তার্কিশ ইতিকথা (২)
লিখেছেন লিখেছেন সরোজ মেহেদী ২৭ মে, ২০১৫, ১২:৫৮:৩৯ রাত
তুরস্কের ছেলে এবং মেয়ে উভয় দলই স্মার্ট ও মার্জিত।ওরা শারীরিক ফিটনেস, পোশাক প্রভৃতি বিষয়ে খুবই সচেতন।যথেষ্ঠ পরিমান সাজুগুজোও করে মেয়েরা।
তরুণদের মধ্যে অশিক্ষিত খুঁজে পাওয়া দায়।আর বিকৃত স্টাইলিস্টের দেখাও খুব একটা মেলে না রাস্তাঘাটে।
তুর্কিরা বিদেশিদের সামনে দেশ ও নিজেকে জাহির করতে খুব পছন্দ করে।আপনার সাথে কারো পরিচয় হলে সে প্রথমেই জানতে চাইবে ইস্তাম্বুল কেমন লাগছে।তুরস্ক ভাল কি না?উত্তরে আপনি ভাল বললে সে হাসি দিয়ে আপনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবে।ধন্যবাদ জানাবে।
এরপর ওই তুর্কি তার নিজের সমন্ধে আপনাকে বলার চেষ্টা করবে।সে কোনো বিষয়ে পারদর্শী হলে তা বারবার বলে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করবে।এক পর্যায়ে আপনার বয়স জানতে চাইবে।ওই তুর্কিটি যদি বয়সে আপনার চেয়ে ছোট হয় তাহলে সে আপনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসবে।বুঝাতে চাইবে সে অল্প বয়সেই অনেক কিছু করে ফেলেছে।আলাপ শেষে আপনাকে পছন্দ হলে মাথায় মাথা লাগিয়ে স্বাগতম জানাবে।খুব বেশি পছন্দ হলে গালে গাল ছুবে।
দেশটিতে ফুটবল খুব জনপ্রিয়।আর ফুটবলারদের মধ্যে যে গোলকিপার তার দাম সব থেকে বেশি।আপনাকে হাসি ও গাম্ভীর্য নিয়ে নিজের পরিচয় দিবে ‘আমি গোলকিপার’।
২০০৬ এরর বিশ্বকাপে সারাবিশ্বের নজরকাড়া তুর্কি গোলকিপার হাসানের কথা মনে আছে?আমার মনে হয়, হাসানের কারণেই গোলকিপাররা এদেশে এত জনপ্রিয়।
তার্কিশরা এখনো নিজেদের পৃথিবীর শাসক মনে করে।ওদের বিশ্বাস পৃথিবীর বৈধ শাসক তারাই।ওরা আপনাকে গম্ভীর হয়ে বলবে-এই যে যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্য ওরা শুধু শুধুই মধ্যপ্রাচ্যে মাতব্বরি করতে আসে।এ অঞ্চল আমাদের।আর ওদের ক্ষমতা নেই আমাদের কাছ থেকে তা কেড়ে নেয়।এসব বলতে গিয়ে ওরা আপনাকে শুনাবে প্রথম বিশ্বে যুদ্ধে গালিপল্লির সে ভয়াবহ যুদ্ধের কথা।তুরস্ক দখল করতে এসে সেদিন বৃটিশ-অ্যামেরিকা-রাশিয়া-ফরাশী-চীনের নেতৃত্বাধীন বিজয়ী বিশ্বশক্তি কামাল পাশার নেতৃত্বাধীন তুর্কি সেনাবাহিনীর হাতে নির্মম শিক্ষা পেয়েছিল।সে যুদ্ধে প্রায়ে পৌনে দুইলাখ বিদেশী সেনা নিহত হলে পরাজয় মেনে নিয়েছিল বৃটিশ সরকার।
দেশটিতে মোস্তফা কামাল পাশা একজন কিংবদন্তী নায়কের নাম।বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরদোয়াঁনের দল ৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে ক্ষমতায়।আমার মনে হয় দেশটির এর চেয়েও বেশি সংখ্যক মানুষ পাশার চিন্তা ভাবনার সাথে একমত নন।তবু পাশার নামে এখনো পুরো তুরস্ক নত হয়।১৯১৯ সালে সাম্রাজ্য হারানোর পর আজও তুর্কির যে অখণ্ড সীমান্ত তাতে যে কামাল পাশার অবদান দীর্ঘ ও সবচেয়ে বেশি তা সবাই স্বীকার করে।পাশা মারা যান ১৯৩৭ সালে।এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ সময়।এই সময়ে কোনো শাসকই তুর্কিদের মনে দাগ কাটতে পারেননি।
তবে রেজেপ তাইয়্যিপ এরদোয়াঁন এখন তুর্কিস্থানের নতুন নায়ক।অধিকাংশ তুর্কির বিশ্বাস এরদোয়াঁনের হাত ধরেই তুরস্ক ফিরে পাবে তার হারানো সাম্রাজ্য।
তুরস্কেও ক্ষমতার রাজনীতি আছে।ক্ষমতাসীন একে পার্টিকে বিএনপির মতো একটি দল ভাবতে পারেন।ওদের কোনো যুব সংগঠন নেই।
তবে সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছেন এরদোয়াঁন।এখানে এরদোয়াঁন মানে জনপ্রিয় একে পার্টি, একে পার্টি মানে সুদক্ষ এরদোয়াঁন।
এরদোয়াঁনের অনুপস্থিতিতে একে পার্টির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকে আশংকা প্রকাশ করেন।তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হচ্ছে, তুর্কিরা বোধহয় জন্মগতভাবেই ডান ঘরানার।আর এখানকার রাজনীতিবীদরা মোটের উপর উচ্চ শিক্ষিত।
(প্রিয় দেশ-চলবে)
লিংক তার্কিশ ইতিকথা
বিষয়: Contest_priyo
২৪৫০ বার পঠিত, ৩৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর একটা ব্যাপার হচ্ছে, তুরস্কের সর্বত্র ধর্ম উপস্থিত। ওরা ওদার, আধুনিক ও মুসলিম।সবটাই সত্য।এখানে জোরাজুরির কোনো বিষয় সাধারণত চোখে পরে না।
আর একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, ওরা একটি মিশন বা ভিশন নিয়ে এগুনোর চেষ্টা করছে।একদল দক্ষ ও বিশ্বস্ত মানুষ যার নেতৃত্ব দিচ্ছে।যদি এরদোয়াঁনের সরকার আগামি ১০ বছর কন্টিনিউ করতে পারে তাহলেই আমার কথার প্রমাণ পাবেন।
আমাদের রাজনীতাবীদদের মতো ওরা না প্রতারক, না ভণ্ড। সুতরাং ওদের উন্নতি হতে বাধ্য।
@ ব্লগার শঙ্খচিল : তা হলে তো, ইংরেজ'দের তুলনায় উপনিবেশবাদী ওটোমানরা নিরেট শিশু। আসুন্না, রাণী ভিক্টোরিয়ার যুগে ফিরে যাই।
'উহ/আহ' না করে কামাল পাশার অবদান স্বীকার করে নিলেই তো হয়।
মারিয়া
পরীবানু
মরুর মুসাফির
পরীবানু ,সততার আলো
অশ্বথমা
অপ্রতিরোধ্য স্বাধীন সমালোচক
পরমা ,নীলমণীলতা
বিলকিস লায়লা
দস্তার
রুপবান
মুক্তিযুদ্ধ ৭১
দ্রাবীড় বাঙাল
লেয়লা ইসলাম
বিলকিস
বাংলা ৭১
ভিক্টোরিয়া
হেলেনা
পল্লব প্রভাতে
খালেদ
রুশো তামজিদ
বারাংগনা
মধুবালা
সখি
ফয়সাল১
মাঝি-মাল্লা, ,
লায়লার
লায়লা০০৭
রাতুল দাস
চকো চকো
সায়েদ-রিয়াদ
বিভ্রান্ত নাবিক
ফাজিল
অপ্রতিরোধ্য স্বাধীন সমালোচক
মুক্তিযুদ্ধ ৭২
দ্রাবীড় বাঙাল
পিচ্চি পোলা
কাওসাইন হক
চাষা
jahed_ullah
নীরু
সাদা মন
সাদা মন
চোথাবাজ
আমি বিপ্লবী
সততার আলো সকাল সন্ধ্যা
এই নেরিকুত্তাকে বেন করা হোক। যার এত নিক ।
ভাল লাগলো।
পরের পোষ্টের
অপেক্ষায়
থাকলাম।
এটাই প্রমান করে যে তুরষ্ক অনেক এগিয়ে যাচ্ছে।
তুরুস্কে না গেলেও টার্কিশ হোপ স্কুল এবং হেসফিবল এর সাথে কাজ করার সুযোগ পাওয়ায় পরিচিত তুর্কি আছেন অনেক। এটা ঠিক তারা দেশপ্রেমিক। কিন্তু এটা অনেক সময় উগ্র জাতিয়তাবাদ এর সৃস্টি ও করে। উসমানি আমলে অনেক উজির তথা প্রধানমন্ত্রি ছিলেন বলকান,আরব,আর্মেনিয় বা কুর্দি। কিন্তু তুর্কি প্রজাতন্ত্রে তারা বৈষম্যের স্বিকার হয়েছিলেন। ওরহান পামুক এই বিষয়ে তার ইস্তাম্বুল গ্রন্থে লিখেছেন। উসমানিয় পরবর্তি তুর্কি প্রজাতন্ত্র উগ্র জাতিয়তাবাদ কে গুরুত্ব দিতে গিয়ে আযান ও নামাজ ও তুর্কি ভাষায় করে ফেলেছিলেন কামাল পাশা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা জনতার পছ্নদ হয়নি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন