মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই চাইনিজ মেয়েটির প্রতি মানবিক হলাম।
লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ১৩ আগস্ট, ২০১৫, ০৫:৩৮:২৪ বিকাল
মোটরসাইকেল এক্সিডেন্টের ১১ দিন পরঃ
সকালে অফিসে গিয়ে নিজ হাতে একটা কপি বানিয়ে মাত্র আমার সিটে গিয়ে বসলাম। কপির কাপে চুমুক দিতে যাবো ঠিক এই সময়েই একটা লোকাল নাম্বার থেকে আমার মোবাইলে কল আসলো। রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে সালাম দিল, লম্বা করেই সালামের জবাব দিলাম, তারপর উনি উনার পরিচয় দিলেন, আমি এখন কোথায় আছি জিজ্ঞেস করলেন তারপর আমাকে ইমারজেন্সি পুলিশ স্টেশনে যেতে বললেন। আমি ৪৫ মিনিট পর যাবো বলে ফোন রাখলাম। ম্যানেজার তখনো অফিসে আসেনি, তাই ম্যানেজারকে ফোন করে জানালাম। ম্যানেজার পুলিশ ষ্টেশনে যাওয়ার জন্য বললেন এবং কোন প্রকার টেনশন করতে নিষেধ করলেন, তবুও টেনশন মুক্ত হতে পারলাম না।
পুলিশ ষ্টেশনের ড্রয়িংরুমে সেই চায়না মেয়েটি অপেক্ষারত ছিল, আমাকে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো, আমার সাথে কথা বলতে চাইলে আমি বললাম আগে আমাকে পুলিশ অফিসারের সাথে দেখা করতে হবে, উনি আমাকে ইমারজেন্সি আসতে বলেছেন। আমার পেছনে পেছনে চায়না মেয়েটিও পুলিশ অফিসারের কক্ষে প্রবেশ করলো। পুলিশ অফিসারকে সালাম দিলাম, উনি সালামের জবাব দিয়ে আমার সাথে হ্যান্ডসেক করলেন এবং চেয়ারে বসতে বললেন। আমার পেছনে চায়না মেয়েটি দাঁডিয়ে ছিল, যদিও আমি খেয়াল করিনি তথাপি পুলিশ অফিসার মেয়েটিকে পাশের চেয়ারে বসতে ইঙ্গিত করলেন। এবার আমাকে বললেন, মেয়েটা তোমার সাথে কথা বলতে চায়, তাই তোমাকে আসতে বললাম। তারপর পুলিশ অফিসার মেয়েটিকে আমার সাথে কথা বলার জন্য ইঙ্গিত করলেন।
মেয়েটি ইমিরেটস প্যালেস হোটেলে ওয়েটারের জব করে, কিন্তু মোটরসাইকেল এক্সিডেন্টের পর চারদিন চাকুরীতে গিয়েছিল, দূর্ভাগ্যজনক একদিনও ঠিকমতো কাজ করতে পারেনি। কারণ এক্সিডেন্টের সময় রাস্তায় পড়ে গিয়ে মাথায় প্রচন্ড আঘাত পাওয়ায় তার মাথায় ইনফেকশন হয়ে গেছে। বেশিক্ষণ কোন জায়গায় বসতেও পারেনা আবার দাঁডিয়ে থাকতেও পারেনা। কোম্পানি তাকে চাকুরী থেকে ইস্তফা দিয়ে দিয়েছে, ৮/১০ দিন পর সে চায়নাতে চলে যাবে। তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল না, মাত্র ৫ মাস আগে সে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে আবুধাবি এসেছিল। এখন তাকে একা চায়নাতে চলে যেতে হবে কিন্তু চায়নাতে গিয়ে ভাল চিকিৎসা করানোর জন্য যে পরিমান টাকার দরকার তা তার কাছে নাই। শুধুমাত্র এক্সিডেন্ট টার জন্যই তার সাজানো স্বপ্ন নষ্ট হয়ে গেছে। এখন সে চায়নাতে গিয়ে ভাল ডাক্তার দেখানোর জন্য আমার কাছ থেকে কিছু আর্থিক সহযোগীতা চায়।
তার সবগুলো কথা শুনে নিজের কাছে খুব খারাপ লাগলো, নিজেকে অপরাধী মনে হলো। আমি বললাম, এক্সিডেন্ট টা মুলত তোমার অসাবধানতার জন্যই হয়েছিল, পুলিশ অফিসারও বিস্তারিত তদন্ত করে তোমার বিপক্ষে রায় দিয়েছিল। এখানে আমার কোন দোষ ছিলনা, তবুও আমি তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমিও বড়লোক না, আমার ইনকামের উপর আমার পরিবার ডিফেন্ড করে। এবার পুলিশ অফিসার মেয়েটাকে বললেন, তুমি একটা কাজ করতে পারো, তুমি একটা মামলা করো, আমি মামলাটা কোর্টে পাঠিয়ে দিবো তারপর কোর্ট তার মোটরসাইকেলের ইন্সুরেন্স কোম্পানি থেকে তোমার চিকিৎসা খরচ আদায় করে নিবে। মামলাতে মেয়েটি তেমন আগ্রহ প্রকাশ করলো না, কারণ মামলা করলে তাকে কয়েকমাস আবুধাবিতে অবস্থান করতে হবে। তখন পুলিশ আমাদের দুইজনকে একটা সিদ্ধান্তে আসতে বললেন। এবার আমি আমার অফিসের ম্যানেজারকে ফোন করে বিস্তারিত বললাম, উনি বললেন মামলাতে গেলে তোমার অথবা কোম্পানির কোন টাকা খরচ হবেনা, সবই ইন্সুরেন্স কোম্পানিই বহন করবে। তারপরও জামেলা বড় না করে এতটুকুর মধ্যেই শেষ করাটাই মনে হয় ভাল হবে।
এবার মেয়েটিকে বললাম, এক্সিডেন্টটা ছিল একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, এই এক্সিডেন্টের কারনে তোমার যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও ব্যথিত। আর আমিও তোমার মতই একজন চাকুরীজীবী, আহামরি কোন বেতনও পাইনা, এই অবস্থায় আমি কি করতে পারি? মেয়েটি কিছুক্ষন চুপ থেকে তারপর অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার কাছে ২০০০ দিরহাম চাইলো। থানার অন্যান্য পুলিশ ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে, শুধুমাত্র মানবিক দিকটা বিবেচনা করে একটা অপরিচিত অমুসলিম চাইনিজ মেয়েকে ১০০০ দিরহাম (২১,৩০০ টাকা) দিতে রাজি হলাম। মেয়েটি খুশি হয়েই টাকাটা নিতে রাজি হলো, পুলিশ অফিসার এবং অন্যান্য পুলিশরাও একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। মেয়েটার হাতে ১০০০ দিরহাম দিয়ে পুলিশ অফিসারের সাথে হ্যান্ডসেক করে সবাইকে সালাম দিয়ে থানা থেকে বিদায় নিলাম। মেয়েটির জন্য সামান্যকিছু করতে পেরেছি বলে মানসিকভাবে কিছুটা শান্তি পেলাম। মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির প্রতি মানবিক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তাই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই মানবিক হলাম। আল্লাহর কাছে সব সময় দোয়া করি, যেন শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করার আগ মুহূর্ত্ব পর্যন্ত পরিপূর্ণভাবে ইসলামের পথে থাকতে পারি এবং পরিপূর্ণ ঈমান নিয়েই কবরে যেতে পারি।
বিষয়: বিবিধ
২৯১৯ বার পঠিত, ৫৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মেয়েটিকে মুসলমান করে বিয়ে করে ফেলেন । তাতে সওয়াবও হবে । চাইনিজ মেয়েরা সাধারনত সুন্দরী হয় ।
চাকরি চলে গেছে বিধায় বয়ফ্রেন্ড ভেগে যাবে । দেশে যে বউ হবে সে আপনার অবর্তমানে বিশাল সাম্রাজ্য বানিয়ে ফেলতে পারে (যেটা প্রবাসীদের মেইন হাহাকার)।
চাইনিজ মেয়েটি তো আপনার সাথে আপনার চোখের সামনেই থাকবে ।
আল্লাহ আপনাকে দিয়ে অনেক উত্তম কাজ করিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ!
শেয়ার করার জন্য শুকরিয়া!
আপনাদের নতুন জীবন রহমাহ ও বারাকাহময় হোক। শুভকামনা রইলো।
এর চাইতে বেশিকি-ইবা করার আছে?
আশা করি মহান রাব্বুল আলামিন আপনাকে এই টাকার বিনিময়ে উত্তম প্রতিদান দিবেন।
মানবিকতার মহান শিক্ষা ইসলামেই সবচেয়ে বেশী! একজন প্রকৃত মুসলিম সবচেয়ে বড় মানবিক হয়!
আল্লাহ আপনাকে অবশ্যই জাযা-ই খাইর দান করবেন ইনশা আল্লাহ!
আল্লাহ্ আপনাকে আরো সাহায্য করার ক্ষমতা নিক। অনেক ধন্যবাদ।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
অবশেষে চায়নিজ থেকে মুক্তি পেলেন এটাই বড় কথা।
পর্দর কথা জানলাম বিয়ের কথা জানাতে ভূলবেন না,
এখন থেকে খাওয়ার প্রাক্টিস করতাছি হে হে ........
ভাল কাজের জন্য ধন্যবাদ । আর বিয়ের জন্য অগ্রীম শুভ কামনা রইল.....
মন্তব্য করতে লগইন করুন