মেধাবীদের লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়নে শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন।
লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ০৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ০১:৫৬:১০ দুপুর
"উদ্দেশ্যবিহীন ছাত্রজীবন মাঝিবিহীন নৌকার মতই"
পাঠ্যপুস্তকে এই প্রবাদবাক্যটি থাকলেও বাস্তবিকপক্ষে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এই প্রবাদবাক্যটিকে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলছে। প্রতিবছর অকাতরে নষ্ট করে দিচ্ছে হাজারো মেধাবী ছাত্রছাত্রীর লালিত স্বপ্ন। কেন এই অমানবিকতা? এর কি কোনো প্রতিকার নাই?
যেমন আমার স্ত্রীর কথাই বলি। জে.এস.সি, এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি প্রতিটি পরীক্ষায় সে এ+ পেয়ে আসছে। তার স্বপ্ন ছিল সে একাউন্টিং নিয়ে স্টাডি করবে, কোনক্রমে একাউন্টিং যদি না পায় তাহলে ম্যানেজমেন্ট অথবা ইংলিশে স্টাডি করবে। ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে চেয়েছিল, কিন্তু বাদ সাধলাম আমি। কারণ ভার্সিটিতে পছন্দের সাবজেক্ট পাওয়ার সম্ভাবনা ২০%(!), আবার কোনক্রমে যদি ভার্সিটিতে চান্স না পায় তাহলে শিক্ষাব্যবস্থার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তাকে ভালো কলেজে স্টাডি করার চান্সও হারাতে হবে। তাই তাকে চট্টগ্রাম সরকারী মহিলা কলেজে ভর্তির পরামর্শ দিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সে ফেলো ইকোনমিকস! ইংলিশের জন্য ট্রাই করেও ফেলো না। তার এস.এস.সি ও এইচ.এস.সিতে ইকোনমিকস সাবজেক্টটা ছিলোনা, তাই সাবজেক্টটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও তার জন্য সম্পূর্ণ নতুন। আর নতুন সাবজেক্টে ভালো কিছু করতে হলে তাকে নিয়মিত ক্লাসের পাশাপাশি কিছু সাবজেক্টের জন্য প্রাইভেটও পড়তে হবে। আমার বাড়ি থেকে কলেজের দূরত্ব প্রায় ৫৭ কি.মি, তাই পারিবারিক কাজকর্মের পাশাপাশি নিয়মিত কলেজে যাওয়া আদৌ সম্ভব না।
প্রতিমাসে ৫/৬ দিন করে কয়েকমাস ক্লাস করার পর সে সাবজেক্টটি চেঞ্জ করার সিদ্ধান্ত নিল। তাই একবছর গেফ দিয়ে এই বছর আবার চট্টগ্রাম কলেজে ট্রাই করেছিল, তাও পছন্দের সাবজেক্ট ফেলোনা, ইংলিশের জন্য ট্রাই করেও শিক্ষাব্যবস্থার ফালতু সিস্টেমের কাছে হার মানতে হলো। তাই তাকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাংলায় অনার্স করতে হচ্ছে! স্কুল জীবন থেকে পছন্দ করে আসা সাবজেক্টে স্টাডি করতে না পেরে তার মানসিক যন্ত্রণা কেমন হয়েছিল সেটা আমি খুব কাছ থেকেই দেখেছি, মনে হয়েছে সে আমার চেয়ে স্টাডিকেই বেশি ভালোবাসে। স্টাডির প্রতি তার এই আন্তরিকতাকে আমি সম্মান জানাই।
আমি আমার স্ত্রীর উদাহরণ দিলাম, তার মতো আরোও কত হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর স্বপ্ন শিক্ষাব্যবস্থার অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে প্রতিবছর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তা আল্লাহই ভালো জানেন। বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা যতটা সহজে তাদের পছন্দের সাবজেক্ট পায়, বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের জন্য পছন্দের সাবজেক্ট পাওয়া তার চেয়ে শতগুণ বেশি কঠিন।
বর্তমান সিস্টেম হলো হয় ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার পর অপন্দের সাবজেক্টে স্টাডি করতে হবে, না হয় একেবারে সাধারণ কলেজে স্টাডি করতে হবে। আর ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা না দিয়ে যদি শুরু থেকে ভালো কলেজে চেষ্টা করো তবে পছন্দের সাবজেক্ট কপালে জুটবেনা। এটা কেমন নিয়ম? যদি শিক্ষাব্যবস্থার নিয়ম এমন হতো, এস.এস.সি ও এইচ.এস.সিতে যাদের পয়েন্ট সর্বমোট ৯.৫ - ১০ থাকবে তাহলে তারা তাদের পছন্দমত সাবজেক্ট নিতে পারবে, ভার্সিটির পাশাপাশি সেরা কলেজ গুলো থেকেও ভর্তি ফরম নিতে পারবে তাহলে হয়তো বাংলাদেশের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বিরাট একটি অংশকে তাদের স্বপ্নের জলাঞ্জলি দিতে হতোনা। একান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও পি.ই.সি ও জে.এস.সিতে এ+ পাওয়া আমার ছোট বোন(শালী)কে নবম শ্রেণীতে মানবিক বিভাগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি যাতে সে ভবিষ্যতে তার পছন্দের সাবজেক্ট ইংলিশে স্টাডি করতে পারে।
এই ব্যাপারে অভিভাবকদের পাশাপাশি কথিত সচেতন মহল যদি একটু সচেতনতার পরিচয় দিতো তাহলে হয়তো মেধাবীদের স্বপ্নভঙ্গ হতোনা।
বিষয়: বিবিধ
১০৮৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন