সেলাম হোসেন আবি!
লিখেছেন লিখেছেন সরোজ মেহেদী ০৭ মার্চ, ২০১৫, ১০:২২:৫১ রাত
কীভাবে শুরু করা যায় ভাবছি।পুলিশের ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষের অভিজ্ঞতা এতটা সুখকর যে তাদের কাছে ঘটনাটা গল্প মনে হওয়াই স্বাভাবিক।কেউ হয়তো হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলতে চাইবেন-এমন কখনো হয় নাকি।
রাত প্রায় ১১টা।সাদা মাটা একটা হোটেলে ডিনার শেষ করে ইস্তাম্বুলের ব্যস্ততম বাস স্টেশন আফজিলারের দিকে ছুটছি আমরা ছয়জন।গন্তব্য প্রায় ৩৫-৪০ কিলোমিটার দূরে বেইলিকদুযুর ইয়াকুপলোর সরকারি ডর্মেটরি।ইয়াকুপলো পল্টনের তুলনায় সাভারের মতো একটি জায়গা।এ পথে রাত ১০টার পর সাধারণত বাস পাওয়া যায় না।তখন একমাত্র যানবাহন হিসেবে টেক্সির উপর নির্ভর করতে হয়।কখনো কখনো টেক্সি পাওয়াও দুস্কর হয়ে যায়।তার উপর গত কয়েকদিন ধরে রহস্যের রানী ইস্তাম্বুলের আবহাওয়া খুবই খারাপ।শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে রাত দিন টানা বৃষ্টি হচ্ছে।
২৯ অক্টোবর তুরস্কের স্বাধীনতা দিবস।দুপুরের লাঞ্চ শেষ করে ডর্ম থেকে দিনটি উদযাপন করতে বেরিয়েছি আমি ও চার আফ্রিকান।এক তুর্কি বন্ধুর আমন্ত্রণে আমরা প্রথমে দেশটির স্বাধীনতা চত্বর তাকসিম স্কয়ারে যাই।তাকসিম থেকে গালাটা টাওয়ারে।সেখান থেকে বেসিকতাসে বসফরাস সাগরের তীরে।বেসিকতাস থেকে হাঁটতে হাঁটতে যাই ইস্তাম্বুলের ব্যস্ততম এলাকা আর্থাকোয়।সর্বত্র মানুষের ভীড়।
নানা জায়গা ঘুরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে আমরা এসে পৌঁছাই আফজিলারে।আফজিলার থেকে মিনিবাসে করে যেতে হবে ইয়াকুপলোর ডর্মে।আটটায় ডর্মের ডিনার শেষ।তাই একটি হোটেলে ডিনার শেষে স্টেশনের দিকে হাঁটছি।স্বাধীনতা দিবস ও আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় অধিকাংশ দোকান পাট বন্ধ। রাস্তা ঘাটে মানুষ নেই বললেই চলে।খানিকটা সামনে হাঁটতে দেখি হেটেল থেকে এক ভদ্রলোক বেরিয়ে আসছেন।
তিনি আমাদের ইগেজেলার(শুভ রাত্রি) বলে শুভেচ্ছা জানালেন।এরপর আমাদের সাথে থাকা তুর্কি বন্ধু ইর্থোর সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললেন।একপর্যায়ে আমাদের হাতে ইশারা দিলেন তার সাথে যেতে।আমি তখনো বুঝিনি কী ঘটতে যাচ্ছে।ইর্থোর দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকালে সে বলল-এ ভদ্রলোকের বাসা ইয়াকুপলোতে।তিনি তোমাদের ডর্মে পৌঁছে দিতে চান।কোনো আপত্তি না থাকলে তোমরা তার গাড়িতে চড়ে ডর্মে ফিরে যেতে পার।অনেকটা মেঘ না চাইতে বৃষ্টি পাওয়ার মতো আমরা তার প্রস্তাবে রাজি হলাম।হুড়হুড় করে উঠে গেলাম অচেনা মানুষটির প্রাইভেটকারে।
ড্রাইভিং করতে করতে তিনি আমাদের নাম, কে কোন দেশ থেকে এসেছি, কোথায়, কিসে পড়ছি প্রভৃতি জানতে চাইলেন।একপর্যায়ে নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বললেন-আমি ২৫ বছর পুলিশের চাকরি শেষে রিটায়ার্ড করেছি।এখন কাজ করছি সরকারের সিকিউরিটি বিভাগে।আমার কাজ রাস্তায়।রাস্তায় থাকি আর মানুষের উপকার করার চেষ্টা করি।
আমাদের মধ্যে একজন তুর্কিতে দক্ষ।ভদ্রলোকের যেসব কথা আমাদের বুঝতে সমস্যা হচ্ছিল তা ওই আফ্রিকান বন্ধু ইংরেজিতে অনুবাদ করে বুঝিয়ে দিচ্ছিল।এই ভদ্রলোক কথায় কথায় বললেন-তোমরা ভাগ্যবান যে আমাকে পেয়েছ। রাত ১০টার পর ইয়াকুপলোর বাস পাওয়া যায় না।আমি তোমাদের পৌছে দিতে পেরে গর্বিত।সব তুর্কি-ই আমার মতো মানুষের উপকার করতে চায়।তোমরা আমার জন্য দোয়া করবে।অনেকটা ভাব গাম্ভীর্য তার গলায়।এর মধ্যেই বক্তৃতায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে আমি জানতে চাই ইংগিলিশযে আবে(ইংলিশ জানেন নাকি ভাই)।উত্তরে তিনি বললেন-লিটল বাট।লাইক এজ-মাই নেইম ইজ হোসেন।আই ওয়াজ এ পুলিশ।হা হা হা হা।তুর্কি ভাষায় হোসেন সাহেবের গল্প চলতে থাকে-ছোট ছেলে মারমারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করেছে।একমাত্র মেয়ের পিচ্চি নাতনী ও তার বন্ধুত্বটা খুব গাঢ়…
খানিকটা রাস্তা আসার পর বুঝলাম-এই ভদ্রলোক ইয়াকুপলো থাকেন না।কীভাবে ডর্মের দিকে যেতে হবে তিনি আমাদের কাছে জানতে চাইলেন!এটা ঠিক কোন এলাকায় পড়েছে তাও জিজ্ঞাসা করলেন।এত রাতে আমাদের রাস্তায় দেখে হয়তো তার মায়া লেগেছে।তাই যেচে পৌছে দিয়ে যাচ্ছেন।
সাড়ে ১১টা ৩৫ কি ৪০ এর দিকে গাড়ি এসে ডর্মের সামনে থামল।তার মুখে হাসি।আমরা মানুষটিকে ধন্যবাদ দিয়ে গাড়ি থেকে নামলাম।তিনিও প্রতি উত্তর দিলেন।ডর্মের সিঁড়িতে উঠতে উঠতে তার দিকে ফিরে বললাম-সেলামুন আলাইকুম (তুর্কিরা এভাবেই সালাম দেয়) আবেইম।তিনি ওয়াআলাইকুম সালাম জবাব দিয়ে বললেন-দোয়া চজুখলার (বাচ্চারা)।দোয়া।
বিষয়: বিবিধ
৯৫১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একজন মানুষ এর কথা জানলাম অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন