সাহিত্যিক বনাম সাহিত্য সমালোচক
লিখেছেন লিখেছেন নাজমুল আহসান ১৩ মার্চ, ২০১৫, ০১:৫২:৫৩ রাত
সাহিত্যে একজন সমালোচক কে অনেকেই ভাল চোখে দেখেন না । অথচ এরিস্টোটল একজন সাহিত্য সমালোচক ছিলেন । সাহিত্য যেমন একটি শিল্প তেমনি সমালোচনা ও একটি শিল্প । দু:খের বিষয় অনেকে যুগ যুগ ধরে লেখার পরও এ বিষয়টি হৃদয় দিয়ে অনুভব করেন না--কেউ কেউ মানতেও নারাজ যে সমালোচনা আসলেই একটি শিল্প হতে পারে ।
যে কেউ সাহিত্য সমালোচনা করতে সক্ষম নন । একজন সাহিত্যিকই সাহিত্য সমালোচনা করে থাকেন । সমালোচনা সাহিত্যের মান উন্নত করে বলে--প্রতিটি কবি-লেখকের উচিৎ সমালোচকের নিকট কৃতজ্ঞ থাকা--অথচ বাস্তবে তার উল্টোটাই বেশি দেখা যায় ।
ফেইস বুকে, ব্লগে যা হয়-এটি আসলে সমালোচনা নয়--রীতিমতো তেল দেয়া । এই তেলাতেলির সমাজে সাহিত্য করা দায় হয়ে পড়েছে ।সমালোচনা হবে অভিজ্ঞ এবং সেটেল্ড লেখকদের ক্ষেত্রে । এ ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেয়া মোটেই যুক্তিযুক্ত নয় । এ ক্ষেত্রে ছাড় দিলে বরং লেখকের পথভ্রস্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে ।
একজন লেখক হয়ে আমরা অন্যের লেখার গঠনমূলক সমালোচনা করে তাকে সঠিক পথে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবো--এটিই প্রকৃত ভ্রাতৃত্ববোধ ।
কিন্তু প্রায়ঃশ দেখি সমালোচক কে কটূচোখে দেখা হচ্ছে--এটি একজন সমালোচকের জন্য অসম্মানজনক । তিনি বরং ভয়ে ভয়ে সমালোচনা করেন এবং সমালোচনা করার পর হেজিটেশনে ভোগেন--এটি আক্ষেপের বিষয় নয় কি ?
রবি ঠাকুরের “ভাষায় সত্য যা, তা কঠিন,কঠিনেরে ভালবাসিলাম”-অথচ কবি-সাহিত্যিক হওয়ার পরও কেন যেন আমরা সত্যকে আন্তরিকভাবে মেনে নিতে পারিনা । দু-চার লাইন লেখে আমরা উন্নাষিক জ্বরে ভূগি ।
কেউ যদি কঠিন সমালোচনা করে তবে লেখকের খুশিই হওয়া উচিৎ । কেননা কঠিন সমালোচনা তারই করা হয় , যার লেখার মান আছে । ফেবু আর ব্লগের বেশিরভাগ সমালোচনাই--ভাল , সুন্দর হয়েছে, nice, লিখে যান, চমৎকার--এ টাইপ । এ গুলো কোন সাহিত্যসমালোচনার শব্দ নয়-বরং এ গুলো পণ্যের ক্ষেত্রে শোভা পায় । এই প্রশংসাগুলো এ কেবারেই নবীন লেখকদের ক্ষেত্রে সীমিত আকারে চলতে পারে বটে -- তবে কোন অভিজ্ঞ লেখকের ক্ষেত্রে এ ধরনের তেলাতেলি অশৌভন বলা চলে ।
সমালোচনা বলতে কেউ কেউ নিন্দাকে বুঝে থাকেন-অথচ সমালোচনা হলো ভালো-মন্দ দুটিরই সংমিশ্রিত রূপ ।
কেউ কেউ আবার এমনভাবে সমালোচনা করে থাকেন মনে হয় যেন তার সাথে বুঝি লেখকের ব্যক্তিগত শত্রুতা রয়েছে--অথচ সমালোচনা করতে হবে লেখকের প্রতি সহমর্মিতা রেখেই ।এটি ভুলে গেলে চলবেনা যে সমালোচক-- তিনি নিজেও একজন লেখক, তার নিজের লেখার ব্যাপারেও অন্যে সমালোচনা করবে । আবার সমালোচনা মানে তেল দেয়া নয়--এটিও ভুলে গেলে চলবেনা মোটেও ।
সাহিত্যের একটি আদর্শ আছে--যে কোন লেখা কে তো সাহিত্য হিসেবে চালিয়ে দেয়া যায়না । সুতরাং সমালোচনার ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেয়া ঠিক হবে না । এবং সমালোচক কে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে ।
একটি আদর্শ সাহিত্য-সমালোচনা কেমন হতে পারে তা দেখিয়ে গেছেন এরিস্টটল--এতবড় লোক যদি সমালোচক হতে পারেন তবে আমরা কেন সাহিত্য-সমালোচনাকে শিল্প হিসেবে দেখবোনা ।
সাহিত্য-সমালোচনা আসলেই একটি উৎকৃষ্ট শিল্প । যিনি সমালোচনা করবেন তাঁকে তো সাহিত্য বুঝতে হবে । শুধু বুঝলে চলবে না--তাঁকে ইতিবাচক মানসিকতা সম্পন্ন হতে হবে--নচেৎ আদর্শ সমালোচক হতে পারবেন না । অতঃপর সমালোচক কে তুলে আনতে হবে সাহিত্যের হৃৎপিন্ড । অতঃপর এই হৃৎপিন্ডের চুলছেঁড়া বিশ্লেষণ-চারটিখানি কথা নয় ।
সমালোচকের কাছে একজন সাহিত্যিক এ কারনেই কৃতজ্ঞ থাকবেন যে তিনি তার সৃষ্টিশৈলীর চিকিৎসক ।
এটি ঠিক যে আদর্শ ডাক্তার না হলে যেমনি তার উপর রোগির ভরসা থাকা উচিৎ নয়--তেমনি আদর্শ সমালোচক না হলে সাহিত্যিক ও তার উপর আস্থাশীল হবে না --এটা স্বাভাবিক ।
সমালোচকের সমালোচনায় কান দেয়া সাহিত্যিকের কাজ নয় । লেখক যদি মনে করেন তিনি সঠিক পথে আছেন তবে তিনি কারো কথায় মনোযোগ না দিয়ে নিজের সৃষ্টির প্রতি মনোযোগি হবেন । আর যদি তিনি সমালোচকের কোন কথা সঙ্গত মনে করেন , তা রিসিভ করবেন-অন্যথা অন্তত তাঁকে কটূচোখে দেখবেন না--কেননা সাহিত্যে সমালোচকের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য ।
বিষয়: সাহিত্য
১৩৩৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ আপনাকে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন