আপনার বা আমার ওজন যেভাবে প্রতি মূহূর্তে কম-বেশী হয় ·

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ গোলাম ছাকলাইন ০১ জানুয়ারি, ২০১৬, ১০:০৪:২৭ রাত



আপনার ওজন কত জানেন কি? প্রশনটা খুব সোজা বলে ধরে নিবেন না এমনকি যদি আপনি খুব সম্প্রতি নিজের ওজন নিয়েও থাকেন। আপনার কোন আন্দাজ আছে কি যে আপনার ওজন একদিনে বা এক সন্ধায়, এক ঘণ্টায়, এমনকি দশ মিনিটে কত বদলাতে পারে ?

মানষের শরীরের ওজন নিত্য কম বেশি হচ্ছে। সহজবোধ্য কারণগুলি, যেমন খাদ্যগ্রহণ ছাড়াও অন্য কারণ আছে যারা নিত্য, ধীরে ধীরে, অলক্ষ্যে ওজনের পরিবতন ঘটাচ্ছে। এই ব্যাপারটা সব প্রথম লক্ষ করেন স্যাংটোরিয়া*, প্রায় তিনশ বছর আগে । তিনি বড় বড় দাঁড়িপাল্লা তৈরী করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাতে চড়ে বসে থাকতেন — নিজের ওজনের পরিবতন লক্ষ্য করতেন। তাঁর পরীক্ষার ফল এমনই বিস্ময়কর ছিল যে অসংখ্য অভ্যাগত তাঁর ল্যাবরেটরিতে ভিড় করে দেখত তাদের চোখের সামনে কেমন করে প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিকের ওজন কমে যাচ্ছে। পরিবতনগুলি ছিল লক্ষণীয়। এক রত্রিতে স্যাংটোরিয়াসের ওজন কমত এক কিলোগ্রামের মতো।

ওজন কমতে পারে অনেক কারণে।

শরীর থেকে পরিত্যক্ত কাবন ডাইঅকসাইডের পরিমাণ চব্বিশ ঘণ্টায় প্রায় 75 থেকে ৪০ গ্রাম। এটা তো অতি সামান্য যখন তুলনা করি ফুসফুসের মাধ্যমে বাইরে নিগত বাপীভূত জলের ওজন প্রতি চব্বিশ ঘণ্টায় 150 থেকে 500 গ্রাম, ত্বক থেকে বেরিয়ে যাওয়া ঘামের ওজন আরো বেশি। যে কোন ব্যাক্তি সব সময় ঘামছে, যদিও সব সময়ে শরীর বেয়ে বড় বড় ফোঁটায় সেই ঘাম ঝরে পড়ছে না। ত্বকের সবত্র ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য স্বেদগ্রন্থির ছিদ্র দিয়ে সক্ষম স্বেদকণা নিয়ত বেরিয়ে আসছে যা শুধুমাত্র অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যেই দেখা যায়। বাতাস যদি শুকনো থাকে তাহলে সেই স্বেদকণা বাষ্পীভূত হয়ে যাচ্ছে গ্রন্থিমখে পরবতী বিন্দটি জমা হওয়ার আগেই, তাই ত্বক শুকনোই থেকে যাচ্ছে। শীতল আবহাওয়াতে 250 থেকে 1700 গ্রাম জল বাপীভূত হয়ে যায় ত্বক থেকে। যে সব ব্যক্তি কঠোর কায়িক শ্রম করে তারা শষ্ক উষ্ণ আবহাওয়াতে 24 ঘণ্টায় 10-15 লিটার ঘাম ত্যাগ করে, কখনো কখানো ঘণ্টায় লিটার পর্যন্ত। এমনকি এক্ষেত্রেও ত্বক শুষ্ক থাকতে পারে। কম করে ধরলেও দক্ষিণাঞ্চলের অধিবাসীরা সত্তর বছরের জীবনকালে সত্তর থেকে একশ পণ্যাশ টন ঘাম ত্যাগ করে। এই পরিমাপ তিনটি বড় বড় রেলের ট্যাঙ্কওয়াগণকে ভক্তি করে দেবে।

ঘামের উপযোগিতা কী ? কেনই বা প্রানীরা এত প্রচুর পরিমাণে ঘমত্যাগ করে থাকে ? ঘমত্যাগ হচ্ছে শরীরের সেই যান্ত্রিক ব্যবস্থা যার দ্বারা মানুষ তার দেহকে অতিরিক্ত উত্তপ্ত হওয়া থেকে বাঁচায়। বাপীভবন প্রক্রিয়াতে অনেক তাপ ব্যয়িত হয়। এক কিলোগ্রাম ঘামের জন্যে ছয় শত ক্যালোরি। এই তাপের সমস্তটা যদি শরীর থেকে নেওয়া হোত তাহলে শরীরের উত্তাপ কমত 10°C । দভাগ্যক্রমে আমাদের শরীরের অন্তস্থিত তাপের সামান্য একটা অংশ শরীর ব্যয় করতে পারে বাপীভবন কাযে, যে কারণে ঘম-নিগমনের সাহায্যে শরীর শীতল আমরা করতে পারি না তবে শরীরকে অত্যধিক গরম হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারি। স্বাভাবিক শরীরের উত্তাপ প্রায় 37°C (বগলে)। একে রক্ষা করা সম্ভব হয় ফুসফুস এবং ত্বক থকে বাপীভবনের ফলে – এমন কি তখনও যখন বাইরের বাতাসের উষ্ণতা 40°C থেকে 50°C পর্যন্ত।

ঘাম হওয়া সব অবস্থাতে যে ভালো তা নয়। যখন আদ্রতা বেশী থাকে তখন ঘাম বাপীভূত হয় বেশ ধীরে। এই ঘাম বড় বড় ফোঁটায় জমা হয়ে ত্বকের গা দিয়ে ঝরে পড়ে, কন্টের লাঘব কিছই হয় না কারণ বাপীভবন ছাড়া শরীর জড়োয় না। এই কারণে শক্ৰক মরক্সেঞ্চলে উত্তপ্ত আবহাওয়া ক্রান্তীয় অঞ্চলের জঙ্গলের ভ্যাপসা আবহাওয়ার তুলনায় সহনীয়।

খুব বেশি ঘাম-হওয়া কি ক্ষতিকর ? তিন থেকে পাঁচ লিটার জল ত্যাগ তা যে ভাবেই হোক, অসহ্য তৃষ্ণা এনে দেয়, কিন্তু এর ফলে মৃত্যু হয় না, যদি সময় মতো পরিপরণ করে দেওয়া হয়। ফ্রানসে 42 সালে ঘটেছিল একটি বিখ্যাত ঘটনা যখন একটি যবেক আমন্ত্যু কিছু পান করবে না এই সকলেপ অবিচলিত থাকে। জীবনমৃত্যুর লড়াই চলে সতের দিন। ছেলেটিকে বাঁচানো যেত যদি এমনকি তার এই অত্যাশচয উপবাসের পঞ্চদশদিনেও পযাপ্ত পরিমাণে জল পান করানো যেত।

ঘামের এই এত জল আসে কোথা থেকে ? জল খাওয়ার পরে সেই জল কোথায় আমরা সঞ্চয় করে রাখি ? স্বেদগ্রন্থি জল আহরণ করে রক্ত থেকে।

কিন্তু যতক্ষণ ঘাম হওয়া অত্যধিক না হয়, রক্ত ঘনতর হয় না বা তার আয়তনের হ্রাস ও ঘটে না। রক্তের জলের ভাগ যেই কমে যায় সম পরিমাণ জল রক্তবহা নাড়ীর মধ্যে চলে আসে সঞ্চিত ভান্ডার থেকে (জল সঞ্চয়ের মুখ্য স্থানগুলি হোল চামড়ার নীচের কলাস্তরে, পেশীতে ও অন্যান্য দেহযন্ত্রে)। অপর পক্ষে জল পান করার পরে অন্ত্র থেকে সেই জল রক্তের মধ্যে শষে নেওয়া হয়, সেই পরিমাণ জল তৎক্ষণাৎ ভাণ্ডারে পরিবাহিত হয়।

বিশেষ করে পাখিদের এবং উড়তে পারে এমন পতঙ্গদের ক্ষেত্রে জল সঞ্চয় করে রাখার পরিমাণ সীমিত। তাদের শরীরে যে জল থাকে সেটা এক বা দই দিনের পক্ষে কোন রকমে চলতে পারে, এমন কি ঠাণ্ডা আবহাওয়াতেও। কিন্তু প্রাণীদেহে জলের ভাণ্ডার একটা থাকতেই হবে। জল ধরে রাখবার এক অভিনব উপায় উদ্ভাবন করেছে মৌমাছিরা। কোন মৌমাছি পরিবার যাতে আছে হাজার খানেক বয়স্ক পতঙ্গ এবং অনেক শুককীট, জল ছাড়া বাঁচতে পারে না। এদের শিশুদের কি অবস্থা হয়, আবহাওয়া যখন ওড়ার পক্ষে অনুপযোগী থাকে? মৌমাছিরা একটা রাস্তা বার করেছে। একটা মৌচাক খুললে দেখতে পাবে অনেকগুলি কমা মেীমছি নিস্তব্ধ হয়ে চাক ধরে ঝুলছে। এরা সব জীবন্ত জলের চৌবাচ্চা। মৌমাছি রাজ্যের ভিস্তিরা জল এনে এনে এই সব কমী মৌমাছিদের গলায় ঢেলে দিচ্ছে যার ফলে তারা ওড়া দরে থাক হটিতেই পারে না। ওড়ার পক্ষে অনুপযোগী আবহাওয়া দু'এক দিনের মধ্যে কেটে গেলে তাদের পেটগুলি আবার স্বাভাবিক আকারের হয়ে যায়, চৌবাচ্চাও খালি হয়ে যায়।

* স্যানটোরিও স্যানটোরিওস (1564-1636), ইতালীয় চিকিৎসক, পাডুয়াতে চিকিৎসাশাস্ত্রের অধ্যাপক, গ্যালিলিওর সহাধ্যায়ী।

সূত্র: ব.সেরগেইয়েভ এর বই থেকে অনুদিত। অনুবাদ করেছেন কান্তি চট্রোপাধ্যায়, কলকাতা। প্রকাশকাল-১৯৮৫ সাল।

বিষয়: বিবিধ

১৩৬১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

355990
০২ জানুয়ারি ২০১৬ দুপুর ১২:১৫
আবু জারীর লিখেছেন : ভালো লাগলো
ধন্যবাদ
356003
০২ জানুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০২:০৭
মোহাম্মদ গোলাম ছাকলাইন লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেও।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File