টেস্টের পর ওয়ানডেতেও জিম্বাবুয়েকে ‘হোয়াইটওয়াশ

লিখেছেন লিখেছেন কাফি ০২ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০২:২৪:৪৪ রাত



টেস্টের পর ওয়ানডে সিরিজেও জিম্বাবুয়েকে হোয়াইট ওয়াশ। ইতিহাসগড়া নৈপুণ্যে আশার বাড়া সাফল্য আর মাত্রা ছাড়ানো আনন্দে শেষ হলো এক স্বপ্নময় সিরিজ। বাংলাদেশ এই প্রথম টানা আটটি খেলায় জয় পেলো। তিনটি টেস্টের পর পাঁচটি ওয়ানডেতে জয়ী হয়ে নতুন এক মাইলফলক তৈরি করেছে মুশফিক-মাশরাফি বাহিনী। বছরের শুরুতে টানা হারে বিপর্যস্ত ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। শ্রীলঙ্কার কাছে টেস্ট-ওয়ানডে ও টি-২০তে হারের পর এশিয়া কাপে দুর্বল আফগানিস্তানের কাছেও হেরে যায় বাংলাদেশ। এরপর দেশের মাটিতেই টি-২০ বিশ্বকাপের আসরেও ম্লান তারা। হার মানে নগণ্য হংকংয়ের কাছেও। মাঝে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও ছিল না কোন শুভ সংবাদ। এমনকি ভারত-পাকিস্তানের অনুপস্থিতিতে এশিয়া কাপেও ছিল না সাফল্য। যদিও তাতে ছিল ভাগ্যের বাগড়া। ফলে হারতে হারতে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটর মর্যাদা। সমর্থকরা ছিলেন হতাশ। কর্তারা ছিলেন কোণঠাসা। আর তাই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংরাদেশ কেমন করবে তা নিয়ে ছিল সংশয়। চ্যাালেঞ্জ ছিল দেয়ালে পিঠঠেকা ক্রিকেটারদের সামনে। জিততেই হবে আমাদের- শপথ ছিল কড়া। তার আগে টেস্ট ও ওয়ানডের জন্য আলাদা নেতা নির্বাচন করে দেয় ক্রিকেট বোর্ড। সংশয়ে শুরু হওয়া সিরিজ শেষ হলো নতুন আশার সঞ্চারে, নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে। সাফল্যের ফল্গুধারায় সিক্ত বাংলাদেশের ক্রিকেট। আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান ক্রিকেটাররা। আর হাসিমুখে উদ্ভাসিত সমর্থক-ভক্তরা।

গতকাল রাজধানীর মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে হারায় জিম্বাবুয়েকে। প্রধানমন্ত্রীসহ অনেক গণ্যমান্য অতিথির সময় বাঁচাতেই সম্ভবত সিরিজের পর্দাটা নামলো দ্রুতই। ১০০ ওভারের খেলা শেষ হয়েছে মাত্র ৫৪.৩ ওভারে। আগের চার খেলাতে পরে ব্যাটিং করে হার মানা জিম্বাবুয়ে কাল হেরেছে আগে ব্যাটিং করে। টস জিতে জিম্বাবুয়ে এ পরীক্ষাটা করে নেয়ায় পরিতৃপ্তি বাংলাদেশ শিবিরেও। প্রমাণিত হলো পরে ব্যাটিং করেও জিততে পারি। যদিও অল্প রানের খেলাতে তাড়াহুড়ায় কিছুটা শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে সেই নটআউট মাহমুদুল্লাহর কৃতিত্বে সেটা উবে যায়। ৩০ ওভারে জিম্বাবুয়ে অলআউট হয় ১২৮ রানে। বাংলাদেশ তা টপকে যায় ২৪.৩ ওভারে ৫ উইকেট হাতে রেখে। জয়ের সঙ্গে প্রাপ্তি তাইজুলেল বিশ্বরেকর্ড। জীবনের প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমেই হ্যাটট্রিক। শেরে বাংলা স্টেডিয়ামেই সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৮ উইকেট নিয়ে নায়ক হওয়া তাইজুল শেষও করলেন একই ভাবে।

২০ ওভার আগেই জিম্বাবুয়ের ইনিংস শেষ হওয়ায় ১০ মিনিটের বিরতি নিয়ে ফের মাঠে নামতে হয় বাংলাদেশ দলকে। শুরুটা তাই নড়বড়ে হয়। তামিম ইকবাল থার্ড ম্যানে আর এনামুল ও সাকিব স্লিপে ক্যাচ দেন। এ খেলায় আরেক অভিষিক্ত সৌম্য সরকারও আলতোভাবে বল তুলে দেন লেগ স্লিপে। তিনি অবশ্য ১৮ বলে ২০ রান করেছিলেন চার চারে। সাকিব সিরিজে দ্বিতীয়বার আউট হন শুন্য রানে। আট বলেও কোন রান করতে পারেন নি তিনি। জিম্বাবুয়ের পেসারদের মোকাবিলায় কতটা চাপে ছিলেন তারা বোঝা যায়। জিম্বাবুয়ের ৯ উইকেট নেয় বাংলাদেশের তিন স্পিনার আর বাংলাদেশের পাঁচ উইকেট নেয় জিম্বাবুয়ের দুই পেসার। একই উইকেটে কি বৈপরিত্য ! ৫৮ রানে বিদায় চার ব্যাটসম্যান। মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ দুই ভায়রার প্রতিরোধও ভেঙ্গে যায় ৩৫ রান যোগ করে। ২৩ বরে ১১ রান করে চাতারার তৃতীয় শিকারে পরিণত হন মুশফিক। লক্ষ্য তখনও ৩৫ রান দুরে। অনেকের কাছেই তা কঠিন মনে হচ্ছিল। কিন্তু টানা তৃতীয় খেলায় অপরাজিত থেকে আর মওসৃুমে চতুর্থ অর্ধশতক হাঁকিয়ে সবাইকে চিন্তামুক্ত করেন নিজেকে নতুন করে ফিরে পাওয়া এই মাহমুদুল্লাহ। চট্টগ্রামে ১ ও ১২ রানে আউট হওয়ার পর ঢাকার তিন ম্যাচে তিনি ৩৩, ৮২ ও ৫১ রানে অজেয় থাকেন। অপর প্রান্তে তাকে সঙ্গ দেন তরুণ সাব্বির, ১৬ বলে ১৩ রান করে।

অথচ দিনের শুরুটা কিন্তু এমন ছিল না। টস জিতে আত্মবিশ্বাসী সূচনা ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ সমর্থকদের। ১৬ রানে সিকান্দার রাজা মাশরাফির শিকারে পরিণত হলেও ভীত হন নি অভিজ্ঞ মাসাকাদজা । ব্যাটকে চওড়া বানিয়ে চার-ছক্কায় তর তর করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। আরেক পোড় খাওয়া ক্রিকেটার সিবান্দাকে নিয়ে গড়তে থাকেন মজবুত ভিত। সবার ধারণা হতে থাকে স্কোর আজ নির্ঘাত ৩০০ ছুঁবে। কন্তু লেগ স্পিনার জুবায়ের তাদের লাগাম টানেন। মাসাকাদজা বুঝতেই পারেন নি কিভাবে গুগলি বল তার ব্যাট ও পায়ের ফাঁক দিয়ে আঘাত হানে মিডল স্টাম্পে। এ জুটি ভাঙ্গার আগে যোগ হয় ৭৯ রান। দলের সংগ্রহ ৯৫, মাসাকাদজার ৫৪। ৫২ বলের ইনিংসে বল তিনবার উড়িয়ে আর পাঁচবার গড়িয়ে সীমানার বাইরের পাঠান। আর সিবান্দার সঙ্গে যোগ দেন টেস্টের দলনেতা ব্রেন্ডন টেইলর। ২০ ওভার পুরো হওয়ার আগেই ১০০ রানের মাঈরফলক পেরোয় তারা। পরের ওভার থেকেই ছন্দপতন। যেন পথ হারিয়ে ফেলে তারা। ঘুর্ণি বলে ঘুরপাক খেতে থাকে জিম্বাবুইয়ানরা। ২১তম ওভারে টেইলরকে বোল্ড করেন সাকিব। এর দু’ওভার পর ৫১ বলে ৩৭ রান করা সিবান্দাও তার শিকার। ১৬ রানের সময় মাশরাফির হাতে জীবন পেয়েছিলেন তিনি। দলেল রান ১০৯/৪। ১১২ রানের সময় মারুমা ফেরেন জুবায়েরের বলে। ১৭ রানে চার উইকেটের পতন। এরপর তাইজুলের ঝড়। দুই ওভারে তাইজুলের জোড়া আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় সব। সাকিব আরও একটি করে উইকেট নিলে ১২৮ রানেই গুটিয়ে যায় আফ্রিকান সিংহদের দৌড়। দুজন ছাড়া সবার সংগ্রহ এক অংকের, স্কোর কার্ড যেন টেলিফোন নম্বর। খেলা শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুশফিকের হাতে টেস্ট ট্রফি আর মাশরাফির হাতে ওয়ানডে ট্রফি তুলে দেন। ওয়ানডে সিরিজের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান মুশফিকুর রহীম। ২টি ফিফটিসহ সিরিজে সর্বাধিক ২১৩ রান তিনিই।

বিষয়: বিবিধ

১০৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File