প্রিয় খাবারঃ স্মৃতির পাতা থেকে প্রিয় খাবার নিয়ে কিছু কথা...
লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ০৪ জুন, ২০১৫, ০৭:৩৬:৪৭ সন্ধ্যা
হালাল খাবার তো সবই খাই, কোনটাকে বাদ দিয়ে আমি কোনটার গুনগান গাই! তবুও দুষ্টমধুর স্মৃতিবিজড়িত ১টা ঘটনা দিয়েই এগিয়ে যাই। আমার আপু আমার চেয়ে পাঁচ বছরের বড়, তবুও ছোটবেলায় আপুর সাথে টুকিটাকি দুষ্টমি যেন না করলেই নয়, যদিও আপু আমাকে খুব আদর করতেন। এখনো আপুর কাছে আমি সেই ছোট্ট মামুন, এখনো আপু ছোটবেলার মতই বকা দেন!! ছোটবেলায় খাবারের প্রতি ততটা মনযোগী ছিলাম না, যতটা না মনযোগী ছিলাম দুষ্টমির প্রতি! স্কুল থেকে বাড়িতে এসে খানা না খেয়ে খাটের নিচে লুকিয়ে রাখা ফুটবল নিয়ে চুপি চুপি মাঠের দিকে চলে যেতে পারাটাই কৃতিত্বপূর্ণ মনে করতাম! এই জন্য আপু ও আম্মু আমার ফুটবল টা লুকিয়ে রাখতেন, উনাদের শর্ত আগে খানা খেয়ে কিছুক্ষন রেস্ট করতেই হবে! অন্যদিকে আমার খেলার সাথীরা অপেক্ষায় অস্থির, কখন যে আমি ফুটবল নিয়ে বের হবো।
আমার আপু পড়ালেখায় খুব মেধাবিনী ছিলেন, অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত আমাকে কোন শিক্ষকের নিকট প্রাইভেট পড়তে দেননি, বলতে পারি বিয়ের আগ পর্যন্ত আপু আমার সার্বক্ষণিক টিউটর ছিলেন! আমার আপুর একটা বদ স্বভাব ছিল, যার জন্য আমি আপুকে খুব সহজে কাবু করে পেলতে পারতাম। উনি যখন খেতে বসেন, তখন কেউ নোংরা কথা বলতে পারবেনা, বিশেষ করে পায়খানা, বমি ও কফের নাম মুখে উচ্চারণ তো দুরের কথা ইঙ্গিতেও বলা যাবেনা! যদি কেউ ভুলক্রমে বলেই পেলে, তাহলে সাথে সাথেই উনার খানা স্টপ! তাই খানার সময় এই শব্দগুলো উচ্চারণের উপর আব্বু-আম্মুর কড়া নিষেধাজ্ঞা ছিল।
দুধ+কলা+চিনি দিয়ে মাখা ভাত আমার খুব প্রিয় ছিল। কিন্তু আমি আপুর মতো করে মাখতে পারতাম না। আপু খুব মজা করে মেখে আমাকে লোভ লাগিয়ে যেইমাত্র খানা শুরু করলেন, সাথে সাথেই আমি বললাম, "আপু আজকে ল.সা.গু এর অংকটা আমি ভাল করে বুঝিনি"। আর যায় কই, সাথে সাথেই আপুর খানা স্টপ! আব্বু-আম্মু যখন আমার দিকে তাকালেন তখন আমি বললাম, আমি তো 'গু' এর কথা বলিনি, লসাগু এর কথা বলেছি! কে কি বললো অতসত মনে নেই তবে ছোঁ মেরে আপুর প্লেটটা নিয়ে খানা শুরু করতে আমি একটু ও দেরি করিনি। সেইদিন আব্বু-আম্মু অনেক অনুরোধ করেও সেই রাতে আপুকে আর খানা খাওয়াতে পারেননি।
ভাজা মাছের প্রতি আমার সব সময় লোভ থাকতো, ভাজা মাছ ছাড়া রান্না করা মাছ খুব একটা পছন্দ করতাম না। ভাজা ইলিস শুটকি ও চিংড়ি ভাজা আমার খুব প্রিয়। আমার নানাভাই পুকুরে চিংড়ী চাষ করতেন, চিংড়ি গুলো অনেক বড় বড় হতো, ৭/৮ টায় এক কেজি হয়ে যেত, সেই সুবাদে যথেষ্ট পরিমানে চিংড়ি খাওয়া হয়। আমার আম্মু আমার নানার বড় মেয়ে, তাই আমরা দুই ভাই-বোন নানার পরিবারের ১ম ও ২য় নাতি-নাতনী হিসেবে খুব আদরের ছিলাম। কই, মাগুর, শিং, টেংরা ও কাছকি(মলা) মাছ দিয়ে রান্না করা খাইস্যা(শিমের বিচি) আমার খুব ভাল লাগে। লাল শাক খুব পছন্দ করি।
গরুর গোস্তের চেয়ে গরুর বট বুনা বেশি পছন্দ করি, গরুর নরম হাড্ডি সবচেয়ে প্রিয়। রমজান মাস আসলে আপু নামায ও কোরান তিলাওয়াতের পাশাপাশি যতটুকু ফ্রি সময় পাইতেন তার পুরাটাই ময়দা দিয়ে ছুটকি কাটার কাজেই ব্যয় করতেন। অথচ আম্মু যখন বিভিন্ন আইটেম দিয়ে খুব সু-স্বাধু করে ছুটকি রান্না করতেন তখন নানান চলে-বলে-কৌশলে পরিবারের সবার চেয়ে আমিই বেশি খাইতাম। প্রবাস জীবনে ঈদের সময় এই ছুটকি কেই সবচেয়ে বেশি মিস করি।
আট করই (চাউল, খেসারী, মটর, মসুরের ডাল, গম, বাদাম, তিঁ ও সিমের বিচি সব গুলো একসাথে মিক্স করে মাটির পাতিলে আগুন দিয়ে ভেংগে বিশেষভাবে তৈরি) আমার খুব খুব প্রিয় খাবার। যখন আমার এলাকার কেউ দেশ থেকে আসে, তখন আম্মুকে ও আপুকে অনুরোধ করি অন্য কিছু না পাঠিয়ে আমার জন্য বেশি করে আট করই পাঠাতে। এই পর্যন্ত তিনবার পাঠিয়েছেন, আমার রুমমেটরা দেশ থেকে এই আট করই আনিয়েছি বলে খুব হাসাহাসি করলেও আমি লজ্জিত নই। প্রিয় খাবার বলে কথা! একদিন আমার অফিসের ইন্ডিয়ান ম্যানেজারকে যখন কিছু আট করই খেতে দিলাম, তখন উনি খুব হাসলেন যদিও খাওয়ার পর আট করইর অনেক প্রশংসা করেছেন।
প্রবাস জীবনে সেন্ডউইছ, বার্গার, হারিছ, হালিম ও ককটেল জুসের ভক্ত। যদিও বাংলাদেশের ফ্রেশ মাছ, গোস্ত ও শাকসবজিকে প্রবাস জীবনে খুব বেশি মিছ করি। হে আমার প্রিয় মাতৃভূমি, তোমার বুকে উৎপাদিত তরতাজা মাছ, গোস্ত, শাকসবজি ও ফল-ফলাদির জন্য হৃদয় যেন হাহাকার করতেছে...জানিনা কবে যে মায়ের হাতের রান্না আবার খাওয়া হবে, কবে যে দেখা হবে খেজুর গাছের রস+নারিকেল+বাদাম+কিসমিস দিয়ে তৈরি সিন্নির(ফায়েসের) সাথে। হে প্রিয় মাতৃভূমি, প্রবাসে আমার দেহ থাকলেও হৃদয় জুড়ে তুমিই আছো।
বিষয়: Contest_priyo
৪৭৫৯ বার পঠিত, ৩৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আলহামদুল্লিলাহ। ভাল লাগল পড়ে।
তাই আজ শেষ করেও করা হলোনা, কারন লিখতে গেলে বড় হয়ে যায়। তাই যেই গুলো বেশি ভাল লাগে শুধু ঐ কয়েকটার কথা লিখলাম।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার ফেইসবুক আইডি টা হ্যাক হয়ে গেছে।
আমার বুদ্ধি আপনার মাথায় গজাইল কেমনে!!
আমি শশুড়বাড়িতে আমার প্রিয় এবং কোন সুস্বাদু খাবার থাকলে দুর্ঘটনাক্রমে একবার শুয়োর এর গোস্ত খাওয়ার গল্প শুরু করি। আর টেবিল এর অনেকেই না খেয়ে উঠে যায়।
আমার লিখাটা কষ্ট করে পড়েছেন ও সুন্দর মন্তব্য রেখে গেছেন, এই জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
একটু মায়া মমতা থাকা কি উচিত ছিলোনা?
বল নিয়ে খাবার না খেয়ে বেরিয়ে যাবেন কেন? পেট কি এমনিতেইই ভরে উঠবে? ভালো লাগলো ধন্যবাদ।
আজকের দিনে আপনার মন্তব্য টাই সেরা মন্তব্য। কষ্ট করে পড়ার জন্য ও সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
হাহাহা।
বিয়ের দাওয়াতের অপেক্ষায়...
মন্তব্য করতে লগইন করুন