আমিতো ভুল-ত্রুটির উর্দ্ধে নই তাহলে অন্যের ভুলের সমালোচনা কিভাবে করবো??
লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ২২ আগস্ট, ২০১৫, ০৫:৩৫:৫৩ বিকাল
সৃষ্টির শুরু থেকে এই পর্যন্ত একমুহুর্ত্বের জন্যও শয়তানের তৎপরতা থামেনি আর কিয়ামত পর্যন্ত থামবেওনা। কারন সে মহান আল্লাহ তায়ালাকে দেওয়া চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নে সদা তৎপর। সে আদম সন্তানদের পথভ্রষ্ট করার জন্য চারদিক থেকেই আক্রমনে আসবে, বিশেষ করে ইসলামি আন্দোলনের কর্মীরাই তার প্রথম টার্গেট। শুভাকাঙ্ক্ষীর ভেসে ফেতনা ফাসাদ, অহংকার ও দুনিয়ার লোভনীয় অফারের গিপ্ট বক্স নিয়েই অভিশপ্ত শয়তান হাজির হয়। দূর্বল ঈমানের ইসলামি আন্দোলনের কর্মীরা সহজে শয়তানের বিষাক্ত ছোবলে আক্রান্ত হয়ে যায়। তখন ইসলামি আন্দোলনের কর্মীরা তার আসল কাজ ভুলে গিয়ে ক্রমান্বয়ে শয়তানের অনুসারী হয়ে যায়। দ্বীনি ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ক্রমান্বয়ে দূর হয়ে যায়। এইভাবেই শয়তান তার চ্যালেঞ্জের পরিপূর্ণ রুপ দিতে সক্ষম হয়।'
শরীলে ক্যান্সার রোগ দানা বাধলে প্রথমে আত্মউপলব্দি হয়, তারপর রোগী নিজেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে। রোগী যদি ডাক্তারের কাছে যেতে অক্ষম হয়, তাহলে সে অন্যদের সহযোগীতা কামনা করে, তখন তাকে সু-চিকিৎসা করানো তার নিকটস্থদের দায়িত্ব হয়ে যায়। ঠিক তদরুপ শয়তান যখন আদম সন্তান তথা ইসলামি আন্দোলনের কর্মীদের ঈমানে ক্যান্সার রোগের ভাইরাস প্রবেশ করিয়ে দেয় তখন সাথে সাথে তার আত্মউপলব্দি হয়। এই মারাত্বক রোগ নিয়ে বসে না থেকে তার উচিত সঙ্গে সঙ্গে আত্মবিচারে নিমগ্ন হওয়া।
মানুষ ভুলত্রুটির ঊর্ধে নয়, আমার কাছে যেমন ভাল গুন আছে তেমনি খারাপ গুন থাকাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমি যদি অসংখ্য খারাপ গুন নিজের মাঝে লালন করতে পারি তাহলে অন্যের দোষত্রুটি ক্ষমা করতে পারবোনা কেন? আমি নিজে তো ভুলত্রুটির ঊর্ধে নই, তাহলে অন্যের কাছ থেকে কেন শুধু ভালগুনগুলো আশা করবো? কেউ যদি আমার ভুল ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দেন, তাহলে আমার উচিত হবে ভুলের উপর প্রতিষ্ঠিত না থেকে আন্তরিকভাবে ভুল সংশোধনে উদ্যোগী হওয়া। কারণ ইসলামি আন্দোলনের কর্মীরা একে অপরের আয়না স্বরুপ, মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই সবাই কাজ করে। আর কেউ যদি নিজেকে ভুলের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখে এবং নিজের সব কাজকে সঠিক মনে করে তাহলে সে নিজেই অভিশপ্ত শয়তানকে আসন পেতে দিল। এটা যেমন তার নিজের জন্য ক্ষতিকর তেমনি বৃহত্তর সংগঠনের জন্যও ক্ষতিকর।
ইসলামি আন্দোলনের পথ কখনো ফুল বিচানো হয় না, এটা সব সময় কাঁটাযুক্ত থাকে। এই পথে কাজ করতে গেলে কখনো বিরোধীদের কাছ থেকে কটু কথা শুনতে হয়, আবার কখনো নিজের সহযোগিদের সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। তাই এই পথের যাত্রীদের অবিরত ধৈর্য ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে হবে। হাজারো বাধা-বিপত্তি সহ্য করে এগিয়ে যেতে হবে, মানবিক দূর্বলতা গুলোকে চিহ্নিত করে আত্মবিচারের মাধ্যমে নিজেকে সংশোধন করতে হবে।
মহান আল্লাহতায়ালা সুরা হুজরাতের ১২নং আয়াতে বলেন, "হে ঈমানদারগন বেশি ধারনা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো, কেননা কোন কোন ধারনা ও অনুমান গুনাহের শামিল।"
যেহেতু ইসলামি আন্দোলনের কর্মীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক, তাই অযথা কাউকে নিচক ধারনা ও অনুমান না করে দরদভরা মন নিয়ে সংশোধনে এগিয়ে আসতে হবে।
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (স) বলেছেন, মুসলমান মুসলমানের ভাই, সে তাকে পরিত্যাগ করেনা, তার সাথে মিথ্যা বলেনা এবং তার প্রতি জুলুম করেনা। তোমরা প্রত্যেকেই তার ভাইয়ের আয়না, তার কোন ত্রুটি দেখলে সে যেন দুর করে দেয়।(তিরমিযী)
ইসলামি আন্দোলনের কর্মীদের জন্য প্রিয় নবীর এই হাদিসটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই হাদিসটা যদি কেউ পুরোপুরিভাবে বাস্তব জীবনে আমল করে তাহলে তার মনের মধ্যে কারো জন্য শত্রুতা অবশিষ্ট থাকবেনা সেখানে পরম বন্ধুত্ব্ব কাজ করবে।
মহান আল্লাহতায়ালা সুরা হামীম সেজদার ৩৪নং আয়াতে বলেন "সৎকাজ আর অসৎ কাজ এক নয়, তোমরা অসৎকাজের মোকাবেলা সৎকাজ দিয়ে করো, তাহলে দেখতে পাবে তোমাদের চরম শত্রুও পরম বন্ধু হয়ে গেছে।"
মহান আল্লাহতালার এই নির্দেশ যদি আমরা পালন করি, তাহলে মনের মধ্যে কোন প্রকার দূর্বলতা, একঘেয়েমিতা ও সংকীর্ণমনতা কাজ করতে পারেনা।
অন্যের দোষ ত্রুটির সমালোচনা করার আগে আমাদেরকে নিজের প্রতি বার বার তাকানো উচিত, নিজের দোষগুলোকে ক্ষমারযোগ্য মনে করলে অন্যের দোষগুলোকেও ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা উচিত। নিজের অসুবিধা গুলোকে অসুবিধা মনে করলে অন্যের অসুবিধা গুলোকে নিচক বাহানা ধারনা করা উচিত নয়। শুধুমাত্র নিজের মতামত ও পছন্দ-অপছন্দ গুলো অন্যের উপর চাপিয়ে না দিয়ে অন্যের মতামত ও পছন্দ-অপছন্দ গুলোকেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যারা মহান আল্লাহর মননীত দ্বীনকে আল্লাহর জমিনে বাস্তবায়ন করার জন্য নিজের ব্যক্তিগত সকল সুখ-শান্তিকে কোরবানি করে দিয়েছেন, সারাজীবন ইসলামের জন্য মানবতার জন্য কাজ করে গেছেন, সর্বোপরি নিজের জিবন পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দিয়েছেন ঐ সমস্ত আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের দিকে বেশি বেশি তাকানো উচিত, তাহলে নিজের দৈন্যতা ও অসারতা প্রকাশ পাবে, পাওয়া-না পাওয়ার কোন হতাশা থাকবেনা। সর্বোপরি আত্মবিচারের পাশাপাশি মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা চাইতে হবে। তাহলে আমরা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েম করতে পারবো, ব্যক্তিজীবন, সামাজিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সুখে শান্তিতে থাকতে পারবো।
হে আল্লাহ, আমি সহ সবাইকে কোরান-হাদিসের আলোকে বলা কথাগুলো আমল করার তৌফিক দান করুন, পরিপূর্ণভাবে ইসলামকে ব্যক্তিজীবনে মেনে চলার এবং পরিপূর্ণ মুসলিম হয়ে পূর্ণ ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার তোফিক দান করুন। ছুম্মা আমিন।
বিষয়: বিবিধ
২১৯৩ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শয়তানের কর্ম কি তা বুঝতে পরাটাই একটা বড় সফলতা, বুঝতে পারলে আপনি বা আমি নিজেকে শয়তানের পথ থেকে দূরে থাকতে পারব।
ধন্যবাদ চিন্তা তৈরি করার মত লেখা উপহার দেবার জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন