মেয়ের ভালো ফলে ক্ষুব্ধ শিক্ষক পিতার আন্দোলনের ডাক

লিখেছেন লিখেছেন তুষার শুভ্র ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১১:২১:৫৮ রাত

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় মেয়ের ভালো ফলে বিস্মিত এক শিক্ষক পিতা পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিলে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।

ফেইসবুকে দেয়া এক পাবলিক স্টাটাসে অভিভাবক ফাহমিদুল হক 'শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলন' নামে একটি মঞ্চ করার কথাও জানিয়েছেন। যাতে অন্যদের শরিক হওয়ার ডাক দিয়েছেন তিনি।

ফাহমিদুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।

স্টাটাসে তিনি বলেন, আমার আর রিপার মেয়ে তাহিয়া জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। সব সাবজেক্টে এ প্লাস। কিন্তু আমি খুশিতে আত্মহারা নই। ও ওয়ান থেকেই মোটামুটি 'সি' পেয়ে পাশ করে আসছে। আমি জানি ওর জিপিএ ফাইভ পাবার যোগ্যতা আছে, কিন্তু এই মুহূর্তে তা নেই।

মেয়ের নম্বর বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে মর্মে ‘শতভাগ নিশ্চিত’ এই অভিভাবক বলেন, এই ইনফ্ল্যাটেড এ-প্লাস বিস্ফোরণ বন্ধ হওয়া দরকার। এটা শিশুদের রেজাল্ট সম্পর্কে ভুল ধারণা দিচ্ছে। প্রশ্নফাঁসের কথা আলাদা করে বলার প্রশ্নই আসে না। আর পিএসসির মতো শিশুহত্যাকারী পাবলিক এক্সাম আজকেই উঠিয়ে দেয়া দরকার।

“আগেই বলেছি শিক্ষানীতির বহির্ভূত পিএসসি এক্সাম চালু করেছে যারা, তারা 'সিরিয়াল চাইল্ড কিলার'। আমরা গঠন করেছি 'শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলন'। আমরা বই উৎসবের দিনে, পহেলা জানুয়ারি দাঁড়াবো উদয়ন/বুয়েট/অগ্রণী/ভিকারুন্নেসা বা এরকম কোনো বিদ্যালয়ের সামনে।”

তিনি বলেন, পিতা-মাতা হিসেবে আমরা ওকে 'সি' পেয়ে বড় হয়ে ওঠার পরিবেশই দিয়েছি। ও স্কুলে যাবে, ক্লাস করবে, সবার সাথে মিশবে, সামাজিক হবে, হাসবে খেলবে, বাইরের বইপত্র পড়বে, প্রচুর দুষ্টুমি করবে, ডিজনি-পিক্সার-ড্রিমওয়ার্কস নির্মিত ফেইরি টেলগুলো দেখবে, নিজেই ফেইরি হয়ে স্বপ্নরাজ্যে ঘুরবে...।

“কিন্তু হাসতে খেলতে কয়েক বছর পেরিয়ে গেল, ফাইভের পাবলিক এক্সাম চলে এলো। আমরা ওকে চাপাচাপি শুরু করলাম। খেয়াল করা গেল, ও অংকে বেশ দুর্বল। হাফ ইয়ারলিতে পঞ্চাশের কম নম্বর পেয়েছে। টিউটর বিদেয় করে নিজেই অংক-বিজ্ঞান পড়ানো শুরু করলাম।”

“নির্বাচনী পরীক্ষায় অংকে সে ৭৩ পেল। এরপর প্রায় এক দেড়-মাস ঘরে বসে প্রচুর পড়লো সে। ও খেটেছে অনেক। তাতে সি থেকে বি হবার কথা। কিন্তু সবগুলোতে এ-প্লাস পাওয়া অ্যাবসার্ড ব্যাপার।”

“আমি ওকে শেষ দুই মাস পড়িয়েছি। আমি জানি। ওর পরীক্ষাও ভালো হয়েছে কিন্তু, দুই-তিন মাসে এমন কোনো ম্যাজিক কেউ দেখায় নি যে,বা জিনি এসে ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব করে যায় নি যে, ও গোল্ডেন এ প্লাস পাবে। বলাবাহুল্য, সে ফাঁস হয়ে যাওয়া কোনো প্রশ্নও হাতে পায় নি। আমরা সেসব খুঁজিও নি।”

স্টাটাস আপডেটে ফাহমিদুল হক জানিয়েছেন, তারা বই উৎসবের দিনে পহেলা জানুয়ারি দাঁড়াবেন আজিমপুরের তিনটি স্কুলের সামনে। সকাল ১১ টায় অগ্রণী স্কুল, ১১ টা ২০ মিনিটে ভিকারুন্নেসা এবং সাড়ে ১১ আজিমপুর গার্লস স্কুলের সামনে।

তিনি বলেন, “আমাদের দাবি: ‘সকল পর্যায়ে প্রশ্ন ফাঁস করে শিক্ষা ধ্বংসের আয়োজন রুখে দাঁড়াও! এ-প্লাসের দুর্নীতি, মূল্যায়নে কারচুপি বন্ধ করো! অবিলম্বে শিক্ষানীতি-বিরোধী শিশুধ্বংসী পিএসসি পরীক্ষা বাতিল কর’!”

মেয়ের নম্বর বাড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে কিভাবে শতভাগ নিশ্চিত হলেন-এমন প্রশ্নের জবাবে ফাহমিদুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমি ওকে চিনি। ওর প্রস্তুতি নিয়ে জানি। ওর মেধা সম্পর্কে আমার জানা আছে। সব কিছু মিলিয়ে আমি শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার কথা বলেছি।

“জিপিএ ফাইভ পাওয়ার মতো করে তাকে পড়ানো হয়নি।”

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য শিক্ষা মন্ত্রী ও শিক্ষা সচিবের সঙ্গে যোগাযোগেও চেষ্টা করা হলেও তাদেরকে টেলিফোনে পাওয়া যায়নি।

বিষয়: বিবিধ

১০১২ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

298177
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১১:৪৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ।
আমি এই সচেতন অভিভাবক কে পুর্ন সমর্থন দিচ্ছি। পিএসসি এবং জেএসসি পরিক্ষা শিশুদের জিবন ধ্বংসের একটি প্রক্রিয়া।
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১১:৫৮
241419
তুষার শুভ্র লিখেছেন : এই পরীক্ষাগুলো শিশুদের মেধা বিকাশের অন্তরায়
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৪৩
241580
নোমান২৯ লিখেছেন : সহমত।
298187
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১১:৫৬
udash kobi লিখেছেন : ভালো লাগল
অনেক ধন্যবাদ
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১১:৫৮
241420
তুষার শুভ্র লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ
298188
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১১:৫৯
মাটিরলাঠি লিখেছেন : সহমত পোষণ করছি। আজ কিছু রেসাল্ট দেখেছি - যা বিশ্বাস যোগ্য মনে হয় নাই। আর পিএসসি ও জেএসসি অভিভাবকদের মধ্যে, বিশেষ করে মায়েদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে। ভাবটা এমন যে, যেন জীবন-মরণ সমস্যা।
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১২:০৩
241421
তুষার শুভ্র লিখেছেন : সরকারও শিক্ষাক্ষেত্রে MDG লক্ষমাত্রা অর্জনের জন্য যা ইচ্ছে তাই করছে
298243
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:৪৩
হতভাগা লিখেছেন : ঐ মেয়েতো তাও পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে ।

কিন্তু লালমনির হাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ১ নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাজ্জাদ ইসলাম শাকিব একি খেল দেখালো !

ও তো পরীক্ষা না দিয়েই জিপিএ ৫ পেয়েছে !!

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2014/12/31/263534
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:১৪
241513
তুষার শুভ্র লিখেছেন : হায় সেলুকাস! কি বিচিত্র এই দেশ!!!
298416
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৪২
নোমান২৯ লিখেছেন : At Wits' End At Wits' End At Wits' End Time Out Time Out Time Out Happy) Happy) Oh go On Oh go On Drooling Drooling I Don't Want To See I Don't Want To See Big Grin
298489
০১ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৬:৩২
শেখের পোলা লিখেছেন : যদিও তাদের পাশে দাঁড়িয়ে দল ভারী করতে পারছিনা তবুও আমার সমর্থন রইল৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File