ইস্তাম্বুলে ব্যাচেলরীয় (পহেলা) বৈশাখি সন্ধ্যা(ছবিসহ)

লিখেছেন লিখেছেন সরোজ মেহেদী ১৫ এপ্রিল, ২০১৫, ০১:১৩:১১ রাত

শুনলাম কানাডায়ও নাকি এখন বাংলাদেশী ইলিশ পাওয়া যায়।তবে তুরস্কে এমনটা কল্পনাও করা যায় না।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধপূর্ব পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম পরাশক্তি ও বর্তমান দুনিয়ার উঠতি শক্তি তুরস্কের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কও বোধহয় তেমন নেই।যাই হোক কোনো কিছুর অভাবে থেমে থাকে না কিছু।ঠেকায় পড়লে বাঘও নাকি পানি খায়।আর আমরাতো মা ছাড়া, মায়ের মাটি ছাড়া প্রবাসী বুভুক্ষু।তাই সব শেষে নস্টালজিক করার মতো এক আয়োজনে হয়ে গেল আমাদের পহেলা বৈশাখ উদযাপন।আমরা আসলে কী করেছি তা নিচের ছবিগুলিই বলে দিচ্ছে।

গত বছর যুগান্তরের পহেলা বৈশাখের ইভেন্ট কাভার করতে রাত তিনটায় বাসা ছেড়েছিলাম।আজকের পহেলা বৈশাখ সকালে ভোর ছ’টায় ঘুম থেকে উঠে ক্লাসের জন্য ছুটেছি।সন্ধ্যায় ডর্মে ফিরে আসা পর্যন্ত বুঝতে পারিনি কত বড় চমক অপেক্ষা করছে।ডর্ম ফেরৎ ক্লান্ত দেহটা বিছানায় পেতে চোখ বুঝেছি।এমন সময় ভাইবারে মুমিনের ইনবক্স।মাছ রান্না হচ্ছে।এক ঘন্টার মধ্যে আসলে খেতে পারবা।

ইস্তাম্বুলে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত একটি ডর্মেটরিতে আমরা সাত জন বাংলাদেশী শিক্ষার্থী থাকি।ডর্মটিতে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য ‘চা’টাও কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করে।সুতরাং রুমে আলাদা করে চা বানিয়ে খাওয়ার কোনো অনুমতি নেই।আর রান্না করাতো আকাশ কুশুম কল্পনার মতো।রুমে চেক করে রান্নার কোনো উপাদান পেলেই তা নিয়ে যায় কর্তৃপক্ষ।আমাদের মধ্যে মুমিনই একটি ছোট কোকার ও চা বানানোর যন্ত্র নিয়ে এসেছিল।ওর ওয়াটার হিটারটি কর্তৃপক্ষ নিয়ে গেছে।তবে কোকারটি নিতে পারেনি।এই কোকারটির সাহায্যে মাঝে মধ্যে লুকিয়ে বাংলাদেশী খাবার রান্না করে আমাদের খাওয়ায় ও।মুমিন রান্না করে আমরা ম্যানেজারকে গার্ড দেই!

মাছ রান্না হচ্ছে শোনার পর থেকেই নাকে ঘ্রাণ পাচ্ছিলাম।ক্ষুধাও যেন হুহু করে বাড়তে থাকে।ঘুম আর ক্লান্তিকে ছুটি দিয়ে মিনিট বিশেকের মধ্যেই ওর রুমে গিয়ে হাজির।তুরস্কের একটি সামূদ্রিক মাছকে (আলাবালেক) ইলিশের মতো করে ভাজি করেছে।সাথে পেয়াজ ভাজি আর আলু ভর্তা।আগেই ভাত রান্না করে রেখেছে।এ যেনো মেঘ না চাইতে বৃষ্টি।তানভীর ভাইকে খালাম্মার পাঠানো আচারও হাজির।সুতরাং শুরু হলো খাওয়া নিয়ে কাড়াকাড়ি।রুমে প্লেট রাখা মানে ধরা খাওয়ার আর একটা ফাঁদ পাতা।বিস্কুট রাখার বক্সই প্রিয় প্লেটের ভূমিকা পালন করল।আমাদের মধ্যে একমাত্র জয়নাল ভাই পেট বেড়ে যাওয়ার ভয়ে তুর্কি পোলাও খান না।আজ যেন তিনি সব পুষিয়ে দেয়ার মিশনে নেমে ছিলেন।

খেতে আর কত সময় লাগে।কথার ফুলঝুরি আর খুসুঁটির তালে তালে নিমিষেই ফুরিয়ে গেল খাবার।তবে খেতে খেতে স্বাদ আর শান্তির যে পরশ দেহ মনে ছুঁয়ে গেল তা যে ফুরাবার নয়!চিরন্তন এ আবেদন যেতে যেতে থেকে যায়।

সময়ের কাছে প্রতিনিয়ত পরাজয়ের স্বাদ নেয়া মন্থর বা গতিময় মনুষ্য জীবনটা দ্রুতই কেটে যাচ্ছে।এরই মধ্যে কিছু স্মৃতি জমা হয়ে যায়।আজও অনেক আনন্দ হলো, স্মৃতির পাতায় একটি খাতা লেখা পড়ে রইল।

আসছে শনিবার(১৮ এপ্রিল, ১৫) বাংলাদেশ কনস্যুল, ইস্তাম্বুল আয়োজিত পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান রয়েছে।আশাবাদী হয়ে রইলাম!

ভয়ার্ত হৃদয়ে দ্রুত খেতে খেতে ‘বা হাতে’ মোবাইলে ছবিগুলো তুলেছে ছোট ভাই সালেহ ইমরান।আমাদের আরও দুই সঙ্গী হলো কাইয়ুম ও সজল।সবার জন্য ভালোবাসা।

বিষয়: বিবিধ

১১৯৪ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

315008
১৫ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০১:৩৪
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনার আক্ষেপ আকুতি ভরা আনন্দ ভালই লাগল৷ তুরষ্ক তো বাংলা দেশ থেকে বেশী দূরে নয়, সেখানেকি বাঙ্গালীরা নেই, যে সামান্য ইলিশ মেলেনা৷ হাঁ, কানাডা এলে আপনাকে পাকা তাল আর শাপলা (নাল) বদে বাংলার সবকিছুই খাওয়াতে পারব ইন শাআল্লাহ৷৷
১৫ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০১:১৩
256138
সরোজ মেহেদী লিখেছেন : এখানে বাংলাদেশী কমিউনিটি একদম নতুন।সময়ের ব্যবধানে এখানেও নিশ্চয়ই হবে।দাওয়াত কিন্তু সিরিয়াসলি গ্রহণ করলাম।সত্যিই চলে আসব একসময়!এটা আমার ফেবু লিংক-https://www.facebook.com/saroujmahady
১৫ এপ্রিল ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২৩
256186
শেখের পোলা লিখেছেন : ফাঁকা কথা বলিনি জনাব, এসেই দেখেন৷ আমিি ফেস বুকে নাই৷ ইমেইল; দিলাম৷
১৫ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৮:১৩
256196
সরোজ মেহেদী লিখেছেন : ওকে রেখে দিলাম! আশাকরি কথা হবে।
315022
১৫ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০২:০৭
আবু জান্নাত লিখেছেন : পান্তা ইলিশের জন্য এতই আপসোস? হায়রে বাঙ্গালী, কবরেও পান্তা ইলিশ চাইবে।
১৫ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০১:১৪
256139
সরোজ মেহেদী লিখেছেন : প্রবাসীরাতো ভাই বাংলাদেশী খাবার খাওয়ার তেমন সুযোগ পায় না।তাই তাদের কাছে দেশীয় যে কোনো খাবার নিয়ে আবেগটা অনেক বেশি।আপনি প্রবাসী হলে এ আবেগটা টের পাবেন!
315131
১৫ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৮:২২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : তুরুস্কে শ্যাড মাছ পাওয়া যায় না??
এটা নাকি ইলিশ এর বিকল্প।
১৬ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১১:৪৫
256421
সরোজ মেহেদী লিখেছেন : জানিনাতো।তবে আমরা যেটা খেয়েছি সেটার স্বাদ কিছুটা ইলিশের মতো।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File