বিয়ের পর স্বামীর নামের সাথে স্ত্রীর নামকরণ জায়েজ কিনা?
লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০২:২৬:৩৮ দুপুর
মুসলিম নারীদের অনেকেই বিয়ের পর নিজের নাম পরিবর্তন করে স্বামীর নামকে নিজের নামের অংশ বানিয়ে ফেলে। হাল জামানায় এটি একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। যেমন: একজন মেয়ের বাবার দেয়া নাম ফাতেমা। রফিক নামে একজনের সাথে তার বিয়ের পর তার নাম হয়ে যায় মিসেস রফিক বা ফাতেমা রফিক। ইসলামী শরীআর দৃষ্টিতে এটা ঠিক নয়। মুসলিম নারীদের উচিত বিয়ের পরও তার পৈতৃক নাম ঠিক রাখা। কারণ এটা তার একেবারেই নিজস্ব, এখানে স্বামীর কোন শেয়ার নেই। নামই তার বংশ পরিচয় বহন করে।
আমরা বিদেশি সংস্কৃতি বিশেষ করে পশ্চিমাবিশ্বকে অনুসরণ করতে গিয়ে এমন অনেক বিষয় অনুকরণ করছি যেগুলোর বিষয়ে ইসলামী শরীআর কোন ভিত্তি নেই। বরং সেগুলো একান্তই তাদের চর্চিত বিষয়। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির ভিত্তি হলো পবিত্র কুরআন এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (স) -এর বাণী, কর্ম ও অনুমোদন। অনুরূপভাবে সাহাবী (রা) ও তাবেয়ীদের কথা, কাজ ও মৌনসম্মতি যাকে শরীআর পরিভাষায় সুন্নাহ বলা হয়। ইসলামী শরীআর এ দুটি অন্যতম প্রধান উেসর কোথাও এর অনুমোদন বা সমর্থন পাওয়া যায় না। মহানবী (স) বা সাহাবীগণের (রা) জীবনাচারেও এর কোন নজির নেই। যদি স্বামীর নামে পরিচিত হওয়া বা স্বামীর নাম নিজের নামের সাথে যুক্ত করা আভিজাত্য বা মর্যাদার ব্যাপার হতো, তাহলে আমাদের প্রিয়নবী (স) -এর স্ত্রীগণ বা উম্মাহাতুল মুমিনীনগণও তাঁদের নামের সাথে হযরত (স) এর নাম যুক্ত করতেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো তাঁদের কেউই তা করেননি। বরং প্রত্যেকে নিজেদের পিতার নামেই পরিচিত ছিলেন যদিও তাঁদের কারো কারো কারো পিতা কাফির ছিল। সুতরাং আমরা আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে এমন কোন বিষয় অবলম্বন করতে পারি না যার অনুমোদন উত্তম যুগে ছিল না। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা) বিয়ের পর তাঁর নাম পরিবর্তন করে আয়েশা মুহাম্মদ রাখেননি। বরং তিনি তাঁর পিতা আবুবকর সিদ্দীকের (রা) পরিচয় অক্ষুণ্ন রেখেছেন।
বাবা কর্তৃক প্রদত্ত নাম ঠিক রাখার জন্য মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ ঐ নামটি ব্যক্তির বংশের পরিচায়ক। কুরআন বলছে: তোমরা তাদেরকে তাদের বাবার নামে ডাক। (আল-কুরআন, ৩৩:৫) এই আয়াতটি পালকপুত্রদেরকে তাদের প্রকৃত পিতার নামে ডাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেননা যারা বর্তমানে তাদের লালন-পালন করছেন বা ভরণ-পোষণ যোগান দিচ্ছেন, প্রকৃতপক্ষে তারা তাদের পিতা নন। বরং যারা তাদেরকে জন্ম দিয়েছেন তারাই তাদের আসল পিতা। অনুরূপভাবে মেয়েরাও তাদের পিতার পরিচয়ে পরিচিত হবেন স্বামীর পরিচয়ে নন। এখানে পালক পুত্রকে প্রকৃত পিতার নামে ডাকার নির্দেশ প্রমাণ করে যে, স্ত্রীদেরকেও তাদের পিতার নামে ডাকতে হবে।
হযরত সাঈদ ইবনে যুবায়ের হযরত ইবনে আব্বাস (রা)কে বলতে শুনেছেন যে, রসূল (স) বলেছেন: যে কেউ নিজেকে বাবার নাম ছাড়া অন্য নামে ডাকবে তার উপর আল্লাহ, ফিরিশতা ও সমগ্র মানুষের লানত বর্ষিত হবে। (মুসনাদে আহমাদ) ইমাম বুখারীও (র) এই হাদীসটি হযরত সাদ (রা) সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
হযরত সাদ ও হযরত আবু বাকরা (রা) হতে বর্ণিত, তাঁরা প্রত্যেকে বলেছেন: আমার দু কান শুনেছে এবং আমার অন্তর মুহাম্মদ (স) এর এ কথা সংরক্ষণ করেছে যে, মহানবী (স) বলেছেন: যে ব্যক্তি জেনেশুনে নিজেকে নিজের পিতা ছাড়া অন্যের সাথে সংযুক্ত করে তার জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যাবে। (ইবনে মাজাহ) আবার হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (স) বলেছেন: যে কেউ নিজের বাবা ব্যতীত অন্যের পরিচয়ে পরিচয় দেয় সে জান্নাতের গন্ধও পাবে না, যদিও জান্নাতের সুঘ্রাণ সত্তর বছর হাঁটার রাস্তার দূরত্ব থেকেও পাওয়া যাবে। (মুসনাদে আহমাদ)
এমন অনেক হাদীস রয়েছে যেখানে মহানবী (স) নারীদেরকে তাদের পিতার নামে ডেকেছেন। যখন পবিত্র কুরআনের আয়াত আপনি আপনার নিকটতম আত্মীয়দের সতর্ক করে দিন (আল-কুরআন, ২৬:২১৪) নাজিল হয়, তখন মহানবী (স) তাঁর আত্মীয়দের প্রত্যেককে ডেকে ডেকে বলেছিলেন: হে অমুকের ছেলে অমুক! আমি পরকালে তোমার কোন উপকার করতে পারব না । হে অমুকের মেয়ে অমুক! আমি কিয়ামতের দিন তোমার কোন কাজে আসব না। (আল-কাশফুল মুবদি) কিয়ামতের মাঠেও প্রত্যেককে তার বাবার নাম ধরে ডাকা হবে । হাদীসের কিতাবসমূহে এ সংক্রান্ত অনেক হাদীস রয়েছে।
দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর (রা)-এর শাসনামলের একটি বিখ্যাত ঘটনা হাদীসের বর্ণনায় এসেছে। তা হলো তিনি একরাতে যখন প্রজাদের খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য বের হলেন তখন একজন মহিলার বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যিনি স্বামীর বিরহে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছিলেন। তিনি পরদিন সকালে মহিলাটির খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য লোক পাঠালেন । তাঁকে বলা হলো এ মহিলা হলেন অমুকের মেয়ে অমুক। তাঁর স্বামী আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে রয়েছেন। (সুনানে সাঈদ ইবনে মানসুর) এখানে প্রণিধানযোগ্য বিষয় হলো মহিলাটি বিবাহিত ছিলেন। তাঁর পরিচয়ের ক্ষেত্রে বলা হলো অমুকের মেয়ে অমুক। একথা বলা হলো না যে, অমুকের স্ত্রী অমুক।
আরো যে সকল কারণে নারীদের বাবার নামে পরিচিত হওয়া উচিত তা হলো: ১) স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে কোন রক্ত সম্পর্ক থাকে না কিন্তু বাবা-মেয়ের রক্ত সম্পর্ক চিরদিনের। ২) স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সাথে মনোমালিন্য হলে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটতে পারে তখন এই নাম থাকে না। ৩) স্বামী মারা গেলে স্ত্রী অন্য পুরুষকে বিয়ে করতে পারে, তখন এই নামের কী দশা হবে তা সহজেই অনুমেয়। ৪) স্বামী তো বিয়ের পর নিজের নাম পরিবর্তন করে না, তাহলে নারী কেন করবে? এটা কি নারী অধিকারের লংঘন নয়?
আলোচ্য প্রবন্ধে নতুন একটি বিষয়কে অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিসরে আলোচনা করা হলো। মুসলিম সমাজের উচিত ইসলামকে পুরোপুরি অনুসরণ করা। আর যারা পরিপূর্ণ ইসলাম মানতে চান তাদের উচিত এসব বিষয়ে সজাগ ও সতর্ক থাকা। যাতে করে কোন অজুহাতেই আমরা সত্য ও সঠিক পথ সিরাতুল মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুত না হই।
ড. ইউসুফ ইবনে হোছাইন
বিষয়: বিবিধ
৬৩৫১ বার পঠিত, ৩৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Click this link
জাযাকাল্লাহ খাইর
এই বিষয়ে সবাই আধুনিকতার দোহাই দেন। এতে বোধহয় নারি অধিকার এর কিছু হয়না!!
তবে কাগজে কলমে স্বামীর নাম স্ত্রীর নামের সাথে লিখা আমি পছন্দ করি না ।
মানসিকতা একটু বদলানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।
তার পরও আপনার মানসিকতা খুঁজে না পেলে আমার কি করার আছে???
মেয়েদের বিয়ের পর নিজের নামের সাথে স্বামীর নাম অন্তর্ভুক্তি শরীয়ত সম্মত নয় বলে আপনার কথার সাথে একমত হতে পারলাম না!
দলিল হিসেবে আপনি কোরান-হাদিস থেকে যে সব উদৃতি পেশ করেছেন তা এই কাজ কে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা বুঝায়?
'শরীয়ত সম্মত নয়' এর অর্থ জায়েজ নয়,তাই নয় কি? এটা করা কি নাজায়েজ?
আমাদের সমস্যা হল- ইসলাম কে নিজেদের মনমত ব্যাখ্যা করে কঠিন ভাবে সমাজে উপস্হাপন করে মানুষ কে ভীতসন্ত্রস্ত করে ফেলি!
কেউ তো আর সওয়াবের নিয়তে এমন করে না!তাহলে এ বিষয়টাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে লাভ কী?
ব্যক্তির উপরই ছেড়ে দেয়া উচিৎ নয় কি???
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
স্ত্রীরা কিন্তু সওয়াব বা কল্যাণের নিয়তে এমন করে না! স্বীয় ভালবাসা প্রকাশের নিমিত্বে এমন করে হয়ত! যদি এতে ব্যক্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে,সেটা ভিন্ন ব্যাপার!
তাই বলে 'শরীয়ত অনুমিত নয়' বলে ঘোষণা দেয়া ঠিক নয়!
আল্লাহর রাসুল সা: ও সাহাবায়ে কিরাম রা: থেকে অনেক অনেক কাজ-বিষয় পাওয়া যায় না,যা বর্তমান সময়ের প্রয়োজনেই আমরা করতে বাধ্য!
আল্লাহ আমাদের সবাই কে কবুল করুন-আমিন!
.
খাওয়া-দাওয়া চলছে, একজন চট করে বললো:
-এই রে! আসল কাজই হয় নি!
-কী কাজ?
-এ ভাইয়ের তো খতনা করানো হয়নি!
-হাঁ হাঁ, তাই তো!
নতুন ভাইটি বললো:
-খতনা কী জিনিস রে ভাই?
-এই ধরো তোমার ‘ইয়ে’-র আগা থেকে সামান্য কেটে ফেলা হবে!
-কীহ! এটা করতেই হবে? না করলে হয় না?
-না, এটা হলো মুসলিম অমুসলিমের পার্থক্যরেখা!
-না ভাইয়েরা! আমাকে মাফ করো। যে ধর্ম গ্রহণ করতে না করতেই আামার ‘ইয়ে’ কেটে ফেলতে চাইছে, না জানি ভবিষ্যতে আরও কত কী কাটবে! আমি তবে আগের ধর্মে ফিরে যাই!
-সব্বোনাশ! তাহলে তো তুমি মুরতাদ! তোমাকে তখন হত্যা করা ওয়াজিব হয়ে যাবে!
-ওরে বাবারে! কী ধর্মের পাল্লায় পড়লাম রে! গ্রহণ করলে ‘ইয়ে’ কেটে ফেলে, ছেড়ে দিলে গলা কেটে ফেলে!
একথা বলেই লোকটা বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেল।
.
.
.
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এর একটা উক্তি আছে। তার সারাংশ বোধ হয় এমন:
-তোমরা যদি, মানুষের জ্ঞান ও বুঝশক্তির বাইরে কোন কথা বলো সেখানে ফিতনা সৃষ্টি হবেই হবে।
.
কিছু অজ্ঞ লোকের কারণেই আজ ইসলাম অন্যদের সামনে ভিন্নরূপে উপস্থাপিত। ইসলাম সম্পর্কে ভালভাবে না জেনে, মানুষকে দ্বীনের কথা বলতে গেলেই বিপদ। ফিতনা।
বংশ পরিচয় বাবার দিক থেকেই হয় তাই নামের সাথে বাবার নাম যোগ করাই উচিত। ভাল লাগল..।
নিষেধাজ্ঞা এবং নিজে আমল না করা দু’টো কিন্তু ভিন্ন জিনিস। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো উড়ো জাহাজে আরোহণ করেননি। কিন্তু নিষেধ ও করেন নি যে,”একসময় উড়ো জাহাজ আবিস্কৃত হবে, তাতে কিন্তু তোমরা আরোহন করবে না” যেসব বিষয়ে সরাসরি ‘না’ নেই তা গ্রহণ এবং বর্জনের এখতিয়ার রয়েছে। মানুষ সাধারণত যেটি অধিক লাভজনক সেটিই গ্রহণ করে।
কোন মহিলা নিজেকে তার স্বামীর নামে পরিচিত হতে চাইলে তাকে সে সুযোগ দেয়া যেতে পারে। যেমন আপনার স্ত্রী যদি ’মিসেম মামুন’ হিসেবে পরিচিত হতে চান তাকে বাধা না দেয়াই ভালো। সেটা শুধুমাত্র পরিচিতির জন্য। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন