প্রথমবারের মত আবুধাবি স্থানীয় আরবীর আসল চেহারা দেখলাম।
লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ০৯ এপ্রিল, ২০১৬, ০৭:৫৭:৫৫ সন্ধ্যা
আবুধাবি শহর থেকে প্রায় ১৬ কিঃমি দূরে টিউশনি শেষ করে মোটরসাইকেলে উঠলাম। সালাম রোডে উঠে মোটর সাইকেল ড্রাইভ শুরু করলাম, স্পীডের কাঁটা তখন ১২৫ এ দণ্ডায়মান। হঠাৎ মোটরসাইকেলের স্ট্রাট অফ হয়ে গেল! রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে তেলের মিটারের দিকে তাকালাম, মিটারে ৫০% তেল শো করতেছে!! আবার স্ট্রাট দিলাম, ১.৫ কিঃমিটারের মত যাওয়ার পর আবারো স্ট্রাট অফ হয়ে গেল! এবার রীতিমতো ভয় পেয়ে গেলাম, কারণ রাস্তায় সবগুলো গাড়ি ১২০+ স্পীডে চলতেছে, না জানি কি হয়! তখন রাত ১১ঃ৩০, মোটরসাইকেলকে ঝাঁকুনি দিলাম, কিন্তু না পেট্রোলের কোন সাড়া শব্দও নাই! টাঙ্কি থেকে ইঞ্জিনে তেল সাপ্লাইয়ের পাইপটা টেনে খুললাম, কিন্তু একফোঁটা পেট্রোল ও দেখলাম না, বুঝতে পারলাম, তেলের টাঙ্কির মিটার নষ্ট হয়ে গেছে, তাই আমাকে ভুল মেসেজ দিচ্ছে। খুব বেশি ভয় পেয়ে গেলাম, কারণ এই রোড়ে কোন পেট্রোল পাম্প নেই।
পেট্রোল পাম্পের জন্য যেতে হবে মরুর রোড়ে। রাস্তার মাঝখানে আইল্যান্ড তাই রাস্তার অপর পাশে যাওয়াও সম্ভব না, সুতরাং সামনের ফাইন-আপেল ব্রিজ থেকে বামে যেতে হবে। কিন্তু ফাইন-আপেল ব্রিজ আরোও প্রায় ৫ কিঃমি সামনে! মহান আল্লাহর নাম নিয়ে ৩০০কেজি ওজনের BAJAJ 220CC মোটরসাইকেলকে টেনে টেনে হাটতে শুরু করলাম। রাত একটার দিকে ফাইন-আপেল ব্রিজের নিচে রাস্তা পার হওয়ার জন্য সিগনালে দাঁড়ালাম। আমার পুরো শরীর ঘামে ভিজে একাকার হয়ে গেছে। হঠাৎ পেছন থেকে মার্সেডিজ G63 মডেলের একটা গাড়ি পর পর দুইবার লাইট মারলো। পেছনে তাকাতেই ৩০/৩২ বছর বয়সের এক আরবি সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কি সমস্যা? আমি সালামের জবাব দিয়ে বললাম, মোটরসাইকেলের পেট্রোল শেষ। তখন সে আমাকে সিগনালের পাশে পার্কিংয়ে অপেক্ষা করতে বললো।
আমি পার্কিংয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম, আবার নানান সন্দেহ মনের মধ্যে উঁকিঝুঁকি করতে লাগলো। কারণ রাস্তায় পেট্রোল শেষ হয়ে গেলে পুলিশকে ফোন করতে হয়, তখন পুলিশ পেট্রোল নিয়ে এসে ২০০ দিরহাম জরিমানা করে। মাত্র ১০ দিরহামের পেট্রোলের জন্য ২০০ দিরহাম জরিমানা কেউ কি সহজে দিতে চায়! আমিও তার ব্যতিক্রম করিনি। তাই টেনশনের মধ্যে ছিলাম, আরবি লোকটা আবার সিআইডি নয় তো! জরিমানার কবলে পড়তে যাচ্ছিনাতো!!
ঠিক ৩০ মিনিট পর ৫ লিটার পেট্রোলের একটা নতুন কন্টিনার নিয়ে আরবি লোকটা আসলো। আমি বোবার মত তার সহাস্যমুখের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। তখন সে আমাকে চাবি দিতে বললো, আমি রোবটের মত তার দিকে মোটরসাইকেলের চাবিটা এগিয়ে দিলাম। এবার সে নিজেই চাবি দিয়ে টাঙ্কির মুখ খুলে ৫ লিটার পেট্রোল পুরাই ঢেলে দিলো। তারপর চাবিটা আমার হাতে দিয়ে যাওয়ার জন্য যখন সে তার অত্যাধুনিক গাড়ির দিকে অগ্রসর হচ্ছিল তখন আমার বোধোদয় হলো। আমি বললাম, আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়ার মত ভাষা আমার জানা নাই, শুধু এতটুকু বলবো 'জাযাকাল্লাহ খাইর' আর নামায শেষে আপনার জন্য দোয়া করবো। তখন সে সহাস্যে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, "বিপদে সাহায্য করাই তো মুসলিমের কাজ তাই না??"
বিষয়: বিবিধ
৩৯৩৪ বার পঠিত, ৩২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভাল মানুষ এখনো দুনিয়ায় আছে ।
অবশ্য মামুন ভাই, ভালো কাজ করেছেন। এখন উনার সেইভ করা দরকার। নতুন বিয়ে করছে। উনার হিসেবের সাথে আমার হিসেব কি আর মিলবে!
আসলে ই কিছু ঘটনা আমাদের স্তব্ধ করে দেয়, বিশেষ করে যখন তা অপ্রত্যাশিত কারো কাছ থেকে আসে,
আর আমরা যে মুসলিম তা যেন আমরা ভুলে ই গেছি, সবাই আত্বকেন্দ্রিক হয়ে গেছি, সেই জন্য ই ইসলামের প্রকৃত রুপ আমাদের বোবা বানিয়ে দেয়।
টাকা দিয়ে সব প্রতিদান দেয়া যায় না, কিন্তু তারপর ও আপনি কি উনাকে মুল্য দেননি, নাকি
লোকটার অত্যাধুনিক কোটিটাকা দামের গাড়ি আর উনার ব্যক্তিত্ব দেখে আমি টাকা দেওয়ার সাহস করিনি। কারণ উনার কাছে উপকারটাই মূখ্য ছিল। তাই উনার জন্য দোয়া করি, আর আমিও অন্যের বিপদে এগিয়ে আসার আপ্রাণ চেস্টা করবো ইনশাআল্লাহ। ধন্যবাদ আপনাকে।
অনেক ধন্যবাদ ঐ লোকটাকে
সত্যিই ভাই আমিরাতের আরবীরা অন্যান্য দেশের আরবদের তুলনায় অনেক ভালো, তবে যারা খারাপ, তারা কিন্তু অত্যান্ত খারাপ।
আসলে ভালো মানুষ ভালো মানুষদেরই কাজে আসে। ধন্যবাদ
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন