কদরের রাত্রি

লিখেছেন লিখেছেন মাসুম বিল্লাহ মাদানি ১০ জুলাই, ২০১৫, ০৬:৪৪:৩১ সকাল

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

কদরের রাত্রি

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষের বসবাসের সুবিধার্থে সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্যে রাত এবং দিন অন্যতম। বিশেষ কারণে এই রাত এবং দিনের মধ্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কতিপয় দিনকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন আবার কতিপয় রাতকে ও মর্যাদাবান করেছেন। যেমন সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে জুমার নামাযের মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন শুক্রবার কে,দুই ঈদের মাধ্যমে আরো দু’দিনকে সম্মানিত করেছেন। কিন্ত আল্লাহর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন দিন হলো ৯ (নয়) জ্বিলক্বদ অর্থাৎ আরাফাতের দিন। এ দিনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রথম আকাশে আসেন এবং বান্দাদের ক্ষমা করে দেন। আরাফার দিনের মর্যাদা সম্পর্কে হাদিসে অনেক আলোচনা এসেছে।

আর রাতের মধ্যে একটি রাত হলো আল্লাহ তা’লার কাছে খুব ই মর্যাদাবান। রাত এর আরবি শব্দ হলো الليل এ শব্দটি পবিত্র কুরআনে প্রায় ১৬৫ বার এসেছে, এবং الليل নামে একটি সূরার নামকরণ ও করা হয়েছে। মানুষের কিছু সুবিধার জন্য আল্লাহ রাত সৃষ্টি করলেন এ ব্যাপারে তিনি নিজেই বলেন-

وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ لِبَاسًا وَالنَّوْمَ سُبَاتًا وَجَعَلَ النَّهَارَ نُشُورًا

অর্থাৎ, তিনিই তো তোমাদের জন্য রাতকে করেছেন আবরন, ঘুমকে বিশ্রাম এবং দিনকে করেছেন বাইরে গমনের জন্যে। (আল ফুরকান ৪৭)

মানুষ সারা দিন পরিশ্রম করে ক্লান্ত হয়ে পড়লে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত রাতের আগমন ঘটিয়ে বিশ্রামের ব্যবস্থা করে দেন। এই রাতের মধ্যে ও আল্লাহর কাছে কিছু সময় আছে যা বান্দা আল্লাহর খুব নিকটবর্তী হওয়ার সুযোগ পায়। আর সেটা হচ্ছে রাতের শেষ ভাগ। যারা ঐ সময় আল্লাহর ইবাদত করবে তারা আল্লাহর খুব কাছের এবং প্রিয় বান্দা হিসেবে পরিগনিত হবে। আর এই রাতের মধ্যে সর্বোত্তম রাত হচ্ছে ক্বদরের রাত। যা হাজার মাসের চেয়ে ও উত্তম। আল্লাহ এ রাতের নামে ও একটি সূরা অবতীর্ন করেন। সূরাতুল ক্বদরে আল্লাহ এ রাতের ফযিলত বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ

لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ

অর্থাৎ, লাইলাতুল ক্বদর হাজার মাসের চেয়ে ও উত্তম।

আবার মাস সমূহের মধ্যে রমযান মাস হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম। আর এ রাতটিকে তিনি রমযান মাসের মধ্যেই রেখেছেন। এই ক্বদরের রাত ঠিক কোন রাত্র সেটা তিনি গোপন রেখেছেন যাতে বান্দারা তা খুজতে বেশি বেশি ইবাদত করে। আর সারা সৌদি আরব সহ অনেক দেশেই কুঁড়ি রমযান থেকে শুরু হলো সেই মহিম্মানিত রাত্রিকে খুজে বের করার পালা এবং ইবাদতে মশগুল থেকে নিজের গুনাহ মাফ ও হাজার মাসের ইবাদতের সওয়াব অর্জন করা। তাই পৃথিবীর প্রায় সকল মসজিদে এক দল আল্লাহ প্রেমি মু’মীন ইতেক্বাফে বসে যাবেন। আর আরবের মসজিদ গুলোতে শেষ রাতে ইমামের সাথে জামায়াতে তাহাজ্জুদ নামায আদায়ের মাধ্যমে মুসলমানরা নিজের,পরিবারের,দেশের এবং মুসলিম মিল্লাতের জন্য দোয়া করবেন। নবী সঃ এ রাতে ইবাদতের ফযিলত বর্ণনায় ইরশাদ করেনঃ

وثبت قول النبي : "من قام ليلة القدر إيمانًا واحتسابًا غفر له ما تقدم من ذنبه"،

"যে কদরের রাতে ঈমান ও আত্ম সমালচনার সহিত জাগবে তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করা হবে।"

আর আল্লাহর কাছে প্রিয় ইবাদত হচ্ছে রাতের নামাজ (অবশ্যই ফরজ নামাযের পরে)। আল্লাহ্‌ ঘোষণা করেন

وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَكَ الإسراء:79

রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পাঠ করুন এটা আপনার জন্য অতিরিক্ত (নফল)।

وَمِنَ اللَّيْلِ فَاسْجُدْ لَهُ وَسَبِّحْهُ لَيْلًا طَوِيلًا الإنسان:26

"রাত্রির কিছু অংশে তাঁর উদ্দেশে সিজদা করুন এবং রাত্রির দীর্ঘ সময় তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করুন।"

কুরআন তেলাওয়াত ও আল্লাহর কাছে প্রিয়ঃ

إِنَّ نَاشِئَةَ اللَّيْلِ هِيَ أَشَدُّ وَطْئًا وَأَقْوَمُ قِيلًا ঃ المزمل:

নিশ্চয় রাতের বেলা জেগে ওঠা প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক বেশি কার্যকর এবং যথাযথভাবে কুরআন পড়ার জন্য উপযুক্ত সময়।

أَمْ مَنْ هُوَ قَانِتٌ آَنَاءَ اللَّيْلِ سَاجِدًا وَقَائِمًا يَحْذَرُ الآَخِرَةَ وَيَرْجُو رَحْمَةَ رَبِّهِ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الأَلْبَابِ الزُّمر:9

" যে লোক অনুগত, রাতের বেলা দাঁড়ায় ও সিজদা করে, আখেরাতকে ভয় করে এবং নিজের রবের রহমতের আশা করে? এদের জিজ্ঞেস করুন যারা জানে এবং যারা জানেনা তারা কি পরস্পর সমান হতে পারে ? কেবল বিবেক বুদ্ধির অধিকারীরাই উপদেশ গ্রহণ করে।"

যারা মসজিদে নববী এবং মক্কার বাইতুল্লাহতে সালাতুল লাইল আদায় করবেন তারা তো ইবাদতের কি যে আনন্দ সেটা খুব উপভোগ করবেন। যখন ইমাম সাহেব নামাযে কোরআন তেলাওয়াত করেন মনে হয় কুরআন এখন ই নাযিল হচ্ছে,এটি আসলে কুরআনের মু’যিযা। ওলামায়ে কেরামগন রমযান মাসের শেষ দশ দিনের বিজোড় রাত্রিগুলোতে লাইলাতুল ক্বদর খুজতে বলেছেন। তাই বিজোড় রাত্রি গুলোতে আমরা বেশি বেশি ইবাদত করে নিজের,দেশের ও মুসলিমদের জন্য দোয়া করব,যাতে আল্লাহ মুসলমানদের উপর থেকে সকল নির্যাতন বন্ধ করে দেন। মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর দ্বীন বাস্তবায়ন করার সংগ্রামে আমরণ কাজ করার তৌফিক দান করেন। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ,মিশর,সিরিয়াসহ বিশ্বের সকল দেশের ইসলামি আন্দোলনের নেতা কর্মীদের আল্লাহ হেফাযত করুন। যারা নিহত হচ্ছেন তাদেরকে আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করে জান্নাতে সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন। যে সকল নেতা কর্মীরা মিথ্যা অপবাদে জেলে বন্দী ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন আল্লাহ তাদেরকে নির্দোষ প্রমান করে মুক্ত করে দিন। আল্লাহ মুসলিম মা বোনদের ইজ্জতকে হেফাযত করুন। ইসলামের শত্রুদের আল্লাহ হেদায়াত দিক অন্যথায় তাদেরকে ধ্বংস করে দিন। আমীন।

এতেকাফে বসে বেশী বেশী কুরআন তেলাওয়াত, নফল নামায এবং জিকীর আজকারে মশগুল থাকা উচিৎ। অনেকে ই দুনিয়াবি কথা বার্তা, অহেতুক গল্প ও কাজ করে থাকেন, যা মোটেও এতেকাফের উদ্দেশ্য নয়।

আবার কোন কোন জায়গায় বেশী কড়াকড়ি বুঝাতে মসজিদের বাহিরে গিয়ে গোসলে নিষেধ করে থাকেন, এটাও ঠিক না।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে শবে বরাত এর বিদআত নিয়ে যত আয়োজন, সহিহ স্পষ্ট দলিলের মাধ্যমে যা মর্যাদাপূর্ণ তার ব্যাপারে অতটা গুরুত্ব চোখে পরেনা। আল্লাহ্‌ আমাদের যথাযথ হক আদায় করে কদরের রাত্রির খুঁজে এবাদতে তৌফিক দান করুন।

বিষয়: বিবিধ

১১৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File