তার্কিশ ইতিকথা (৩)
লিখেছেন লিখেছেন সরোজ মেহেদী ৩০ মে, ২০১৫, ১২:০৭:৩৩ রাত
একদল হিজাব পরিহীতা মেয়ে পার্কে বা কফিশপে বসে পায়ের উপর পা তুলে সিগারেট টানছে।এই ভূতুরে দৃ্শ্য দেখতে আপনার কেমন লাগবে?
প্রথম প্রথম আমি খুব অবাক হয়েছি।পরে দেখলাম তুরস্কে সিগারেট খাওয়া একটা রীতির মতো ব্যাপার।ড্রিংকস (চা, কফি) ওদের জাতীয় ঐতিহ্য।ওদের নিজস্ব পানিয়গুলো একবার মুখে নিলে বারবার টানে।
দেশটির অধিকাংশ মানুষই সিগারেট খায়।তবে আনুপাতিক হারে চেইন স্মোকারের সংখ্যা ছেলেদের চেয়ে মেয়েরাই বেশি হবে বলে আমার ধারণা।রাস্তায় বের হলে, আপনি হার হামেশাই মেয়েদের সিগারেট টানতে দেখবেন।
তাদের কেউ স্বল্প বসনা কেউ হিজাবী।তবে ওরা সিগারেট খেলে তার অবশিষ্টাংশ সাধারণত বর্জ রাখার জায়গায় ফেলে।রাস্তায় এবরো থেবরো ময়লা ফেলা মানুষ পরিমাণে সংখ্যালঘু ইস্তাম্বুলে।এখানে বলে রাখা ভালো, সিগারেটের ব্যহার কমাতে দেশব্যাপী কর্মসূচি পালন করছে এরদোয়াঁনের সরকার।
রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মপন্থাকেও নানাভাবে উৎসাহিত করতে দেখা যায় এ সরকারটিকে।
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় কোনো ধর্ম নেই।তবে ৯৯ শতাংশ মানুষ মুসলমান।এখানকার সব রাজনৈতিক দল ধর্ম ও দেশের প্রশ্নে মোটামুটি এক অবস্থান নিয়েছে।একে পার্টির কোনো কর্মী যেমন ‘আপনি মুসলিম’ এ পরিচয় পেলে আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করবে, বাম দলের কোনো কর্মীও একই রকম আচরণ করবে।আদর্শের বেশ্যাবৃত্তি দেশটিতে খুব বেশি একটা চলার সুযোগ নেই।রাজনীতিটা মূলত উন্নয়নমূখী।ওদের পশ্চিমাদের মতো একটি স্থির পররাষ্ট্রনীতি রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের যে মেয়েটিকে আপনি দেখছেন স্বল্পবসনা।সেই হয়তো আজান দিলে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে আসছে!এসব মেয়েদের একটি সংখ্যা যেমন বাম আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত আবার তাদের একটি বিশাল সংখ্যাকে আপনি দেখবেন এরদোয়াঁনের পক্ষে রাস্তায় নামতে।
এখানে আসলে ইউরোপিয়ান সংস্কৃতির প্রভাবটা প্রচণ্ডরকমের।যার পেছনে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছেন দেশটির জাতির পিতা মোস্তফা কামাল পাশা।তিনি তুরস্কে মসজিদের বাইরে অন্য কোনো জায়গায় প্রকাশ্যে নামাজ পড়া, সেনা সদস্যের জামাতে নামাজ পড়া, টুপি পরা, হিজাব পরা প্রভৃতি নিষিদ্ধ করেছিলেন।বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এসব নিষেধাজ্ঞা এক এক করে তুলে নিয়েছে।উসমানীয় খেলাফত আমলের তার্কিশদের পোশাকের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে সরকারটি।তারা বিভিন্ন জনসভায় হিজাব পরিহীতা স্ত্রীদের নিয়ে উপস্থিত হচ্ছে।
কামাল পাশার শাসনের শুরু থেকেই নাগরিকদের সিগারেট, মদপানে উৎসাহিত করা হয়।দীর্ঘ সময় পার হলেও দেশটির সেনাবাহিনী এখনো এ ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছে।ফলে এরদোয়াঁনের সরকারকে এসবের বিরুদ্ধে কাজ করতে হচ্ছে অনেকটা ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়ার ভয় নিয়েই।
ইস্তাম্বুলে ঘুরতে আসলে আপনি পাবেন এক অদ্ভূত জীবনধারা।আপনার পাশেই হয়তো প্রেমিক-প্রেমিকা অন্তরঙ্গ হয়ে বসে আছে।আবার তাদের পাশেই একদল ধর্ম নিয়ে আলোচনা করছে।কেউ কাউকে বাধা দিচ্ছে না!স্টেশনে প্রেমিক-প্রেমিকা জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।বাসেও আপনি একই চিত্র পাবেন।অন্য যাত্রীরা এদিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না!
আসলে শহর হিসেবে ইস্তাম্বুল কত সুন্দর তা লিখে বোঝানোর মতো নয়।
তবে তার সৌন্দর্য থেকেও আমাকে বেশি টানে ইস্তাম্বুলের জীব বৈচিত্র।এখানে আসলে আপনি পাবেন ইউরোপ ও এশিয় সংস্কৃতির মিশ্রণ।ইস্তাম্বুল যেন পুরো পৃথিবীর কেন্দ্র।সমগ্র পৃথিবীকে জানতে চাইলে আপনাকে ইস্তাম্বুলে আসতে হবে।এ শহরটিতে সারা বিশ্ব থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক আসে।ওদের এক একজন এক একটা সংস্কৃতির বাহক।ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলে, নিজস্ব রুচির বহি:প্রকাশ ঘটায়।
এখানে এলে আপনি দেখবেন কীভাবে একদল হিজাব ওয়ালি আর একদল নেংটিওয়ালি পাশাপাশি চলছে।একদল মোল্লা ও একদল বাম বা নাস্তিক একসাথে বসে খাচ্ছে।
রাস্তায় বের হলে হিজাবী মেয়ে আপনার চোখে পড়বে।তবে শহুরে অধিকাংশ মেয়েই স্বল্পবসনা।
জীবনধারা যেমনই হোক তুরস্কের মানুষ ধর্মকে দিয়েছে এক বিশেষ মর্যাদা।অনাহুত কারণে ধর্ম বা ধর্মাশ্রয়ী মানুষদের ছোট করার মানসিকতা চোখে পড়ে না।
মোট কথা-দৈনন্দিন জীবনে চর্চাটা যেমনই হোক না কেন তার্কিশদের পরিচয় হচ্ছে-ওরা জাতীতে তার্কিশ মুসলিম।এদের একটি ক্ষুদ্র অংশ অবশ্য তার্কিশ কুর্দিশ মুসলিম।তবে জাতীয়তার প্রশ্নে ওদের মধ্যে তেমন কোনো বিভেদ নেই।
(প্রিয় দেশ-চলবে)
তার্কিশ ইতিকথা (২)
তার্কিশ ইতিকথা
বিষয়: Contest_priyo
২৮৩৪ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তুর্কি সেনাবাহিনির ইসলাম বিরোধিতা নিয়ে একটি ঘটনা শুনেছিলাম। সিয়েরালিওন এ জাতিসংঘ মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনির কন্টিনজেন্ট এর মসজিদে লুকিয়ে এক তুর্কি অফিসার জুমা পরতে আসতেন। সেই অফিসার কে বাংলাদেশ সেনাবাহিনির একজন(তার কাছেই কথাটি শুনেছি) এভাবে আসার কারন জিজ্ঞেস করলে তিনি জবাব দেন যে তিনি নামাজ পড়েন জানলে তাকে শুধু চাকরি থেকে বরখাস্তই করা হবেনা বরং চিরজিবন এর জন্য জেলে পাঠান হবে। ৭৫ বছর কঠোর কম্যুনিষ্ট শাসন সোভিয়েট ও রাশিয়ার মানুষের মন থেকে ধর্ম কে মুছতে পারেনি।
জাহাজের তলা ফুটো করে পনি নিতে চাইলে সে জাহাজ তো নির্ঘাত ঢুববেই ইসলামকে যে যার মতো ইচ্ছা বানিয়ে নিয়েছে নেজের সুবিধার্তে
মন্তব্য করতে লগইন করুন