অপপ্রচারের মোকাবেলায় মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা.
লিখেছেন লিখেছেন সোহেল মোল্লা ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৪:৫৩:১৫ বিকাল
আপন অবস্থান সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকলেই মানুষ সঠিক কাজটি করতে পারে। তা না হলে বেঠিক কাজ করে করেই মানুষ তার পৃথিবীর জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটনায়।
আমি কোত্থেকে এলাম, কোথায় এলাম, কেন এলাম এবং যাচ্ছি কোথায়? এগুলো মানুষের মনে দেদীপ্যমান বড় বড় জিজ্ঞাসা। মানুষ নিজের চিন্তাশক্তিকে ব্যবহার করে এই প্রশ্নগুলোর সন্তোষজনক জবাব পাওয়ার চেষ্টা করেছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এভাবে মানুষ সদুত্তর লাভ করে ধন্য হতে পারেনি। বরং মানুষ উত্তরোত্তর চিন্তার জটিল থেকে জটিলতর আবর্তে পড়ে নাকানিচুবানি খেয়েছে।
মানুষই নাস্তিকতাবাদ, অংশীবাদ, সর্বেশ্বরবাদ, বৈরাগ্যবাদ ইত্যাদির জন্ম দিয়েছে। রচনা করেছ বহুসংখ্যক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মতবাদ। এগুলোর কোনটিই চিন্তাশীল মানুষের মনে নিত্য-ঘূর্ণায়মান মৌলিক প্রশ্নগুলোর সঠিক জবাব নয়।
আসলে এসব জিজ্ঞাসার জবাব দেয়ার যোগ্যতা মানুষের আদৌ নেই। সেই জন্য মানুষের ¯্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিজই এসব প্রশ্নের জবাব মানুষকে দান করেছেন তাঁর বাছাইকৃত ব্যক্তিদের মাধ্যমে অর্থাৎ নবী-রাসূলদের মাধ্যমে।
আল্লাহ যুগে যুগে বহুসংখ্যক নবী-রাসূলের আবির্ভাব ঘটিয়েছেন মানবসমাজে। যেই সব দেশে তাঁরা আবির্ভূত হয়েছিলেন সেইগুলোলোর একটি থেকে অপরটির দূরত্ব অনেক। আবার, তাঁদের আবির্ভাবকালে ব্যবধানও অনেক বড়। কিন্তু একই উৎস থেকে লাভ করেছিলেন বলে তঁদের উপস্থাপিত জীবনদর্শন ছিলো অভিন্ন মানবজীবনের মৌলিক প্রশ্নগুলোর একই জবাব উচ্চারিত হয়েছে তাঁদের কণ্ঠে।
ঈসা (আ.)-এর আবির্ভাবকালের ছয়শত বছর পর আবির্ভূত হয়েছিলেন সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সা.।
আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ সা. অতীতের নবীদের মতোই আল্লাহপ্রদত্ত নির্ভুল জীবনদর্শনের ভিত্তিতে নি¤œরূপ বক্তব্য লোকদের সামনে পেশ করতে থাকেন।
ষ আল্লাহ এক, অদ্বিতীয়, অতুলনীয়, সর্বজ্ঞানী, সবদ্রষ্টা, সর্বশ্রোতা, সর্বশক্তিমান, অমুখাপেক্ষী চিরঞ্জীব সত্তা।
ষ আল্লাহ মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। মহাবিশ্বের মালিকানায় এবং পরিচালনায় তাঁর কোন অংশীদার নেই।
ষ এই পৃথিবী মহাবিশ্বের অংশ। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এই পৃথিবীতে তাঁর আবদ এবং খলিফারূপে কর্তব্য পালনের জন্য।ষ মানুষের সুন্দর জীবন, সুন্দর, সমাজ সভ্যতা বিনির্মাণের জন্য তিনি নবীদের মাধ্যমে জীবনবিধান পাঠিয়েছেন।
ষ মানুষের কর্তব্য হচ্ছে নবীদের প্রদর্শিত পন্থায় আল্লাহপ্রদত্ত জীবনবিধান নিজেদের জীবন এবং সমাজ জীবনে কায়েম করা।
ষ আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। মানুষের প্রয়োজন পূরণের জন্য অসংখ্য নিয়ামাত দিয়ে পৃথিবীকে ভরপুর করেছেন।
ষ আল্লাহ মানুষকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা এবং কর্মপ্রচেষ্টচার স্বাধীনতা দিয়েছেন। আবার, মানুষ এই স্বাধীনতার সদ্বব্যহার করে, না অপব্যবহার করে তার পরীক্ষা নিচ্ছেন।
ষ আল্লাহ সরাসরি মানুষের সকল তৎপরতা প্রত্যক্ষ করছেন। আল্লাহর দৃষ্টি এড়িয়ে কারো পক্ষে কোথাও অবস্থান করা কিংবা কোন কিছু করা সম্ভব নয়। আবার, মানুষের কথা ও কাজের রেকর্ড তৈরি করার জন্য তিনি প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে দু’জন ফেরেশতা মোতায়েন করে রেখেছেন।
ষ মানুষের পৃথিবীর জীবনযুক্ত জীবন। কোনোভাবে মৃত্যুকে এড়ানো যাবে না। প্রত্যেক মানুষেকই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।
ষ আল্লাহ কোন এক সময় বর্তমান মহাবিশ্ব ভেঙে দেবেন এবং নতুন বিন্যাসে আসমাও পৃথিবী তৈরি করবেন।
ষ নতুনভাবে গড়া পৃথিবীর বিশ্বপ্রান্তরে সকল মানুষকে জীবিত করে উঠানো হবে। সকলেই উপস্থিত হবে আল্লাহর আদালতে।
প্রত্যেক ব্যক্তির সামনে ফেরেশতাদের তৈরি করা রেকর্ড পেশ করা হবে। চলবে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ জবাবদিহিতা। যারা আল্লাহর আবদ, ও খলিফারূপে তাদের কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করে যাবে তাদেরকে অফুরন্ত নিয়ামতে ভরপুর জান্নাতে পাঠানো হবে। পক্ষান্তরে যারা স্বেচ্ছচারী জীবন যাপন করে যাবে তাদেরকে কঠিন শাস্তির স্থান জাহান্নামে ঢোকানো হবে। আখিরাতে জীবন মৃত্যুহীন জীবন, অনন্ত জীবন। সেই জীবনের ব্যর্থতাই প্রকৃত ব্যর্থতা। আর সেই জীবনের সফলতাই প্রকৃত সফলতা।
এই কথাগুলো মানুষের মনোমাঝে প্রোথিত করার জন্য, দৃঢ়মূল করার জন্য মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. নিরলস প্রয়াস চালিয়েছেন। যেখানেই মানুষ সেখানেই তিনি ছুটে গেছেন। কখনো এক ব্যক্তির কাছে, কখনো ব্যক্তি সমষ্টির কাছে তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেছেন। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. সকল শ্রেণীর মানুষের কাছেই যেতেন, মিষ্টি ভাষায় তাদেরকে সম্বোধন করতেন, এবং তাদের সাথে সুন্দর আচরণ করতেন। এটিই ছিলো তাঁর কর্মনীতি, এটিই ছিলো তাঁর কর্মকৌশল। আর এটি ছিল সম্পূর্ণরূপে ইতিবাচক, গঠনমূলক এবং শান্তিপূর্ণ কর্মকৌশল। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. কোন ব্যক্তির প্রতি, কোন জেন্ডারের প্রতি, কোন বংশের প্রতি, কোন শ্রেণীর প্রতি, কোন বর্ণের প্রতি, কোন ভাষাভাষী মানুষের প্রতি এবং কোন ভূখন্ডের মানুষের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতেন না। তিনি ছিলেন সকল মানুষের কল্যাণকামী, সকলের সুহৃদ। তার উপস্থিত বক্তব্য সুখ, শান্তি ও কল্যাণের বার্তা, সকল মানুষের মুক্তির নিশ্চয়তা। যাঁরা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন তাঁর বক্তব্যের তাৎপর্য, তাঁরা তাঁর আহ্বানে সাড়া দেন। নতুন সমাজ ও সভ্যতা বিনির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে তাঁর নেতৃত্বে সংগঠিত হন। এটা তো নির্ভেজাল সত্য কথা যে অসংগঠিত অগণিত মানুষ কোন শক্তি নয়, কিন্তু সংগঠিত কিছু লোকও একটি শক্তি। প্রবৃত্তি পূজারি ক্ষমতাদর্শিতাগুলো মানুষ এই সংগঠিত শক্তির উত্থানের মাঝে তাদের পতনের পূর্বাভাস দেখতে পায় এবং কোমর বেঁধে নেমে পড়ে এর বিরোধিতায়।
এই নবোত্থিত শক্তির বিরুদ্ধে বলার মতো কোন যুক্তিপূর্ণ কথা তাদের থলেতে ছিলো না। তাই তারা ইনিয়ে বিনিয়ে নানা কিছু প্রচার করে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. এবং তাঁর অনুসারীদের প্রতি আম-জনতাকে ভীত স্পৃহ করে তুলতে চেষ্টিত হয়।
তারা বলতে থাকেÑ
অনেক দেবদেবীর সাথে আমাদের ভাগ্য বিজড়িত। মুহাম্মদ কিনা আমাদেরকে একজন মাত্র ইলাহ মেনে নিতে বলছে। এটা তো কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে প্রাপ্ত আকিদা বিশ্বাসের অনুসারী। মুহাম্মদ আমাদের সেই আকিদা বিশ্বাস নষ্ট করতে চায়। এতএব সাবধান। মুহাম্মদ আমাদেরকে আজাবের ভয় দেখায়। আজাবটা নিয়েই আসুক না। মুহাম্মদ বলে একদিন নাকি আসমান ও পৃথিবী ভেঙে দেয়া হবে। মৃত্যুর পর আমাদেরকে জীবিত করে উঠানো হবে। এগুলো কোন যুক্তিগ্রাহ্য কথা নয়। মুহাম্মদ তো একজন মানুষ। মানুষ নবী হবে কেন? প্রয়োজন হলে আল্লাহ কোন ফেরেশতাকেই নবী করে পাঠাবেন। মুহাম্মদ কেমন নবী! সে খায়-দায় এবং বাজারে চলাফেরা করে। মুহাম্মদ আসলে একজন গণক। মুহাম্মদ আসলে এক কবি। মুহাম্মদ আসলে একজন জাদুকর। মুহাম্মদ আসলে জিনের আছরগ্রস্ত একজন মানুষ। মুহাম্মদ নিজেই কিছু কথা বানিয়ে নিয়ে আল্লাহর নামে চালাচ্ছে। মুহাম্মদ অন্যের কাছ থেকে কিছু কথা শিখে নিয়ে আল্লাহর কালাম বলে প্রচার করেছে। মুহাম্মদ আল্লাহর কালেমা বলে যা কিছু প্রচার করছে সেইগুলো তো অতীত কালে কিছু কিচ্ছা কাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়। মুহাম্মদ নবী হলে তো তার সাথে বিশাল ধন ভান্ডার এবং সঙ্গীরূপে ফেরেশতা থাকার কথা।
হ মক্কা ও তায়েফের বড় বড় নেতাকে বাদ দিয়ে আল্লাহ তাকে নবী বানাবেন, এটাতো স্বাভাবিক নয়।
হ মুহাম্মদ নবী হলে তো তার রিসালাতে আমাদেরও অংশ থাকার কথা।
হ মুহাম্মদের না আছে ধনবল, না আছে জনবল। তার চেয়ে আমাদের অবস্থা ঢের ভালো। তোমরা তার সাথে যাবে কোন দুঃখে!
হ সাবধান তোমরা তার কথায় কান দেবে না। তার দীন ভালো হলে তো আমরাই সবার আগে তা গ্রহণ করতাম। ইত্যাদি।এসব ঠুনকো কথা-ই ছিলো বেচারাদের অপপ্রচারের সম্ভল। এই কথাগুলোর পুনরাবৃত্তি করে তারা তাদের হীন উদ্দেশ্য হাছিল করতে চায়। আম-জনতাকে সত্য-বিমুখ করে রাখতে চায়।
দুর্ভাগ্যের বিষয়, এরা নিজেরা তো চলার নির্ভুল পথ বেছে নিলো না, আলোকিত পথে এগিয়ে আসার সুযোগ গ্রহণ করলো না, অন্যদিকে আমজনতা যাতে এই পথে এগুতে না পারে তার জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ালো।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ওহির মাধ্যমে ইসলামবিদ্বেষীদের অপপ্রচারে জবাব দেনÑ সেই আল্লাহই তোমাদের রব। তাঁকে বাদ দিয়ে তোমরা যাদেরকে ডাক তারা একটি তৃণ খন্ডের ও মালিক নয়। তারা তোমাদের ডাক শুনতে পায় না। তোমাদের ডাকে সাড়া দিতে পারে না। (ফাতির)
তাদেরকে বল : তোমরা কি চোখ খুলে দেখেছো, তোমরা এক আল্লাহকে ছাড়া যাদেরকে ডাক তারা আসলে কারা? আমাকে খানিকটা দেখাও না ওরা পৃথিবীতে কী সৃষ্টি করছে কিংবা আসমানের সৃষ্টি ও ব্যবস্থাপনায় তাদের কী অংশ রয়েছে? (আল আহকাফ)
আল্লাহ পাক পবিত্র, বহু উচ্চ মহান সেই শিরক থেকে যা এই লোকেরা করে থাকে। (আল কাছাছ)
‘তোমাদের ইলাহ তো একজনই যিনি আসমান ও পৃথিবীর এবং এই দুইয়ের মধ্যবর্তী সব কিছুর, আর সকল উদয় দিগন্তের রব। (আছ-ছফহাত)
আল্লাহ প্রকৃত স¤্রাট। তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তিনিই মর্যাদাবান আরশের মালিক। যে কেউ আল্লাহর সাথে অপর কোন মাবুদকে ডাকে তার সমর্থনে কোন দলিল নেই তার হিসাব তার রবের কাছে রয়েছে। কাফিরগণ কখনো কল্যাণ লাভ করতে পারে না। (আল মুমিনুন)।
এই লোকদেরকে যখন সুস্পষ্ট আয়াত শুনানো হয় তখন তারা বলে : এই ব্যক্তি তো তোমাদেরকে সেই সব মাবুদের প্রতি প্রতিশ্রদ্ধ করে তুলতে চায় যাদের উপাসনা তোমাদের বাপ দাদারা করেছে। (সাবা)
তারা বলে : আমরা তো মেনে চলবো সেই জিনিস যার ওপর আমাদের বাপ দাদাদেরকে দেখেছি। তারা কি সেই জিনিসের অনুসরণ করবে শয়তান তাদেরকে জ্বলন্ত আগুনের দিকে ডাকলেও? (সূরা লোকমান)
হ ‘এই লোকেরা অবিলম্বে আজাব আনার জন্য তোমার ন্কিট দাবি জানাচ্ছে। সেই জন্য যদি একটি সময় নির্দিষ্ট না থাকতো তবে এদ্দিনে তাদের ওপর আজাব এসেই পড়তো। (সূরা আল আনকাবুত) ফায়সালার দিন পূর্ব নির্দিষ্ট না থাকলে এদ্দিনে তাদের ব্যাপারটি চূড়ান্ত করে দেয়া হতো। অবশ্যই এই জালিমেদের জন্য পীড়াদায়ক আজাব নির্ধারিত রয়েছে। (সূরা আশ-শূরা)
এসব জালিম যখন আজাব দেখতে পাবে তখন বলবে: ফিরে যাবার কোন পথ আছে কি? আর তোমরা দেখবে, এদেরকে যখন জাহান্নামের সামনে আনা হবে তখন লাঞ্ছনার আঘাতে তারা অবনত ও গোপন দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাচ্ছে। (সূরা আশ শূরা)
হ এই লোকেরা বলে : কেয়ামতের সময়টি কখন আসবে? তাদেরকে বলে দাও : এর জ্ঞান একমাত্র আমার রবের কাছে আছে। এটাকে তিনি তাঁর নির্দিষ্ট সময়ে প্রকাশ করবেন। (সূরা আল আরাফ)
মানুষ বলে : আমরা যখন মরে যাবো তখন কি আমাদেরকে পুনর্জীবিত করা হবে? তাদের কি এই কথা মনে পড়ে না যে আমি যখন তাদেরকে সৃষ্টি করি তখন তারা কিছুই ছিলো না। (সূরা মারইয়াম)এই লোকেরা বলে : জীবন শুধু দুনিয়ার জীবন। আমাদের জীবন ও মৃত্যু সবই তো এখানে আর কালের আবর্তন ছাড়া আমাদেরকে আর কিছুই ধ্বংস করে না। আসলে এই ব্যাপারে তাদের কোনো ইলম নেই। নিছক আন্দাজ অনুমানের ভিত্তিতে তারা এসব বলছে। (আল সাজসীয়)
এসব লোক তাদের রবের সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে। সাবধান, তিনি প্রত্যেকটি জিনিস পরিবষ্টেনকারী। (সূরা হামীমুস সাজদাহ)
এই লোকদেরকে বলে দাও। আল্লাহই তোমাদেরকে জীবন দেন, তিনিই মৃত্যু দেন। তিনিই কেয়ামতের দিন তোমাদেরকে একত্র করবেন সন্দেহাতীত সেই দিনের আগমন। (আল জাসীয়া)
আল্লাহর এই রহমতের প্রভাব লক্ষ্য কর : মরে পড়ে থাকা জমিনকে তিনি কিভাবে জীবন্ত করে তোলেন। অবশ্যই তিনি মৃতদেরকে জীবনদানকারী এবং সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান।
(সূরা আর-রূম)
তোমাদের রবের কথা মেনে নাও সেই দিন আসার পূর্বে যেই দিনটিকে ফিরিয়ে দেবার ব্যবস্থা নেই। সেই দিন তোমাদের জন্য কোন আশ্রয় জুটবে না। তোমাদের অবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টাকারীও কেউ হবে না। (সূরা আশ শূরা)
হ আমি তোমার পূর্বে যখনই রাসূল পাঠিয়েছি তারা সকলেই মানুষ ছিলো। জনপদের অধিবাসীই ছিলো। (সূরা ইউসুফ)
হ তাদেরকে বলে দাও : আমি তোমাদের মতোই একজন মানুষ। আমার প্রতি ওহি আসে যাতে বলা হয়েছে, তোমাদের ইলাহ একজন মাত্র। অতএব তোমরা সোজা তাঁর মুখী হও। তাঁর নিকট ক্ষমা চাও। (মামীমুস সাজদা)
হ বলে দাও : আমি তোমাদের মতোই একজন মানুষ। আমার নিকট ওহি পাঠানো হয় যে তোমাদের ইলাহ এক ও অদ্বিতীয়। এতএব যেই ব্যক্তি নিজের রবের সাক্ষাৎপ্রত্যাশী সে যেন নেক আমল করে এবং তার রবের ইবাদতে আর কাউকে শরিক না করে। (আল কাহফ)
হ তোমার আগে আমি যাদেরকে রাসূল করে পাঠিয়েছি তারা সবাই খাওয়া দাওয়া করতো এবং বাজারে চলাফেরা করতো। আল ফুরকান)
হ তুমি উপদেশ দিতে থাক। তোমার রবের অনুগ্রহে তুমি গণক নও, জিনের আছরগ্রস্তও নও। (আততুর)
আমি তাকে কবিত্ব শিখাইনি। না কবিত্ব আর পক্ষে শোভনীয় হতে পারে। এ তো নসিহত ও পাঠযোগ্য কিতাব। (ইয়াসিন) যেই ব্যক্তি বলে এ তো জাদু বা পূর্ব থেকে চলে আসা। এতো মানুষের কালাম। খুব শিগগির আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো। (আল মুদ্দাসসির)"কাফিরদের সামনে যখন সত্য এলো, তারা বললো : এ তো স্পষ্ট জাদু। (.. অতীতে) তারা যখন আমার রাসূলদেরকে মিথ্যা মনে করলো তখন দেখ কেমন কঠিন ছিলো আমার আজাব। (সাবা)
হ এরা বলে নাকি, এই ব্যক্তি আল কুরআন রচনা করে নিয়েছে? আসল কথা এরা ঈমান আনতে চায় না। এরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাকে এই মর্যাদার একটি কালাম বানিয়ে আনুক না। (আত তুল)
এরা কি বলে যে নবী নিজে তা রচনা করেছে? বলে দাও : তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাক এর মতো একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এসো। আর এক আল্লাহকে ছাড়া আর যার যার সাহায্য নিতে চাও নাও। (সূরা ইউনুস)
তুমি এর পূর্বে কোন কিতাব পড়তে না, নিজের হাতে কিছু লিখতে না। যদি তা হতো তবে বাতিলপন্থীরা সন্দেহে পড়ে যেতে পারতো। আসলে এগুলো নিদর্শন সেই লোকদের জন্য যাদেরকে জ্ঞানদান করা হয়েছে। আমার আয়াতগুলো জালিম ছাড়া আর কেউ অস্বীকার করে না। (সূরা আল আনকাবুত)
এটি রাব্বুল আলামিনের নিকট থেকে নাজিল হয়েছে। (আল হাক্কাহ)
এই কিতাব মহাপরাক্রমশালী, মহাবিজ্ঞ আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হয়েছে। (আযযুমার)
আমি গোটা মানবগোষ্ঠীর জন্যই এই সত্য জ্ঞানসংবলিত কিতাব তোমার নিকট নাজিল করেছি। এখন যেই লোক সোজা সঠিক পথ গ্রহণ করবে সে তা নিজের জন্যই করবে। আর যেই লোক বিভ্রান্ত হবে বিভ্রান্ত হওয়ার পরিণাম তাকেই ভোগ করতে হবে। (আয যুমার)
হ ‘‘এরা বলে এক ব্যক্তি তাকে শিখিয়ে দিয়ে থাকে। অথচ তারা যেই লোকটির কথা বলে তার ভাষা আরবি নয়। আর এটি তো বিশুদ্ধ আরবি ভাষা।” (সূরা আন নাহল)
হ এরা বলে এ তো অতীত কালের কিচ্ছা কাহিনী। কক্ষণো নয়। তাদের দিলে রয়েছে পাপের মরিচা। (আল মুতাফফিফিন)
হ অতীত কালের কিচ্ছা কাহিনীতে জ্ঞান বুদ্ধিসম্পন্ন লোকদের জন্য রয়েছে অনেক শিক্ষা। আল কুরআনে যা বলা হচ্ছে তা মনগড়া বা কৃত্রিম কতাবার্তা নয় বরং যেসব কিতাব পূর্বে এসেছে সেইগুলোর সত্যতার ঘোষণা এবং প্রত্যেক বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ। আর মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমাত। (সূরা ইউসুফ)
হ লোকেরা বলে : এই ব্যক্তির প্রতি কোন ধন ভান্ডার নাজিল হলো না কেন? অথবা বলে এর সাথে কোন ফেরেশতা এলো না কেন? আসলে তুমি তো শুধু সতর্ককারী। বাকি সব বিষয়ের দায়িত্বশীল তো আল্লাহ। (সূরা হুদ)
তারা বলে : এই নবীর (সঙ্গীরূপে) ফেরেশতা নাজিল হয় না কেন? আমি যদি ফেরেশতাই নাজিল করতাম তাহলে যাবতীয় বিষয়ের চূড়ান্ত ফয়সালাও হয়ে যেতো। তাদেরকে অবকাশ দেয়া হতো না। (আল হ তারা বলে এই আল কুরআন উভয় শহরের মক্কা ও তায়েফের বড় লোকদের মধ্য হতে কারো প্রতি নাজিল হলো না কেন? আল্লাহর রহমত বণ্টনের কাজ কি এরা করে? (আযযুকরুফ)
হ তারা বলে : আমরা মানবো না যতক্ষণ না আল্লাহর রাসূলদেরকে যা দেয়া হয়েছে তা সরাসরি আমাদেরকে দেয়া হয়। আল্লাহ তাঁর রিসালাতের দায়িত্ব কার দ্বারা পালন করাবেন এবং কিভাবে করাবেন তা তিনিই সবচেয় বেশি ভালো জানেন। সেদিন বেশি দূরে নয় যেই দিন এই অপরাধীরা নিজেদের প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের শাস্তিস্বরূপ আল্লাহর নিকট লাঞ্ছনা ও কঠিন আজাবের সম্মুখীন হবে। (আল আম)
হ তোমাদের অর্থসম্পদ ও সন্তানসন্ততি তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করে দেবে না। (সাবা)
এই অর্থসম্পদ ও সন্তান সন্ততি শুধু দুনিয়ার জীবনের সাময়িক চাকচিক্য, আসল তো টিকে থাকা নেক আমলই তোমার রবের নিকট পরিণামের দৃষ্টিতে অতি উত্তম। (আল কাহাফ)
তোমাদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তা তো দুনিয়ার কয়েক দিনের জীবনসামগ্রী মাত্র। আর যা কিছু আল্লাহ নিকট রয়েছে তা যেমনি উত্তম, তেমনি স্থায়ীও। (আশ শূরা)
হ তাদের চেয়ে বড় জালিম আর কে হতে পারে যাদেরকে তাদের রবের আয়াত শুনিয়ে নসিহত করা হবে, আর তারা তা থেকে উল্টো দিকে মুখ ফিরিয়ে থাকবে এবং সেই খারাপ পরিণতির কথা ভুলে যাবে যার আয়োজন তারা নিজেরাই করছে। (আল কাহফ)
যারা আমার আয়াতগুলোর উল্টো অর্থ গ্রহণ করে তারা আমার থেকে লুক্কায়িত নয়। ভেবে দেখ, সেই ব্যক্তিই কি ভালো যে আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে, নাকি সেই ব্যক্তি যে শান্তিময় অবস্থান লাভ করবে। করতে থাক যা তোমাদের ইচ্ছা। তোমাদের প্রতিটি পদক্ষেপই আল্লাহ দেখতে পান। (হামীম-সাজদাহ)
এগুলো হচ্ছে ইসলাম বিরোধীদের অপপ্রচারের কিছু জবাব, যা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর নবীকে শিখিয়েছেন।
লক্ষ্য করার বিষয়, এই জবাবগুলো খুবই সহজ সরল। খুবই বোধগম্য। এগুলোতে কোন জটিলতা নেই। দুর্বোধ্যতা নেই। কূটতর্ক নেই। সহজবোধ্য যুক্তিসহকারে তুলে ধারা হয়েছে সত্যকে।
আরো লক্ষ্য করার বিষয়, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. আল্লাহর শেখানো ভাষায় বিরুদ্ধবাদীদের অপপ্রচারের জবাব দিচ্ছিলেন, কিন্তু ইতিবাচকভাবে ইসলামের মৌলিক শিক্ষাগুলো উপস্থাপনা করা বাদ দিয়ে নয়। মানুষের চিন্তার বিশুদ্ধ সাধনের জন্য ইসলামের মৌলিক শিক্ষাগুলোর সাথে তাদের সম্পৃক্তি ঘটানোর কোনো বিকল্প নেই। কাজেই মৌলিক শিক্ষাগুলোর সাথে তাদের সম্পৃক্তি ঘটানোর কোনো বিকল্প নেই।
কাজেই মৌলিক শিক্ষাগুলোও তিনি বারবার তাদের সামনে তুলে ধরেছিলেন অত্যন্ত স্পষ্টভাবে ও স্বচ্ছভাবে। বিরুদ্ধবাদীদের সাথে কূটতর্কে জড়িয়ে পড়ে তিনি তাঁর মূল্যবান সময়ের অপচয় করতে যাননি কখনো।
উল্লেখ্য যে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহর সা. বিরোধিতা করে ইসলামবিদ্বেষীরা মানুষের মনে ইসলাম সম্পর্কে জানার আগ্রহ সৃষ্টিতে অবদান রেখেছে। তাদের বিরোধিতার মাত্রা যত বেড়েছে, মানুষের মনে ইসলাম সম্পর্কে জানার আগ্রহ তত বেড়েছে। আর তাদের এই কৌতূহল নিবারণের জন্য পাশেই তো ছিলেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. এবং তাঁর সাথীগণ।
আমরা দেখি, বিরুদ্ধবাদীরা নানা ধরনের উসকানিমূলক কথা বলেছে, আচরণ করেছে। কিন্তু তারা মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহর সা. ধৈর্যে ফাটল ধরাতে পারেনি, তাঁকে হঠকারী ভূমিকায় নামাতে পারেনি, তাঁকে তাদের ফাঁদে ফেলতে পারেনি এবং তাঁর অনুসৃত কর্মনীতি ও কর্মকৌশল থেকে একচুল পরিমাণও সরাতে পারেনি।
আমরা আরো দেখি, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. গভীর রাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের একান্ত সান্নিধ্যে সময় কাটাচ্ছেন, আর দিনের বেলা সময় কাটাচ্ছেন গণসংযোগে।
মোট কথা সবর, সালাত এবং দাওয়াত। এই তিনটিকে আঁকড়ে ধরে তিনি ইসলামবিদ্বেষীদের অপপ্রচারের মোকাবেলা করছেন। অপপ্রচারের কী ভয়ানক ঝড়ই না সৃষ্টি করেছিলো ইসলামের দুশমনেরা। কিন্তু মাত্র তেরোটি বছরের মাথায় বৈরী শক্তির অপপ্রচার সৃষ্ট ঝড় স্তিমিত হয়ে পড়ে এবং ঝড়ের রাতের শেষে উদিত সূর্যের সোনালি কিরণের মতো চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে ইসলামের অত্যুজ্জ্বল আলো। (সঙ্কলিত)।আ
বিষয়: সাহিত্য
১৩২৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন