বাবুলের সততায় মুগ্ধ হয়ে মেয়ে বিয়ে দিয়েছিলেন ওসি মোশাররফ, আর স্বাধীন বাংলাদেশ দিল লাশ!!
লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ০৫ জুন, ২০১৬, ০৮:০২:২৯ রাত
আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগের কথা। একই জেলায় পুলিশে চাকরি করতেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল ওয়াদুদ ও পরিদর্শক (ওসি) মো. মোশাররফ হোসেন। সেই সুবাদেই সহকর্মী ওয়াদুদের ছেলে বাবুল আক্তারের সঙ্গে পরিচয়। তার আচার-আচরণে মুগ্ধ হয়েছিলেন মোশাররফ। তিনি সিদ্ধান্ত নেন বড় মেয়ে মাহমুদা আক্তার মিতুর সঙ্গে তার বিয়ে দেবেন। ঊর্ধ্বতন সহকর্মীর মনোভাব শুনে খুশি হন ওয়াদুদও। এরপরই বিয়ে। বিয়ের পর বিসিএস দিয়ে পুলিশে যোগদান করেন বাবুল আক্তার। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সদ্য পদোন্নতি পাওয়া চট্টগ্রামের এসপি বাবুল আক্তারের সঙ্গে ২০০২ সালে তৎকালীন ঝালকাঠির পরিদর্শক মোশাররফ হোসেনের মেয়ে মাহমুদা আক্তার মিতুর বিয়ে হয়। বর্তমানে ওসি মোশাররফ অবসরে।
রোববার সকালে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ও গুলিতে চট্টগ্রামে নিহত হন মিতু। প্রাথমিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, পরিকল্পিত এবং টার্গেট করেই এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খাতুন মিতুকে (৩২) হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। আগে থেকে তার (মাহমুদা খাতুন মিতু) গতিবিধি লক্ষ্য এবং নজরধারী করছিল সন্ত্রাসীরা। হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক আলামত দেখে এ ধারণা করছে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলছেন, পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে বাবুল আক্তারের সততা ও সাহসিকতায় ভীত ছিল দুর্বৃত্তরা। স্ত্রীকে খুন করে বাবুলকে দুর্বল করার কৌশল নিয়েছে তারা।
যে দেশে পুলিশ অফিসারের স্ত্রী, সাংবাদিক দম্পতি এবং মায়ের গর্ভের শিশু পর্যন্ত নিরাপদ নয়, সেই দেশের জনগন কতটুকু নিরাপদ!! আবার সেই দেশের পরিচালকেরা যখন বলে মানুষ শান্তিতে বসবাস করতেছে, তখন মরহুম মানবতাও লজ্জা পায়!
পুলিশ অফিসার বাবুলের স্ত্রী একজন পর্দানশীন ভদ্র মহিলা। তিনি ইসলামের অন্যান্য বিধানের পাশাপাশি নিয়মিত হিজাব পরিধান করতেন। গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করার সময়ও তার মাথা থেকে হিজাবের কাপড় সরে যায়নি।
বিভিন্ন সংবাদপত্রে পূর্বে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী বাবুল অত্যন্ত দক্ষ, সৎ, সাহসী ও চ্যালেঞ্জ গ্রহনকারী একজন পুলিশ অফিসার।
মেজর গুলজার কিংবা বাবুলের স্ত্রীদের অপরাধ বুঝতে এত টুকু সময় লাগার কথা না। এটাই এখনকার বাংলাদেশ। আপনি হয় ওদের মত ভিনদেশী তাঁবেদার হবেন, হুকুমের গোলাম হবেন, ইচ্ছার দাস হবেন, চরিত্রে ও আদর্শে ওদের মত ভন্ড হবেন, আর না হয় এ দেশে বেচে থাকার আপনার কোন অধিকারই নেই।
পুলিশ বাহিনীর মধ্যে সৎ ও সাহসের আইকন এস পি বাবুল আক্তারকে পর্যন্ত নিজ বাহিনীর পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে ব্যর্থ হয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ওসিকে উদ্দেশ্য করে বলতে হয়,
‘আমার পরিবারকে কেন দেখে রাখা হয়নি? আমি তো আগেই বলেছিলাম, তারা আমার পিছু ছাড়বে না।’ দেশে যখন সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার সরঞ্জামগুলো শুধুই ক্ষমতাসীনদের রক্ষায় বরাদ্দকৃত; সেখানে স্বয়ং পুলিশও আজ কেবলই ক্ষমতাসীনদের রক্ষার নিছক এক সরঞ্জাম মাত্র !!সর্বত্র ভালো মানুষগুলোই আজ দেশে সবচেয়ে বেশী মৃত্যুঝুঁকির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।
সৎ পুলিশ অফিসার বাবুল আক্তারকে নিয়ে সাংবাদিক অামিরুল মোমেনীন মানিকের স্মৃতিচারণ:
২০০৬ সালের কথা, তখন অামি বৈশাখী টিভিতে স্টাফ রিপোর্টার, কোনো এক নাইট ডিউটিতে rab এর অভিযান কাভার করতে রাত ১২টায় ধানমন্ডিতে হাজির হই। অবৈধ ভিওঅাইপি'র বিরুদ্ধে অভিযান। হঠাৎ এক rab কর্মকর্তা হাত বাড়িয়ে দিলেন।
-অাপনাকে চেনা চেনা লাগছে, অাপনি কি অামিরুল মোমেনীন মানিক?
- হ্যাঁ
- অামি বাবুল অাক্তার, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। অামাদের ক্যাম্পাসে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অাপনাকে দেখেছিলাম।
- হ্যাঁ, অামি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। একবার কালচারাল প্রোগ্রামে গিয়েছিলাম অাপনাদের ওখানে।
এভাবেই পরিচয়। তাঁর অান্তরিক অালাপ বেশ হৃদ্যিক মনে হলো। এরপর নানা সময়ে কথা হতো বাবুল ভাইয়ের সাথে। তিনি চট্টগ্রামে গেলেন। সততার কারণে তার সুনাম খুশবুর মতো ছড়াতে শুরু করলো চারদিক। এরমধ্যে পেলেন 'প্রেসিডেন্ট পুরস্কার'। দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ বাহিনীর মধ্যে দু' একজন যারা ব্যতিক্রম, তাদের মধ্যে বাবুল ভাই নি:সন্দেহে প্রথম সারির। কাজের কারণেই সৎ পুলিশের প্রতীক হয়ে ওঠেন তিনি। অাজ সাতসকালে বাবুল অাক্তার ভাইয়ের স্ত্রীর হত্যার খবর পেয়ে অাতৎকে উঠলাম। অাহা, সততা ও কর্মদক্ষতার এই প্রতিদান পেলেন তিনি! টিভিতে ছবি দেখে মনে হলো প্রকাশ্য রাজপথে বাবুল অাক্তার ভাইয়ের স্ত্রী নন, পড়ে অাছে ক্ষত বিক্ষত পুরো বাংলাদেশ!
অবিচারের রাজ্যে বিচার চাইতে নেই। তবুও আশা করি আসল অপরাধীরা ধরা পড়ুক, বন্ধ হোক এমন নারকীয় কর্মযজ্ঞ।
বিষয়: বিবিধ
৫৭৪৪ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ আপনাকে
অবিচারের রাজ্যে বিচার চাইতে নেই। তবুও আশা করি আসল অপরাধীরা ধরা পড়ুক, বন্ধ হোক এমন নারকীয় কর্মযজ্ঞ। ধন্যবাদ আপানাকে
ধন্যবাদ আপনাকে
আর আশা....
যেভাবে কাপুরুষের মত পিছন দিয়ে আঘাত করে, তাদের আবার বোধদয়
আপু, যুগটাতো কাপুরুষদেরই! বীরপুরুষেরা একে একে ফাসির মন্ছে, বাহিরে যারা আছে সবাই খুন, গুমের শিকার। যে দেশে পুলিশ অফিসারের স্ত্রী, সাংবাদিক দম্পতি এবং মায়ের গর্ভের শিশু পর্যন্ত নিরাপদ নয়, সেই দেশের জনগন কতটুকু নিরাপদ!! আবার সেই দেশের পরিচালকেরা যখন বলে মানুষ শান্তিতে বসবাস করতেছে, তখন মরহুম মানবতাও লজ্জা পায়! ধন্যবাদ আপনাকে
দারুন বলেছেন :
যেখানে একজন পুলিশ অফিসারের স্ত্রীকে হত্য করার পর আসল আসামীকে বাচানোর জন্য সরকার নানান কথা বলতেছে, হয়তো এই খুনের বিচার হবেওনা, হলেও কয়েকজন নিরপরাধ জামায়াত-শিবিরের লোকদের ধরে ক্রস ফায়ারে দেওয়া হবে!!! সেখানে আপনার আমার নিরাপত্তা কোথায়? কোথায় আমাদের পরিবার পরিজনের নিরাপত্তা? খুব খুব কষ্ট হয়।
ধন্যবাদ আপনাকে
মন্তব্য করতে লগইন করুন