তার্কিশ ইতিকথা (শেষ)

লিখেছেন লিখেছেন সরোজ মেহেদী ০৪ জুন, ২০১৫, ১১:০১:৫৭ রাত

বাংলাদেশ নামে যে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র আছে তা অধিকাংশ তুর্কিই জানে না!তাদের কেউ আপনাকে দেখে প্রশ্ন ছুড়ে দেবে-আর ইউ ফ্রম হিন্দু বা হিন্দুস্থান।

আবার কেউ জিজ্ঞাসা করবে আর ইউ ফ্রম পাকিস্তান।তবে দেশের নাম যেটাই হোক আপনি মুসলিম এ কথা জানতে পারলে ওদের কেউ কেউ আপনাকে আবি, (বড় ভাই) আবি অথবা কারদেশ(ছোট ভাই), কারদেশ বলে জড়িয়ে ধরবে।মুচকি হাসি দিয়ে বলবে আমরা আর তোমরাতো একই।কোথায় এসেছ, কেন এসেছ খুঁটিনাটি জিজ্ঞাসা করবে।মুসলিম বলে আপনার যত্ন নেয়ার চেষ্টা করবে।দেশটিতে ভারত ও পাকিস্তানের যথেষ্ঠ পরিচিতি রয়েছে।বলিউডের কারণে হিন্দিস্থানের (তুর্কিরা ‘ভারত’কে ‘হিন্দিস্থান’ বলে) প্রতি রয়েছে ওদের ব্যাপক আগ্রহ ও আসক্তি।

যে দেশের মানুষ যেমন, পুলিশ তেমন।এখানে কিছু হলেই পুলিশের কাছে গিয়ে নিরাপত্তা চায় মানুষ!পুলিশ নামক প্রাণিটি কত ভদ্র হতে পারে তা আপনি নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতে পারবেন না।

তুর্কিদের দায়িত্ববোধ ও সচেতনতা আপনাকে ভাবিয়ে তুলবে নিশ্চিত।আমি আজ পর্যন্ত কেনো টার্কিকে রাস্তায় থুথু ফেলতে দেখিনি।দুই কোটি মানুষের বাস ইস্তাম্বুলে।তার উপর প্রতিদিনই থাকে হাজার হাজার পর্যটকের চাপ।কিন্তু আপনি ইস্তাম্বুলের রাজপথে সিগারেটের খোসা ছাড়া ময়লা খুঁজে পাবেন না।শহরটি যেন ইউরোপের লাখ দেড়েক মানুষ বাস করা ঝকঝকে কোনো রাজধানী!

ওদের আর একটি ভদ্রতা আপনার মনে ধরবে।ওরা বাসে বা ট্রেনে কথা বলে না।মেয়েদের জন্য আলাদা কোনো সিট নেই।রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ নেই।সবাই নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করে।

দেশটিতে মসজিদ হচ্ছে আভিজাত্যের প্রতীক।

অনন্য স্থাপত্যরীতিতে প্রতিটি মসজিদ তৈরি।ওদের আজান ও কোরআন তেলাওয়াত অনেক সুমধুর।ইমামদের পোশাক দেখলেই বুঝবেন তারা খুব ভাল মাইনে পায়।বেশ স্মার্ট ইমামরা।মুখে ছোট ছোট দাঁড়ি।নামাজ শেষে কোরআনের আয়াত দিয়ে দোয়া করে।এখানে আপনি মিলাদ বলতে কোনো বস্তুর অস্তিত্ব খুঁজে পাবেন না।দেশটিতে বহু মসজিদের পাশে রয়েছে দোকান।নামাজ পড়তে গেলে আপনি পাবেন ফ্রি চা খাওয়ার অফার।মসজিদের বাইরে রয়েছে বসা ও গল্প করার জায়গা।

টার্কিরা আসলে এখন নতুন এক সাম্রাজ্যের স্বপ্নে বিভোর।উসমানীয় খেলাফতের হারানো মর্যাদা ফিরে পেতে কাজও শুরু করেছে এরদোয়াঁন সরকার।সিরিয়া-টার্কি সীমান্ত যেমন খুলে দিয়েছে তেমনি ইরান, ইরাক, আফগান, তিউনিশিয়া, বসনিয়া, কসভো, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী দেশটিতে নিয়ে আসছে।মিশরের ব্রাদারহুড কর্মীদের দিয়েছে রাজনৈতিক আশ্রয়।গাজার মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল এখন তুরস্ক।

টার্কিকে এখন আপনি বলতে পারেন মধ্যপ্রাচ্যেরে লঙ্গরখানা।ওরা প্রতিবেশী দেশগুলোতে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে।সাবেক বলকান রাষ্ট্রগুলো এখন টার্কির প্রভাব বলয়ে।ইরাক ও আফগানিস্থানের অর্থনীতি ওদের নিয়ন্ত্রণে।ওরা চায় আবার পৃথিবীর সম্রাটের মুকুট পরতে।ওদের এ স্বপ্ন বাস্তব রুপ পাবে না দু:স্বপ্নে পরিণত হবে তা সময়ই বলে দেবে।



তবে কারো নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখার ইচ্ছা থাকলে অবশ্যই চলে আসতে পারেন তুরস্কে।ইস্তুাম্বুলে পড়ন্ত বিকেলে মারমারা সাগরের সাগরের দুই পাড় জুড়ে গড়ে উঠা অনন্য স্থাপত্যরীতির বিল্ডিং দেখেই আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে।জগদ্বিখ্যাত বসফরাস সাগর আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে নিশ্চিত।আর ব্লু মস্কে নামাজ পড়া, পৃথিবীর প্রথম গীর্জা ‘আয়াসোফিয়া’ বা পৃথিবীর প্রথম জাদুঘর ‘পানারোমা’ দর্শন আপনাকে দেবে উষ্ণ ও শীতল পরশ…

(প্রিয় দেশ-শেষ)

তার্কিশ ইতিকথা(৩)

তার্কিশ ইতিকথা(২)

তার্কিশ ইতিকথা

বিষয়: বিবিধ

২১৭৭ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

324677
০৪ জুন ২০১৫ রাত ১১:০৩
অবাক মুসাফীর লিখেছেন : এইবারও প্রথম... আম্রে পুরষ্কার দেন... Big Hug
০৪ জুন ২০১৫ রাত ১১:০৫
266537
সরোজ মেহেদী লিখেছেন : হা হা।পুরস্কার হিসেবে আপাতত হৃদয়ের ভালোবাসা কী গ্রহণ করা যাবে? পরে অন্য পুরস্কার!
০৪ জুন ২০১৫ রাত ১১:১০
266538
এ,এস,ওসমান লিখেছেন : মিস হয়ে গেল Crying Crying Crying
০৫ জুন ২০১৫ রাত ০২:৩৭
266615
অবাক মুসাফীর লিখেছেন : বান্দা কবুল বলছে... :D
324678
০৪ জুন ২০১৫ রাত ১১:১০
এ,এস,ওসমান লিখেছেন : সব পর্ব পড়লাম। দারুণ লাগলো।
০৪ জুন ২০১৫ রাত ১১:৩০
266549
সরোজ মেহেদী লিখেছেন : আমারও অনেক বেশি ভাল লাগল।শুভ কামনা।
324679
০৪ জুন ২০১৫ রাত ১১:১২
ছালসাবিল লিখেছেন : মেয়েদের বসার আলাদা জায়গা নেই Sad
০৪ জুন ২০১৫ রাত ১১:৩১
266550
সরোজ মেহেদী লিখেছেন : নারে ভাই।এখানে অহরহ ম্যাডামটিজিং এর শিকার হয় ছেলেরা!এবার বুঝেন অবস্থা?
০৪ জুন ২০১৫ রাত ১১:৩৭
266554
এ,এস,ওসমান লিখেছেন : @ছালসাবিল ভাই এবার আবার ডেনমার্ক ছেড়ে তুরস্ক চলে যেয়েন না Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor
০৫ জুন ২০১৫ সকাল ০৬:০৯
266651
ছালসাবিল লিখেছেন : তুস্কই ভালো Winking
324701
০৫ জুন ২০১৫ রাত ১২:৫৬
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, অনেক ভালো লাগলো তাদের কালচার, ধারাবাহিক লিখতে থাকুন। ধন্যবাদ
324710
০৫ জুন ২০১৫ রাত ০১:১৩
দ্য স্লেভ লিখেছেন : অনেক দারুন করে লিখেছেন। জাজাকাল্লাহ খায়রান। মুগ্ধ হয়ে পড়লাম।
324711
০৫ জুন ২০১৫ রাত ০১:১৬
আহসান সাদী লিখেছেন : অসাধারণ।

কোনো স্থান বা দেশ নিয়ে লেখা পড়তে আমার ভালো লাগে খুব। আলোচ্য জায়গাটা লেখকের চোখে দেখার আলাদা আনন্দ আছে। আপনার বর্ণনা ভালো, দৃষ্টিভঙ্গি চমৎকার। লেখাটার জন্যে বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে আপনাকে, বোঝাই যায়। ধন্যবাদ।
324737
০৫ জুন ২০১৫ রাত ০২:৪০
অবাক মুসাফীর লিখেছেন : দোয়া করি আপনার দ্রুত অন্‌য কোনো দেশে রুটি রুজির ব্‌যাবস্থা হয়... প্রিয়তে রাখলাম...
324749
০৫ জুন ২০১৫ রাত ০৩:৩৯
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম!

ভ্রমন করে এলাম তুর্কী! চমৎকার লাগলো প্রতিটি পর্ব ! ইচ্ছে আছে যাওয়ার!

শুভকামনা ও সফলতা কামনা করছি!
324764
০৫ জুন ২০১৫ সকাল ০৬:২৮
শেখের পোলা লিখেছেন : অনেকটাই জানালেন৷ আরও জানার আগ্রহ ছিল কিন্তু 'শেষ' কথাটা লিখে সব নষ্ট করেদিলেন৷ যাইহোক আপনাকে অনেক ধন্যবাদ৷ একবার স্বল্প সময়ের জন্য হলেও যাবার ইচ্ছা থাকল, ইনশাআল্লাহ৷
৩০ মার্চ ২০১৬ রাত ০২:৪৮
301978
সরোজ মেহেদী লিখেছেন : আসলে অবশ্যই জানাবেন। অপেক্ষায় থাকলাম।
১০
324823
০৫ জুন ২০১৫ দুপুর ০২:৪২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো
তুরুস্কে ভ্রমন করার ইচ্ছা ানেক দিনের। বিশেষ করে আবু আইয়ু্ব আনসারারির কবর, মিমার সিনান এর স্থাপনাগুলি এবং ট্রয় এর ধ্বংসাবশেষ দেখার বেশি ইচ্ছা। তুর্কি পরিচিতজন ও আছেন অনেক হেসফিবল এর সাথে কাজ করার সুবাদে। আপাতত ঘোলে স্বাদ মিটল।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File