প্রিয় মুসলিম ভাই, ইসলামপ্রিয় ব্লগার! ইসলাম যখন আক্রান্ত তখন আমাদের করণীয়
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ নূরুল্লাহ তারীফ ২১ অক্টোবর, ২০১৫, ০১:২৩:১৯ রাত
প্রিয় মুসলিম ভাই, প্রিয় ব্লগার, প্রিয় পাঠক আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আল্লাহ-তাআলা আমার ও আপনার দ্বীনদারি পরিশুদ্ধ করে দিন। বর্তমানে যে বহুমুখী ষড়যন্ত্রের শিকার আমাদের দেশ, ইসলামী সংস্কৃতি ও কৃষ্টি-কালচার এমন অবস্থা নিকট অতীতে কখনো ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। ইসলামী আদর্শের উপর, আকিদা-বিশ্বাসের উপর চতুর্মুখী এমন হামলা ইতিপূর্বে লক্ষ্য করা যায়নি। এ হামলার সবচেয়ে বেশি প্রভাব অন-লা্ইন লেখালেখিতে। নাস্তিক মুরতাদেরা কখনো নিজেকে নাস্তিক পরিচয় দিয়ে, আবার কখনো নিজেকে মুসলিম পরিচয় দিয়ে, কখনো নিজেকে ইসলামী দলের সদস্য, শুভাকাংখী পরিচয় দিয়ে ইসলাম বিদ্বেষী আকিদা-বিশ্বাস কৃষ্টি কালচার প্রচার করে যাচ্ছে। ইসলামী ব্যক্তিত্বদেরকে বিতর্কিত করার অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের তৎপরতা থেকে এটি সুস্পষ্ট যে, সুপরিকল্পিতভাবে, মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে তাদেরকে এ কাজে নিয়োজিত রাখা হয়েছে। তাদের বিপরীতে তাদের প্রশ্নবানের জবাব দেয়ার মত একাডেমিক যোগ্যতাসম্পন্ন আলেম, লেখক ও ইসলামী চিন্তাবিদ এবং তাদের লেখনী অতি নগন্য। তাছাড়া ইসলামী লেখকগণ সংঘবদ্ধ নয় বিধায় এবং লেখকগণকে সাপোর্ট দেয়ার মত প্রতিষ্ঠান না থাকায় অনৈসলামী শক্তিকে সেভাবে মোকাবিলা করা যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় একজন মুসলিম ব্লগার বা ব্লগের পাঠককে নিজের ঈমান আকিদা রক্ষার্থে যা করণীয়:
- ইসলাম ও ইসলামী জ্ঞান গ্রহণ করতে হবে পরিচিত, জানাশুনা উৎস থেকে, নির্ভরযোগ্য দ্বীনদার আলেমদের থেকে, নির্ভরযোগ্য ওয়েব সাইট থেকে। অজ্ঞাত সূত্র, ছন্দনামের লেখকদের ইসলামী লেখা পড়তে ও গ্রহণ করতে সাবধান হতে হবে। ফাসেক মিডিয়ার তথ্য যাচাই বাছাই ছাড়া গ্রহণ করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন: "যদি কোন ফাসেক তোমাদের নিকট সংবাদ নিয়ে আসে তাহলে তোমরা যাচাই বাছাই কর"[সূরা হুজুরাত, আয়াত: ৬] যে ব্যক্তি কবিরা গুনাহতে লিপ্ত সে ফাসেক। যে মিডিয়া মিথ্যাচার করে সেটা প্রিন্ট মিডিয়া হোক, অনলাইন মিডিয়া হোক, স্যাটেলাইট মিডিয়া হোক সেও ফাসেক এর পর্যায়ভুক্ত।
- যার মিথ্যাচার একবার প্রমাণিত হয়েছে খালেস তওবা করা ছাড়া তার সংবাদ আর কখনও গ্রহণ না করা হাদিসবিশারদের আদর্শ। বর্তমানের মিথ্যাচারের যুগে এ নীতিটি নিবিড়ভাবে প্রয়োগ করলে অনেক অনিষ্ট হতে মুসলমানেরা রেহাই পেতে পারে।
- মুনাফিক ও ইসলাম বিদ্বেষী শক্তিদেরকে চেনার সহজ উপায় হচ্ছে- তাদের কথাবার্তায় লেখনীতে ইসলামী আদর্শের প্রতিফলন না পাওয়া। যেমন দেখবেন- তারা খুব সহজে পর্দা লঙ্ঘিত হয়েছে এমন কোন ছবি, ভিডিও তার লেখাতে, পোস্টে খুব সহজেই সংযোজন করে থাকে। তারা বিতর্ক করার সময় অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে। তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা নয়; বরং সত্যের সাথে মিথ্যাকে মিশিয়ে ইসলাম বিদ্বেষী প্রপাগান্ডা তৈরী করে।
- তর্ক-বিতর্ক করতে হবে উত্তম কথা দিয়ে, যুক্তি দিয়ে; গালিগালাজ দিয়ে নয়। ইসলাম সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে হবে। ভাসাভাসা জ্ঞান বা ধারণানির্ভর তথ্য দিয়ে বিতর্কে জড়াবেন না। এতে আপনি ইসলামের উপকার না করে ক্ষতি করবেন। এ কথা বিশ্বাস করুন: ইসলাম বিজয়ী। কোন নিন্দুকের নিন্দা, নাস্তিকের অপপ্রচারণা ইসলামকে ধ্বংস করতে পারবে না। তবে আমি আপনি যেন আল্লাহর কাছে যেন আমাদের জবাব দিতে পারি, ইসলামের উপর অটল অবিচল থাকতে পারি সে চেষ্টা সকলের করা উচিত।
- ব্লগে যোগ্যতা সম্পন্ন যেসব আলেম বা ইসলামী চিন্তাবিদ রয়েছেন তাদের উচিত সনামে ও পরিচয় উল্লেখ করে ইসলামী লেখা বা পোস্ট উপস্থাপন করা। যাতে করে সাধারণ পাঠক ও ব্লগারগণ নিশ্চিত হতে পারে এবং নিরাপদ উৎস থেকে জ্ঞান আহরণ করতে পারে।
- দেখা যাচ্ছে নাস্তিক মুরতাদ, ইসলাম বিদ্বেষীরা তাদের লেখাতে আরবী কোটেশনও ব্যবহার করে, কুরআন হাদিসের রেফারেন্স দেয়। সুতরাং শুধুমাত্র আরবী কোটেশন বা রেফারেন্স দেখে অনুরক্ত হওয়া ঠিক হবে না।
- ইসলাম বিদ্বেষী ব্লগার ও লেখকগণ মুসলমানদের নিজেদের মধ্যকার যে মতবিরোধগুলো আছে সেগুলো পুঁজি করে ইসলাম বিরোধী প্রপাগাণ্ডা তৈরীর প্রয়াস চালায়। এ কথা জানতে হবে- থিওরীকাললি আমরা সঠিক ইসলামই মানার আপ্রাণ চেষ্টা করব। যাতে করে আল্লাহর দরবারে আমরা নাজাত পেতে পারি। কিন্তু কোন মুসলিম যদি কোন কোন মাসয়ালায়, কোন কনো আমলের ক্ষেত্রে সত্যচ্যুত হয় তবুও সে মুসলিম ব্যক্তি বা সে মুসলিম দল মুসলমানদের কাছে প্রকাশ্য ইসলামী বিদ্বেষী-নাস্তিক মুরতাদদের চেয়ে অনেক প্রিয়। তাই নিজেদের মধ্যকার বিভেদকে উস্কানী দেয়ার জন্য কোন নাস্তিক-মুরতাদকে সুযোগ দেয়া যাবে না। এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। তবে মুসলিম দাবী করলেই তার দাবী গ্রহণ করা হবে না। আল্লাহ-আল্লাহর রাসূল, কুরআন-হাদিস, ইসলামি শরিয়ার প্রতি কেউ যদি সপ্রণোদিতভাবে কুৎসা রটনা করে, বিষোদগার করে তার ঈমান হারানোর জন্য এটাই যথেষ্ট। "আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সাথে, তাঁর হুকুম আহকামের সাথে এবং তাঁর রসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? তোমাদের কোন ওজর নেই। তোমরা ঈমান প্রকাশ করার পর কাফের হয়ে গেছ।"[সূরা তওবা, আয়াত: ৬৫-৬৬]
- যে বা যারা উম্মহর নিকট গ্রহণযোগ্য আলেম ও ইসলামী ব্যক্তিত্ব বা ইসলামী দলের কুৎসা রটনা করে, তাদের চরিত্র হননের অপচেষ্টা করে জানতে হবে সে বা তারা ইসলাম বিদ্বেষী।
- সর্বশেষে প্রিয় মুসলিম ভাই, আপনাকে ও আমি নিজেকে ইসলাম ও মুসলমানদের এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে এ বলে শান্তনা দিচ্ছি- যে শান্তনাটি গতকাল আমি আমার সম্মানিত শিক্ষক কিং সউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর আদেল আল-যুরাকির মুখে শুনেছি। তিনি বলেন: যুগ যুগান্তরে মুসলিম উম্মাহর উপর যে বালা-মুসিবত নেমে আসে এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদীকে আল্লাহ তাঁর নিজের দিকে ফিরিয়ে আনেন। বালা-মুসিবতে পড়ে বান্দাহ আল্লাহর দরবারে ধর্না দেয়। কায়মনোবাক্যে মুনাজাত করে, রাতের অন্ধকারে রোনাজারি করে, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করে। মুসলমানদের অবস্থা তো কাফেরদের মত নয়। যাদের জন্য দুনিয়ার জীবনই তাদের সবকিছু। আখেরাতে তাদের জন্য জাহান্নামের অগ্নি ছাড়া আর কিছু নেই।
- আপনাদের হিতাকংখী হিসেবে এতটুকু লিখলাম। আল্লাহ আমাদের ঈমান-আকিদা হেফাযতে রাখুন। যাবতীয় ষড়যন্ত্রকে জ্ঞান ও আল্লাহর সাহায্য দিয়ে মোকাবেলা করার হিম্মত আমাদেরকে দান করুন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৫৫২ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার অনুভূতি ও পোস্টের সা্থে একমত!!খুব সুন্দর বলেছেন, জাযাকাল্লাহ
আমি কিছু বিষয়ে আত্মপীড়িত হই! আপনার পোস্টে বলা কথা দিয়ে সেটা বলতে চাই-
কাদেরকে বিতর্কিত করার জন্য কারা কী কী করছেন তার অসংখ্য নজীর নেটে বিদ্যমান!
নির্ভরযোগ্য কে- সেটা কেমনকরে বুঝবো?
সৌদিপন্থী এবং উদারপন্থী (উভয়টার জন্য অপর কোন উপযুক্ত শব্দ পাচ্ছিনা) উলামায়ে কিরামদের মতপার্থক্য তো আলো-আঁধারের মত, এমনসব ব্যক্তির প্রতি এমনসব কথা বলা হয়/হচ্ছে যখন সাধারণ সতর্ক মানুষের জন্য অসহায়ের মত তাকিয়ে থাকা ছাড়া তেমন কিছুই করার থাকেনা! আর মূর্খরা দু-পক্ষের হয়ে তর্ক-বিবাদে লিপ্ত হয়!
আপনি তো সৌদিতে আছেন, আশা করি সেখানের বিভিন্ন মতের শাইখদের ব্যাপারে জেনেছেন!
কোন শাইখ যদি অপর কোন শাইখকে মিথ্যুক বলেন, যাঁদের কেউ-ই তওবা করে মত পরিবর্তনের কোনই সম্ভাবনা নেই- তখন কী কর্তব্য??
আপনার এ কথাটির যথার্থতা ক'জনে স্বীকার করবেন?? বাস্তবায়ন করবেন কে?? ময়দানের বিপরীত আমল রোধ করবেন কে?
বরং এমন রায় তো ঘোষিত হয়ে আছে যে, কাফির-মুশরিকরাও এঁদের চাইতে ভালো!
যাহোক, অনেক কথাই বলা যায়! শীর্ষপর্যায়ের উলামায়ে কিরাম নিজেরা সহনশীলতা চর্চায় এগিয়ে না আসলে জনসাধারণকে উপদেশ দিয়ে প্রত্যাশিত লাভের সম্ভাবনা খুবই কম!
আল্লাহতায়ালা ক্ষমা করুন, রহম করুন!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন