মোহাম্মদ (স.) এর দাঁড়ি, ও…
লিখেছেন লিখেছেন সরোজ মেহেদী ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১২:০৫:৩১ রাত
ইস্তাম্বুলে আসার পর পরই জানতে পারি এখানকার একটি জাদুঘরে হযরত মোহাম্মদ (স.) এর দাঁড়ি সংরক্ষিত আছে।তবে জাদুঘরটিতে যে রাসূলের দাঁড়ি ছাড়াও আমার জন্য আরও চমক অপেক্ষা করছি তা ভাবিনী।জাদুঘরটির নাম টপকাপি সারায়ি।নানা ব্যস্ততাকে পায়ে মাড়িয়ে ওইদিন রাসূলের দাঁড়ি দেখার সৌভাগ্য হলো অবশেষে।
ছোট ছোট বেশ কিছু বাক্সে দাঁড়িগুলো সংরক্ষিত আছে।বাক্সগুলোর পাশেই রাসূলের ব্যবহৃত দান বাক্সটি রাখা।পাশের ছোট্ট একটি রুমে রাসূলের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস।জাদুঘরের এ জায়গাটিতে দর্শণার্থীদের প্রচণ্ড ভিড়।বেশ কয়েক মিনিট লাইনে অপেক্ষা করে আমি মহানবীর দাঁড়ির কাছে পৌঁছাই।একটু ভাল করে তাকানোর চেষ্টা করি।যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না সত্যিই আমি মোহাম্মদ (স.) এর দাঁড়ি দেখছি।
রাসূল (স.) কে নিয়ে যে কোনো ধরণের ছবির ব্যবহার ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ।তাই তার কোনো প্রতিকৃতি আমি কোনোদিন মনে ভেতরে আঁকিনি।তার দাঁড়ি মোবারক দেখতে দেখতে ভাবছিলাম কেমন ছিলেন এ মানুষটি।তখনও আমি জানতাম না আমার সামনে আরও ভাল কিছু অপেক্ষা করছে।
বাংলাদেশে হযরত মোহাম্মদকে দেখা হয় শুধু একজন আল্লাহর প্রেরিত নবী তথা ধর্মপ্রচারক হিসেবে।অথচ একই সাথে তিনি ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে সফলতম এক সেনাপতি ও সমর যোদ্ধা।(স.)মোহাম্মদ রাষ্ট্রপতি হিসেবে ছিলেন অপ্রতিদ্বন্ধী।তার মডেল রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সমর কৌশল নিয়ে এখনো পশ্চিমা বিশ্বে গবেষণা চলছে।তাই সবসময়ই আমি বেশি আকর্ষণ বোধ করেছি রাষ্ট্রপতি ও সেনাপতি মোহাম্মদের প্রতি।
রাসূলের দাঁড়ি দেখে একটু সামনে এগুতেই চোখে পড়ল একটি বাক্সে রাখা দুটি তরবারি ও একটি ধনুক।বাক্সের নিচে লেখা হযরত মোহাম্মদ (স.) এর ব্যবহৃত তরবারি ও ধনুক।বেশ কিছু সময় আমি এখানে কাটাই।মোহাম্মদ নামক যোদ্ধার ব্যবহৃত তরবারিগুলো খুতিয়ে খুতিয়ে দেখার চেষ্টা করি।নিজের মধ্যে অন্যরকম এক আবেগ খেলা করে।
জাদুঘরের এ অংশটিতে কোরান তেলাওয়াত চলছে অনবরত।আমি ঘুরে ঘুরে একে একে সব কীর্তি দেখি।চার খলিফা হযরত আবুবকর, ওমর, উসমান ও আলী (রা.) র ব্যবহৃত তরবারি।ফাতেমা (রা.) র ব্যবহৃত পোশাক, তার ব্যবহৃত বাক্স, হযরত (রা.) হোসাইনের জোব্বা।
জাদুঘরটিতে হযরত মূসার (আ.) লাঠি, দাউদ (আ.) এর তরবারিও সংরক্ষিত আছে, আছে বিশ্বখ্যাত মুসলিম সেনাপতি খালিদ ইবনে ওয়ালিদের তরবারি।আছে ওসমানীয় খেলাফতের প্রতিষ্ঠাতা ওসমান (রহ.) এর ব্যবহৃত তরবারি।এখানে মদিনার মাটিও বেশ কয়েকটি বাক্সে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে, রাখা হয়েছে ওহুদ ও বদরের মাটি।এছাড়া রয়েছে উসমানীয় খেলাফতের নানা কীর্তি।বিশাল এ জাদুঘরটি ভাল করে ঘুরে দেখতে চাইলে অন্তত একদিন সময় প্রয়োজন।অথচ আমার হাতে ছিল ঘন্টা দেড়েকের মতো সময়।বিকেল পাঁচটায় জাদুঘরের গেট বন্ধ হয়ে গেলে আমাকেও বের হয়ে আসতে হয়।ইস্তাম্বুলের আকাশে তখন ডুবন্ত রক্তিম সূর্য।শহরের পাশ ঘেষে বয়ে যাওয়া মারমারা সাগরের পানি যেন সূর্যের লাল আভার সাথে লুটোপুটি খাচ্ছে।অতৃপ্ত হৃদয়ে পরিতৃপ্তির হাসি নিয়ে আমি তার পাড়ে হাঁটছি…
বিষয়: বিবিধ
১২৫৬ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সংরক্ষণের ইতিহাসটা জানতে ইচ্ছে করছে।
মহানবীﷺর আদর্শ সংরক্ষণ করা বেশী গুরুত্বপূর্ণ
মন্তব্য করতে লগইন করুন