আমাদের সংস্কৃতি
লিখেছেন লিখেছেন তুষার শুভ্র ২৫ নভেম্বর, ২০১৪, ০৯:৪৯:৩৮ রাত
শুরু করছি ভারতীয় উপমহাদেশ ও পুর্ব ইউরোপের সংখ্যালঘু মুসলমানদের অতীত ও হালযামানার হালের কথা দিয়ে।
আমাদের উপমহাদেশে মুসলমানেরা প্রায় ১২০০ বছর শাসন করেছেন। বিভিন্ন সময়ে মুসলমানদের সংখ্যা কমবেশি হয়েছে এখানে। মুসলমানদের শাসন কর্তৃত্ব হাতছাড়া হওয়ার সময় ৩০-৩৫% এ উন্নীত।
পুর্ব ইউরোপ অর্থাৎ তুরস্ক, সাইপ্রাস, আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, জর্জিয়া, ইউক্রেন, বসনিয়া, বুলগেরিয়া, গ্রীস, আলবেনিয়া, সার্বিয়া, স্পোভেনিয়া, মান্টনিগ্রো, মেসিডোনিয়া ও রাশিয়ার বেশ কিছু অংশে খোলাফায়ে রাশেদিন এর আমল থেকে ১৯২৩ সালে তুর্কি খেলাফত বিলুপ্ত হওয়ার আগমুহুর্ত পর্যন্ত মুসলমানদের শাসনাধীন ছিল এবং মুসলমান সংখ্যা ছিল ৪০-৫০% । এরপর ৭০-৮০ বছরের জন্য পুর্ব ইউরোপে কমিউনিজম এর অভিশাপ নেমে আসে। মুসলমানদের বিরাট অংশ এখানে শহীদ হন। কিছু অংশ থেকে যান নামে মুসলমান আচার সংস্কৃতিতে কমিউনিজম এর মতোই। বাকিরা পালিয়ে/হিজরত করে অন্যান্য মুসলিম দেশে এবং ভারত উপমহাদেশেও প্রখ্যাত কিছু আলেম-উলামা চলে আসেন। যার ফলশ্রুতিতেই আমাদের সংখ্যা ২০-২২% থেকে ৩০-৩৫% এ উন্নীত হয়েছিল! যার সবচেয়ে বড় প্রভাব এই বাংলাদেশ অঞ্চলে পড়েছিল!!
এবার আসি সংস্কৃতি বিষয়ে। সংস্কৃতি এমন একটি বিষয় যা কারও উপর জোর করে চাপিয়ে দেয়া যায় না। এটি সম্পুর্ণ প্রভাবিত হওয়ার বিষয়। মুসলমানেরা যখন আমাদের উপমহাদেশ শাসন করেছিলেন তখন তারা সংস্কৃতির উপর গুরুত্বারুপ করেননি বা পরিস্থিতি করতে দেয়নি। ফলশ্রুতিতে সকলেই বিচ্ছিন্নভাবে প্রত্যেকে যার যার এলাকার সংস্কৃতি চর্চা করে আসতে থাকে। অতঃপর মুসলিম শাসনের পতন হলে এ উপমহাদেশে ইংরেজরা শাসনে চলে আসে। ২০০ বছরের শাসন-শোষনের শেষের দিকে তারা শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ে গুরুত্বারুপ করে। ফলে সংখ্যালঘিষ্ঠ হিন্দুরা তাদের সংস্কৃতি মেলে ধরার সুযোগ পায়। স্বীয় ধর্মকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরতে তারা নানা সংস্কৃতির চর্চা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে শুরু করে। কিছু ক্ষেত্রে ইংরেজদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আংশিক পরিবর্তনে অভ্যস্ত হয়ে যায়। যার ফলশ্রুতিতেই ভারতীয় সংস্কৃতি আজ পশ্চিমা উলঙ্গ মিশ্রিত সংস্কৃতি।
সংস্কৃতির আগ্রাসন এমন একটা সামাজিক আগ্রাসন যে, আপনি চাইলেই গা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারবেন না। বিয়ে কিংবা অন্যান্য সামাজিক আচার-অনুষ্টানে ভারতীয় তথা হিন্দু সংস্কৃতি মিশ্রিত আচারাদি পালন করি কিংবা পালন করতে বাধ্য হই।
আমাদের উপমহাদেশের মুসলমানেরা সংস্কৃতির কারণেই ভিন্ন দলে বিভক্ত হওয়া শুরু করেন। একজন আরেকজনের সাংস্কৃতিক সংশ্লিষ্টতায় সামান্য প্রশ্নবিদ্ধ কিছু দেখলেই বেদ’আতি বলে আখ্যা দিতে থাকেন। ফলশ্রুতিতে এই উপমহাদেশের প্রকৃত ইসলামি বিদ্যাপীঠ দেওবন্দের উলামারাই একে অন্য থেকে বিচ্ছিন্ন হতে থাকেন।
এরপরের ইতিহাস তো সকলেরই জানা। আলাদা হতে গেলে বা দূরে গেলে যা হয় আরকি! প্রত্যেকে নিজ উদ্যোগে ইসলামের খেদমত আলাদা করে শুরু করেন যা আজও চলছে। মুসলমানেরা ও অনুসারী হওয়া শুরু করে বিভক্ত হয়ে গেছেন। অধিকাংশ সাধারণ মুসলমানেরা এই বিভক্তির জন্যই ধর্মের প্রতি গুরুত্ব হারাতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে ধর্মীয় সংস্কৃতি চর্চার গুরুত্ব কমতে থাকে। বৃদ্ধি পেতে থাকে পাশ্চাত্য-হিন্দু মিশ্রিত সাংস্কৃতিক চর্চা। মানুষ ওয়াজ-গজল শুনার চেয়ে গান-মুভির দিকে ঝুঁকতে থাকে বেশি এবং তা ক্রমবর্ধমান।
আজ আমাদের দেশে মুসলমানের অভাব নেই। কিন্তু ইসলাম ধর্মের গুরুত্বের বড়ই অভাব। এর জন্য উলামায়ে দেওবন্দ এর বিভক্তি ছাড়াও আরো কিছু কারণ দায়ী। এই বিভক্তির জন্য দায়ী সংস্কৃতির আগ্রাসন। এই আগ্রাসনে আমাদের ধর্মবিমুখতা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। এভাবে চলতে থাকলে মুসলমানিত্ব শব্দটাই একদিন এদেশের মুসলমানদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাওয়া অসম্ভব কোন বিষয় নয়।
বিষয়: বিবিধ
১০২৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন