যুবক হাউজিংয়ের মাঠ কর্মীর যন্ত্রণাময় জীবন ও সচেতন বিবেকের কাছে কিছু প্রশ্ন।(১০০% সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ২৩ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:২০:০২ দুপুর
করিমের ভগ্নীপতি প্রবাসী, বোনের একাউন্টে কিছু টাকা অলস পড়ে রয়েছে। করিমের বোন চাচ্ছেন এই টাকাটা অলসভাবে বসিয়ে না রেখে কোথাও ইনভেস্ট করে কিছু টাকা আয় করতে। তাই প্রতিদিন করিমকে তার বোন বিরক্ত করেই যাচ্ছে, অন্তত এই টাকাটা কোথাও কাজে লাগা, তোর দুলাভাইয়ের যে টাকাটা খরচ করেছিস সেটা কভার করার চেষ্টা কর, উনি দেশে আসার সময় হয়ে আসতেছে, টাকার হিসাব চাইলে আমি কি বলবো? এই কথাটা প্রতি সপ্তাহে করিমকে ২/১ বার শুনতেই হয়, কারণ কৃষিকাজ ছাড়া করিমের বাবার তেমন কোন ইনকাম সোর্স না থাকায় পারিবারিক কাজে এবং বাবার চিকিৎসা বাবদ দুলাভাইয়ের কিছু টাকা করিমের পরিবারকে খরচ করতে হয়েছে।
করিম বি.বি.এস প্রথম বর্ষের ছাত্র, সপ্তাহে ৩/৪ দিন ক্লাস ও প্রাইভেট শেষে উপজেলা চত্বরের মৃদু বাতাস সমৃদ্ধ ছায়াযুক্ত পুকুর পাড়ে ৬ বন্ধু মিলে গ্রুপ স্টাডি করে। একদিন গ্রুপ স্টাডি শেষে যখন সবাই সিঙ্গারা, চামুচা ও পেঁয়াজু নিয়ে ব্যস্ত তখন করিম তার বোনের বিষয়টি নিয়ে বন্ধুদের পরামর্শ চাইলো। সব শুনার পর বন্ধু সোহেল বললো, আমার বড়ভাই সুমন যুবক অফিসের ব্রাঞ্চ ম্যানাজার। আমার সাথে ভাইয়ার অফিসে চল, ভাইয়ার সাথে পরামর্শ কর, স্বল্প সময়ে এর চেয়ে বেশি প্রোপিট অন্য কোথাও পাবিনা।
সোহেলের কথা শুনে করিম খুব খুশি হয়, কারণ এতদিন পর বোনকে একটা সু-সংবাদ দেওয়া যাবে। সোহেলের ভাইয়ার বড় ও সুসজ্জিত জনাকীর্ণ অফিস দেখে করিমের খুব ভালো লাগলো। অনেক ব্যস্ততা সত্ত্বেও ছোট ভাইয়ের বন্ধু হিসেবে করিমের সাথে সুমন ভাই খুব আন্তরিকভাবে যুবকের বিভিন্ন মেয়াদের সঞ্চয়, চলমান প্রকল্প এবং মার্কেট ভ্যালু মিয়ে কথা বললেন। সবশেষে নাস্তা খেয়ে সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে করিম সুমন ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিলো। উল্লেখ্য ২০০৪-২০০৭ পর্যন্ত দেশব্যাপী যুবকের জয়জয়কার ছিল, সম্পূর্ণ ঘুষমুক্ত জব ফেয়ারের মাধ্যমে যোগ্যতাবলে চাকুরীর প্রক্রিয়া চালু করে বেকার যুবকদের স্বপ্নের ঠিকানায় পরিণত হয়েছিল। এই জন্য যুবকের লাভজনক প্রস্তাবটি করিমের কাছে খুব ভালো লাগলো।
করিম তার বোনকে যুবক সম্পর্কে বিস্তারিত বললো, করিমের বোনও খুব খুশি হলো যেন অনেকদিন যাবত তিনি এই রকম একটা প্রতিষ্ঠানই খুঁজতেছিলেন। পরের দিন করিম কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে তার বন্ধু আনোয়ারকে নিয়ে যুবকের অফিসে সুমন ভাইয়ের কাছে গেল। একবছরের মেয়াদী হিসেবে টাকাটা জমা করলো, সুমন ভাই দুইজনকে নাস্তা করালেন, তারপর করিমকে ২ দিন পর লেনদেনের মূল ডকুমেন্ট নিয়ে যেতে বললেন।
দুইদিন পর করিম যুবক অফিসে আসলে সুমন ভাই করিমকে যুবকের মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব দেন। পড়ালেখা ও পারিবারিক কাজের পাশাপাশি পার্টটাইম জব হিসেবে প্রস্তাবটা করিমের কাছে ভালো মনে হলো। করিম সুমন ভাইয়ের কাছ থেকে কাজের ধরণ ও কাজ করার পদ্ধতি সবকিছু বিস্তারিত বুঝে নেয়। করিম কলেজের পাশে চেয়ারম্যানের বাড়িতে তিনবছর লজিং ছিল এবং কলেজের আশেপাশে বেশ কিছু টিউশনিও করতো। সেই সুবাদে লজিং বাড়ির লোকজন এবং টিউশনির অভিভাবকেরা করিমকে খুব ভালো জানতো। করিম টিউশনি ও লজিং বাড়িতে গিয়ে যাদেরকেই যুবকে কাজ করার কথা জানালো এবং যুবকের মুনাফার ব্যাপারে বিস্তারিত বললো তারা সবাই টাকা রাখার আগ্রহ প্রকাশ করলো। অনেকেই বললো, আমাদের টাকাটা ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাবে মুনাফা বিহীন অবস্থায় পড়ে আছে, যেহেতু যুবক প্রতিবছর ভালো মুনাফা দিচ্ছে, তাহলে যুবকে রাখাই ভালো। তারা করিমের সাথে যুবক অফিসে এসে সুমন ভাইয়ের কাছ থেকে আরোও বিস্তারিত জেনে বুঝে তারপর টাকা জমা রাখলো। দুই দিন পর করিম বাড়িতে গিয়ে তাদের হাতে লেনদেনের মূল ডকুমেন্ট বুঝিয়ে দিল। নিজ এলাকাতেও টিউশনির সুবাদে করিমের ভালো পরিচিতি ছিল। বাড়ির এবং এলাকার কিছু লোকও করিমের সাথে যুবকের অফিসে গিয়ে টাকা রাখলো, এদের কারো সাথে সুমন ভাইয়েরও পূর্বপরিচয় ছিল। আত্মীয়স্বজনদের মধ্যেও অনেকেই টাকা রাখলো।
আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, টিউশনি ও লজিং বাড়িসহ যাদেরকেই করিম যুবকে টাকা রাখার প্রস্তাব দিয়েছিল তারা সবাই করিমের সাথে যুবকের অফিসে গিয়ে সুমন ভাইয়ের কাছ থেকে আরোও বিস্তারিত জেনে বুঝে নিজ হাতে চুক্তিনামা দলিলে স্বাক্ষর করে টাকা জমা করেছিল। দুইদিন পর করিম যুবক অফিসের সমন্বয়কারী মির্জা মোর্শেদের স্বাক্ষরিত লেনদেনের মূল দলিল গ্রাহকদের হাতে পৌঁছে দিয়েছিল, এভাবে সবার সাথে করিমের সম্পর্ক আরোও দৃঢ় হলো।
দেখতে দেখতে বছর শেষ হয়ে এলো, সেই বছর সর্বোচ্চ গ্রাহক সংগ্রহে ভূমিকা রাখার জন্য করিমকে যুবক অফিস থেকে পুরুষ্কৃত করা হলো। সুমন ভাইয়ের পরামর্শে করিম তার কমিশনের পুরো টাকাটাই যুবকে রেখে দিল। এমনকি স্বল্প সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় করিম তার ৪৮ শতাংশ ফসলী জমি বন্ধক দিয়েও যুবকে টাকা রাখলো, যদিও করিমের বাবার প্রবল আপত্তি ছিল। (যুবক উদাও এবং করিমের যন্ত্রণাময় দিনগুলো পরের পর্বে প্রকাশ করা হবে)
বিষয়: বিবিধ
২৯১৪ বার পঠিত, ৩৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
২০০৬ সালে ডেসটিনি আমার পিছে অন্তত দু'মাস ঘুরেছে, অনেক বার ফেনী হেড অফিস পর্যন্তও নিয়েছিল, কিন্তু এই বান্দা সূদ সম্পর্কে কয়েকটি প্রশ্ন করে ওদের অনেক গলাবাজি ও গালাগালি শুনেছে।
আমি হাদিস উপস্থাপন করে প্রশ্ন করি, ওরা আমাকে যুক্তি দিয়ে বুঝায়, কামেল পাশ এক মুফতি সাব ও আমাকে ৯,৬ পনের টাইপের অনেক বুঝিয়েছেন। আলহামদু লিল্লাহ শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকলে পেরেছিলাম।
শেষ গালিটা ছিল, হুজুররা একটু কেড়া টাইপের হয়, এদেরকে কেউ বুঝাতে পারে না। বেহুদা ওর পেছনে সময় নষ্ট করলাম।
যুবকসহ ডেসটিনি উধাও হয়ে যাওয়ার পর ঐ সকল মুপ্তি সাবরাও উধাও হয়েছেন, প্রায় ৮-৯ বছর এলাকা ছাড়া হয়েছেন।
এ কাজে বেশি দেখা যেত ফেনী কলেজসহ হাইস্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীদের। কামেল মাদরাসার ছাত্রছাত্রীদেরও কিন্তু কম দেখা যায়নি। ঐ সকল নেতারা বেশিরভাগই আজো এলাকা ছাড়া।
আপনার বাকি গল্পের অপেক্ষায় রইলাম।
হাঁসতে হাঁসতে পেট ব্যথা করছেরে ভাই। কপাল খারাপ নয়, ভাগ্য খারাপ।
যাগগে ভাই, মানুষ জীবনে অনেক ভুল করে, ভুলে ভরা জীবন। যা হবার হয়েছে, এবার বাকি গল্পটি বলেন।
মুহতারাম আবু জান্নাত ভাই, আপনি হাসতেছেন!! ঠিক আছে আমিও কাঁশতেছি।
আমার এক মামাও ৬,০০০/- টাকা খুঁইয়েছে।
আমার এক সহপার্টিতো উনার আত্মীয় স্বজনের টাকাসহ প্রায় ৩ লক্ষ টাকা ট্রি প্লান্টেশনের নামে ঢেলেছে। সব হারিয়ে বেচারা এখনো আত্মীয়দেরকে চোখ দেখায় না।
আসলে ওদের টেকনিকটাই এমন যে একজন জেনারেল শিক্ষিতকে কিভাবে টার্গেট করবে, একজন আলেমকে কিভাবে টার্গেট করবে, তাদের পক্ষ থেকে কি কি প্রশ্ন আসতে পারে, কি কি জবাব দেওয়া যেতে পারে, এসব কিছু আগে থেকেই প্লান করা থাকে। তাই তো সব স্তরের মানুষকে ওরা ধোকা দিতে পারে।
ধন্যবাদ ভাই।
খুব ই করুন কাহিনী,
আমার এক খালা শ্বাশুরী ও ঠিক এই কাজটা ই করেছিল ডেসটিনির পাল্লায় পড়ে,
এখন জমি জামা বিক্রি করে অন্যদের ক্ষতি পুরোন দিচ্ছে যতটুকু পারছে
অনেক সময় বুঝে ও কিছু করার থাকে না,
আমার শ্বাশুরি ও উনার বোনের পাল্লায় পড়ে আড়াই লক্ষ্য টাকা রেখেছিল,
আমার স্বামী উনাকে নিষেধ করেছিল, তখন, মা ছেলের মাঝে সে কি ঝগড়া,
অতপর সবগুলো টাকা ই জলে গেলো
আপনার খালা শাশুড়ি জমি বিক্রি করে টাকা দিতে যাবে কেন? তিনি কি টাকা মেরে খেয়েছিলেন নাকি? কমিষনে চাকুরী করেছিলেন মাত্র!! লাভ হলে কি গ্রাহকেরা উনাকে লাভের অংশ দিত?
কত সময় কত অভাবে থেকেছি, চোখের সামনে দিয়ে গেল কত ডেসটিনি, ইলিংস, ডোলেন্সার, ভূয়া ফ্রিল্যান্সিং। কিন্তু আউব্বা জাউব্বা সাকাটাকে কেউ কখনো পটিয়ে নিতে পারলোনা।
করিমের প্রতি নো সিম্পেথি!
নাকি আদৌও টাকাটা পাবেনা তাও বুঝতেছিনা।
যুবক, ইউনিপে ডেসটিনি-হায় হায় কোম্পানী। মানুষের সর্বনাশের জন্য যাদের তৈরি করেছে সাম্রাজ্যবাদীরা..ধন্যবাদ
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন