উদারতার বিপরীতটাও সর্বদা মনে রাখা উচিত...
লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ২১ অক্টোবর, ২০১৭, ০৫:৪৫:১৮ বিকাল
ধরুন, একজন মালিক আর একজন দাস। মালিক দাসকে শুধু বললো, শুনো তুমি আমার দাস। কিন্তু আমি চাইনা যে তুমি সব ধরণের কাজ করো। আমার চাহিদা খুবই অল্প, আমি তোমার কাছ থেকে শুধু একটা জিনিস চাই। ঐযে একটা লাইন দেখতে পাচ্ছো, কখনো সেই লাইনটার বাহিরে যেতে পারবেনা। লাইনের ভেতরে যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে, কোন সমস্যা নাই কিন্তু লাইনের বাহিরে যেও না, আমি শুধু এইটুকুই দাবি করলাম।
সেই দাসটাতো একপ্রকার মুক্তই, শুধু লাইনের মধ্যেই থাকতে হবে। আর লাইনটাও গোলাকৃতির বেশ চওড়া, ধরুন কয়েক একর। আর দাসটা এভাবেই লাইনের মধ্যে থেকে ভালোভাবেই তার দিন গুলো অতিবাহিত করতে লাগলো। আর তার মালিক চেয়ার নিয়ে একজায়গা বসে থেকে দাসের সবকিছুই মনিটরিং করতেছে।
একদিন দাসটা লাইনের পাশদিয়ে হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ হোঁচড় খেয়ে লাইনের বাহিরে গিয়ে পড়লো। আর পড়ার সাথে সাথেই সে তার মালিকের দিকে তাকালো। কিন্তু মালিক চেয়ারে বসে আছেন ভাবটা এমন, যেন কিছুই হয়নি। তারপর দাস উঠে দাঁড়ালো এবং কাপড় চোপড় ঠিক করে লাইনের ভেতরে চলে আসলো। পরেরদিন দাসটি আবারো লাইনের কাছে গিয়ে পড়ে যাওয়ার ভান করলো আর বার বার মালিকের দিকে তাকালো, দেখলো মালিক কিছুই বলছেন না একেবারে স্বাভাবিক অবস্থায় বসে আছেন।
তারপর দিন দাসটি ভান করাও ছেড়ে দিল, সে তার এক পা লাইনের বাহিরে দিল, আরেক পা ভেতরে দিল, আর বার বার মালিকের দিকে তাকালো, মালিক কিছুই বলছেনা। পরের দিন সে লাইনের বাহিরে গিয়ে দাঁড়ালো, আর মালিকের দিকে তাকালো, কিন্তু মালিক আগের মতই। পরের দিন সে লাইনের বাহিরে গিয়ে অনেকক্ষণ হাটাহাটি করলো আর বার বার মালিকের দিকে তাকালো আর মালিকও বরাবরের মতই বসে আছেন যেন সব কিছুই স্বাভাবিক। এরপরে সে বেশিরভাগ সময়ই লাইনের বাহিরে কাটায়, আর মাঝেমাঝে মালিকের দিকে হাত নাড়াচাড়া করে মালিককে জিজ্ঞেস করে, হাই...কেমন আছেন! আর মালিকতো সবকিছু দেখেও খুবই স্বাভাবিকভাবে আছেন। এভাবে দাসটি লাইনের বাহিরে গিয়ে সুখের জীবন কাটাচ্ছে, মালিকের কথা তেমন একটা মনেও পড়েনা।
তারপর একদিন মালিক তাকে ডাকলো, এখানে এসো, সে গেলো। এবার মালিক বললো, তোমার মনে আছে কি, যেইদিন তোমাকে ছেড়ে দিয়েছিলাম সেইদিন তোমাকে বলেছিলাম ঐ লাইনের বাহিরে যেওনা? তখন দাস বললো, ও হ্যাঁ মনে আছে তো, অবশ্যই মনে আছে, হে হে হে...
আচ্ছা, তো তুমি সেই লাইনের বাহিরে প্রথমবার ভুল করে গেলে, তারপর পড়ে যাওয়ার ভান করলে, আমি জানি তুমি ইচ্ছাকৃতভাবেই করেছিলে। তারপর তুমি আরোও বেশি করে করতে লাগলে, তারপর তুমি বার বার লাইন ক্রস করতে লাগলে, তারপর তুমি বেশিরভাগ সময় লাইনের বাহিরে কাটালে, তারপর আমি যে তোমার মালিক সেটাও ভুলে গেলে। কিন্তু আমি সব কিছুই দেখেছি এবং এই কিতাবে লিখে রেখেছি। আমি তোমাকে কিছুই বলিনি কিন্তু লিখে রেখেছি। এই সেই রেকর্ড, তুমি সর্বমোট ৬৭৮০বার লাইন অতিক্রম করেছিলে। আর তুমি আমার আদেশ অমান্য করার অপরাধে আজ তোমাকে প্রতিবারের জন্য ১০০টি করে চাবুক মারবো। এতদিন তুমি ভুলে গিয়েছিলে যে তোমাকে বিচার করার অধিকার আমার আছে! তুমি আমার দয়া ও উদারতার সুযোগ নিয়েছিলে আর একদিন তোমাকে জবাবদিহি করতে হবে এটা তোমার মনেই ছিলনা!
প্রিয় পাঠক ভাই ও বন্ধুগন, একবার ভাবুনতো, আমরা আল্লাহর বেধে দেওয়া লাইনের মধ্যে আছি কিনা? আমরা প্রতিদিন কতবার সেই লাইনটি অতিক্রম করতেছি? বাস্তবে আমাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে কি? আল্লাহ কি আমাদের পাকড়াও করবেন না? তিনি কি আমাদের ব্যাপারে একেবারেই বেখবর!! হে আল্লাহ, আপনি আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝদান করুন, আমাদের ঈমানকে জাগ্রত করে দিন।
লেখকঃ দিল মোহাম্মদ মামুন
সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী।
বিষয়: বিবিধ
১১১০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ
সীমারেখা মেনে চলার অনুশীলন নিজেকে দিয়ে শুরু করুন।
ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র নিজের সকল কাজ পর্যালোচনা করুন, প্রদর্শনেচ্ছা...
জি মুহতারাম আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেছি, জাজাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন