ধর্ষণ রোধে নিরপেক্ষভাবে আইনের শাসন কার্যকর করা সময়ের দাবী...

লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ৩০ মার্চ, ২০১৮, ০৪:২০:২৩ বিকাল

২ বছরের ছোট্ট শিশুটি যখন ধর্ষিতা হয়, তখন পোষাকের প্রশ্ন আসেনা। রাস্তার পাশের সেই ময়লাযুক্ত পোশাক, এলোমেলো চুল ও উৎকট দুর্গন্ধযুক্ত পাগলীটাকে ধর্ষণের পর তার যৌনাঙ্গে রড ডুকিয়ে দিয়ে নাড়িভুঁড়ি বের করে ফেলা হয় তখন পোষাকের প্রশ্ন আসেনা। ৯০ বছরের থুরথুরে কুঁজো বুড়িটা যখন ধর্ষিতা হয় তখন পোষাকের প্রশ্ন আসেনা। আবার নোয়াখালীর পর্দানশীন যুবতী হাফেজা বোনটি যখন ধর্ষিতা হলো তখনো পোষাকের প্রশ্ন আসেনি। আসে শুধু আইনের শাসনের কথা, ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতার অপব্যবহারের কথা, নারীবাদী ও সুশীল কুত্তাগুলোর চুপ থাকার কথা, সর্বোপরি কথিত নির্লজ্জ মানবাধিকারের কথা। আমি পোষাকের বিরোধী নই, কারণ এটা ফরজে আইন।

.

ছোটকাল থেকে মসজিদে, মাহফিলে হুজুরদের কাছ থেকে পর্দার ওয়াজ শুনে আসতেছি, আলহামদুলিল্লাহ্‌ ব্যক্তিজীবনে আমিও পর্দা মেনে চলার চেষ্টা করি, পরিবার পরিজনদেরও উৎসাহ দিই। কিন্তু পর্দাই কি ধর্ষণ রোধের একমাত্র উপায়? পবিত্র কোরানে আল্লাহতায়ালা বলেছেন,"নিশ্চই সালাত সালাত-আদায়কারী কে যাবতীয় অশ্লীলতা ও খারাপকাজ থেকে বিরত রাখে।" কিন্তু সালাত আদায়কারী হয়েও কেউ যদি অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত না থাকে তাহলে বুঝতে হবে তার সালাতে একাগ্রতা ছিলনা, তার অন্তরে আল্লাহর ভয় জাগ্রত হয়নি। সে লোকদেখানো সালাত আদায়কারী ছাড়া বেশি কিছু নয়। আর এই সমস্ত সালাত আদায়কারীর জন্য রয়েছে আল্লাহর লানত।

.

ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম, এখানে সব সমস্যার সমাধান ইনসাফ সহকারেই দেওয়া আছে। একজন জেনাকারি/কারিণী যদি অবিবাহিত হয় তবে তাকে দৌর‍্যা মারতে বলা হয়েছে, আর যদি বিবাহিত হয় তবে তাকে হত্যা করতে বলা হয়েছে। দেখুন, জাহেলি যুগের যেই সমাজে নারীর কোনো মর্যাদাই ছিলোনা, যেখানে হত্যা ধর্ষণ ছিল খেলার সামগ্রী! সেখানে আল্লাহ প্রদত্ত এই আইন ইনসাফের সাথে পুরো সমাজ ব্যবস্থার চিত্রই পাল্টে দিয়েছিল। কিন্তু এই আইনকে বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যাদুঘরে রাখার পরিণাম স্বরূপ আজ দেশের এতটাই অধঃপতন! কিছুদিন আগে পত্রিকার পাতায় দেখলাম, এক বিধবাকে ৫ জন সোনার ছেলে গণধর্ষণ করেছে, এই গণধর্ষণের শাস্তিস্বরূপ সমাজের আওয়ামী অধিপতি ধর্ষকদেরকে ১০বার করে কানেধরে উঠবস করিয়ে ধর্ষিতাকে মা ডাকিয়ে ছেড়ে দিয়েছে! এ যেন মানবতাকেই পুনরায় ধর্ষণ করা হলো! ধর্ষিতার প্রতি জুলুম করে সেই বিচারক জালিমের ভূমিকায় উত্তীর্ণ হলো। সেই সমাজে নিশ্চয় তরকারী ও সরকারী হুজুরগনও ছিলো, যারা কোনো প্রতিবাদ না করে নিরবে এই জুলুমকে সমর্থন করে গেছে! কিন্তু তারাই পর্দার ওয়াজ করতে করতে মুখের লালা বের করে ফেলে!! কিন্তু একবারও আইনের শাসনের ওয়াজ করতে পারেনা, এই ধরণের হুজুরগণ সমাজ ও জাতীর জন্য অভিশাপ হিসেবেই পরিগণিত হবে। কারণ মহান আল্লাহও এদেরকে সত্যগোপন করার অপরাধে জালিম হিসেবেই ঘোষণা দিয়েছেন।

.

প্রত্যেক বাহিনীর একটা নির্দিষ্ট পোশাক থাকে, পোশাক ছাড়া তাকে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়না। সে কি পুলিশ নাকি আর্মি সেটা তার পোশাকেই বলে দেয়। এখানে পোশাক ছাড়া সে মূল্যহীন। একইভাবে ইসলাম ধর্মের অনুসারীদেরও একটা বাধ্যতামূলক ড্রেসকোড আছে। এই ড্রেসকোড মেনে চলতে মুসলিমরা বাধ্য। ছোটকাল থেকে পর্দার ব্যাপারে সন্তানদের সচেতন করানো পরিবারের অভিভাবকদের দায়িত্ব। যদি কেউ মেনে না চলে তবে তাকে আল্লাহর দরবারে কঠিন জবাবদিহি করতে হবে। যেহেতু বর্তমান সমাজে ইসলামী শাসনব্যবস্থা কার্যকর নাই, তাই ব্যক্তিগতভাবে কেউ পর্দা না মানলে তাকে শাস্তি দেওয়া যাবেনা, কিন্তু পরকালীন শাস্তি থেকে সে মুক্তি পাবেনা। কেউ যদি পর্দা করতে চায়, তাকে বাধা দেওয়া কিংবা নিরুৎসাহিত করার অধিকার কারো নাই। যদি কেউ অন্যকে পর্দা মেনে চলতে বাধা দেয় কিংবা নিরুৎসাহিত করে তবে মুসলিমগন ঈমানের দাবিতে প্রতিবাদ করবে এটাই স্বাভাবিক।

.

পরিশেষে বলবো, দেশের ৯০% মুসলিম যদি ধর্ষণের শাস্তি কোরানি বিধান মোতাবেক কার্যকর করার দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে তাহলে যেকোনো সরকার এই আইন পাশ করে তা কার্যকর করতে বাধ্য হবে, তবেই ধর্ষণ নামক অভিশাপ থেকে জাতি মুক্তি পাবে।

বিষয়: বিবিধ

১১৬২ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385043
৩১ মার্চ ২০১৮ সকাল ০৬:৪৮
শেখের পোলা লিখেছেন : লঘু শাস্তিদিয়ে ধর্ষীতাকে মা ডাকিয়ে অর্থাৎ একটু আগেই তারা মাকেই ধর্ষন করে এল। আজব শাস্তি। পর্দা ইসলামের বিধান। কিন্তু পচনশীল সমাজে কেউ তা না মানলে তার ব্যাপার। তবে পর্দাই ধর্ষন রোধের এক মাত্র পন্থা নয়। মানুষের নৈতীক অবক্ষয়ই এর বড় কারণ। আর একমাত্র ইসলামী শাসন ব্যবস্থাই পারে তা ফিরিয়ে আনতে। আসুন আমরা মানুষের মাঝে ইসলাম ছড়িয়ে দিই।ধন্যবাদ।
০২ এপ্রিল ২০১৮ সন্ধ্যা ০৭:৩৫
317525
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : ঠিক বলেছেন প্রিয় ভাই। সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। জাজাকাল্লাহ।
385044
৩১ মার্চ ২০১৮ সকাল ০৯:৪৩
হতভাগা লিখেছেন : দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করতে হবে এবং তা জনসমক্ষে। যাতে অন্য কেউ একই অপরাধ করার আগে অন্তত ১০০০ বার চিন্তা করে।
০২ এপ্রিল ২০১৮ সন্ধ্যা ০৭:৩৬
317526
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : যতদিন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর না হবে, ততদিন কোনো সুরাহা হবেনা। সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। জাজাকাল্লাহ।
385071
০৪ এপ্রিল ২০১৮ দুপুর ১২:৫০
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : সামগ্রিকভাবেই দল, মত, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে জাতিগতভাবেই আমাদের নৈতিক পতন হয়েছে মারাত্নকভাবে তাই শুধু আইন বা শুধু নৈতিকতা দিয়ে এই পঁচন রোধ করা সম্ভব না। আইন ও নৈতিকতা দুটোরই সমান প্রয়োগ জরুরী
১৪ এপ্রিল ২০১৮ রাত ০২:০২
317558
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : ঠিক বলেছেন, আমিও এটাই বুঝাতে চেয়েছি। ধন্যবাদ আপনাকে
385785
২০ আগস্ট ২০১৮ সকাল ১০:৩৫
আবু নাইম লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File