পারিবারিক জীবনে রাসূল(সাঃ) এর আদর্শের বাস্তবায়ন সময়ের দাবী...
লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৩:৩৪:৪৯ দুপুর
একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ সকলেরই কাম্য। সমাজের একক ইউনিট হচ্ছে পরিবার, অনেকগুলো পরিবার নিয়ে একটি সমাজ গড়ে উঠে। একটি ঘরের ইটগুলো যদি নিম্নমানের হয় তাহলে ঘরটি যেমন দুর্বল হয়ে পড়ে তেমনি একটি সমাজের পরিবার গুলো যদি নীতি-নৈতিকতাহীন হয় তাহলে সেই সমাজ কখনো সুখী, সমৃদ্ধ ও দুর্নীতিমুক্ত হতে পারেনা।
একজন নারী আর একজন পুরুষের বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমেই একটি পরিবারের যাত্রা শুরু হয়। আর সন্তানাদি ও আত্মীয়স্বজন নিয়ে সেই পরিবার পূর্ণতা লাভ করে। একটি আদর্শবান পরিবার গঠনের জন্য ঐ পরিবারকে একটি আদর্শের অনুসারী হতে হয়। আর মহান আল্লাহ বলেন, 'তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের জীবনীর মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ' (সূরা আহযাব-২১)
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ২৫ বছর বয়সে ৪০ বছর বয়সী খাদিজা (রাঃ) এর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তৎকালীন সমাজে রাসূল(সাঃ) এর পরিচয় ছিল আল আমিন, আস সাদিক নামে আর অঢেল সম্পদের অধিকারিণী খাদিজা (রাঃ) এর পরিচয় ছিল তাহেরা বা পবিত্রা নামে। খাদিজা (রাঃ) স্বামীর মিশন বুঝতে পেরে সেই মিশন বাস্তবায়নে নিজের সকল সম্পদ ইসলাম প্রতিষ্ঠায় অকাতরে বিলিয়ে দেন। প্রিয় রাসূল(সাঃ) যখন দাওয়াতি ময়দানে মানসিক জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়ে বাসায় ফিরতেন তখন খাদিজা(রাঃ) প্রিয় রাসূল(সাঃ)কে সান্তনা দিতেন, উৎসাহ দিতেন। প্রৌঢ় বয়সে হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন স্বামীর জন্য খাবার নিয়ে যেতেন। মহান আল্লাহ খাদিজা(রাঃ) এর এহেন আচরণে সন্তুষ্ট হয়ে ফেরেশতা জিব্রাইল (আ) এর মাধ্যমে তাঁর এই প্রিয় বান্দির নিকট সালাম পোঁছালেন। পুরো নারী জাতিকে সম্মানিত করলেন। খাদিজা(রাঃ) এর মৃত্যুর পরও প্রিয় রাসূল(সাঃ) কখনো তাঁর এই মহীয়সী স্ত্রীকে ভুলতে পারেন নি। এই পরিবারটিই ছিল মুসলিম জাহানের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ পরিবার।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর চারিত্রিক সনদ দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, 'নিঃসন্দেহে তুমি নৈতিকতার অতি উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন' (সূরা আল কলম-৪)
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন, 'তোমরা দিনের আলোতে এবং রাতের আঁধারে আমার মাঝে যা কিছু দেখতে তা মানুষের মাঝে প্রকাশ করো'(তিরমিজী)
রাসূল(সাঃ) পারিবারিক কাজে স্ত্রীদের সাহায্য করতেন, নিজের কাপড় নিজেই পরিষ্কার করতেন। তিনি পরিবারে মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, ছোটবড় সকলের অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। পারিবারিক জীবনে তিনি কখনো কাউকে ধমকের সুরে কথা বলেন নি। আনাস(রাঃ) বলেন, আমি ১০ বছর রাসূল(সাঃ) এর খেদমতে নিয়োজিত ছিলাম, এই দীর্ঘ সময়ে তিনি আমার কোন আচরণে উহ শব্দ পর্যন্ত করেন নি। তিনি একেবারে নিরস ছিলেন না, তিনি চাঁদনী রাতে আয়েশা(রাঃ) এর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতাও করতেন। সাহাবী(রাঃ)দের সাথে শিক্ষামূলক ও আনন্দদায়ক আলোচনাও করতেন।
আজকের দিনে মুসলিম সমাজের পরিবার গুলোর মধ্যে রাসূল(সাঃ) এর আদর্শ না থাকার কারণে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা এখন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌতুক নিয়ে ঝগড়া, পছন্দের ড্রেস কিনে না দিলে পারলে ডিভোর্সের ঘটনা এগুলো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ রাসূল(সাঃ) এর ১১ জন স্ত্রী ছিলেন, কিন্তু ঝগড়াতো বহু দূরের কথা বরং সেখানে ভালোবাসায় পরিপূর্ণ ছিল। আর ঐ পরিবার থেকে ফল হিসেবে এসেছেন জান্নাতের মহিলাদের সর্দারীনি মা ফাতেমা(রাঃ) এর মত সন্তান। অথচ আজকের পরিবার গুলো থেকে মাদকাসক্ত ঐশী, সাফায়াত, বদরুল ও তুফানের মত সন্তান তৈরি হচ্ছে। যেই মা ১০টি মাস গর্ভধারণ করলেন স্নেহ মমতা দিয়ে বড় করলেন, যেই বাবা সন্তানকে মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে নিজের সর্বোচ্ছটুকু উজাড় করে দিলেন সেই মমতাময়ী মা-বাবার স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রমে! এর কারণ কি? কারণ একটাই ইসলাম ও রাসূল(সাঃ) এর আদর্শ পরিবারে কার্যকর না থাকা।
২০১৩ সালে সরকার নতুন আইন প্রণয়ন করেছেন, "পিতামাতার ভরণপোষণ না দিলে সন্তানকে জরিমানা দিতে হবে" (!) আচ্ছা বলুন তো জরিমানা করে কি পিতামাতার হক্ক আদায় করা যায়? এটাতো একান্তই মনের ব্যাপার, আর মনের সাথে ঈমানের সম্পর্ক। যতক্ষণ পর্যন্ত মনের মাঝে আল্লাহর জাতের সামনে জবাবদিহিতার ভয় না আসবে ততক্ষণ আইন করে হক্ক আদায় করা যাবেনা।
আজকের সমাজে সৎ নেতা বা সৎ নেতৃত্বের কথা খুব বেশি শুনা যায়। আর এই সৎ নেতৃত্ব আসমান থেকে নাজিল হবেনা আবার জমিন থেকেও পয়দা হবেনা। এই সৎ নেতৃত্ব আসবে একটি আদর্শ ইসলামিক পরিবার থেকে। পরিবার হচ্ছে রাষ্ট্রের ক্ষুদ্রতম একক। যদি দেশকে ভালোবাসেন, দেশকে সুখী, সমৃদ্ধ ও দুর্নীতিমুক্ত দেখতে চান, তবে ইসলাম ও রাসূল(সাঃ) এর আদর্শে আপনার পরিবার পরিজনদের পরিচালিত করুন, তবেই আপনার পরিবার থেকে সৎলোক তথা সৎ নেতৃত্ব আসবে।
প্রিয় রাসূল(সাঃ) এর আদর্শের সার্টিফিকেট মহান আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন, দুনিয়াবি জীবনে রাসূল(সাঃ) এর আদর্শ যদি আপনার ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে বাস্তবায়ন না করে অন্য কোনো নেতার আদর্শকে নিজের আদর্শ মনে করেন, তবে পরকালে নিশ্চিতভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আর চিরসত্য মৃত্যু যেকোনো সময় আপনাকে দেখা দিতে পারে, রাসূল(সাঃ) এর আদর্শকেই বুকে ধারণ ও বাস্তব জিবনে প্রয়োগ হবে বুদ্ধিমানের কাজ। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের সবাইকে কথাগুলো বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
বিষয়: বিবিধ
১২৬০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খেয়াল করলে দেখবেন যে নবীদের মা ও স্ত্রীরা কখনও একসাথে ছিলেন কি না বা তাদের মধ্যে কি সম্পর্ক ছিল বা তাতে নবী রাসূলদের কাজে কোন প্রভাব ফেলেছে কি না - সেরকম কোন কথা কিন্তু আমরা জানতে পারি না ।
আমাদের সাধারণ মানুষের বাইরের কাজ থেকে ঘরে ফিরে যে একটু শান্তি আসবে সেটার জো নেই ।
মা ও স্ত্রীর দ্বন্দ্ব চিরন্তন একটা বিষয় এবং এর ফলে বহু ফ্যামিলি সাফার করে যাচ্ছে , ভালভাবে গড়েও উঠতে পারে না ।
আল্লাহ তার এই বিশিষ্ট বান্দাদের দিয়ে তার কাজ করিয়ে নেবার জন্য তাদেরকে দুনিয়ার এই আবশ্যম্ভাবী ঝুট ঝামেলা থেকে মুক্ত রেখেছেন । ইসলামের বানী প্রচার করে রাতে ঘরে এসে বউয়ের ঘ্যান ঘ্যানানি বা মা ও স্ত্রীর দ্বন্দ্ব মীমাংসা কোন রাসূলকে কি করতে হত ?
যেহেতু আল্লাহর বিশিষ্ট বান্দা হবার সুবাদে নবী রাসূলেরা জান্নাতে যাবেন সেহেতু তাদের স্ত্রী হয়ে কোন রকম ঝুট ঝামেলা না করে চললে তারাও সেটার সৌভাগ্যের অধিকারী হবেন ।
আমাদের মত সাধারণ মানুষেরা কি সেরকম সৌভাগ্যবান ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন