কুরআনের প্রাণসত্ত্বা অনুধাবনঃ-(তাফহিমুল কুরআনের ভুমিকা থেকে)
লিখেছেন লিখেছেন তুষার শুভ্র ০১ মার্চ, ২০১৫, ১১:৫৯:১২ রাত
কিন্তু কুরআন বুঝার এই সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও যে কাজ করার বিধান ও নির্দেশ নিয়ে কুরআন এসেছে কার্যতঃ ও বাস্তবে তা না করা পর্যন্ত কোন ব্যক্তি কুরআনের প্রাণসত্ত্বার সাথে পুরোপুরি পরিচিত হতে পারে না। এটা নিছক কোন মতবাদ ও চিন্তাধারার বই নয়। কাজেই আরাম কেদারায় বসে বসে এ বইটি পড়লে এর সব কথা বুঝতে পারার কথা নয়। দুনিয়ায় প্রচলিত ধর্ম চিন্তা অনুযায়ী এটি নিছক একটি ধর্মগ্রন্থও নয়। মাদ্রাসায় ও খান্কাহে বসে এর সমস্ত রহস্য ও গভীর তত্ত্ব উদ্ধার করাও সন্ভব নয়। শুরুতে ভূমিকায় বলা হয়েছে, এটি একটি দাওয়াত ও আন্দোলনের কিতাব। সে এসেই এই নীরব প্রকৃতির সৎ ও সত্যনিষ্ট ব্যক্তিকে নির্জন ও নিঃসঙ্গ জীবনক্ষেত্র থেকে বের করে এনে আল্লাহ বিরোধী দুনিয়ার মোকাবিলায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তার কন্ঠে যুগিয়েছে বাতিলের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদের ধ্বনি। যুগের কুফরী, ফাসেকী ও ভ্রষ্টতার পতাকাবাহীদের বিরুদ্ধে তাকে প্রচন্ড সংঘাতে লিপ্ত করেছে। সচ্চরিত্র সম্পন্ন সত্যনিষ্ঠ লোকদেরকে প্রতিটি গৃহাভ্যন্তর থেকে খুঁজে বের করে এনে সত্যের আহবায়কের পতাকাতলে সমবেত করেছে। দেশের প্রতিটি এলাকার ফিতনাবাজ ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদেরকে বিক্ষুদ্ধ ও উত্তেজিত করে সত্যানুসারীদের সাথে তাদের যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েছে। এক ব্যক্তির আহবানের মাধ্যমে নিজের কাজ শুরু করে খিলাফতে ইলাহীয়ার প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত পূর্ণ তেইশ বছর ধরে এই কিতাবটি এই বিরাট ও মহান ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্ব দান করেছে। হক ও বাতিলের এই সুদীর্ঘ ও প্রাণান্তকর সংঘর্ষকালে প্রতিটি মঞ্জিল ও প্রতিটি পর্যায়েই সে একদিকে ভাঙ্গার পদ্ধতি শিখিয়েছে এবং অন্যদিকে পেশ করেছে গড়ার নকশা। এখন বলুন, যদি আপনি ইসলাম ও জাহেলিয়াত এবং দ্বীন ও কুফরীর সংগ্রামে অংশগ্রহণই না করেন, যদি এই দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের মঞ্জিল অতিক্রম করার সুযোগই আপনার ভাগ্যে না ঘটে, তাহলে নিছক কুরআনের শব্দগুলো পাঠ করলে তার সমুদয় তত্ত্ব আপনার কেমন করে উদঘাটিত হয়ে যাবে ? কুরআনকে পুরোপুরি অনুধাবন করা তখনই সন্ভব হবে যখন আপনি নিজেই কুরআনের দাওয়াত নিয়ে উঠবেন, মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবান করার কাজ শুরু করবেন এবং এই কিতাব যেভাবে পথ দেখায় সেভাবেই পদক্ষেপ নিতে থাকবেন। একমাত্র তখনই কুরআন নাযিলের সময়কালীন অভিজ্ঞতাগুলো আপনি লাভ করতে সক্ষম হবেন। মক্কা, হাব্শা (বর্তমান ইথিয়োপিয়া) ও তায়েফের মঞ্জিলও আপনি দেখবেন। বদর ও ওহোদ থেকে শুরু করে হুনাইন ও তাবুকের মঞ্জিলও আপনার সামনে এসে যাবে। আপনি আবু জেহেল ও আবু লাহাবের মুখোমুখি হবেন। মুনাফিক ও ইহুদিদের সাক্ষাতও পাবেন। ইসলামের প্রথম যুগের উৎসর্গীত প্রাণ মু’মিন থেকে নিয়ে দুর্বল হৃদয়ের মু’মিন পর্যন্ত সবার সাথেই আপনার দেখা হবে। এটা এক ধরনের ‘সাধনা’। একে আমি বলি “কুরআনী সাধনা ”। এই সাধন পথে ফুটে ওঠে এক অভিনব দৃশ্য। এর যতগুলো মঞ্জিল অতিক্রম করতে থাকবেন তার প্রতিটি মঞ্জিলে কুরআনের কিছু আয়াত ও সূরা আপনা আপনি আপনার সামনে এসে যাবে। তারা আপনাকে বলতে থাকবে --এই মঞ্জিলে তারা অবতীর্ণ হয়েছিল এবং সেখানে এই বিধানগুলো এনেছিল। সে সময় অভিধান, ব্যাকরণ ও অলঙ্কার শাস্ত্রীয় কিছু তত্ত্ব সাধকের দৃষ্টির অগোচরে থেকে যেতে পারে কিন্তু কুরআন নিজের প্রাণসত্ত্বাকে তার সামনে উম্মুক্ত করতে কার্পণ্য করবে, এমনটি কখনো হতে পারে না।
বিষয়: বিবিধ
১১০৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Agree with you. We have to act on Quran.
Thanks for sharing your thought.
মন্তব্য করতে লগইন করুন