"বিশ্বনবীর আধ্যাত্মিক ছকে বাংলাদেশ" শীর্ষক নিবন্ধ প্রসঙ্গে দুটি কথা
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ নূরুল্লাহ তারীফ ০২ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০২:১০:১৫ দুপুর
"বিশ্বনবীর আধ্যাত্মিক ছকে বাংলাদেশ" শিরোনামে উবায়দুর রহমান খান নদভী সুখপাঠ্য একটি প্রবন্ধ লিখেছেন http://www.einqilab.com/share.php?q=2014%2F11%2F21%2F1%2Fdetails%2F1_r4_c7.jpg&r=2014%2F11%2F21%2F2%2Fdetails%2F2_r3_c4.jpg&d=2014%2F11%2F21%2F। প্রবন্ধে তিনি গাউস, কুতুব, আবদাল এর শাসনের কথা উল্লেখ করলেন। তাদের নির্দেশনাতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে মর্মে ইঙ্গিত দিয়েছেন। আবদাল, কুতুব, গাউস সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়টি কুরআন ও হাদিসের দলিল দ্বারা সাব্যস্ত মর্মে তিনি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি এ সংক্রান্ত একটি আয়াত বা হাদিসের প্রমাণ উল্লেখ করলেন না। শুধু কিছু কেচ্ছা-কাহিনী দিয়ে আবদাল, কুতুব, গাউস সাব্যস্ত হওয়ার উদাহরণ তুলে ধরলেন!! ইসলামে এ ধরনের কেচ্ছা-কাহিনীর মর্যাদা কতটুকু!! এই আর্টিকেলটি লেখার আগে তিনি যদি অন্ততঃ গাউস, কুতুব ও আবদাল বিষয়ে হাদিসগুলো ও এ ব্যাপারে হাদিস বিশারদ ও ব্যাখ্যাতাদের মতামতগুলো সামনে রাখতেন তাহলে পাঠককে হয়তো নিখুঁত তথ্যটি দিতে পারতেন। তাঁর মত বড় জ্ঞানীর কাছে আমাদের সেটাই প্রত্যাশা। সলফে সালেহীন আলেমগণের বক্তব্য থেকে জানা যায় যে, আবদাল, কুতুব ও গাউস সংক্রান্ত হাদিসগুলো বানোয়াট। ইবনুল জাওযি তাঁর "আল-মাওজুআত" (৩/১৫২) কিতাবে এ মত উল্লেখ করেছেন। ইমাম যাহাবী তাঁর দিওয়ানুল যুআফা (পৃষ্ঠা- ৪১) কিতাবে এ বিষয়ক ইবনে উমর ও ইবনে মাসউদের হাদিসকে বানোয়াট বলেছেন। ইবনে হাজার আসকালানীও একই অভিমত উল্লেখ করেছেন তাঁর মিজানুল ইতিদাল (৩/৫০) ও লিসানুল মিজান (৪/১৫০) গ্রন্থে। ইবনুল কাইয়্যেম তাঁর "নাকদুল মানকুল" নামক কিতাবে উল্লেখ করেন: আবদাল, কুতুব, গাউস, নুকাবা, নুজাবা, আওতাদ সংক্রান্ত সবগুলো হাদিস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে মিথ্যা। এ ক্ষেত্রে যে হাদিসটির কিছু হদিস পাওয়া যায় সেটি হচ্ছে- (لا تسبوا أهل الشام فإن فيهم البدلاء كلما مات رجل منهم أبدل الله مكانه رجلا آخر) [মুসনাদে আহমাদ] কিন্তু এ হাদিসটিও সহিহ নয়; যেহেতু এর সনদ "মুনকাতি"। আলেমদের মধ্যে একদল শুধুমাত্র "আবদাল" (গাউস ও কুতুব নয়) সাব্যস্তের পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে নদভী সাহেব "আবদাল" এর যে পরিচয় ও কর্ম উল্লেখ করেছেন হাদিসে উল্লেখিত "আবদাল" তারা নন। বরং আবদাল হচ্ছেন- মুহাদ্দিসগণ। ইমাম আহমাদকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: পৃথিবীতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আবদাল আছে কিনা? তিনি বললেন: হ্যাঁ আছে। প্রশ্ন করা হল: তারা কারা? তিনি বললেন: তারা যদি হাদিসওয়ালারা না হয় তাহলে আমি জানি না তারা কারা?(আল-হুজ্জাহ আলা তারিকিল মাহাজ্জাহ)। এ বিষয়ে আরো জানতে লিংকগুলোর পর্যালোচনা পড়ুন। http://islamqa.info/ar/83038 ও http://www.ahlalhdeeth.com/vb/showthread.php?t=29508 উপরন্তু, আল্লাহ তাআলা বলছেন: إِنَّ اللَّهَ لا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ (কোন কওম যদি নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন না করে আল্লাহ তাদের অবস্থা পরিবর্তন করেন না)। আল্লাহ তো আমাদেরকে আবদাল, কুতুব, গাউসের উপর নির্ভর বসে থাকতে বলেননি। বলেছেন: নিজেদেরকে চেষ্টা করতে। তাই নদভী সাহেবের এই লেখা কি হতাশ ব্যক্তির শান্তনা খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা!! অথচ আল্লাহ ঈমানদারদেরকে কঠিন মূহুর্তেও অটল অবিচল থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং সঠিক পন্থায় সফলতা খোঁজাই উচিত নয়কি!?
বিষয়: রাজনীতি
১৭৯৭ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সহজ সরল ধর্মভীরু জনসমাজকে তাঁরা নিজেদের খেয়ালখুশীর গোলকধাঁধায় ফেলে দুনিয়া ও আখেরাত উভয়টি খোয়ানোর ব্যবস্থা করেছেন এবং করেই চলেছেন- -
সাধারণ মানুষেরা হয়তো ক্ষমা পেয়ে যাবেন, ইনশাআল্লাহ, কিন্তু তাঁদের যে কী অবস্থা হবে আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন!
আমার কথাটি সংক্ষিপ্ত হওয়াতে অন্তর্নিহিত মূলকথাটি আপনার দৃষ্টিগোচর হয়নি, অথবা আমার মন্তব্যটি "সবার জন্য প্রযোজ্য" ধরে নিয়েছেন!
আপনি যা বলেছেন সেটা আমারও মত- ঢালাও মন্তব্যের পক্ষে আমি কখনো ছিলামনা, এখনো নই!
সমাজে ইসলামের ভাবধারা ধারণ করা এবং জনসাধারণকে ইসলামের মূল শিক্ষা থেকে বিচ্যূত করা- উভয়টির কৃতিত্ব উলামায়ে কিরামের!
আমি আপনাকে যতই মহব্বত করি না কেন- সত্য উচ্চারণে যদি লজ্জাবোধ করি তবে কোন উপকার করলাম- এমনটা ভাবা ঠিক হবেনা!!
যোগ্যতা অর্জন প্রসংগে কথাগুলো খুব ভালো বলেছেন- এখানে নতুন এসেছেন, পরিচয় হলো, আমার পাতায় আপনাকে দাওয়াত- আমার আমলনামা জানা থাকলে আমার মন্তব্য বুঝতে ও বিবেচনা করতে আপনার জন্য সহায়ক হবে
উলামায়ে কিরামের সাহচর্যে থাকতেই চেষ্টা করি- মতপার্থক্য করি, মতবিরোধে জড়াইনা, তবে যা বুঝি তা অকপটে বলতে চেষ্টা করি!
জাযাকাল্লাহ..
মন্তব্য করতে লগইন করুন