মুসলিম হিসেবে বাস্তব জীবনে যথাযথ সত্যের সাক্ষ্য দেওয়া ঈমানী দায়িত্ব...
লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ২৩ আগস্ট, ২০১৭, ০৭:১১:২১ সন্ধ্যা
'আমি মুসলিম, আমি নামাজ পড়ি, রমজানে রোজা রাখি, হজ্ব করি, যাকাত দিই সর্বোপরি নিজেকে মুসলিম বলেই পরিচয় দিই' এই কথা গুলো বললেই একজন মুসলিম হিসেবে আপনার-আমার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়না। বরং মুসলিম পরিচয় দেওয়ার সাথে সাথে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে যে মহান দায়িত্ব এসে যায় তা পালন না করলে কঠিন জবাবদিহি করতে হবে বলে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরানে অসংখ্যবার সতর্ক করেছেন। সেই দায়িত্বটি হচ্ছে, যে মহান সত্যের উপর আপনি-আমি ঈমান এনেছি, তার সাক্ষী হিসেবে সমগ্র দুনিয়ার সামনে আপনাকে-আমাকে দাঁড়াতেই হবে। কারণ মহান আল্লাহ একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদেরকে মুসলিম নামে একটি স্বতন্ত্র জাতীর মর্যাদা দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ বলেন, "আমি তোমাদেরকে এক মধ্যমপন্থী জাতী বানিয়েছি যাতে করে তোমরা লোকদের জন্যে সাক্ষী হও আর রাসূলও যেন তোমাদের জন্য সাক্ষী হন"(সূরা বাকারা-১৪৩)
অর্থাৎ হাশরের ময়দানে পূর্ববর্তী নবীদের পথভ্রষ্ট উম্মতগন তাদের জন্য প্রেরিত আল্লাহর প্রতিনিধিদের অস্বীকার পূর্বক আল্লাহর দরবারে মিথ্যা ফরিয়াদ করে বলবে, হে আল্লাহ তুমি যদি আমাদের জন্য কোনো পথপ্রদর্শক পাঠাতে তাহলে আমরা অবশ্যই সফলকাম হতাম। তখন সাক্ষী হিসেবে মহান আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মদীদের জিজ্ঞেস করবেন। জবাবে উম্মতে মুহাম্মদীর নেককার বান্দাগন বলবেন, হে আল্লাহ তোমার প্রেরিত পবিত্র কোরান থেকে আমরা জেনেছি তুমি এদেরকে(পূর্ববর্তী উম্মত) হেদায়াতের জন্য অসংখ্য নবী-রাসূলকে সত্য বিধানসহ পাঠিয়েছিলে। কিন্তু তারা তোমার প্রেরিত প্রতিনিধিদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। আর রাসূলগন বলবেন, এরা(উম্মতে মুহাম্মদী) সত্যসাক্ষ দিচ্ছে। এই হলো পরকালের সাক্ষী।
সুপ্রিয় ভাইয়েরা, আমরা 'লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ' বলে মহান আল্লাহ এবং তাঁর প্রেরিত রাসূল মুহাম্মদ(সঃ) এর উপর ঈমান এনেছি, প্রিয় রাসূলের উপর নাজিলকৃত পরিপূর্ণ জীবন বিধান মহাগ্রন্থ আল কোরানের প্রতি ঈমান এনেছি। এই ঈমানের দাবী হচ্ছে ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালনার জন্য মহান আল্লাহ যে নির্দেশ দিয়েছেন সেটাকে প্রথমত বক্তৃতা, লেখনী, প্রিন্টমিডিয়া, ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মানবজাতির সামনে তুলে ধরে সত্যের সাক্ষ্য দিতে হবে। দ্বিতীয়ত ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রে এই সত্যের প্রয়োগ করে বাস্তব সাক্ষ্য দিতে হবে। ঈমান আনয়ন করেও কেউ যদি মনে করে, ১৪শত বছর পর এখন কোরানের আইন অকার্যকর, ইসলামিক জীবনবিধান সেকেলে পুরানো, ইসলাম বিরোধী মতবাদ এবং সুদভিত্তিক অর্থনীতিই কার্যকর তবে সে মিথ্যা সাক্ষ্য দিচ্ছে। আল্লাহ প্রদত্ত মহান সত্যকে গোপন করে এই মিথ্যা সাক্ষ্যদানের জন্য তাকে অবশ্যই কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। আর যদি আমরা এই দুইটি পন্থানুসরণ করে সত্যের সাক্ষ্য দিতে পারি, তবেই আমরা ইহকাল ও পরকালে সফল হতে পারবো।
এই সাক্ষ্যদান খুব সহজ কাজ নয়, মানবজাতির মধ্যে এই সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য যুগে যুগে মহান আল্লাহ যত নবী-রাসূল প্রেরণ করেছিলেন, সবাইকে সমাজের কায়েমি শক্তি নির্মমভাবে নির্যাতন করেছিলো। কাউকে করাত দিয়ে দ্বিখণ্ডিত করা হয়েছিল, কাউকে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হতে হয়েছিল আবার কাউকে পাথরের আঘাতে রক্তাক্ত হতে হয়েছিল। কিন্তু এটাই মহান আল্লাহর মনোনীত পথ, সত্যপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বাধা আসবেই।
প্রিয় রাসূল(সঃ) বিদায় হজ্বের ভাষণে 'ফাল-ইউ-বাল্লিগিস-শাহিদিল-গায়েব' বলে সত্যের সাক্ষ্যদানের এই মহান দায়িত্ব উম্মাতের উপর দিয়ে গেছেন। আর এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাতিল শক্তির হাতে প্রত্যেক মাজহাবের ঈমামকে নির্মমভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল। এখনো পর্যন্ত পৃথিবীর আনাচেকানাচে যেখানেই কোন ব্যক্তি বা দল ইকামতে দিনের সাক্ষ্য দেওয়ার চেষ্টা করছে, বাতিল শক্তি সাথে সাথে নানান অপবাদ দিয়ে, নানান অজুহাতে ঐ সাক্ষ্যদাতাদের স্তব্ধ করে দিচ্ছে।
এই অবস্থায়ও আমার-আপনার কথাবার্তায়, আচার-আচরণে ও লেনদেনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সত্যের সাক্ষ্য দিতে হবে। আর যদি আমরা ব্যর্থ হই, তবে একজন অমুসলিম আর আমাদের মাঝে পার্থক্য কোথায়? ইসলাম তরবারীর মাধ্যমে বিজয়ী হয়নি। প্রিয় রাসূল(সঃ) ও সাহাবায়ে কেরাম(রাঃ) দের সচ্চরিত্রে ও তাঁদের বাস্তব জীবনে প্রয়োগকৃত ইসলামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই দলে দলে মানুষ ইসলাম কবুল করেছিল।
হে আল্লাহ, হে পরওয়ারদিগার, আপনি আমাদের সবাইকে কথাগুলো বুঝার ও বাস্তব জীবনে মেনে চলার তৌফিক দান করুন।
লেখকঃ দিল মোহাম্মদ মামুন
আরব-আমিরাত প্রবাসী।
বিষয়: বিবিধ
১৩৫০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খবর পেয়ে যখন হানাদাররা তাদের চামচা রাজাকারসহ মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িতে এসে জিজ্ঞেস করতো যে '' মুক্তি হ্যায় (মুক্তিযোদ্ধা কি বাসায় আছে)''? তখন মুক্তিযোদ্ধাদের বাবা মায়েরা মিথ্যে বলতো যে, নেই। এটা নিজের সন্তানকে বাঁচাবার জন্যই বলতো।
যদি সত্যি কথা বলতো যে আছে , তাহলে পুরো পরিবারকে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করতো।
কেমনে কি ?
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন