ছাত্রশিবিরের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

লিখেছেন লিখেছেন সোহেল মোল্লা ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৬:০৮:৫৩ সন্ধ্যা

মানুষের পরিচয়

আমরা মানুষ,সৃষ্টির সেরা জীব। আশরাফুল মাকলুখাত, মহান আল্লাহ অসংখ্য ছোট-বড় সৃষ্টির মধ্যে একমাত্র মানুষকেই সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। সব সৃষ্টিকেই তিনি একটি নিয়মের অধীন করে দিয়েছেন। কিন্তু মানুষকে তিনি ইচ্ছার স্বাধীনতা দিয়েছেন। মানুষ যা চায় তাই করতে পারে। এত বড় মর্যাদার সাথে তিনি মানুষকে করেছেন খলীফা বা প্রতিনিধি। মানুষ সৃষ্টির আগে তিনি ফেরেশতাদের ডেকে বললেন,‘‘আমি পৃথিবীতে আমার খলীফা বা প্রতিনিধি প্রেরণ করব”। (সূরা বাকারা-৩০) খলীফার কাজ হচ্ছে মনিবের প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করা এবং পরে যার প্রতিনিধি তাঁর কাছে হিসেব দেয়া।

জীবন বিধান ইসলাম

আল্লাহ মানুষকে দুনিয়ায় পাঠালেন। সাথে দিলেন তাঁর পক্ষ থেকে হেদায়াত। মানুষ যখনই তাঁর দেয়া হেদায়াত ভুলে পথভ্রষ্ট হয়েছে তখনই আল্লাহ তা’য়ালা পাঠিয়েছেন নবী বা রাসূল। সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। তিনি খাতামুন্নাবিয়ীন, সাইয়্যেদুল মুরসালীন। তাঁর পর আর কোন নবী আসবেন না। তিনি মানুষের কাছে নিয়ে এসেছেন হেদায়াত গ্রন্থ আল-কুরআন। আল্লাহর মনোনীত একমাত্র জীবন ব্যবস্থা ইসলামকে তার মাধ্যমে পরিপূর্ণতা দান করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘‘ আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং আমার নিয়ামত তোমাদের প্রতি সম্পূর্ণ করলাম”। (সূরা মায়েদা-৩)

মুসলমানের পরিচয়

ইসলাম অর্থ আত্মসমর্পণ। তাই মানুষের মধ্যে যারা এ ইসলামকে কবুল করে বা আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণরুপে নিজেদের আত্মসমর্পণ করে তাদের বলা হয় ‘মুসলিম’। কেবল মুসলমানের ঘরে জন্ম হলেই কেউ মুসলমান হয়না, বরং কাফের মুশরিকদের ঘরে জন্ম নিয়েও কেউ যদি ঈমান আনে এবং ইসলামের সব বিধি-বিধান মেনে চলে তবে সেও মুসলিম। মানুষের মধ্যে মুসলিমরা সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি। কুরআনের ভাষায়, “তোমাদেরকে শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে, যেন তোমরা সৎ কাজের আদেশ দাও আর অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখ।“(সূরা- আলে ইমরান-১১০)

অন্য স্থানে বলা হয়েছে, “তোমাদেরকে মধ্যমপন্থি জাতি হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে, যেন তোমরা মানুষের জন্য সত্যের সাক্ষ্য হতে পার।“ (সূরা-বাকারা-১৪৩)

কিন্তু

আজ মানুষ ভুলে গেছে তার পরিচয়। মুসলমান বিস্মৃত হয়েছে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে। ফলে জলে-স্থলে সর্বত্র চলছে অনাচার, অবিচার ও অশান্তির প্রবল স্রোত। মানুষে মানুষে চলছে হানাহানি, কাটাকাটি, হিংসা-বিদ্বেষ, অসাম্য ও দূর্ভোগ। অসংখ্য বনী আদম অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরছে। অথচ লক্ষ লক্ষ টন খাদ্য সমুদ্রে ফেলে নষ্ট করা হচ্ছে, পারমানবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ব্যয় হচ্ছে কোটি কোটি ডলার। যাদের মুখে শোনা যায় শান্তির ললিত বাণী তারাই আবার অপরকে দেয় পারমাণবিক বোমার হুমকি। অসহায় মানুষ আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছে মুক্তির জন্য। মুসলমানদের অবস্থাতো আরো করুণ; আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, কাশ্মীরসহ বিশ্বের অনেক স্থানে মুসলমানদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলছে বেদ্বীনরা। ইরাকের মুসলমানদের উপর চলছে ইহুদীবাদের ক্রীড়নক মার্কিনীদের নেতৃত্বে বিশ্ব ইসলাম বিরোধী শক্তির ভয়াবহ নিষ্ঠুর নির্যাতন। এ ব্যাপারে মুসলমানদের কোন ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা নেই, নেই কোন কার্যকর পদক্ষেপ। তাই মুসলমানদের বিরুদ্ধে দিন দিন ষড়যন্ত্র তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। অবশ্য ইসলামের বিজয়ের সম্ভাবনাও দিন দিন বাস্তবরূপ লাভ করছে।

একদিন…

সব মানুষকেই মরতে হবে। ফিরে যেতে হবে মহান স্রষ্টার কাছে। কিয়ামাতের প্রবল প্রলয়ে সমস্ত কিছু ধ্বংসের পর মানুষের ভাল-মন্দের বিচারের সময় এসে যাবে। সেদিন যাদের ভাল কাজের পরিমাণ বেশী হবে তারাই মুক্তি পাবে, পুরস্কার হিসেবে পাবে চির শান্তির জান্নাত। আর যাদের মন্দ কাজের পাল্লা ভারী হবে তারা পাবে অবর্ণনীয় আযাবে ভরপুর চির দুঃখের জাহান্নাম। যে যেখানেই যাবে সেখানেই থাকবে চিরদিন, অনন্তকাল। সেদিন অবশ্যই সকলকে দুনিয়ার বর্তমান অবস্থায় তার ভূমিকা ও কাজ সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে।

তাই

আল্লাহ নিজেই সেদিনের মুক্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন। তাঁর কালামের ভাষায়, ‘‘তোমরা আল্লাহর রাস্তায় জান ও মাল দিয়ে লড়াই কর। এটিই হবে তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা বুঝ। তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করা হবে, আর তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে; যার তলদেশে আছে ঝর্ণাধারা।“ (সূরা আস্ সফ-১১-১২)

সুতরাং

আজকের এই অবস্থায় আমাদের উচিৎ ইসলাম সম্পর্কে জানা, কুরআন-হাদীস পড়া এবং মানুষের মুক্তির জন্য আল্লাহর পথে প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালানো, সৎ কাজের আদেশ দেয়া ও অসৎ কাজ হতে বিরত রাখা। কিন্তু এ কাজটি একা একা করা যায়না। এজন্য প্রয়োজন সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা। হযরত উমর রাঃ তাই বলেছেন, ‘‘দল ছাড়া ইসলাম হয় না।“ আমাদের দেশের অবস্থা বড়ই নাজুক। পৃথিবীর অন্যতম একটি দরিদ্র জনপদ এই দেশ। শতকরা ৪৯ জন মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করছে। মানুষের জীবনে নেই সুখ, নেই শান্তি, নেই কোন আদর্শের ছবি। শিশু কিশোররাও বেড়ে উঠছে অনৈতিকতার মধ্যদিয়ে। এ অবস্থা চলতে দিলে জাতির ভবিষ্যত গাঢ় অন্ধকারময়। এর হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রয়োজন একদল সচেতন লোকের। তাই এখানেও আল্লাহর পথে তরুণদের ডাকার জন্য, দেশের ভবিষ্যত নাগরিকদের আদর্শ ও চরিত্রবানরূপে গড়ে তোলার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তরুণ ও মেধাবী ছাত্রদের সংগঠণ- বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।কর্মসূচীঃ

উল্লেখিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ইসলামী ছাত্রশিবির প্রণয়ন করেছে বিজ্ঞানসম্মত পাঁচ দফা কর্মসূচী:

এক. দাওয়াত : তরুণ ছাত্রসমাজের কাছে ইসলামের আহবান পৌঁছিয়ে তাদের মাঝে ইসলামী জ্ঞানার্জন এবং বাস্তব জীবনে ইসলামের পূর্ণ অনুশীলনের দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত করা।

দুই. সংগঠন : যেসব ছাত্র ইসলামী জীবন বিধান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশ নিতে প্রস্তুত, তাদেরকে সংগঠনের অধীনে সংঘবদ্ধ করা।

তিন. প্রশিক্ষণঃ এই সংগঠনের অধীনে সংঘবদ্ধ ছাত্রদেরকে ইসলামী জ্ঞান প্রদান এবং আদর্শ চরিত্রবানরূপে গড়ে তুলে জাহেলিয়াতের সমস্ত চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মী হিসেবে গড়ার কার্যকরী ব্যবস্থা করা।

চার. ইসলামী শিক্ষা আন্দোলন ও ছাত্র সমস্যা: আদর্শ নাগরিক তৈরির উদ্দেশ্যে ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন সাধনের দাবিতে সংগ্রাম এবং ছাত্রসমাজের প্রকৃত সমস্যা সমাধানের সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান।

পাঁচ. ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ : অর্থনৈতিক শোষণ, রাজনৈতিক নিপীড়ন এবং সাংস্কৃতিক গোলামী হতে মানবতার মুক্তির জন্য ইসলামী সমাজ বিনির্মাণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো।

দেশের প্রতিটি জনপদ জুড়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির কাজ করে যাচ্ছে তার বিশাল কর্মী বাহিনী নিয়ে। শিবির একজন তরুণকে একই সাথে একজন ভাল ছাত্র ও একজন ভাল মুসলমান হিসেবে গড়ে তুলতে চেষ্টা করছে। ব্যক্তিগত রিপোর্টে পাঠ্য বই পড়ার ও ক্লাসে উপস্থিতির হিসেব রাখার ব্যবস্থা করে শিবির তার কর্মীদের ভাল ছাত্র হতে আগ্রহী করে তোলে।

ইসলাম যেমন সকল মানুষের কল্যাণের জন্য তেমনি ইসলামী ছাত্রশিবিরও মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সবার কাছে ইসলামকে সুন্দরভাবে তুলে ধরার কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই এই সুন্দর কর্মসূচী ও চরিত্রবান কর্মীদের প্রতি দিন দিন জনসমর্থন বাড়ছে। আসুন, আপনিও শিবিরের পতাকাতলে সমবেত হয়ে নিজেকে গড়ে তুলুন সুন্দর ও যোগ্যতম ব্যক্তি হিসেবে। শরিক হোন ইহকাল ও পরকালের মুক্তিকামী মানুষের এই কাফেলায়।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে জানতে হলে পড়ুন

ইসলামী ছাত্রশিবিরের সংবিধান

ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মপদ্ধতি

আমরা কি চাই, কেন চাই, কিভাবে চাই

এসো আলোর পথে

মুক্তির পয়গাম

ছাত্রসংবাদ

বিষয়: বিবিধ

১২৩৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

304667
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৪৮
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : মহান আল্লাহ এদলের সৈনিক বাড়িয়ে দিন।
আমিন।
304722
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০২:০৭
নাবীল লিখেছেন : শত চক্রান্তের মাঝে ও ইনশা আল্লাহ বাংলার জমীনে শিবিরই টিকে থাকবে।
308042
০৯ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০৩:১১
সোহেল মোল্লা লিখেছেন : Cook ভালো লাগলো

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File