বিশ্ব ক্রিকেটের প্রাণ-সাকিব আল হাসান
লিখেছেন লিখেছেন নাজমুল আহসান ২২ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৮:৪২:২৯ রাত
বাংলাদেশের গর্ব সাকিব আল হাসান দেশীয় ক্রীড়াঙ্গনের সীমানা অতিক্রম করে বিশ্ব ক্রিকেটের অপরিহার্য অঙ্গে পরিণত হয়েছেন বেশ আগেই । কোন স্তুতিই যেন আজ এই অলরাউন্ডারের জন্য যথেষ্ট নয় । ক্রিকেটের তিনটি ফরম্যার্টেই তিনি এখন শীর্ষে অবস্থান করছেন । ক্রিকেটের এই প্রাণ পুরুষ কে নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন ।
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম সাকিব আল হাসান
জন্ম ২৪ মার্চ ১৯৮৭ (বয়স ২৭)
মাগুরা, যশোর, বাংলাদেশ
ডাকনাম সাকিব
উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি (১.৭৮ মিটার)
ব্যাটিংয়ের ধরণ বামহাতি
বোলিংয়ের ধরণ বামহাতি অর্থোডক্স
ভূমিকা অল-রাউন্ডার
সাকিব ২০০১ সালে বিকেএসপির প্রতিভা অন্বেষন কার্যক্রমে মাগুরা জেলার হয়ে নড়াইল ক্যাম্পের জন্য মনোনীত হন । নড়াইল ক্যাম্প থেকে ঢাকার বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য যে ২০ জন সুযোগ পায় তার মধ্যে সাকিবও ছিলেন । বিকেএসপির তৎকালীন ক্রিকেট প্রশিক্ষক আশরাফুল ইসলাম বাপ্পী এবং সাকিবের কোচ সৈয়দ সাদ্দাম হোসেন গোর্কির পরামর্শে সাকিবের বাবা শেষ পর্যন্ত সাকিবকে বিকেএসপির ক্রিকেট বিভাগে ভর্তি করিয়ে দেন । বিকেএসপিতে ভর্তির পর বাংলাদেশের হয়ে বয়সভিত্তিক দল গুলোতে অর্থাৎ অনূর্ধ-১৫, অনূর্ধ-১৭, অনূর্ধ-১৯ এর হয়ে খেলার সুযোগ পান এবং নিজের প্রতিভার সাক্ষর রাখেন ।
জাতীয় দলে ওয়ানডে ক্রিকেটে ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু হয় তার। একই বছর জাতীয় দলের জার্সি গায়ে টি টোয়েন্টি ও পরের বছর টেস্ট খেলা শুরু করেন। তবে প্রথম কোনো ফরম্যাটে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হওয়ার গৌরব অর্জন করেন ২০০৯ সালের ২১ জানুয়ারি। ওয়ানডেতেই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে র্যা ঙ্কিংয়ে শীর্ষে ওঠার গৌরব অর্জন করেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ২০১১ সালের ১৭ ডিসেম্বর টেস্ট র্যা র্ঙ্কিংয়ে সেরা অলরাউন্ডার হন তিনি। সব শেষ গত ডিসেম্বরে টি টোয়েন্টিতেও সেরা অলরাউন্ডার হওয়ার কৃতিত্ব দেখান।একইসাথে ক্রিকেটের তিনটি ফরম্যাটে এক নম্বরে থাকার বিরল কৃতিত্ব ও তার ঝুলিতে ।
কি সাহসী বোলিং, আর কি আক্রমনাত্বক ব্যাটিং সবখানে সমান বিচরন। যখন যে মুহুর্তে প্রয়োজন সে সময়ই দলের হাল ধরার জন্য প্রস্তুত। দ্রুতগতিতে রান দরকার তাকে ডাকো, ইমার্জেন্সি উইকেট দরকার তাকে ডাকো। কি ফ্লাইটেড ডেলিভারি, কি সুপারস্কুপ, সব সময় যেন ভাল করার আকাঙ্খা। তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার বাংলাদেশের জান,বিশ্ব ক্রিকেটের প্রান- সাকিব আল হাসান।
২০১৪ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত জিম্বাবুয়ে সিরিজ নিয়ে মূল্যায়ণ করতে গিয়ে সুনীল গাভাস্কার বলেন, মাত্র তিনটি টেষ্টে সাকিব যে কুতিত্ব দেখিয়েছেন অনেকের কাছে তা সারা জীবনের স্বপ্ন ।
গত নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের সাথে খুলনা টেস্টের প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করার পর বল হাতে একই ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে সাকিব আল হাসান দেশের গণমাধ্যমে যেমন প্রশংসা পাচ্ছেন তেমনই বিশ্ব মিডিয়াও সাকিবের নৈপুণ্যে উচ্ছ্বসিত। বিদেশি গণ মাধ্যমে ৫ বছর পর বাংলাদেশের টেস্ট সিরিজ জয়ের চেয়েও সাকিবের কীর্তিকে বড় করে দেখানো হয়েছে।
বিবিসির শিরোনামে প্রকাশ হয়েছে ‘সাকিব জয়েন্স ১০০ অ্যান্ড ১০ উইকেট লিষ্ট’। অস্ট্রেলিয়ার এবিসি’র শিরোনাম ছিলো- ‘সাকিব ক্লেইম রেয়ার অল-রাউন্ড ফিট ইন বাংলাদেশ উইন।’ দেশটির অন্য এক দৈনিক ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’র শিরোনাম ছিলো- ‘বাংলাদেশ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান জয়েন্স ক্রিকেট গ্রেটস।’
ভারতের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়া শিরোনাম করেছে, ‘অল রাউন্ড সাকিব জয়েন্স অল টাইম গ্রেট।’ সংবাদটিতে ইমরান খান ও ইয়ান বোথামের সঙ্গে সাকিবের পারফরমেন্সের তুলনা করা হয়েছে।এনডিটিভি তাদের শিরোনাম করেছে- ‘সাকিব আল হাসান ক্লেইমস রেয়ার অল-রাউন্ড ফিট ইন বাংলাদেশ উইন’। ভারতের বাংলা জাতীয় দৈনিক আজকালের শিরোনাম ছিলো- ‘বোথাম-ইমরানকে ছুঁলেন সাকিব।’ পাকিস্তানের জনপ্রিয় 'জিও নিউজ’ শিরোনাম করেছে- ‘সাকিব’স টেন উইকেট ম্যাচ হল সীল সিরিজ ফর বাংলাদেশ।’দ্য ডনের শিরোনাম ‘সাকিব লিডস বাংলাদেশ টু সিরিজ উইন ওভার বাংলাদেশ।‘গালফ নিউজ’ সংবাদ ছেপেছে ‘সাকিব আল হাসান অ্যাচিভচ রেয়ার ফিট ইন বাংলাদেশ ভিক্টরি’ শিরোনামে।ডেইলি টাইমস শিরোনাম করেছে- সাকিব লিডস বাংলাদেশ টু টেস্ট সিরিজ উইন ওভার জিম্বাবুয়ে।
মুত্তিয়া মুরালিধরনকে পেছনে ফেলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড ও গড়লেন সাকিব। দলটির বিপক্ষে সাকিব আল হাসানের সংগ্রহ ৬০ টি উইকেট। মিরপুরে অনুষ্ঠিত দু’দলের চতুর্থ একদিনের ম্যাচে ভুসি সিবান্দা ও হ্যামিল্টন মাসাকাদজার উইকেট নিয়ে এই রেকর্ড গড়েন সাকিব। এর আগে লঙ্কানদের হয়ে ২০১১ সালে অবসর নেয়া মুরালি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫৯টি উইকেট নিয়েছিলেন।
এছাড়া দেশের বাইরে কলকাতা নাইট রাইডার্স, মেলবোর্ন রেনেগেডেস, ওরচেস্টারশায়ার,লিচেস্টার শায়ার ও বার্বাডোজট্রাইডেন্টস ইত্যাদি ঘরোয়া দলগুলোতে তিনি সমান কৃত্বের স্বাক্ষর রাখেন ।
ক্রিকেট ব্যাক্তিত্বের বাইরে তাঁকে প্রভাবশালী ব্যাক্তিত্ব হিসেবে ও গণ্য করছে বিশ্ব মিডিয়া ।লন্ডন ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান বিশ্বে সেরা ১০ প্রভাবশালী বাংলাদেশীর তালিকা করেছিলো । তাতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস ,ব্রাকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদ ও ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নাম রয়েছে ।
গত ১০,০১,২০১৫ তাং রোজ শনিবার বাংলাদেশে কোন ক্রিকেটারকে নিয়ে গ্রন্থ প্রকাশিত হলো । তিনি আমাদের গর্ব সাকিব আল হাসান । ঢাকার পাবলিক লইব্রেরেী মিলনায়তনে দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের “ সাকিব আল হাসান : আপন চোখে,ভিন্ন চোখে ”- বইটির প্রাকাশনা অনুষ্ঠান হয়ে গেলো ।
সম্প্রতি ‘সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের প্রান’ শিরোনামে এক গানও নির্মিত হয়েছে । গানটি লিখেছেন স্নেহাশীষ ঘোষ , সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন অয়ন চাকলাদার । গানটিতে কন্ঠ দিয়েছেন তারা নিজেরাই ।
Batting and fielding averages
Mat Inns NO Runs HS Ave BF SR 100 50 4s 6s Ct St
Tests 37 71 5 2529 144 38.31 4147 60.98 3 17 313 14 16 0
ODIs 141 135 20 3977 134* 34.58 5008 79.41 6 26 352 29 36 0
T20Is 35 35 2 752 84 22.78 587 128.10 0 4 78 20 9 0
First-class 72 134 12 4431 144 36.31 6 27 39 0
List A 177 170 22 4855 134* 32.80 5960 81.45 6 31 432 40 50 0
Twenty20 144 132 17 2370 86* 20.60 1829 129.57 0 9 221 72 38 0
Bowling averages
Mat Inns Balls Runs Wkts BBI BBM Ave Econ SR 4w 5w 10
Tests 37 62 9071 4403 140 7/36 10/124 31.45 2.91 64.7 4 14 1
ODIs 141 140 7147 5082 182 4/16 4/16 27.92 4.26 39.2 5 0 0
T20Is 35 35 769 832 44 4/21 4/21 18.90 6.49 17.4 2 0 0
First-class 72 15125 7129 239 7/32 29.82 2.82 63.2 6 19 1
List A 177 175 8676 6162 224 4/16 4/16 27.50 4.26 38.7 9 0 0
Twenty20 144 144 3167 3452 179 6/6 6/6 19.28 6.53 17.6 4 2 0
২০১২ সালের ১২ই ডিসেম্বর তারিখে সাকিব আল হাসান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী উম্মে আহমেদ শিশিরের সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। ঢাকার হোটেল রূপসী বাংলা'য় তাঁদের বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় ।
মাঠে ও মাঠের বাইরে বিভিন্ন কার্যকলাপের কারণে সাকিব বিভিন্ন সময় সমলোচিত হয়েছেন। ২০১৪ সালের ২০ই ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার সিরিজের ২য় ওডিআই ম্যাচে ড্রেসিংরুমে অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ ও তিন লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হয়েছে তাঁকে ।
২০১৪ সালের জুলাইয়ে তাকে জাতীয় দল থেকে ৬ মাসের জন্য ও বাংলাদেশের বাইরের ক্লাব ক্রিকেটের জন্য ২০১৫ সালের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড তাকে নিষিদ্ধ করে। জাতীয় দলের কোচ চন্ডিকা হাতুরা সিংহের সাথে দুর্ব্যবহার, মাঠে অশোভন আচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাকে এই শাস্তি দেয়া হয়েছে বলে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন দাবি করেন। যদিও এই শাস্তি দেয়ার জন্য বোর্ডকে অনেক সমালোচনার স্বীকার হতে হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন তারকা ও সামাজিক যোগযোগের মাধ্যম এই অভিযোগের প্রতিবাদ করেন । অনেকে অভিযোগ করেন সাকিব ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হয়েছেন ।
পরবর্তীতে ২৬ই আগস্ট বিসিবির বোর্ড সভায় সাকিবের ইতিবাচক আচরণের কথা বিবেচনা করে তাঁর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কমানো হয়। সভায় সিদ্ধান্ত অনুসারে সাকিব একই বছরের ১৫ই সেপ্টেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেট ম্যাচ খেলা শুরু করেন এবং সাময়িক নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে জিম্বাবুয়ে সিরিজে রাজকীয় প্রত্যাবর্তন করেন ।
বিষয়: বিবিধ
১৫১৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন