রাসূল (সঃ) যখন যুদ্ধের সেনাপতি...(৫০তম পোস্ট)
লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ১৯ এপ্রিল, ২০১৬, ০২:১০:৫৬ দুপুর
আরবের দুইটি ঐতিহাসিক শক্তি পরষ্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। একটা শক্তি বাতিল ও অত্যাচার মূলক জাহেলি শাসন-ত্রাসন থেকে জনগনকে মুক্তি দিয়ে শান্তি, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী করতে চেয়েছিল। আর অপর শক্তিটি গতানুগতিক জাহেলি সমাজ ব্যবস্থাকে যেমন আছে তেমনিভাবে বহাল রাখার নিমিত্তে ইসলামী আন্দোলনকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল। উভয়ের আদর্শ ও উদ্দেশ্যে কোন রকমের স্থায়ী সমঝোতা মোটেও সম্ভব ছিলনা। তাই জাহেলিয়াতকে উৎখাত করে সমাজে সত্য ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করতে রাসূল(স) তথা রাহমাতুল্লিল আলামিন কে নিজ হাতে তলোয়ার ধারণ করতে হয়েছিল।পৃথিবীর ইতিহাসে মহান আদর্শিক সেনাপতি হিসেবে প্রিয় রাসূল(স) ছিলেন অতুলনীয়। আলেকজান্ডার ও নেপোলিয়ন এর মত এই সেনাপতির বিশ্বজয়ের কোন পরিকল্পনা ছিলনা, আবার আমেরিকা, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মত স্বাধীন দেশগুলোর স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়ে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার ও কোন উচ্চবিলাস ছিলনা। এই মহান সেনাপতির অধিনে পরিচালিত যুদ্ধগুলো ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মল, নিষ্কলঙ্ক ও ন্যায়নিষ্ঠ।
নবুয়্যতের ২৩ বছর জিন্দেগীতে মহান সেনাপতি হিসেবে প্রিয় রাসূল (স) সর্বমোট ৯০টি যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ২৭টি যুদ্ধে তিনি নিজেই সেনাপতি ছিলেন, এর মধ্যে ৯টি যুদ্ধে তিনি নিজ হাতে তলোয়ার ধারণ করেছিলেন, এই ২৭ টি যুদ্ধকে বলা হয় 'গজোয়া'। ৬৩টি যুদ্ধে তিনি নিজে উপস্থিত না থেকে প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন, এই ৬৩টি যুদ্ধকে বলা হয় 'ছরীয়াহ'।
যুদ্ধের ময়দানে প্রিয় রাসূল (স) কিছু বিশেষ কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। শত্রুর রক্ত ঝরানোর চেয়েও যুদ্ধের ময়দানে শত্রুকে অসহায় করেদেওয়া রাসূল(স) এর কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই মহান সেনাপতি শত্রুকে ধ্বংস বা হত্যা করার পরিবর্তে শত্রুকে বাধ্য করানোকেই বেশি পছন্দ করতেন। তিনি নিজের প্রতিরক্ষা শক্তিকে সংখ্যা, সংঘবদ্ধতা, পরিশ্রম, সামরিক প্রস্তুতি, চারিত্রিক ও নৈতিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সদা যন্ত্রের মত সক্রিয় রেখে শত্রুদের সদা ভীত সন্ত্রস্ত করে রেখেছিলেন। সমঝোতা ও চুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন গোত্রকে শত্রুর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিজের সাথে নিয়ে নিয়েছেন।
একজন সু-চিন্তিত বিচক্ষণ সেনাপতি হিসেবে বিভিন্ন সামরিক অভিযানে তিনি নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করে শত্রুদের বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন। কখনো অতর্কিত আক্রমণ(মক্কা বিজয়), কখনো অপ্রত্যাশিত পথ অবলম্বন করে গন্তব্যস্থান গোপন রেখে শত্রুদের বিভ্রান্তিকর অবস্থায় ফেলেছেন(বনু মোস্তালিকের যুদ্ধ), কখনো যুদ্ধের নীল নকশা আগে থেকেই নিজের পক্ষে করে রেখেছেন(বদরের যুদ্ধ), আবার কখনো এমন প্রতিরক্ষা কৌশল আগে থেকে করেছেন যার পূর্বাভিজ্ঞতা শত্রুর ছিলনা(খন্দক যুদ্ধ)।
মহান আল্লাহতালা সূরা আহযাবের ২১নং আয়াতে বলেন, "তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূল একটি উত্তম আদর্শ"। প্রিয় রাসূল(স) যুদ্ধক্ষেত্রেও শত্রুদের প্রতি উদার ছিলেন, ক্ষমার আদর্শ স্থাপন করেছিলেন। তিনি নারী, শিশু, বৃদ্ধা ও অসহায়ের উপর কোন প্রকার আক্রমণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছিলেন।
সুপ্রিয় পাঠক-পাঠিকাবৃন্দ, আজকের বিশ্বে আমরা দেখতে পাই, আল-কায়েদা, আই.এস.আই.এস, হুথী, হিজবুল্লাহ সহ অনেক গুলো দল ইসলামের নাম নিয়ে যুদ্ধ ও সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এদের মুখে দাঁড়ি দেখে ও মহান আল্লাহর নাম শুনে সাধারণ মুসলিমগন বিভ্রান্তির মধ্যে আছে। কেউ কেউ এদের তৎপরতা নিয়ে গর্ববোধ করে আবার কেউ এদেরকে ইসলাম ও মানবতার শত্রু মনে করে। তাই কোনো দল বা গোষ্ঠীকে সমর্থন করার আগে রাসূল(স) এর সামরিক তৎপরতা ও উদ্দেশ্যের সাথে তাদের সামরিক তৎপরতা ও উদ্দেশ্য মিলিয়ে দেখা অতিব জরুরী। প্রিয় রাসূল(স) হানাদার সমরনায়ক সুলভ ক্রোধ ও আক্রোশের পরিবর্তে একজন দীক্ষাগুরু সুলভ, মিশনারি সুলভ, গভীর হিতকামনা ও সমবেদনার প্রতিক ছিলেন। তিনি তরবারি দিয়ে নয়, সুমহান আদর্শ ও ভালবাসা দিয়ে ইসলামকে বিজয়ী করেছিলেন। জীবনের প্রত্যেকটি যুদ্ধে জয় লাভ করেও তিনি ও তাঁর সাহাবীরা কখনো অহংকারপূর্ণ আচরণ করেননি। যুদ্ধে পরাজিত হয়েও রাসূল(স) ও তাঁর সাহাবী(রা)দের আদর্শিক ব্যবহারে দলে দলে মানুষ ইসলামের পতাকাতলে সামিল হয়েছেন।
মহান আল্লাহতালা বলেন, "তিনি তাঁর রাসূলকে জীবন ব্যবস্থা ও সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন এই জন্য যে তিনি এই দ্বীনকে সমগ্র দ্বীনের উপর বিজয়ী করে দেবেন, যদিও মুশরিকেরা এটা মোটেও বরদাশত করেনা।" (আত-তাওবাঃ৩৩)
প্রিয় রাসূল(স) এর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত সমগ্র মানবজাতির জন্য শিক্ষণীয়। তাই আসুন বিশ্বব্যাপী শান্তি ফিরিয়ে আনতে প্রিয় রাসূল(স) এর জীবনী থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনকে গঠন করি, সাথে সাথে মহান আল্লাহর কাছ থেকে তৌফিক কামনা করি।
বিষয়: বিবিধ
২৩৪৫ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
لقد كان لكم في رسول الله اسوة حسنة নিশ্চয়ই রাসূল স. এর মাঝে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।
كل حزب بما لديهم فرحون প্রত্যেক দলই নিজেদের কর্মের উপর সন্তুষ্ঠ। মানে প্রত্যেকটি দলই কিন্তু নিজেদেরকে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হিসেবে দাবী করে আসছে। যদিও অন্যদের চোখে পদচ্যুত।
আল্লাহর হাতেই সত্যিকারের হেদায়েত। সত্য পথে থাকার জন্য বেশি বেশি দোয়া করা প্রয়োজন। اللهم ارنا الحق حقا وارزقنا اتباعا اللهم ارزقنا الباطل باطلا وارزقنا اجتنابا হে আল্লাহ আমাদেরকে সত্যকে সত্য হিসেবে দেখিয়ে অনুস্বরণ করা এবং বাতিলকে বাতিল হিসেবে দেখিয়ে বেচে থাকার তাওফীক দান কর।
জাযাকাল্লাহ খাইর
অনেক গুরুত্ব রাখে লিখাটি,
সবাই যদি এইভাবে বুঝতো
মন্তব্য করতে লগইন করুন