কামাল আতাতুর্কের চেয়েও বহুগুন কঠিনভাবে বাংলাদেশ থেকে ইসলাম ধর্মকে নির্মূল করা হবে।
লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ০৮ মার্চ, ২০১৬, ০২:৪২:৫৮ দুপুর
গত কয়েকদিন যাবত খবর আসছে, বাংলাদেশের সংবিধান থেকে নাকি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তুলে দেওয়া হতে পারে। এ কারণে ২৮ বছর আগে সুপ্রীম কোর্টে দায়েরকৃত একটি আবেদন পুনরায় তোলা হয়েছে এবং আগামী ২৭ মার্চ শুনানীর মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত ফয়সালা আসতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
অনেকেই হয়ত এখন বুঝতে পারছেন না, সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তুলে দেওয়া হলে কি পরিণতি ঘটতে পারে বাংলাদেশের। এ বিষয়টি বুঝতে হলে আপনাকে তুরষ্কের ইতিহাস সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। তুরষ্কে আগে ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা জারি ছিল। তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সেটা তুলে দেওয়া হয়। সে সময় কামাল আতাতুর্ক তুর্কী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে, এবং ইসলামের বদলে একটি সেক্যুলার সিস্টেম চালু করে। কামাল আতাতুর্ক ১৯২৮ সালের ১০ এপ্রিল তুর্কী সংবিধান হতে ধর্ম সংক্রান্ত সব কথাই বাদ দিয়ে দেয়। ফলে ইসলাম আর তুরস্কের রাষ্ট্রধর্ম থাকে না। প্রতিষ্ঠা হয় ধর্ম নিরপেক্ষ তুরষ্কের।
তুর্কী সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ‘ইসলাম’ তুলে দেয়ার পর কি কি ঘটেছিলো আসুন দেখি-
১) শিশুদের ইসলামী শিক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়।
২) ধর্ম মন্ত্রণালয়, মাদরাসা-মসজিদ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং হজ্জ-ওমরা যাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়।
৩) বড় বড় মসজিদগুলোতে নামায বন্ধ করে দিয়ে সেগুলোকে জাদুঘর হিসেবে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। তুরস্কের সর্ববৃহৎ মসজিদ ‘আয়া ছুফিয়া’কে রূপান্তরিত করেছিলেন সরকারি জাদুঘরে।
৪) নারীদের জন্য হিজাব পরিধান বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরকারি নির্দেশে তুর্কী পুলিশ রাস্তায় বের হওয়া মুসলিম মহিলাদের ওড়না কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলত।
৫) আরবী অক্ষরের ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়। আরবীতে কুরআন পড়া, নামাজ পড়া ও আজান দেওয়া নিষিদ্ধ হয়।
৬) তুর্কী ভাষা আরবী হরফে না লিখে ল্যাটিন হরফে লিখতে হতো।
৭) সাপ্তাহিক ছুটি হিসেবে রবিবারকে নির্ধারণ করা হয়।
৮) তুরস্কবাসীকে ভিন্ন ধরণের পোষাক পরতে বাধ্য করা হয়।
৮) মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদকে বর্জনীয় ঘোষনা করা হয়।
৯) তুরস্কের অধীন আজারবাইজানকে রাশিয়ার কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
১০) বক্তৃতা এবং বিবৃতিতে নিয়মিত ইসলাম ও ইসলামী পরিভাষাসমূহ নিয়ে মিথ্যাচার ও কুৎসা রটনা করে সেগুলো বর্জনের প্রতি সবাইকে আদেশ-নিষেধ করা হয়।
১১) সরকারী লোকদের জামাতে নামায পড়া নিষিদ্ধ হয়।
১২) ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী সালাম দেওয়াও নিষিদ্ধ করা হয়।এর পরিবর্তে সুপ্রভাত (Good Morning) বিদায় (Good Bye) ও হ্যান্ডশেক রেওয়াজ প্রবর্তিত হয়।
১৩) ইমাম-মুফতীদের পাগড়ি ও জুব্বা পরা নিষিদ্ধ করা হয়।
১৪) হিজরী সন উঠিয়ে দিয়ে ইংরেজী সন চালু করা হয়।
১৬) আরবী ভাষায় নাম রাখা নিষিদ্ধ হয়। এর বদলে তুর্কী ভাষায় বাধ্যতামূলক নাম রাখতে হয়।
১৭) আলেমদের প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙ্গে দেয়া হয় এবং আলেমদেরকে প্রজতন্ত্রে শত্রু হিসিবে চিহ্নিত করা হয়। কোন আলেম তার বিরুদ্ধাচরণ করলে তাকে সাথে হত্যা করা হয়। এছাড়া ওয়াকফ সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে আলেমদের অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত করা হয়।
এখানে লক্ষণীয় যে, এ ঘটনাগুলো হচ্ছে আজ থেকে প্রায় ৯০ বছর আগে এবং তা করা হয়েছিলো উছমানিয় খেলাফত বন্ধ করার পর। বলাবাহুল্য সে সময় মানুষের মধ্যে জোর ইসলামী চেতনা দৃঢ় থাকার পরও এতটা এগ্রেসিভ হতে পেরেছিলো কামাল আতার্তুক। কিন্তু এখন তো বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় চেতনা অনেকটাই দুর্বল। তার উপর কামাল আতার্তুক সে সময় যা যা করেছে তার অনেকগুলোই ইতিমধ্যে বাংলাদেশে জারি করা হয়েছে বা চেষ্টা চলছে। তবে শুধু সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম দেখে পুরোপুরি আইনত জারি করা যাচ্ছে না। কিন্তু সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তুলে দেওয়ার সাথে সাথে কামাল আতাতুর্ক কেন, তার থেকে বহুগুন কঠিনভাবে বাংলাদেশ থেকে নির্মূল করা হবে ইসলাম ধর্মকে, এটা বলা যায় নিশ্চিত।
আমার মনে হয়, এ ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষের সতর্ক হওয়া জরুরী । কারণ আর মাত্র কয়েক দিন পরেই সুপ্রীম কোর্টে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘ইসলাম ধর্ম’ তুলে দেওয়া সংক্রান্ত চূড়ান্ত শুনানী। আর একবার যদি আইন জারি হয়ে যায়, তবে তা পরিবর্তন করা সহজ নয়।
সত্যিই আজ বাংলাদেশের আকাশের ঘনকালো মেঘের ঘনঘটা, মনে হচ্ছে বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্য শিঘ্রই বড় কোন দুর্যোগ আসছে, যদিও ইসলামী দলগুলো সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করে আছে, একে অপরের দোষ খোজাখুজিতে ব্যস্ত রয়েছে, বাংলাদেশের ইসলামকে টিকিয়ে রাখার পরিবর্তে তারা আতাতে ব্যস্ত!
ইতোমধ্যে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামিক কবিতা, নবী-রাসূলদের জিবনী, প্রবন্ধ ও ইসলামিক রেনেসার কবি-লেখকদের পরিবর্তে নাস্তিক্যবাদীতা ও ইসলাম বিরোধী কবি-লেখকদের লিখা গুলো রন্ধে রন্ধে ডুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় ও আদর্শিক শিক্ষার পরিবর্তে "শারীরিক শিক্ষা" নামক যৌন শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, এতে অভিভাবকদের কোন মাথা-ব্যথা নাই; শারীরিক শিক্ষার থিওরিক্যাল পরীক্ষার অভিভাবকগন ভাল নাম্বার কামনা করেন, কিন্তু পরিমল বাবুরা যখন প্যাকটিক্যাল ক্লাস নেন তখন অভিভাবকদের টনক নড়ে!! যত্তসব ভন্ডামী!!!
ইসলামিক দলগুলোর উপযুক্ত সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ‘ইসলাম’ থাকবে কিনা, দেখা যাক কি হয়।
উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের জন্য নিচের লিংক গুলোতে ভিজিট করতে পারেন।
প্রয়োজনীয় সূত্র:
১) বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম আর নাও থাকতে পারে http://goo.gl/73U1Fs
২) ২৮ বছর পর শুনানিতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম চ্যালেঞ্জের মামলা http://goo.gl/ywNpXf
৩) রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের চ্যালেঞ্জ মামলার শুনানি ২৭ মার্চ http://goo.gl/2SR0Ol
৪) ইসলামবিদ্বেষ ও ইসলামবিরোধীতার অপর নাম : কামাল আতাতুর্ক: http://goo.gl/TE67rf
৫) শুনুন কামালের আমলের তুর্কি ভাষার আযান: https://youtu.be/OUIgLy1L3x4
কালেক্টড এন্ড এডিটেড।
বিষয়: বিবিধ
৪৮৪৭ বার পঠিত, ৩৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হলেই কি আর না হলেই, তবে সংবিধান থেকে ইসলাম উঠিয়ে দিলে সুদূরপ্রসারী একটা খারাপ ফলতো বয়ে আনবেই।
আমাদের আজকের যা অবস্থা, আলেম সমাজ বলেন আর সাধারণ মানুষ, সবাই প্রস্তুত আছি সরকারের এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে।
ধন্যবাদ আপনাকে
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
আফরা আপু, বাংলাদেশের নামধারী ৯০% মুসলিম ও আলেম সমাজ এখনো গভীর ঘুমে নিমগ্ন, কিন্তু যখন তাদের ঘুম ভাঙ্গবে তখন আর করার কিছুই থাকবেনা। এই জাতীর কপালে কি আছে আল্লাহই ভাল জানেন। ধন্যবাদ আপনাকে
কপালে আর কি আছে বঙ্গোপোসাগরে ডুবানি ছাড়া ।
অত্যন্ত মূল্যবান সময়োপযোগী একটি লিখা শেয়ার করার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
রাম রাজত্ব কায়েম হয়ে গেলে তখন হয়তো এদের বোধোদয় হবে। ধন্যবাদ আপনাকে
ভাবতেও ভয়ংকর লাগে!
শুধু মাত্র বল শক্তি নয় বরং বুদ্ধুবৃদ্ধিক শক্তি দিয়ে জালিমদের সাথে লড়তে হবে!
শুকরিয়া!
রাষ্ট ধর্ম ইসলাম থাকলে ই বা কি লাভ হচ্ছে??
এ দেশে কুরবানির পিক দিলে , হাউকাউ হয়
এবং তা রিমুভ করতে হয় …
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে সঠিক টা বুঝার তাওফিক দান করুন।
আমীন
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
সুন্দর কমেন্টের জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
জলজ্যান্ত একটি উদাহরণ দিচ্ছিঃ
সেদিন বাসার সন্নিকটে ওয়াজ হচ্ছিল যার প্রধান অতিথি ছিলেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। বিশেষ অতিথির তালিকায় ছিলেন ডিএমপি'র ডেপুটি কমিশনার পদবীর একজন পুলিশকর্তা। পুলিশকর্তা তার বক্তৃতায় বললো, "আমি ক্বওমী মাদ্রাসাকে ভালোবাসি কারণ এখানে মওদূদীবাদের বিরুদ্ধে শিক্ষা দেয়া হয়।"
ধন্যবাদ আপনাকে
মন্তব্য করতে লগইন করুন