীনের ভূমিকা]। আশাকরি এবং দৃঢ় বিশ্বাস যে, বিশ্বের কেউই এতে দ্বিমত পোষণ করতে পারবেন না।
মূলত মহানবীর নামে লিখিত হাদিছ, ফেকহাদির অধিকাংশই মিথ্যা, ভুল, যুক্তিহীন, ভিত্তিহীন, বাস্তব ও কোরান-বিবর্জিত ও বিরুদ্ধ। প্রকৃতপক্ষে মহানবী তা বলেননি বা করেননি, যার যুক্তিপ্রমাণ কোরানের পাতায় পাতায় বর্ণিত আছে। তবে যে সমস্ত হাদিছ কোরানের সাথে হুবহু মিল আছে, সেগুলো গ্রহণ করতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। যেমন: একদা জনৈক ব্যক্তি বিবি আয়শার নিকট অনুরোধ করলেন, “রাছুলের জীবনী সম্বন্ধে কিছু জানাবেন কি?’’ তিনি উত্তর দিলেন, “আপনি কি কোরান পড়েননি?’’ (দ্র: অস্পষ্ট) হাদিছটি নিজেই সমগ্র ছেহা-ছেত্তাকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছে তাতে হাদিছবেত্তাগণের অস্বীকার করার যুক্তি নেই। অতএব, এমন ছেহাছেত্তাকে ছহিহ্ মহা-ছহিহ্ এবং নির্ভুল ঘোষণা করা এবং আল্লাহর কেতাবের ব্যাখ্যা হিসেবে বিশ্বাস করার অর্থই কোরানকে প্রত্যাখ্যান করা। যার অর্থই মুছলিম জাতিকে শ্লো-পয়োজনে অণু অণু করে ধ্বংস করার সুদূরপ্রসারী সূক্ষ্ম পরিকল্পনা। আর এ পরিকল্পনার শিকার ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় সরল-অসরল সমগ্র মুছলিম সমাজ! যে দু-চারটি সত্য কথা হাদিছে আছে তা আলবৎ কোরানেই আছে।
অত্যন্ত আশা ভরসার কথা যে, ছুন্নী মুছলিম রাষ্ট্র ক্ষমতাধর লিবিয়ান সরকার বোখারী হাদিছ তার দেশে হারাম (নিষিদ্ধ) ঘোষণা করেছেন। (দ্র: ‘ধর্মের নামে’, পৃ: ৫৯; অধ্যাপক মু. আখতার হুসাইন]
বোখারী হাদিছ নিষিদ্ধ করার অর্থই ছেহাছেত্তার ৯৯% শতাংশ হাদিছ নিষিদ্ধ বলে প্রতিপন্ন হয়। অথচ শরিয়ত শামুক স্বভাব ধারণ করে আছেন যেন কিছুই জানে না। বিশ্বের একটি ছুন্নী মুছলিম দেশও এর প্রতিবাদ করেনি। ঘটনাটি যদি সত্যই হয় তবে মুয়ামার আল-গাদ্দাফীর এই বলিষ্ঠ ঐতিহাসিক অবদান অবর্ণনীয় ।
‘হাদিছ কোরানের ব্যাখ্যা’ এটা ছিল তাদের প্রাথমিক শ্লোগান; এবং এতে তারা পূর্ণভাবেই সফল হয়েছে; অতঃপর দ্বিতীয় শ্লোগান: ‘হাদিছের ব্যাখ্যা ফেকহা’ এতেও তারা কৃতকার্য হয়েছে; অতঃপর তৃতীয় শ্লোগান: ‘ফেকহার ব্যাখ্যা এজমা’ এতেও তারা পূর্ণ সফল; অতঃপর চতুর্থ শ্লোগান: ‘এজমার ব্যাখ্যা কেয়াছ’, এখানেও তারা অনিবার্য ফল পেয়েছেন; আর শেষ শ্লোগান: ‘কেয়াছের ব্যাখ্যা ফতোয়া।’ এই পাঁচ দফা দাবি পরিপূর্ণভাবেই আজ মুছলিম সমাজে প্রতিষ্ঠিত আছে। মানবজাতি তথা ইছলামের সংবিধান আল্লাহর কেতাবের উপরে মানুষ রচিত ৫ খানি (হাদিছ, ফেকহা, এজমা, কেয়াস ও ফতোয়া) দু’নম্বরী বিশাল বিশাল শরিয়তি সংবিধান দণ্ডায়মান! কর্মজীবী বা সাধারণ অসাধারণ মানুষের পক্ষে এই ৫ খানি উপ-কেতাব ভেদ করে আল্লাহর কেতাবের কাছে পৌঁছা একেবারেই অসম্ভব ও অবাস্তব হয়ে পড়েছে! অর্থাৎ ইবলিছের ওয়াদা সে পূর্ণভাবেই পূর্ণ করতে সক্ষম হয়েছে। আজ যে কেউ কোরানের কথা বললে, লিখলে ঐ দু’নম্বরী শরিয়তী বিধান দিয়ে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। যদিও কোরান ঘোষণা করে:
“অল্লাজীনা...মুহদ্বারুন” [৩৪: সাবা-৩৮] অর্থ: যারা আমার আয়াতকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করে, তারা শাস্তি ভোগ করবেই করবে।
কোরান সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল এবং পূর্ণভাবেই স্বয়ংসম্পূর্ণ। অর্থাৎ কোনো দিক থেকেই এর ঘাটতি নেই, দুর্বলতা নেই; অন্য কোনো কেতাবের সাহায্য সহযোগিতা প্রত্যাখ্যান করে। মূলত কোরানের পরে মনুষ্যরচিত যাবতীয় উপ-ধর্ম গ্রন্থাদি ফতোয়ার অন্তর্ভুক্ত; বিভিন্ন নামে সমাজে প্রচার ও প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
মনুষ্যরচিত উপ-ধর্ম গ্রন্থগুলো এক্ষণে প্রত্যাখ্যান করে কোরানের প্রতি ফিরে আসলে মুহূর্তের মধ্যেই শীয়া, ছুন্নী, ওহাবী, আহম্মদিয়া, হানাফী, শাফেঈ ইত্যাদি কোরানের আলোকে অবৈধ দল উপ-দলগুলোর অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে সকলেই মুছলিম নামে একত্রিত হতে পারে। মহানবী শীয়া, ছুন্নী ইত্যাদি ছিলেন না! তিনি ছিলেন একমাত্র মুছলিম। অতএব তাঁর উম্মতের পরিচয় ‘মুছলিম’ ব্যতীত অন্যকিছু নয়।
প্রকাশ থাকে যে, প্রত্যেকটি কেতাবীদলের একাধিক দল উপ-দল এবং উপ-ধর্মগ্রন্থ অর্থাৎ দুনম্বরী গ্রন্থ রয়েছে। তারাও যদি অনুরূপ তাদের উপ-ধর্মগ্রন্থ ছেড়ে তাদের মূল ধর্মগ্রন্থে ফিরে আসে তবে তাদেরও দল উপ-দলগুলোর অস্তিত্ব থাকবে না। অতঃপর একুনে দেখা যাবে: তওরাত, যব্বুর, ইঞ্জীল, গীতা, বেদ, ত্রিপিটক, জেন্দাবেস্তা, গ্রন্থসাহেব ইত্যাদি মানেই কোরান; আর কোরান মানেই অতীতের সকল ঐশী গ্রন্থের সমাহার। মনুষ্য ধর্মে আর কোনো ভেদাভেদ নেই। মনুষ্যজাতির জন্মের সূত্র এক, পরিণতিও এক; পৃথিবী এক এবং আল্লাহও একাকার অভিন্ন। অতএব মনুষ্যধর্মও এক ও অভিন্ন; অবিচ্ছিন্ন মানবজাতির মানবধর্ম মানেই সনাতন ধর্ম, সাম্যবাদের ধর্ম, প্রাকৃতিক বা আল্লাহর মনোনীত ধর্ম; এখানে সাম্প্রদায়িকতার স্থান নেই।
এমন একটি কালের শুভাগমন হিন্দু, মুছলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইহুদি, শিখ, জৈন কে না কামনা করে! কামনা করেন না শুধু সকল জাতির বিভ্রান্ত, গোঁড়া, ধর্মান্ধগণ।
জামাতে ইছলামের মতো একটি অন্যতম প্রতিষ্ঠিত দল উক্ত গ্রন্থে বর্ণিত কোরানিক দর্শনগুলো ইচ্ছা করলে অতি সহজেই সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে পারে, এ ক্ষমতা তাদের রয়েছে। আর তাতে শুধু বাংলাদেশ কেন সমগ্র মুছলিম বিশ্বের নেতৃত্ব তাদের হাতে আসতে পারে, মাথায় বসতে পারে মানবধর্ম সংস্কারের মুকুট। প্রত্যেকটি দলের মধ্যে অসংখ্য প্রকৃত ধার্মিক রয়েছেন, তাদেরও উচিত এই সর্বশ্রেষ্ঠ পবিত্র দায়িত্ব গ্রহণ করা।
পুনর্বার নিম্নবর্ণিত আয়াতদ্বয় যাবতীয় সকল আলোচনার উর্ধ্বে সকলের এবং সকল সময়ের জন্য স্মরণ রেখে ধর্মানুশীলন ও ধর্মপ্রচার এবং আলোচনা সমালোচনা করা অত্যাবশ্যকীয়:
এগুলো আল্লাহর বাণী, যা তিনি বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। সুতরাং তারা আল্লাহ ও তার বাণী (কোরান) ত্যাগ করে আর কার হাদিছে বিশ্বাস করবে? [৪৫: যাছিয়া-৬; ৭৭: মুরসালাত-৫০]
ref: http://www.humanrelreformation.org/
বিষয়: বিবিধ
১৪২৫ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন