প্রজ্ঞাহীন আবেগী আচরণ পথভ্রষ্টতার কারণও হতে পারে, দাওয়াতি ময়দানে ধৈর্য ও প্রজ্ঞা অতীব জরুরী...
লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ১৫ অক্টোবর, ২০১৭, ১১:৫০:৫৫ সকাল
একজন কৃষক তার জমিতে বীজ বপন করার পর চারা গজানোর পূর্বপর্যন্ত কমপক্ষে ৩-৭ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। কৃষক জানেননা যে এই সময়ে মাটির নিচে পুতে রাখা বীজ কোন পর্যায়ে রয়েছে, বীজগুলো অঙ্কুরোদগম হচ্ছে কিনা। এই সময়ে কৃষক স্রষ্টার উপর নির্ভর করে সীডবেডের পরিচর্যায় নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। আর বীজ গুলো চারায় রুপান্তর হওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটাই কৃষকের দৃষ্টির আড়ালে হয়ে থাকে।
আপনি একজন বেনামাজিকে নামাজের দাওয়াত দিলেন, কোরান-হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে তার সামনে নামাজের গুরুত্ব তুলে ধরলেন। এভাবে ২/৩ বার দাওয়াত দেওয়ার পর যখন দেখলেন ঐ ব্যক্তিটি আপনার ডাকে সাড়া দিয়ে নামাজ শুরু করলোনা, তখন আপনি প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেলেন যে, সে আপনার দাওয়াতে সাড়া দিবেনা, তার প্রতি খুব অসন্তুষ্ট হয়ে কোরান থেকে কয়েকটা পরকালিন শাস্তির আয়াত শুনিয়ে তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগের জন্য প্রস্তুত থাকতে বললেন! এই ধরণের আচরণ একদম করবেন না, কারণ এই কথাটি দ্বারা আপনি হয়তো তার অন্তরে একটু একটু করে অঙ্কুরোদ্গমরত ঈমানের বীজটিই নষ্ট করে দিলেন, যা আপনার দৃষ্টির অগোচরেই ছিল!
একবার ভাবুনতো, আপনি যে কাজটি ২/৩ বার করে হতাশার চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়ে বলে ফেললেন "আল্লাহর দ্বীনের একজন দায়ী হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি, এখন আমি দায়মুক্ত, বাকিটা আল্লাহ দেখবেন"!
অথচ সেই কাজটি করার সুন্দরতম পদ্ধতি শিক্ষা দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন,
"ডাকো তোমার প্রভুর পথের দিকে হেকমা(প্রজ্ঞা) ও উত্তম কথার মাধ্যমে আর তাদের সাথে বিতর্ক করো উত্তম পন্থায়"-(সূরা নাহল ১২৫)। এখানে প্রভুর পথে ডাকতে বলা হয়েছে, কিন্তু কিভাবে ডাকতে হবে সেটা বলে দেওয়া হলেও কতদিন, কতমাস, কতবছর, কতযুগ বা কত শতাব্দী ধরে ডাকতে হবে তা বলা হয়নি! হযরত নূহ(আ) ৯৫০ বছর ধরে প্রতিনিয়ত ডেকেছিলেন।
আর এভাবেই দাওয়াতে দ্বীনের কাজটি মহান আল্লাহর পয়গম্বরগন বছরের পর বছর করেও হতাশ হননি! রক্তাক্ত হয়েও হাল ছেড়ে না দিয়ে, অভিশাপ না দিয়ে বরং গভীর ভালোবাসা থেকে তাদের জন্য দুয়া করেছেন। তাই অল্পতে হতাশ হয়ে বাহ্যিক দৃষ্টিদিয়ে কাউকে মূল্যায়ন না করে প্রজ্ঞাবান হওয়া উচিত, তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে উত্তম কথাবার্তার মাধ্যমে অবিরত দাওয়াতের পাশাপাশি তার হেদায়াতের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত। তবেই ইনশাআল্লাহ দাওয়াতের সফলতা আসবে।
লেখকঃ দিল মোহাম্মদ মামুন
সংযুক্ত আরব-আমিরাত প্রবাসী।
বিষয়: বিবিধ
১২৬৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন