অমানুষ গড়ার কারিগর-১
লিখেছেন লিখেছেন TAREEF ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৫:০১:৩৫ সকাল
ভারতের দেড়শ কোটি মানুষ যাকে জাতির পিতা মানে, সেই মহাত্মা গান্ধীর মতে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শাসক খলীফা উমর (রা)। শুধু তিনি নন,"এককভাবে মানবতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বাস্তব দৃষ্টান্ত স্থাপন করা এই মহানায়কের ভক্ত বিখ্যাত নোবেল জয়ী সাহিত্যিক জর্জ বার্নার্ড শ'সহ অগণিত বিখ্যাত [অমুসলিম] মানুষ!"
আপনার সন্তান সেই মহানায়কের জীবনী কতটা জানে? আপনি যতটা সহানুভূতি, আদর্শ, ন্যায়পরায়ণতা শিক্ষা দিবেন- তাদের কাছে ততটাই আশা করা উচিত। আর যদি না জানে...
জনৈক সাহাবী বলেন: ছোটবেলায় আমি একদিন বাইরে খেলতে যাচ্ছিলাম। তখন আমার মা আমাকে কিছু দিবেন বলে ডাকছিলেন। মহানবী মুহাম্মদ [সা] এটা শুনে মা'কে জিজ্ঞেস করলেন,"তুমি কি সত্যি ওকে কিছু দিতে চাও?"
মা বললেন,"হ্যা, খেজুর দিব।"
মুহাম্মদ [সা] বললেন: "তাহলে ঠিক আছে। না হলে জেনে রাখো, মিথ্যা বলার জন্য তুমি গোনাহগার হয়ে যেতে।"
এভাবে ইসলাম শিখিয়েছে শিশুদের মানসিকতা তৈরির উপায়। ভুল বা মজা করেও মিথ্যা বলা নিষেধ। যারা মিথ্যা কার্টুন, গল্প বা নাটক-সিনেমা দেখে বড় হয় তারা আর যাই হোক- সত্যের উপর অবিচল থাকতে পারেনা। ফলে সমাজে তো বটেই, নিজ পরিবারেও অশান্তি নেমে আসে। ভাই-বোনদের মাঝেও চলে স্বার্থসিদ্ধির প্রতিযোগিতা, যার মধ্যে পিতামাতাকে হাতখরচ দেয়ার বিষয়টিও থাকে!!
উমর [রা] সবার কাছেই নায়ক, কারণ তাঁর রাগ, অভিমান, শান্তি-অশান্তি সকল উত্তেজনা ছিল ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে। বর্তমানে আমরা উত্তেজিত হই "মায়া সফটওয়্যার, মেকআপ, নারীদেহ আর মিউজিকে তৈরী ভুয়া নাটক-সিনেমা দেখে!" আমরা রঙ দেখে পছন্দ করি বলেই- দুশ্চরিত্রা পঁচা আমে রং মেখে বিক্র করে। একই কারণে পঁচা আবর্জনায় রঙের প্রলেপ দিয়ে নাটক সিনেমা তৈরী হয়।"
দুবছর আগে সিলেটে একটি বাসে আগুন লাগে। সব যাত্রী বের হতে পারলেও এক বৃদ্ধ পারেনি। তিনি জানালা দিয়ে শুধু পা বের করতে পারেন আর সেভাবেই জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা যান। তিনদিন পর জানা যায়, একাকী ওপারে পাড়ি দেয়া বৃদ্ধটি ছিলেন "বিদেশে থাকা দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়িকার বাবা!"
আদর্শ লিপি বই এখন বিলুপ্ত। সকালে উঠে মনে মনে ভালো হয়ে চলার শপথও নেয়া হয়না। অভিবাবকও ব্যাস্ত টিভি নিয়ে। যারা জানেনা যে, তাদের এই টিভি প্রেমের জন্য পতিতা বা চা বিক্রেতা তাদের সন্তানের আদর্শ হচ্ছে! ফলে যখন শেষ বয়সে সব রং হারিয়ে সন্তান কতৃক নিগৃহীত হয়, সবাই দোষ দেবে সন্তানকে! কারণ "রং দেখে পঁচা খাওয়া যার অভ্যাস," সে বিয়েও করে র্ং দেখে- ঈমান বা চরিত্র দেখে নয়! এরা রংহীন পিতামাতাকে অবজ্ঞা করবে- সেটাই স্বাভাবিক নয় কি?
কিশোরগঞ্জের একলোক রাজস্ব বিভাগে চাকরি করে। তার পিতা স্বভাব অনুযায়ী লুংগী পরে ছেলের অফিসে আসেন। রং দেখে বেড়ে ওঠা ছেলে পিতার পরিচয় দিতে কুন্ঠাবোধ করে। সেই পিতা পাকুন্দিয়া'র নিজ বাড়ীতে ফিরে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পরেন, শেষে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে মারা যান। এভাবে নিজ কর্মের ফল দেখতে দেখতেই এপার থেকে ওপারে পাড়ি জমান এই হতভাগা পিতা!!
বিখ্যাত এক চলচিত্র নির্মাতা বলেছেন, আগে নায়িকা খুঁজতে দিনরাত পতিতাপাড়ায় ঘুরতে হতো, এখন ভার্সিটির মেয়েরা নায়িকা হতে লাইন দিয়ে দাড়িয়ে থাকে! এরপর এটা বোঝা কি খুব কঠিন- আমরা কি দেখে পুলকিত হই?? ময়মনসিংহের এক ব্যক্তি স্বাস্থ্য সচিব ছিলেন। পরিবার পরিকল্পনার কোটি কোটি টাকার লুটপাটে অংশ নিতে চাপ দেয়া হলেও, তিঁনি নিজ আদর্শে ছিলেন অবিচল! বৃদ্ধাবস্থায় বিছানা থেকে উঠতে পারতেন না। তবে সেটাও ছিল সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ। কারণ মৃত্যু পর্যন্ত তিঁনি সন্তানের কোলেই বাথরুম, খাওয়া-দাওয়া করতেন। ব্যাংক কর্মকর্তা ছেলে বাবার সবকাজ নিজহাতে করতো। মায়ের কোলের মতোই নিরাপদে- বেহেশতের সুবাস নিতে নিতে ওপারের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান তিঁনি। বাবার অযত্ন হবে ভেবে পিতার মৃত্যুর আগে ছেলে বিয়ে করেনি! এখনো রংহীন অথর্ব পিতার মলমূত্রের মাঝে অনেকেই ঐশ্বর্য খুঁজে পায়!! তেঁতুল গাছে কি আর আপেল ধরে?
শয়তানকে বেশী সুযোগ দিলে, ধীরে ধীরে সে মনের চালকের আসনে বসে। ফলে তার নির্দেশিত পথেই চলতে থাকে জীবন। সূরা ইয়াসিনে আল্লাহ হুশিয়ারী দিয়ে বলেছেন:"তাদের গলায় শেকল দেয়ায় তারা উর্ধ্বমূখী, তাদের সামনে ও পেছনে দেয়াল, ফলে দেখেনা..।" যার প্রমাণ সর্বত্রই। পুরুষদের সুড়সুড়ি দিতে নানারকম পোশাক, অংগভংগি করে ঘুরে বেড়ানো মেয়েদের সাথে হিজাব পরা মেয়েও দেখা যায়!! মুহাম্মদকে(সা) আল আমিন বা বিশ্বাসী নাম দেয় কাফেররা। অথচ এত বিশ্বাস নিয়েও "ইসলাম নিষিদ্ধ বিষয় ত্যাগ করতে পারবেনা বলে" তারা মুসলমান হয়নি। তেমনি মেয়েরা হিজাব পরা বান্ধবী পছন্দ করে, বিশ্বাস করে। তবে কুকর্ম ত্যাগ করতে হবে বলে নিজে পালন করেনা। কৃত্রিম রঙে আবৃত চোখ সামনে থাকা পবিত্র জীবন অনুভব করেনা, গলায় শেকল নিয়েই মৃত্যুঅব্দি সমাজকে কলুষিত করে বেড়ায়। অনেক মা নিজের রঙ শেষ হলে- কন্যাকে প্রদর্শন করে। এতে যে তার নিজেরই কালো অতীত প্রকাশ হয়, সেটা বোঝার ক্ষমতাও থাকেনা। এভাবে জীবন শুরুর আগেই সব রং হারিয়ে বাকী জীবনের জন্য বিকৃত রঙ্গের সন্ধান করে...!
আরেকটি বাবার গল্প দিয়ে লেখা শেষ করছি। ব্রাম্মনবাড়ীয়া থেকে চিকিৎসার কথা বলে ঢাকায় এনে-"বৃদ্ধ পিতাকে ডাস্টবিনে ফেলে পালায় সন্তানরা।" কূশিক্ষার আবরণে তৈরী এই দানবরা মানবশিশু হয়েই জন্মেছিল। বৃদ্ধের দেয়া কৃত্রিম রঙের নেশায় পালিয়েছে ওরা। রেখে গেছে নির্ভেজাল পঁচা আবর্জনা। এরমাঝে সারারাত শুয়ে বৃদ্ধ। তার এখন কালো ছাড়া কোন রং নেই। ভয় করছে না, তবে শীতে কষ্ট হচ্ছে। হটাৎ মনে পড়ল, ছেলেরা ছোট থাকতে প্রচন্ড শীতে ওদের প্রস্রাব ভেজা কাপড়ে ঘুমাতে হতো। কিন্তু কোন কষ্ট হতোনা, ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে ঘুমিয়ে পড়তো। শীত তাড়াতে আজ আবার সন্তানের মুখ কল্পনার চেষ্টা করল বৃদ্ধ..।
আশ্চর্য! সন্তানের চেহারা মনে পড়ছেনা। দুটো কুকুর খাবার খোঁজে পাশেই ঘুরঘুর করছে, বারবার এদের ছবিই ভাসছে মনে। এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ছে, চোখের পানি আটকে রাখাও কষ্ট হচ্ছে। ...নিকষ কালো আধাঁরে বৃদ্ধের মস্তিষ্ক সর্বশক্তিতে সন্তানের মুখ খুঁজে ফিরছে !!
°°°°°°°°°
বিষয়: বিবিধ
৯৬৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন