প্রচলিত শবেবরাত ১০০% বেদাত, আসুন বেদাত থেকে নিজে বাঁচি ও অপরকে বাঁচাই।
লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ০২ জুন, ২০১৫, ১১:২৬:১৯ সকাল
সন্মানীত বন্ধুগন, শবেবরাত ১০০% বেদাত। নামাযে সিজদা ২ টা দেওয়া ওয়াজিব কিন্তু আপনি যদি সওয়াবের আশায় তিনটা সেজদা দেন, তাহলে যেমনিভাবে আপনার নামায নষ্ট হয়ে যাবে, ঠিক তেমনিভাবে মহান আল্লাহ যা পবিত্র কোরানে বলেন নি, রাসূল (স) ও সাহাবীরা যা করেননি, আপনি যদি অধিক সওয়াবের আশায় তা করতে চান, তাহলে আপনার সারাজীবনের কবুল হওয়া আমল গুলো বরবাদ হয়ে যাবে।
এই শবেবরাত শুধুমাত্র ভারতীয় উপমহাদেশেই পালন করা হয় যেখানে কোন নবী /রাসূল জাননি!!! এটা কিছু সুবিদাবাদী আলেম ও ভন্ড মাজার পুজারীরাই তাদের দুনিয়াবী সার্থের জন্যই বানিয়েছে। অথচ আরব দেশ গুলোতে অসংখ্য নবী, রাসূল এসেছেন, লক্ষ সাহাবীরা এই আরবভূমি থেকে তৈরি হয়েছে, কিন্তু এই আরবভূমিতে কোন ধরনের শবেবরাত পালন করা হয়না। আমার কথা বিশ্বাস না হলে মধ্যপাচ্যে যদি আপনার কোন আত্বিয়-স্বজন থাকে তাদের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন।
শবেবরাতের ব্যাপারে কোরান ও হাদিসের আলোকে মুফতি কাজী ইব্রাহীমের মুখ থেকেই বিস্তারিত শুনুন
https://www.facebook.com/dilmohammed.mamun/videos/vb.100000902801201/977677982272286/?type=2&theater
শবেবরাত সম্পর্কে আরোও বিস্তারিত জানুন....পালন করবেন কি করবেন না, সিদ্দান্ত আপনার।
https://www.facebook.com/dilmohammed.mamun/videos/vb.100000902801201/977871155586302/?type=2&theater
অতীতে না জেনে না বুঝে অসংখ্য ভুল করেছি। তাই আসুন কোন পীর কোন বুজুর্গ কি বলেছে, কোন ভক্ত কি করেছে তা না দেখে সরাসরি আল্লাহ কোরানে কি বলেছে আর রাসূল (স) ও সাহাবী(রা) গন কি করেছেন, সেই অনুযায়ীই আমল করি। তাহলেই আমরা মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারবো।
বিষয়: বিবিধ
৪০৫৪ বার পঠিত, ৪১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হুমম ঠিক বলেছেন। তবে আমরা বা আমাদের এলাকায় এটা পালন করা হয় না.......।
জাজাকাল্লাহু খায়রান।
জাজাকাল্লাহু খায়রান।
শরীফে সবেকদর কথা রয়েছে।
শবে বরাত সারা বিশ্বে পালিত হয় ।
বিভিন্ন দেশে শবে বরাত পালনের ভিডিও দেওয়া হল -
মালয়েশিয়া
https://www.youtube.com/watch?v=KcBSE7CoW28
https://www.youtube.com/watch?v=VV3ITCyg_aE
ইন্দোনেশিয়া
https://www.youtube.com/watch?v=Ah7sz4AEXeI
তুরস্ক
https://www.youtube.com/watch?v=YBwfBFQmWgY
https://www.youtube.com/watch?v=Kr58C7eXcWA
https://www.youtube.com/watch?v=sMGVtldz3Lc
পাকিস্তান
https://www.youtube.com/watch?v=2qnzpTDzNCA
বসনিয়া
https://www.youtube.com/watch?v=yjzibjFnuyA
https://www.youtube.com/watch?v=s3aBUNQJnds
https://www.youtube.com/watch?v=JjZ5jbDAkj8
সিঙ্গাপুর
https://www.youtube.com/watch?v=VKAR0TuNAjc
ভারত
https://www.youtube.com/watch?v=_gQVZayut0Q
সুইডেন
https://www.youtube.com/watch?v=ZDI0e4oIeis
স্পেন
https://www.youtube.com/watch?v=l4GuYvjPo5w
শবে বরাত বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত । যেমন :
ইরান ও আফগানিস্তানে নিম শা'বান।
আরবী ভাষাভাষীর বলে নিসফ্ শা'বান।
মালয় ভাষাভাষীর বলে নিসফু শা'বান।
তুর্কি ভাষাভাষীর বলে বিরাত কান্দিলি।
বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান-নেপাল-শ্রীলংকা-মায়ানমার-এ বলা হয় শবে বরাত।
কিছু দেশে বলা হয় লাইলাতুল বরাত।
কিছু দেশে বলা হয় লাইলাতুল দোয়া।
Şeva Beratê ও Berat Kandili বলা হয় তুরস্ক ও তুর্কি ভাষার দেশগুলোতে ।
হাদিসের পরিভাষায় এই রাতটিকে বলা হয় "লাইলাতুন্ নিসফু মিন সাবান" অর্থাৎ সাবান মাসের মাঝের রাত বা সাবান মাসের পনেরতম রাত । এই রাতটিকে আমরা শবে বরাত বলে থাকি । কারণ বাংলাদেশসহ সারা ভারত ও পাকিস্তানে প্রায় এক হাজার বছর রাষ্ট্র ভাষা ছিল ফার্সি ভাষা (ইরানি ভাষা) । ইংরেজরা ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ বা ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ফার্সি ভাষার পর রাষ্ট্রভাষা ইংরেজী চালু করে । ফার্সি ভাষায় শব শব্দের অর্থ রাত আর বরাত শব্দের অর্থ পবিত্রতা, মুক্তি । সুতরাং শবে বরাত শব্দের অর্থ হলো পবিত্রতার রাত বা মুক্তির রাত বা নাজাত লাভের জন্য নতুনভাবে উজ্জিবীত হওয়ার রাত ।
বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের সময় হতে শবে বরাত পালিত হয়ে আসছে । ফার্সি ভাষায় লিখিত বাংলাদেশের প্রাচীনতম ইতিহাস গ্রন্হ তবকাতে নাসিরী -তে বলা আছে, মুসলিম শাসকরা এদিন জাকজমকের সাথে পালন করতো । (বাংলা একাডেমির অনুবাদ : ১৫৮ পৃষ্ঠা । )
ফার্সি ভাষায় লিখিত বাংলাদেশের মোগল আমলের ইতিহাস গ্রন্হ বাহারিস্তানে গায়বিতে মির্যা নাথান বলেছেন : শবে বরাতে শাসকরা কামানের গোলা নিক্ষেপ করে জনগণকে শবে বরাতের সুসংবাদ দিতেন । আমার আম্মা শবে বরাতের জন্য শিউলী ফুলের বোটার রং মিশ্রীত করে সুস্বাদু হালুয়া রান্না করতেন । (বাংলা একাডেমীর অনুবাদ )
ইংরেজ আমল ও পাকিস্তান আমলে জাক জমকের সাথে শবে বরাত পালনের ইতিহাস পাওয়া যায় । সুতরাং আমরা কেন এই বরকতময় রাতকে অবহেলা করবো । এটা আমাদের বরকতময় ঐতিহ্য ।
এবার আমরা হাদিসের গ্রন্হগুলোতে দেখি শবে বরাত সম্পর্কে কি তথ্য রয়েছে -
১. আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন: এক রাতে আমি রাসূল (সা) কে খুজে না পেয়ে তাকে খুজতে বের হলাম, আমি তাকে বাকী গোরস্তানে পেলাম। তখন রাসূল (সা) আমাকে বললেন: 'তুমি কি মনে কর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার উপর জুলুম করবে?' আমি বললাম: 'হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধারণা করেছিলাম যে আপনি আপনার অপর কোন স্ত্রীর নিকট চলে গেছেন। তখন রাসূল (সা) বললেন: 'মহান আল্লাহ তা'লা শা'বানের মধ্য রাত্রিতে নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন এবং কালব গোত্রের ছাগলের পালের পশমের চেয়ে বেশী লোকদের ক্ষমা করেন।
মুসনাদে আহমাদ (৬/২৩৮), তিরমিঝি (২/১২১,১২২), ইবনে মাজাহ (১/৪৪৪, হাদীস নং ১৩৮৯)
২. রাসূল (সা) বলেছেন- যখন শাবান চাঁদের ১৫-এর রাত আসবে তখন তোমরা জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করবে। আর পরদিন রোজা রাখবে । কেননা আল্লাহ এ রাতে সূর্যাস্তের পরই সর্বনিম্ন আসমানে নেমে আসেন এবং তার বান্দাদের ডেকে বলেন, ওহে আছো কোন ক্ষমা প্রার্থী? আমি তোমাকে ক্ষমা করব। আছো কোন রিজিক প্রার্থী? আমি তোমাকে রিজিক দেব। আছো কোন বিপদগ্রস্ত? আমি তোমাকে বিপদমুক্ত করব। আছো কোন তওবাকারী? আমি তোমার তওবা কবুল করব। এভাবে সুবহে সাদেক পর্যন্ত আল্লাহ আহবান করতে থাকেন (ইবনে মাজাহ)
৩. আব্দুল্লাহ বিন আবী ক্বায়স (রা) বর্ণিত রয়েছে যে, তিনি উম্মুল মুমিনীন সায়্যিদাতুনা আয়িশা(রা) কে বলতে শুনেছেন, আমার মাথার তাজ, সাহিবে মিরাজ, মহানবী(সা) এর পছন্দের মাস শাবানুল মুআজ্জাম ছিল কারণ এতে তিনি রোযা রাখতেন অতপর(এভাবে)এটাকে রামজানুর মুবারাকের সাথে মিলিয়ে দিতেন ।
( আবু দাউদ শরীফ হাদিস নং ২৪৩১ ২য় খণ্ড )
৪. আলী ইবনে আবী তালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন : "যখন শা'বানের মধ্য রাত্রি আসবে তখন তোমরা সে রাতের কিয়াম তথা রাতভর নামায পড়বে, আর সে দিনের রোযা রাখবে; কেননা সে দিন সুর্য ডোবার সাথে সাথে আল্লাহ তা'আলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন: ক্ষমা চাওয়ার কেউ কি আছে যাকে আমি ক্ষমা করে দেব। রিযিক চাওয়ার কেউ কি আছে যাকে আমি রিযিক দেব। সমস্যাগ্রস্থ কেউ কি আছে যে আমার কাছে বিমুক্তি চাইবে আর আমি তাকে উদ্ধার করব। এমন এমন কেউ কি আছে? এমন এমন কেউ কি আছে? ফজর পর্যন্ত তিনি এ ভাবে বলতে থাকেন"।
হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ তার সুনানে (১/৪৪৪, হাদীস নং ১৩৮৮) বর্ণনা করেছেন।
৫. রাসূল (সা) থেকে বহু সহীহ হাদীসে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি শা'বান মাসে সবচেয়ে বেশী রোযা রাখতেন। (এর জন্য দেখুনঃ বুখারী, হাদীস নং ১৯৬৯, ১৯৭০, মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৬, ১১৬১, মুসনাদে আহমাদ ৬/১৮৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২৪৩১, সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং ২০৭৭, সুনানে তিরমিঝি, হাদীস নং ৬৫৭)।
সুতরাং এসব হাদিস দ্বারা শবে বরাত পালন করা মুস্তাহাব বলে প্রমানিত হলো ।
ইবাদতগত কাজ ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, সুন্নাতে জায়িদা, মুস্তাহাব,নফল হয় তার গুরুত্বের বিচার করে । কিন্তু সব ধরনের ইবাদতগত কাজই গুরুত্বপূর্ণ ।
সুতরাং আমরা সবাই আজ নফল ইবাদত করবো, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবো ও সাহায্য চাইবো এবং রমাজান মাসের প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করবো ।
https://www.youtube.com/watch?v=dCgzRBJU9gs
শবে বরাতের তাৎপর্যে নিয়ে একটি গান যা ভারতের একটি বিখ্যাত সিনেমায় ব্যবহার হয়েছে
শবে বরাত সম্পর্কিত আরো তথ্য জানার জন্য পড়ুন :
শবে বরাত পালন করার গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
http://www.monitorbd.net/blog/blogdetail/detail/1864/fakhrul/65662
দয়া করে কুরআনের আয়াত উপস্হাপন করুন ।
জাজাকাল্লাহু খায়রান।
এই শবেবরাত শুধুমাত্র ভারতীয় উপমহাদেশেই পালন করা হয় যেখানে কোন নবী /রাসূল জাননি!!!
-প্রিয় মামুন ভাই, আল্লাহ প্রত্যেক জাতির বা সম্প্রদায়ের কাছে নবী-রাসূল পাঠিয়েছিলেন। এটা কুরআনের কথা। এই লাইনটি সংশোধন করলে পোস্টটি আরো গ্রহণযোগ্য হবে। শবে বরাত শরীয়তের কোন আমল হতে পারে না। হক্কানী ওলামায়ে কেরামের অভিমত। ধন্যবাদ আপনাকে।
মাসুম ভাই সঠিক বলেছেন। নবি রাসুলদের সংখ্যা জানা নাই।
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ভাই, এই ভিডিও গুলু দেখবেন কি!!!
শুনেছি সুফীরা শবেবরাত পালন করে।
পালিত হয় না।
নফল ইবাদাত অন্যান্য দিন যেমন করা যায় তেমনি নিসফুস সা’বানেও করা যেতে পারে। এতে কোন সমস্যা থাকার কথা নয়।
সবচেয়ে মারাত্মক বিদয়াতগুলোর প্রতি কারো যেন নজর নেই। যেমন; সবে বরাতের নামে মোম বাতি প্রজ্জলিত করা, আগর বাতি জ্বালানো,কবরে কবরে ঘুরে বেড়ানো,বাজি ফোটানো, হালুয়া-রুটি বাধ্যতামূলক করে ওসবের ফাতেয়ার নামে মোল্লাদের টাকা কামানো, ঐদিন ভালো ভালো খাবার খাওয়া এই বিশ্বাসে যে, আজকে যা হবে সারা বছরও তাই হবে। - এসব হচ্ছে প্রকৃত বিদয়াত।
বর্তমানে ঘটনা এমন হয়েছে, এক দল ঐদিনের নাম ‘শবে বরাত’ দেয়ার কারণে সহিহ আকিদার লোকেরা বেদয়াত হওয়ার ভয়ে ঐদিন নফল ইবাদাত যেন বাদ দিয়েছেন।
.
আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো, মাওলানা আবদুল মালিক সাহেব (দা বা) থাকতে, বাংলাদেশে আর কারও, আগ বাড়িয়ে হাদীস নিয়ে কথা বলা উচিত নয়। যদি কেউ বলতে চান,তাকে প্রথমে আমাদের হযরতকে অতিক্রম করতে হবে।
.
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের হযরত, শুধু বাংলাদেশ কেন, শায়খ আউয়ামা (দাবা) কে বাদ দিয়ে হিশেব করলে, তিনিই বর্তমান বিশ্বের এক নাম্বার মুহাদ্দিস। এটা আবেগের আতিশ্যয্য নয়। বাড়াবাড়িও নয়। বাস্তবতা।
.
তিনি আমাদের বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছেন, এটা আামাদের সৌভাগ্য। ভারত-পাকিস্তান-আফ্রিকা-আরবের ওলামায়ে কেরাম হাদীস ও ওসূল বিষয়ক পড়াশোনার জন্যে, শেষ পর্যায়ে তার কাছেই ছাত্র পাঠান।
.
তিনি থাকতে অন্যরা কিভাবে যে হাদীস নিয়ে গলা উঁচু করেন, বুঝতে পারি না।
.
শবে বরাত নিয়ে আমার আলাদা কোনও মতামত নেই। আমার শ্রদ্ধেয় উস্তাজ, আল্লামা আবদুল মালেক সাহেব (দা বা)-এর মতটাই আমার মত। নিচের লেখায় তিনি তার চিন্তা তুলে ধরেছেন:
----------------------------------
বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবেবরাত
- মুফতি আব্দুল মালেক
--------------------------
এতদিন পর্যন্ত শবে বরাতকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণীর মানুষ বাড়াবাড়িতে লিপ্ত ছিল। তারা এ রাতটি উপলক্ষে নানা অনুচিত কাজকর্ম এবং রসম-রেওয়াজের অনুগামী হচ্ছিল। উলামায়ে কেরাম সবসময়ই এ সবের প্রতিবাদ করেছেন এবং এখনো করছেন। ইদানিং আবার এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ছাড়াছাড়ির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তাদের দাবী হল, ইসলামে শবে বরাতের কোন ধারণা নেই। এ ব্যাপারে যত রেওয়ায়েত আছে সব মওযু বা যয়ীফ। এসব অনুযায়ী আমল করা এবং শবে বরাতকে বিশেষ কোন ফযীলতপূর্ণ রাত মনে করা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয নয়। তারা এসব বক্তব্য সম্বলিত ছোটখাট পুস্তিকা ও লিফলেট তৈরী করে মানুষের মধ্যে বিলি করে।
.
বাস্তব কথা হল, আগেকার সেই বাড়াবাড়ির পথটিও যেমন সঠিক ছিল না, এখনকার এই ছাড়াছাড়ির মতটিও শুদ্ধ নয়। ইসলাম ভারসাম্যতার দ্বীনএবং এর সকল শিক্ষাই প্রান্তকতা মুক্ত সরল পথের পথ নির্দেশ করে। শবে বরাতের ব্যপারে সঠিক ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান হল, এ রাতের ফযীলত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সম্মিলিত কোন রূপ না দিয়ে এবং এই রাত উদযাপনের বিশেষ কোন পন্থা উদ্ভাবন না করে বেশি ইবাদত করাও নির্ভরযোগ্য রেওয়াত দ্বারা প্রমাণিত। এই রাতকে অন্য সব সাধারণ রাতের মতো মনে করা এবং এই রাতের ফযীলতের ব্যাপারে যত হাদীস এসেছে, তার সবগুলোকে মওযু বা যয়ীফ মনে করা ভুল যেমন অনুরূপ এ রাতকে শবে কদরের মত বা তার চেয়েও বেশি ফযীলতপূর্ণ মনে করাও ভিত্তিহীন ধারণা।
এখানে শবে বরাতের (পনের শাবানের রাত) ফযীলত ও করণীয় বিষয়ক কিছু হাদীস যথাযথ উদ্ধৃতি ও সনদের নির্ভরযোগ্যতার বিবরণ সহ উল্লেখ করা হল।
১ম হাদীসঃ
عن مالك من يخامر , عن معاذ بن جبل, عن النبى (, قال : يطلع الله الى خلقه فى ليلة النصف من شعبان, فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن ]رواه ابن حبان وغيره, ورجاله ثقات, وإسناده متصل غلى مذهب مسلم الذى هو مذهب الحمهورفى المعنعن, ولم يحزم الذهبى بأن مكحولالم يلق مالك بن يخامر كما زعم, وإنما قاله على سبيل الحسان, راجع ,سبر أعلام النبلاء
মুআয ইবনে জাবাল বলেন, নবী করীম স. ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।
এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, এ রাতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাতের দ্বারা ব্যপকভাবে উন্মুক্ত হয়। কিন্তু শিরকি কাজ-কর্মে লিপ্ত ব্যক্তি এবং অন্যের ব্যাপারে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী মানুষ এই ব্যপক রহমত ও সাধারণ ক্ষমা থেকেও বঞ্চিত থাকে। যখন কোন বিশেষ সময়ের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাত ঘোষণা হয়, তখন তার অর্থ এই হয় যে, এই সময় এমন সব নেক আমলের ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে যার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও মাগফেরাতের উপযুক্ত হওয়া যায় এবং ঐ সব গুণাহ থেকে বিরত থাকতে হবে। এ কারণে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাত থেকে বঞ্চিত হয়।
.
যেহেতু উপরোক্ত হাদীস এবং অন্যান্য হাদীসে অর্ধ-শাবানের রাতে ব্যাপক মাগফেরাতের ঘোষণা এসেছে, তাই এ রাতটি অনেক পূর্ব থেকেই শবে বরাত তথা মুক্তির রজনী নামে প্রসিদ্ধ হয়েছে। কেননা, এ রাতে গুনাহসমূহ থেকে মুক্তি লাভ হয় এবং পাপের অশুভ পরিণাম থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
.
যদি শবে বরাতের ফযীলতের ব্যাপারে দ্বিতীয় কোন হাদীস না থাকত, তবে এই হাদীসটিই এ রাতের ফযীলত সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এবং এ রাতে মাগফেরাতের উপযোগী নেক আমলের গুরুত্ব প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট হত। অথচ হাদীসের কিতাবসমূহে নির্ভরযোগ্য সনদে এ বিষয়ক আরো একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
.
হাদীসটির সনদ বা সূত্র বিষয়ক আলোচনা
উপরোক্ত হাদীসটি অনেক নির্ভরযোগ্য হাদীসের কিতাবেই নির্ভরযোগ্য সনদের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হিব্বান তার কিতাবু সহীহ এ (যা সহীহ ইবনে হিব্বান নামেই সমধিক প্রসিদ্ধ, ১৩/৪৮১ এ) এই হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। এটি এই কিতাবের ৫৬৬৫ নং হাদীস। এ ছাড়া ইমাম বাইহাকী (রহঃ) শুআবুল ঈমান এ (৩/৩৮২, হাদীস ৩৮৩৩); ইমাম তাবরানী আলমুজামুল কাবীর ও আলমুজামুল আওসাত এ বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়াও আরো বহু হাদীসের ইমাম তাদের নিজ নিজ কিতাবে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।
.
হাদীসটির সনদ সহীহ। এজন্যই ইমাম ইবনে হিব্বান একে কিতাবুস সহীহ এ বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ হাদীসটিকে পারিভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে হাসান বলেছেন; কিন্তু হাসান হাদীন সহীহ তথা নির্ভরযোগ্য হাদীসেরই একটি প্রকার।
ইমাম মনযিরী, ইবনে রজব, নূরুদ্দীন হাইসামী, কাস্তাল্লানী, যুরকানী এবং অন্যান্য হাদীস বিশারদ এই হাদীসটিকে আমলযোগ্য বলেছেন। দেখুন আততারগীব ওয়াততারহীব ২/১৮৮; ৩/৪৫৯. লাতায়েফুল মাআরিফ ১৫১; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৮/৬৫; শারহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যা ১০/৫৬১।
.
বর্তমান সময়ের প্রসিদ্ধ শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) সিলসিলাতুল আহাদসিস্ সাহীহা ৩/১৩৫-১৩৯ এ এই হাদীসের সমর্থনে আরো আটটি হাদীস উল্লেখ করার পর লেখেনঃ
وجملة القول أن الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلاريب. والصحة تثبت بأقل منها عددا، مادامت سالمة من الضعف الشديد، كماهو الشأن فى هذاالحديث .
এ সব রেওয়াতের মাধ্যমে সমষ্টিগত ভাবে এই হাদীসটি নিঃসন্দেহে সহীহ প্রমাণিত হয়। তারপর আলবানী (রহঃ) ওই সব লোকের বক্তব্য খন্ডন করটা, যারা কোন ধরণের খোঁজখবর ছাড়াই বলে দেন যে, শবে বরাতের ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস নেই।
.
ইদানিং আমাদের কতক সালাফী বা আহলে হাদিস বন্ধুকে দেখা যায়, তারা নানা ধরণের লিফলেট বিলি করেন। তাতে লেখা থাকে যে, শবে বরাত (লাইলাতুল নিস্ফি মিন শাবান) এর কোন ফযীলতই হাদীস শরীফে প্রমাণিত নেই। ওই সব বন্ধুরা শায়খ আলবানী (রহঃ) এর গবেষণা ও সিদ্ধান্ত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। কেননা, তাদেরকে আলবানী (রহঃ) এর বড় ভক্ত মনে হয় এবং তার কিতাবাদি অনুবাদ করে প্রচার করতে দেখা যায়। আমি ওই সব ভাইদের কাছে বিনীতভাবে আরজ করতে চাই যে, আপনারা যদি শায়খ ইবনে বাযের অনুসরণে বা নিজেদের তাহ্কীক মতো এই রাতের ফযীলতকে অস্বীকার করতে পারেন তাহলে যারা উপরোক্ত মুহাদ্দিস ও ফকীহগণের অনুসরণে উল্লেখিত হাদীসটির ভিত্তিতে এই রাতের ফযীলতের বিশ্বাস পোষণ করেন এবং সব ধরণের বেদআত রসম-রেওয়াজ পরিহার করে নেক আমলে মগ্ন থাকার চেষ্টা করেন তারাই এমন কি অপরাধ করে বসলেন যে, আপনাদেরকে তাদের পেছনে লেগে থাকতে হবে? এবং এখানকার উলামায়ে কেরামের দলীলভিত্তিক সিদ্ধান্তের বিপরীতে অন্য একটি মত যা ভুলের সম্ভাবনার উর্ধ্বে নয়, তা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচার করে তাদেরকে আলেম-উলামার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আস্থাহীন করা এবং বাতিলপন্থিদের মিশন সফল করতে সহায়তা দেওয়া কি সত্যিকার অর্থেই খুব বেশি প্রয়োজন? এতে তো কোন সন্দেহ নেই যে, আপনারা আপনাদের মতটিকে খুব বেশি হলে একটি ইজতেহাদী ভুল-ভ্রান্তির সম্ভাবনাযুক্তই মনে করেন এবং নিশ্চয়ই আপনারা আপনাদের মতটিকে একেবারে ওহীর মতো মনে করেন না। একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন, এরপর আপনাদের এই অবস্থানের যৌক্তিক কোন ব্যাখ্যা আর থাকে কি না?
আপনাদের প্রতি আমার সর্বশেষ অনুরোধ এই যে, দয়া করে এ রাতের ফযীলত ও আমল সম্পর্কে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) [মৃ. ৭২৮ হিঃ] এর ইক্তিযাউস সিরাতিল মুস্তাকিম/৬৩১-৬৪১ এবং ইমাম যায়নুদ্দীন ইবনে রজব (রহঃ) [মৃ. ৭৯৫] এর লাতায়েফুল মাআরেফ ১৫১-১৫৭ পড়ুন এবং ভেবে দেখুন যে, তাদের এই দলীলনির্ভর তাহকীক অনুসরণযোগ্য, না শায়খ ইবনে বায (রহঃ) এর একটি আবেগপ্রসূত মতামত? যা হয়ত তিনি শবে বরাত নিয়ে জাহেল লোকদের বাড়াবাড়ির প্রতিকার হিসেবেই ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু এ কথা স্পষ্ট যে, বাড়াবাড়ির প্রতিকার কোন বাস্তব সত্য অস্বীকার করে নয়; বরং সত্য বিষয়টির যথাযথ উপস্থাপনের মাধ্যমেই হয়ে থাকে।
.
এই রাতের আমল
--------------
উল্লেখিত হাদীস শরীফে এ রাতের কী কী আমলের নির্দেশনা-ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তা আমি ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি। নিম্নে এ বিষয়ে আরেকটি হাদীস পেশ করছি।
হযরত আলা ইবনুল হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (স) রাতে নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হল তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা অথবা বলেছেন, ও হুমাইরা, তোমার কি এই আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার এই আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। নবীজী জিঞ্চেস করলেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূলই ভাল জানেন। রাসূলুল্লাহ (স) তখন ইরশাদ করলেন,
هذه ليلة النصف من شعبان ان الله عزو جل يطلع على عباده فى ليلة النصف من شعبان فيغفر للمستغفرينويرحم المشترحمين ويؤخر اهل الحقد كماهم
‘এটা হল অর্ধ শাবানের রাত (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত)। আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তার বান্দার প্রতি মনযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।‘ [শুআবুল ঈমান, বাইহাকী ৩/৩৮২-৩৬৮]
ইমাম বাইহাকী (রহঃ) এই হাদীসটি বর্ণনার পর এর সনদের ব্যাপারে বলেছেন,
هذا مرسل جيد
এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়, এ রাতে দীর্ঘ নফল পড়া, যাতে সেজদাও দীর্ঘ হবে, শরীয়তের দৃষ্টিতে কাম্য। তবে মনে রাখতে হবে যে, অনেক অনির্ভরযোগ্য ওয়ীফার বই-পুস্তকে নামাযের যে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন লেখা আছে অর্থাৎ এত রাকআত হতে হবে, প্রতি রাকআতে এই সূরা এতবার পড়তে হবে - এগুলো ঠিক নয়। হাদীস শরীফে এসব নেই। এগুলো মানুষের মনগড়া পন্থা। সঠিক পদ্ধতি হল, নফল নামাযের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী দুই রাকআত করে যত রাকআত সম্ভব হয় পড়তে থাকা। কুরআন কারীম তেলওয়াত করা। দরূদ শরীফ পড়া। ইস্তেগফার করা। দুআ করা এবং কিছুটা ঘুমের প্রয়োজন হলে ঘুমানো। এমন যেন না হয় যে, সারা রাতের দীর্ঘ ইবাদতের ক্লান্তিতে ফজরের নামায জামাআতের সাথে পড়া সম্ভব হল না।
.
পরদিন রোযা রাখা
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে
عن على بن ابى طالب رضى الله عنه قال : قال رسول الله (() : إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها, فإن الله ينزل فيهالغروب الشمس الى سماء الدنيا, فيقول : ألا من مستغفر فاغفر له على مستزرق فأرزقه, ألا مبتلى فأعافيه , ألا كذا, ألا كذا, حتى يطلع الفجر
হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, জ্ঞপনের শাবানের রাত (চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোযা রাখ। কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোন ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কোন রিযিক প্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দেব। এভাবে সুব্হে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তাঞ্চআলা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাদের ডাকতে থাকেন।ঞ্চ [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৩৮৪]
.
এই বর্ণনাটির সনদ যয়ীফ। কিন্তু মুহাদ্দিসীন কেরামের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হল, ফাযায়েলের ক্ষেত্রে যয়ীফ হাদীস গ্রহণযোগ্য। তাছাড়া শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোযা রাখার কথা সহীহ হাদীসে এসেছে এবং আইয়ামে বীয অর্থাৎ প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখার বিষয়টিও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
.
বলা বাহুল্য, পনের শাবানের দিনটি শাবান মাসেরই একটি দিন এবং তা আয়্যামে বীযের অন্তর্ভূক্ত। এজন্য ফিক্হের একাধিক কিতাবেই এদিনে রোযাকে মুস্তাহাব বা মাসনূন লেখা হয়েছে। আবার অনেকে বিশেষভাবে এ দিনের রোযাকে মুস্তাহাব বা মাসনুন বলতে অস্বীকার করেছেন। এ প্রসঙ্গে হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ত্বাকী উসমানী (দাঃবাঃ) তার ইসলাহী খুতুবাতে বলেন, ‘আরো একটি বিষয় হচ্ছে শবে বরাতের পরবর্তী দিনে অর্থাৎ শাবানের পনের তারিখে রোযা রাখা। গভীরভাবে বিষয়টি উপলব্ধি করা প্রয়োজন। হাদীসে রাসুলের বিশাল ভান্ডার হতে একটি মাত্র হাদীস এর সমর্থনে পাওয়া যায়। তাতে বলা হয়েছে, -শবে বরাতের পরবর্তী দিনটিতে রোযা রাখ।‘ সনদ বর্ণনার সূত্রের দিক থেকে হাদীসটি দুর্বল। তাই এ দিনের রোযাকে এই একটি মাত্র দুর্বল হাদীসের দিকে তাকিয়ে সুন্নাত বা মুস্তাহাব বলে দেওয়া অনেক আলেমের দৃষ্টিতে অনুচিত।’
তবে হ্যাঁ, শাবানের গোটা মাসে রোযা রাখার কথা বহু হাদীসে পাওয়া যায়। অর্থাৎ ১ শাবান থেকে ২৭ শাবান পর্যন্ত রোযা রাখার যথেষ্ট ফযীলত রয়েছে। কিন্তু ২৮ ও ২৯ তারিখে রোযা রাখতে রাসূলুল্লাহ (স) নিজেই বারণ করেছেন। ইরশাদ করেন, রমযানের দুএকদিন পূর্বে রোযা রেখো না।ঞ্চ যাতে রমযানের পূর্ণ স্বস্তির সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায়। কিন্তু ২৭ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিনের রোযাই অত্যন্ত বরকতপূর্ণ।
.
একটি লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হচ্ছে যে, শাবানের এই ১৫ তারিখটি তো ‘আইয়ামে বীয’ এর অন্তর্ভূক্ত। আর নবীজী প্রতি মাসের আইয়ামে বীয এ রোযা রাখতেন। সুতরাং যদি কোন ব্যক্তি এই দুটি কারণকে সামনে রেখে শাবানের ১৫ তারিখের দিনে রোযা রাখে যা আইয়ামে বীয এর অন্তর্ভূক্ত, পাশাপাশি শাবানেরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন, তবে ইনশাআল্লাহ নিশ্চয়ই সে প্রতিদান লাভ করবে। তবে শুধু ১৫ শাবানের কারণে এ রোযাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে সুন্নাত বলে দেওয়া অনেক আলেমের মতেই সঠিক নয়। আর সে কারণেই অধিকাংশ ফুকাহায়ে কেরাম মুস্তাহাব রোযার তালিকায় মুহাররমের ১০ তারিখ ও আইয়ামে আরাফা (যিলহজ্জের ৯ তারিখ) এর কথা উল্লেখ করেছেন অথচ শাবানের ১৫ তারিখের কথা পৃথকভাবে কেউই উল্লেখ করেননি। বরং তারা বলেছেন, শাবানের যে কোন দিনই রোযা রাখা উত্তম। সুতরাং এ সকল বিষয়ের দিকে দৃষ্টি রেখে যদি কেউ রোযা রাখে তরে ইনশাআল্লাহ সে সওয়াব পাবে। তবে মনে রাখতে হবে যে, রোজা রাখার ব্যাপারে এ মাসের নির্দিষ্ট কোন দিনের পৃথক কোন বৈশিষ্ট নেই।
.
এ রাতের নফল আমলসমূহ সম্মিলিত নয়, ব্যক্তিগত
এ রাতের নফল আমলসমূহ, বিশুদ্ধ মতানুসারে একাকীভাবে করণীয়। ফরয নামাযতো অবশ্যই মসজিদে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বে। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার কোন প্রমাণ হাদীস শরীফেও নেই আর সাহাবায়ে কেরামরে যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না। [ইক্তিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম ২/৬৩১-৬৪১; মারাকিল ফালাহ ২১৯]
.
তবে কোন আহবান ও ঘোষণা ছাড়া এমনিই কিছু লোক যদি মসজিদে এসে যায়, তাহলে প্রত্যেকে নিজ নিজ আমলে মশগুল থাকবে, একে অন্যের আমলের ব্যাঘাত সৃষ্টির কারণ হবে না।
.
কোন কোন জায়গায় এই রেওয়াজ আছে যে, এ রাতে মাগরিব বা ইশার পর থেকেই ওয়াজ-নসীহত আরম্ভ হয়। আবার কোথাও ওয়াজের পর মিলাদ-মাহফিলের অনুষ্ঠান হয়। কোথাও তো সারা রাত খতমে-শবীনা হতে থাকে। উপরন্তু এসব কিছুই করা হয় মাইকে এবং বাইরের মাইকও ছেড়ে দেওয়া হয়।
.
মনে রাখতে হবে, এসব কিছুই ভুল রেওযাজ। শবে বরাতের ফাযায়েল ও মাসায়েল আগেই আলোচনা করা যায়। এ রাতে মাইক ছেড়ে দিয়ে বক্তৃতা-ওয়াজের আয়োজন করা ঠিক না। এতে না ইবাদতে আগ্রহী মানুষের পক্ষে ঘরে বসে একাগ্রতার সাথে ইবাদত করা সম্ভব হয়, আর না মসজিদে। অসুস্থ ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় আরামেরও মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। আল্লাহ আমাদের এসব ভুল কাজকর্ম পরিহার করার তাওফীক দিন।
যে দুটো লিখাই সংগ্রহ করা এবং আমার প্রিয় আলেমের লিখা থেকে।
আর নিচের লিংকটা ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যারের।
https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=382660145268515&id=272863929581471&fref=nf
আপনার সত্যসন্ধানী বিবেকের উপর বাকি সব ছেড়ে দিলাম।
জাজাকাল্লাহু খাইরান
আপনার আবেগকে সম্মান করি কিন্তু সাবধান অনধীকার চর্চা করতে যেনো ধোকায় না পড়েন। জাজাকাল্লাহ।
ক: আমরা ওলামায়ে দেওবন্দ (আহনাফ) বলছি:
-শবে বরাতের অস্তিত্ব আছে। এ রাতের ফযীলতও আছে।
-তবে হাঁ, সম্মিলিতভাবে, রাতজেগে ইবাদত বা নির্দিষ্ট কোনও ইবাদত করার জোর তাকিদ নেই।
-রাব্বে কারীম এ-রাতে ব্যাপকভাবে ক্ষমা করবেন। এটা সহীহ হাদীসে আছে।
.
খ: শবে বরাতের বিপক্ষেও একদল আছে, আগে তাদের দাবী ছিল শবে বরাত বলে কিছু নেই। একজন তো অনস্তিত্ব প্রমাণ করতে পুস্তিকাও ছাপিয়ে ফেলেছেন। এ ব্যাপারে নাকি কোনও সহীহ হাদীস নেই। সব দুর্বল।
তিনি ইবনে হিব্বানের সহীহ হাদীসটাকে তিনি এড়িয়ে গেছেন নাকি ইচ্ছা করেই বাদ দিয়েছেন কী জানি!
.
এখন যখন প্রমাণ হলো, আসলেই শবে বরাতের অস্তিত্ব আছে। তখন বলা শুরু হলো, এই রাতে কোনও ইবাদত করতে হবে না। কারণ এ রাতে ইবাদতের ব্যাপারে কোনও সহীহ নেই। সুতরাং ঠেঁসে ঘুম দিয়ে ভোরে উঠে ফজর পড়–ন। এমনিতেই, কোনও ইবাদত ছাড়াই আল্লাহ মাফ করে দিবেন!
.
হাদীসে আছে এ রাতে রাব্বে কারীম মুশরিক আর হিংসুটে (বা ঝগুড়ে) ছাড়া, সবাইকে মাফ করে দিবেন।
এ প্রেক্ষিতে আমার আরেকটা হাদীস মনে পড়লো, ভাবটা এমন:
= নবিজী (সা.) রাত জেগে এত বেশি ইবাদত করতেন, পা মুবারক ফুলে যেতো। সাহাবায়ে কেরাম ব্যথিত হয়ে জানতে চাইলেন;
-আপনাকে তো অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের জন্যে আগাম মাফ করে দেয়া হয়েছে। তারপরও এত বেশি ইবাদত করার কী প্রয়োজন?
নবিজী (সা.) কী আসাধারণ উত্তর দিলেন, তিনি বললেন:
-আপালা আকুনু আবদান শাকুরান? আমি কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না?
.
নবিজীকে রাব্বে কারীম আগাম ক্ষমা করে দিয়েছেন। নবিজী শুকরিয়াস্বরূপ কী করলেন? রাতজেগে ইবাদত-বন্দেগী আরও বাড়িয়ে দিলেন।
.
তো এখন আমাদের করণীয় কী? আরে আমরাও রাতজেগে ইবাদত শুরু করে দিব। অবশ্য একটা ব্যাপার আছে:
-নবিজী (সা.) কিন্তু প্রতি রাতেই ইবাদত করতেন, আমরা কেন এ রাতেই শুধু রাত জাগার চেষ্টা করছি?
-সুন্দর প্রশ্ন। নবিজী (সা.) ক্ষমার সুসংবাদ পেয়েছেন স্বাভাবিকভাবে। কোনও নির্দিষ্ট রাতে নয়। তাই তিনি প্রতি রাতেই তিনি ইবাদত করে গেছেন।
আর আমরা সুসংবাদ পাচ্ছি শবে বরাতের রাতে, আমরাও না হয় এ রাত থেকেই শুরু করি! এটাও মনে রাখা জরুরী, এ রাতে ইবাদত করতেই হবে, এমনটা নয়। যারা ক্ষমা পেয়ে কৃতজ্ঞ বান্দা হতে চায় অথবা ক্ষমা পাওয়ার জন্যে শেষ মুহূর্তে আল্লাহর কাছে দেন-দরবার করতে চায়, ধর্না দিতে চায়, তারাই এ রাতে বেশি বেশি ইবাদত-তিলাওয়া করবে।
যারা ক্ষমা পেয়েও অকৃতজ্ঞ বা ক্ষমার আশা করে না, তারাই ভোঁস-ভোঁস করে ঘুমবে। অবশ্য ঘুমের পক্ষেও দলীল আছে, আরের হাদীসের ভাষ্যমতে, যারা ঈশার নামায জামাতের সাথে পড়লো, ফজরের নামাযও জামাতের সাথে পড়লো, সে যেন পুরো রাতই ইবাদত করে কাটাল।
.
যারা সাধারণ মানুষ, তারা ইবাদতের ক্ষেত্রে অলস। অনেকটা ফাঁকিবাজ ছাত্রের মতো। শুধু হাজিরা দেয়ার দিন, বেতন পাওয়ার দিনই উপস্থিত থাকে। বাকি দিনগুলো পালিয়ে বেড়ায়। তারা যদি একটা রাত ক্ষমা পাওয়ার আশায় একটু বেশি ইবাদত করতে চায়, তাদেরকে নিরুৎসাহিত করা কেন? তবে হাঁ তাদেরকে বাধ্যও করা ঠিক নয়। এ রাতে ইবাদত করতেই হবে এমন ভাবনা প্রচার করা ঠিক নয়।
.
এ রাতে ইবাদতের স্বপক্ষে তো কিছু হাদীস আছেই। হোক না সেগুলো কারো কারো কাছে দুর্বল। আমরা ওলামায়ে আহনাফ, ফযীলতের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীসের ওপর আমল করার ওপর জোর দেই।
.
খতীবে যমান, আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী (দাবা)-এর বয়ানের ছোট্ট একটা ক্লিপ দেখেছিলাম। আমার খুবই ভাল লেগেছে। তিনি অত্যন্ত অল্প কথায়, সুন্দর করে আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছেন:
--- শুধু কি সহিহ্ হাদীসই গ্রহনযোগ্য? আমরা কোন হাদীস মানবো? আমরা সব হাদীস মানবো:
= আকীদার বেলায় আমরা সহিহ হাদীস মানি।
= আমলের বেলায় আমরা হাসান হাদীস মানি।
= আর ফজিলতের বেলায় আমরা যঈফ হাদীসও মানি।
(ভিডিওটা কমেন্টে আছে। আর বাকি কথাগুলো পরে যোগ করে দেব। ইন শা আল্লাহ)
.
আমরা বুঝতে পারলাম, ক্ষমার ঘোষণা পেয়ে, রাতজেগে ইবাদত করা, নবিওয়ালা সুন্নাত। চলুন আমরা নবি (সা.) এর আদর্শ বাস্তবায়নে ঝাঁপিয়ে পড়ি। কিভাবে?
ক: মসজিদকে নববধূর সাজে সজ্জিত করে?
খ: হালুয়া-রুটি, আতশবাজি, মাযারবাজি-শিরকি সিজদাবাজি, মীলাদ-কেয়ামবাজি করে?
গ: বিকট আওয়াজে মসজিদের মাইক ছেড়ে, অন্যের ঘুমে ব্যঘাত ঘটিয়ে?
= মোটেও না। নেভার।
= আমরা ইচ্ছে হলে, নিজেদের সুবিধে মতো ইবাদত করতে পারি। নবিজী (স.) ক্ষমা পেয়ে শুকরিয়াস্বরূপ কী করতেন? বেশি বেশি কিয়ামুল লাইল করে, পা-মুবারক ফুলিয়ে ফেলতেন। আমরা পা ফোলাতে তো পারবো না, নিদেনপক্ষে দো-চার রাকাত তো পড় ভী সেকতে হোঁ!
.
আগেও বলেছি, আজ আবার বলছি, ওলামায়ে আহনাফের হিকমত-প্রজ্ঞা বোঝা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। হানাফী মাযহাব একশ ভাগ হাদীসের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এ মাযহাবের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য কী?
= সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, ওলামায়ে আহনাফ শরীয়তের প্রতিটি আমলের ব্যাপারে বর্ণিত সমস্ত হাদীস যাচাই করে দেখেন। অনেক চিন্তা-ভাবনা করেন। তারপর সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় চেষ্টা করেন:
ক: সবচেয়ে বেশি ফিকহি জ্ঞানের অধিকারী রাবীর হাদীস গ্রহণ করতে।
.
খ: সবচেয়ে বেশি যৌক্তিক হাদীসটা গ্রহণ করতে।
.
গ: সবচেয়ে শক্তিশালী সনদের হাদীস গ্রহণ করতে।
.
ঘ: এমন হাদীস গ্রহণ করতে, যেটার ওপর আমল করলে, আরও অনেক হাদীসের ওপর আমল করা হয়ে যায়।
.
ঙ: একটা হাদীস দেখেই ওটা নিয়ে লাফিয়ে না উঠে, নবিজী (সা.) এর পুরো সীরাত পর্যালোচনা করে, শেষ জীবনের কাছাকাছি কোনও হাদীস গ্রহণ করতে।
.
ওলামায়ে দেওবন্দের বৈশিষ্ট্য হলো, কিবতিবংশের সেই নব-মুসলিম ভাইয়ের মতো। তিনি মানুষকে যতটা পেরেছেন নাজাতের দিকে দাওয়াত দিয়ে গেছেন। একবার নয়, বারবার। ভাল কাজ করার পরও যখন তার জাতি তাকে গোমরাহীর দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছিল, তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন:
-ভায়েরা আমার! তোমরা হলোটা কী বলো দেখি, আমি ডাকছি তোমাদেরকে নাজাতের দিকে, মুক্তির দিকে, আর তোমরা আমাকে ডাকছ আগুনের দিকে?
.
তো এখন যদি বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ি ছাড়া, কোনও ভাই রাতজেগে ইবাদত-তিলাওয়াত করতে চায় তাকে নিরুৎসাহিত করে ঘুম পাড়িয়ে দেয়াটা কি ঠিক? এটা কি কিবতীদের মতো আচরণ হয়ে গেল না?
.
ও হা, বলতে ভুলে গেছি:
-বারা‘আত (বরাত) মানে হলো মুক্তি। দায়মুক্তি।
= শবে বরাত: দায়মুক্তির রাত। গুনাহর দায় থেকে মুক্তির রাত।
.
.
আমরা এ রাতে কী করতে পারি?
-----------------------------
যারা হানাফী মাযহাব মানেন, তারা জানেন, ওলামায়ে আহনাফ সব সময় চেষ্টা করেন একসাথে একাধিক হাদীসের ওপর আমল করতে। তাহলে আমরা কোনও বাড়াবাড়ি ছাড়া, যদি সম্ভব হয়, যদি ইচ্ছে হয়:
(এক) রাতে সুবিধে মতো নামায পড়তে পারি। কারণ নবিজী (সা.) ক্ষমা পেয়ে রাত জেগেছেন।
.
(দুই) তিলাওয়াত করতে পারি। কারণ নবিজী (সা.) রাতজেগে তিলাওয়াত করেছেন (সূরা মুযযাম্মিল)।
.
(তিন) পরদিন রোযা রাখলেও রাখতে পারি। কারণ নবিজী (সা.) শা‘বান মাসে বেশি বেশি রোযা রাখতেন। পাশাপাশি প্রতি মাসের ১৩-১৪-১৫ তারিখেও রোজা রাখতেন। আমরা তিনদিন না হলেও অন্তত একদিন, পনের তারিখেরটা রেখে দেখতে পারি।
.
সারা বছর নামায-কালিমা-মসজিদমুখো হওয়া তো দূরের কথা, পশ্চিম দিকে ফিরে যে একটা আছাড় পর্যন্ত খায়নি, যে যদি মনে করে, এই এক রাতেই সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, তার আশার গুড়ে বালি। অবশ্য রাব্বে কারীম চাইলে কী না পারেন!
.
আর অতি উৎসাহী হয়ে সারা রাত জাগলো, কিন্তু ফজরের নামায বাদ গেল, এহেন রাত জাগার কোনও মূল্য নেই। শতরাত জাগাও এক ওয়াক্ত ফজরের সমান হতে পারবে না। রাত জাগার ফলে যদি ফজর ছুটে যাওয়ার আশংকা থাকে, সেক্ষেত্রে রাতটা ঘুমিয়ে কাটানোই বরং ফরয।
ড. বি. এম. মফিজুর রহমান আল-আযহারী
অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।
‘শবে বরাত’ নাকি ‘লাইলাতুন নিসফি মিন সাবান’?
আমাদের দেশে এ রাতকে ‘শবে বরাত’ বলা হয়। ফারসী ভাষায়, শব অর্থ রজনী। আর বরাত অর্থ ভাগ্য। সুতরাং শবে বরাতের অর্থ দাঁড়ায়, ভাগ্য রজনী। মূলত: এই পরিভাষাটি কুরআন বা সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। বরং একটি আয়াতের অসতর্ক ব্যাখ্যা থেকেই এ ধরনের নামকরণ হতে পারে।
সূরা দুখানে বলা হয়েছে,
﴿ إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ . فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ ﴾
“নিশ্চয় আমি এটি নাযিল করেছি বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়”(সূরা দুখান:৩,৪)।
‘বরকতময় রাত’ বলতে অসাবধানতাবশত কেউ কেউ মধ্য শাবানকে বুঝেছেন। অথচ এর দ্বারা যে রমাদান মাসে অবস্থিত কদরের রাতকে বুঝানো হয়েছে, তা একটি অকাট্য বিষয়।
এজন্যই ইবনুল কায়্যীম (র.) বলেন,
” وهذه هي ليلة القدر قطعا لقوله – تعالى -: إنا أنزلناه في ليلة القدر ومن زعم أنها ليلة النصف من شعبان فقد غلط “
“এটি অকাট্যভাবে কদরের রাত্রি। কারণ আল্লাহ বলছেন, নিশ্চয়ই আমি কুরআনকে কদরের রাত্রিতে নাযিল করেছি। আর যারা শাবানের মধ্য রাত্র ধারণা করছে, তারা আসলে ভুল করছে”।
ইবনু কাসিরও বলছেন,
"ومن قال :إنها ليلة النصف من شعبان فقد أبعد النَّجْعَة فإن نص القرآن أنها في رمضان “
“যারা শাবানের মধ্য রাত্রি বলছেন, তারা বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছেন। বরং এটি যে রমাদান মাসের একটি রাত, সে ব্যাপারে কুরআনের ভাষা সুস্পষ্ট”।
আল্লামা শানকিতী বলেন, ” إنها دعوى باطلة ” (মধ্য শাবানের দাবী) একটি ভিত্তিহীন দাবী”।
এভাবে প্রমাণিত হলো, কুরআনের মধ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ রাতের কোন উল্লেখ নেই। বরং একাধিক হাদীসে এ রাতের উল্লেখ পাওয়া যায়। একটু পরেই যেগুলোর আলোচনা আসবে। যেথায় এ রাতকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা ‘শাবানের ১৫তম রজনী’ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই শবে বরাত না বলে এ রাতকে হাদীসের দেয়া ভাষায় নামকরণ করাই বাঞ্জনীয়।
তবে হা, বরাত বলতে যদি আরবী براءة (বারাআত) কে বুঝানো হয়, তাহলে অনেকটা মেনে নেয়া যায়। যার অর্থ, মুক্তি বা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি। তাহলে পুরো অর্থ দাঁড়াবে, গুনাহ বা জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত। কারণ হাদীসের আলোকে বুঝা যায়, এ রাতে এমনটি ঘটে থাকে।
শরীয়তের মানদন্ডে শাবানের ১৫তম রজনীর মাহাত্ম্য:
শাবানের মধ্য রজনী একটি পবিত্র ও মাহাত্ম্যপূর্ণ রজনী। এর রয়েছে স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ করুণা ধন্য এ রাত। এ রাতে ইবাদাত-বন্দেগী করা উত্তম। এ মর্মে কুরআনে কিছু না থাকলেও হাদীসের মধ্যে রয়েছে সুস্পষ্ট বক্তব্য। একাধিক হাদীস দ্বারা এই মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত। হযরত মু‘আয বিন জাবাল, আবু বকর, আবু ছা‘লাবাহ, আবু মুসা আশ‘আরী, আবু হুরায়রা, ‘আইশা, আবদুল্লাহ বিন ‘উমার ও আওফ বিন মালিক (রা.) প্রমুখ সাহাবী থেকে এ সব হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
নিন্মে হাদীসগুলো সূত্র ও স্তর বিবরণসহ উল্লেখ করা হলো:
১. মু‘আয বিন জাবালের হাদীস:
হযরত মু‘আয বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (স.) ইরশাদ করেন,
يَطْلُعُ اللَّهُ إِلَى خَلْقِهِ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ
“আল্লাহ তাঁর সমস্ত সৃষ্টির দিকে শাবানের মধ্যরাতে দৃষ্টি দেন। অতঃপর তাঁর সমস্ত সৃষ্টিকে মাফ করে দেন, শুধুমাত্র মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত”।
এ হাদীসটি ইবনি হিব্বান তাঁর ছহীহের বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাইসামী এ হাদীস প্রসঙ্গে বলেন:
رواه الطبراني في الكبير والأوسط ورجالهما ثقات.
“হাদীসটি ইমাম তাবারানী তাঁর আল-মু‘যাম আল-কাবীর ও আছ-ছগীরের মধ্যে রিওয়ায়িত করেছেন। এ দুটোতেই হাদীসটির বর্ণনাকারীরা নির্ভরযোগ্য”।
২. হযরত আবু বকরের হাদীস:
হযরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স.) বলেছেন,
(إذا كانت ليلة النصف من شعبان ينزل الله تبارك وتعالى إلى سماء الدنيا فيغفر لعباده إلا ما كان من مشرك أو مشاحن لأخيه
যখন শাবানের মধ্য রাত আসে, আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবর্তীর্ণ হন। তারপর সব বান্দাকে মাফ করে দেন। শুধুমাত্র মুশরিক ও যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রতি শত্রুতাভাবাপন্ন তাদেরকে ছাড়া”।
ইমাম হাইসামী مجمع الزوائد এ বলেন:
رواه البزار وفيه عبد الملك بن عبد الملك ذكره ابن أبي حاتم في الجرح والتعديل ولم يضعفه وبقية رجاله ثقات
হাদীসটি ইমাম বাযযার বর্ণনা করেছেন। এর সনদের মধ্যে আবদুল মালিক বিন আবদিল মালিক নামে একজন রাবী আছেন। ইবনু আবি হাতিম আল-জারহ অত-তাদিল কিতাবে তার কথা উল্লেখ করেছেন। তবে তাকে দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেন নি। এছাড়া, সনদের অন্যান্য সব রাবী (বর্ণনাকারী) বিশ্বস্ত”।
৩. আবু ছা‘লাবাহর হাদীস:
হযরত আবু ছা‘লাবাহ থেকে বর্ণিত। নবী (স.) ইরশাদ করেন,
يطلع الله إلى عباده ليلة النصف من شعبان فيغفر للمؤمنين ويمهل الكافرين ويدع أهل الحقد لحقدهم حتى يدعوه
“আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অর্ধ শাবানের রাতে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং সমস্ত মুমিনকে মাফ করে দেন। তবে কাফিরদেরকে অবকাশ দেন। আর হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারীদেরকে পরিত্যাগ করেন, যতক্ষণ না তারা হিংসা-বিদ্বেষ বর্জন করে”।
হাদীসটি ইমাম বাযযার তার মুসনাদে ও ইমাম বায়হাকী তার আস-সুনান আছ-ছুগরাতে বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাইসামী বলেন:
رواه الطبراني وفيه الأحوص بن حيكم وهو ضعيف
তাবারানী হাদীসটি বেওয়ায়েত করেছেন। এর মধ্যে আল-আহওয়াস বিন হাকীম নামে একজন রাবী আছেন। তিনি দুর্বল”।
৪. আবু মুসা আশ‘আরীর হাদীস:
আবু মুসা আশ‘আরী (রা.) রাসূল (স.) থেকে বর্ণনা করেন,
إِنَّ اللَّهَ لَيَطَّلِعُ في لَيْلَةِ النِّصْفِ من شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خلقة إلا لِمُشْرِكٍ أو مُشَاحِنٍ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ অর্ধ শাবানের রাত্রিতে তাকান। তারপর মুশরিক ও মুশাহিন (অন্যের প্রতি বৈরিভাব পোষণকার) ব্যতীত তাঁর সমগ্র সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন”।
ইমাম ইবনু মাজাহ এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। مجمع الزوائد (মাজমাউয যাওয়াইদ) নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে, إسناده ضعيف এর সনদটি দুর্বল। তবে ইমাম আলবানী বলছেন, حديث حسن এটি একটি হাসান হাদীস।
৫. হযরত আবু হুরায়রার হাদীস:
عن أبي هريرة قال قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: إذا كان ليلة النصف من شعبان يغفر الله لعباده إلا لمشرك أو مشاحن
হযরত আবু হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স.) বলেন, “যখন অর্ধ শাবানের রাত্রি আসে, আল্লাহ তাঁর সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। তবে মুশরিক ও মুশাহিন ব্যতীত”।
ইমাম ইবনুল হাইসামী এ হাদীস প্রসঙ্গে বলেন, “হাদীসটি ইমাম বাযযার বর্ণনা করেছেন। এর সনদের মধ্যে হিশাম বিন আবদুর রহমান নামে এক ব্যক্তি আছেন। তাকে আমি চিনি না। তবে অন্যান্য সবাই নির্ভরযোগ্য”।
৬. হযরত ‘আইশার হাদীস:
ক. ইমাম তিরমিযি হযরত ‘আইশা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
فَقَدْتُ رَسُولَ الله -صلى الله عليه وسلم- لَيْلَةً فَخَرَجْتُ فإذا هو بِالْبَقِيعِ فقال: أَكُنْتِ تَخَافِينَ أَنْ يَحِيفَ الله عَلَيْكِ وَرَسُولُهُ، قلت: يا رَسُولَ اللَّهِ إني ظَنَنْتُ أَنَّكَ أَتَيْتَ بَعْضَ نِسَائِكَ، فقال: إِنَّ اللَّهَ عز وجل يَنْزِلُ لَيْلَةَ النِّصْفِ من شَعْبَانَ إلى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَيَغْفِرُ لِأَكْثَرَ من عَدَدِ شَعْرِ غَنَمِ كَلْبٍ
“একদা রাত্রিতে আমি রাসূল (স.) কে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তাই তার সন্ধানে বের হলাম। জান্নাতুল বাকীতে গিয়ে তাকে পেলাম। তিনি বললেন, তুমি কি আশঙ্কা করছিলে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স.) তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ভেবেছিলাম, আপনি অপনার অন্য কোন স্ত্রীর কাছে গিয়েছেন। তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা অর্ধ শাবানের রাত্রিতে দুনিয়ার আকাশে অবর্তীর্ণ হন এবং বনী কালবের ছাগল পালের লোমের চেয়ে অধিক পরিমাণ মানুষের গুনাহ মাফ করে দেন”।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন,
حَدِيثُ عَائِشَةَ لَا نَعْرِفُهُ إلا من هذا الْوَجْهِ من حديث الْحَجَّاجِ وسَمِعْت مُحَمَّدًا يُضَعِّفُ هذا الحديث
‘আইশার হাদীসটি হাজ্জাজের এই সূত্র ছাড়া অন্য কোন ধারা থেকে আমাদের জানা নেই। মুহাম্মাদ এই হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন বলে শুনেছি’।
হাদীসটি আরো বর্ণনা করেছেন ইবনু মাজাহ, ইবনু আবি শাইবাহ, আহমাদ বিন হাম্বল। শুআইব আরনাউত বলেন, إسناده ضعيف এর সনদটি দুর্বল।
খ. ইমাম বায়হাক্কী বর্ণনা করেন,
أن عائشة قالت: قام رسول الله -صلى الله عليه وسلم- من الليل يصلي فأطال السجود حتى ظننت أنه قد قبض فلما رأيتُ ذلك قمت حتى حركت إبهامه فتحرك فرجعت، فلما رفع الي رأسه من السجود وفرغ من صلاته قال: يا عائشه أو يا حميراء: أظننت أن النبي قد خاس بك؟ قلت: لا والله يا رسول الله، ولكنني ظننتُ أنك قبضت لطول سجودك، فقال: أتدرين أي ليلة هذه؟ قلت: الله ورسوله أعلم قال هذه ليلة النصف من شعبان، إن الله عز وجل يطلع على عباده في ليلة النصف من شعبان، فيغفر للمستغفرين، ويرحم المسترحمين، ويؤخر أهل الحقد كما هم)
হযরত ‘আইশা (রা.) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (স.) রাতে নামাযে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সিজদা করলেন যে, আমার আশঙ্কা হলো, তাঁর হয়তো ইনতেকাল হয়ে গেছে। আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে ‘আইশা, অথবা বলেছেন, ও হুমায়রা! তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল (স.) তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যু বরণ করেছেন কিনা? নবীজী জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত)। আল্লাহ তা‘আলা অর্ধ শাবানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি প্রদান করেন, ক্ষমা প্রার্থনাকারীদেও ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহ প্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই”।
গ. ইমাম বায়হাকীর অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
فقال هذه الليلة ليلة النصف من شعبان، ولله فيها عتقاء من النار بعدد شعور غنم كلب،لا ينظر الله فيها إلى مشرك ولا إلى مشاحن ولا إلى قاطع رحم ولا إلى مسبل ولا إلى عاقّ لوالديه ولا إلى مدمن خمر، قال: ثم وضع عنه ثوبيه فقال لي: يا عائشة تأذنين لي في قيام هذه الليلة، فقلت: نعم بأبي وأمي فقام فسجد ليلا طويلا حتى ظننت أنه قبض، فقمت التمسته ووضعت يدي على باطن قدميه فتحرك ففرحت وسمعته يقول في سجوده: أعوذ بعفوك من عقابك، وأعوذ برضاك من سخطك، وأعوذ بك منك جل وجهك لا أحصي ثناءً عليك، أنت كما أثنيتَ على نفسك، فلما أصبح ذكرتهن له فقال يا عائشة: تعلمتِهنَّ؟ فقلت: نعم. فقال: تعلميهنَّ وعلميهنَّ؛ فإن جبريل عليه السلام علمنيهنَّ وأمرني أن أرددهن في السجود
‘অতঃপর তিনি বললেন, এই রাত্রিটি হচ্ছে অর্ধ শাবানের রাত্রি। এই রাতে আল্লাহ কালব গোত্রের ছাগলের গায়ে যে পরিমাণ পশম আছে, সেই পরিমাণ লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেন। তবে আল্লাহ এ রাতে মুশরিক, বিদ্বেষপোষণকারী, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, টাখনুর নীচে পোশাক পরিধানকারী, মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান এবং মাদকাসক্তের প্রতি তাকান না। অতঃপর আবরণ সরিয়ে বললেন, হে ‘আইশা! তুমি কি আমাকে এই রাত্রে ইবাদাত করার অনুমিত দিবে? আমি বললাম, অবশ্যই, আমার বাবা-মা আপনার জন্য কুরবান হোক। অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং এত লম্বা সিজদা করলেন যে, আমার ভয় হলো, তিনি মনে হয় ইনতেকাল করেছেন। তাই আমি উঠে তার শরীর স্পর্শ করলাম। তাঁর পায়ের তলদেশে হাত রাখলাম। তাঁর পা নড়ে ওঠলো। আমি খুশী হলাম। তাকে শুনতে পেলাম, তিনি বলছেন, (হে আল্লাহ) তোমার ক্ষমার দ্বারা তোমার শাস্তি হতে আশ্রয় চাই। তোমার সন্তুষ্টির দ্বারা তোমার ক্রোধ থেকে বাঁচতে চাই। তোমার থেকেই তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তোমার প্রশংসা করে শেষ করতে পারব না। তুমি তেমন, যেমনটি তুমি নিজেই নিজের প্রশংসা করেছ। অতঃপর যখন সকাল হলো, আমি এ দু‘আটি বললাম। রাসূল (স.) বললেন, ‘আইশা, তুমি মুখস্ত করে ফেলেছ? বললাম, হ্যাঁ। এগুলো মানুষকে জানিয়ে দাও, শিখিয়ে দাও। জিব্রাইল (আ.) আমাকে এগুলো শিখিয়েছেন এবং সিজদাতে এ দু‘আ পুনরাবৃত্তি করতে বলেছেন’।
ইমাম বায়হাকী হাদীসটি বর্ণনা করে বলছেন, এটির সনদ দুর্বল।
৭. হযরত আবদুল্লাহ বিন ‘উমরের হাদীস:
عن عبد الله بن عَمْرٍو انَّ رَسُولَ الله -صلى الله عليه وسلم- قال: يَطَّلِعُ الله عز وجل إلى خلقة لَيْلَةَ النِّصْفِ من شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِعِبَادِهِ الا لاِثْنَيْنِ: مُشَاحِنٍ وَقَاتِلِ نَفْسٍ
হযরত আবদুল্লাহ বিন ‘উমার (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (স.) বলেন, “আল্লাহ অর্ধ শাবানের রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি তাকান। অতঃপর সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেন, দু’ শ্রেণী ব্যতীত: ক. মুশাহিন (বিদ্বেষপোষণকারী) ; খ. মানব হত্যাকারী”।
ইমাম হাইসামী বলেন,
رواه أحمد وفيه ابن لهيعة وهو لين الحديث وبقية رجاله وثقوا
“ইমাম আহমাদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এর সনদের মধ্যে রয়েছে, ইবনু লাহীয়াহ। তিনি লাইয়্যেনুল হাদীস (হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে কিছুটা কোমলাতা/দুর্বলতা বিশিষ্ট)। তবেঅন্যান্য সব রাবী নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত”।
এছাড়া, ইমাম বাযযারও এটি বর্ণনা করেছেন।
৮. আওফ বিন মালিকের হাদীস:
عن عوف بن مالك قال قال رسول الله: – الله عليه وسلم- (يطلع الله تبارك وتعالى على خلقه ليلةَ النصف من شعبان، فيغفر لهم كلِّهم إلا لمشركٍ أو مشاحن
হযরত আওফ বিন মালিক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স.) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় সৃষ্টির উপর শাবানের মধ্যরাতে দৃষ্টি নিবন্ধন করেন। এবং তাদের সবাইকেই মাফ করে দেন। শুধুমাত্র মুশরিক ও মুশাহিন ছাড়া।
ইমাম হাইসামী বলেন,
رواه البزار وفيه عبدالرحمن بن زياد بن أنعم وثقه أحمد بن صالح وضعفه جمهور الأئمة وابن لهيعة لين وبقية رجاله ثقات
বাযযার হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এতে আবদুর রহমান বিন যিয়াদ বিন আনউম রয়েছে। ইমাম আহমাদ তাকে নির্ভরযোগ্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে অধিকাংশ আলিম তাকে দুর্বল আখ্যায়িত করেছেন। এছাড়া , ইবনু লাহিয়াহও আছেন। যিনি একটু নরম। বাকী সব রাবী সিকাত”।
৯. কাসীর বিন মুররা আল-হাদরামীর হাদীস।
عن كثير بن مرة الحضرمي، قال: قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: (إن اللهَ ينزل ليلةَ النصف من شعبان، فيغفر فيها الذنوب إلا لمشركٍ أو مشاحن
হযরত কাসীর বিন মুররা আল-হাদরামী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স.) বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ শাবানের মধ্য রাতে অবতীর্ণ হন। তারপর এ রাতে মুশরিক ও মুশাহিনের গুনাহ ব্যতীত অন্য সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন”।
হাদীসটি ইবনু আবি শাইবাহ, আবদুর রাজ্জাক তাদের মুছান্নাফে এবং বাযযার তাঁর মুসনাদের বর্ণনা করেছেন।
এতক্ষণে আমাদের সামনে যে বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে তাহলো, উপরিউক্ত হাদীসগুলোর সনদসমূহ সমপর্যায়ের নয়। কিছু শুদ্ধ, আবার কিছু দুর্বল। তবে সবগুলো একত্রিত করলে এ কথা না বলে কোন উপায় নেই যে, এ রাতটির ফজিলত একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য।
এজন্য গবেষকগণ বলছেন,
أنَّ الأحاديثَ في فضل ليلة النصف من شعبان ثابتة وفي أقلِّ أحولها أحاديث حسنة لغيرها بمجوع طرقها، ومن العلماء من صرح أنها صحيحة لغيرها بمجموع طرقها لأنّ من طرقها حسنة بذاتها
বর্ণনার সবগুলো ধারা একত্রিত করলে হাদীসগুলোর সর্ব নিন্মস্তর হবে ‘হাসান লিগইরিহা’।অনেকগবেষক আবার স্পষ্ট করে বলছেন যে, এদের সবগুলো ধারা সমন্বিত করলে ‘ছহীহ লিগইরিহা’র পর্যায়ভুক্ত হবে। কারণ এগুলো যে সব ধারাই বর্ণিত হয়েছে, তাতে নিজেরাই ‘হাসান’ হিসেবে গণ্য।
এ প্রসঙ্গে শরীয়াহ বিশেষজ্ঞ সর্বজন স্বীকৃত আলেমদের বক্তব্য বিষয়টিকে আরো প্রতিভাত করবে।
নিন্মেতা প্রদত্ত হলো,
হাফিজ ইবনু রজব বলেন,
اختلف فيها، فضعفها الأكثرون، وصحح ابن حبان بعضها، وخرجه في صحيحه.
অর্ধ শাবানের রাত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসগুলো নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। অনেকেই এগুলোকে দুর্বল বলেছেন। ইবনু হিব্বান এদের কিছুকে ছহীহ বলেছেন এবং তার ছহীহ কিতাবের মধ্যে তাখরীজ করেছেন।
ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ বলেন,
وأما ليلة النصف من شعبان ففيها فضلٌ، وكان في السلف من يصلي فيها، لكنَّ الاجتماع فيها لإحيائها في المساجد بدعةٌ، وكذلك الصلاة الألفية
“অর্ধ শাবানের রাতের মাহাত্ম্য রয়েছে। সালাফদের মধ্যে কেউ কেউ এ রাতে নামায পড়তেন। তবে মসজিদের মধ্যে এ রাতে ইবাদাতের জন্য একত্রিত হওয়াটা বিদ‘আত। তদ্রƒপ আলফিয়্যাহ নামক বিশেষ নামায আদায় করা”।
তিনি আরো বলেন,
ليلةُ نصف شعبان رويَ فيها من الأخبار والآثار ما يقتضي أنها مفضلة ومن السلف من خصَّها بالصلاة فيها وصوم شعبان جاءت فيه أخبار صحيحة أما الصوم يوم نصفه مفرداً فلا أصل له، بل يكره، قال: وكذا اتخاذه موسماً تصنع فيه الأطعمة والحلوى وتظهر فيه الزينة وهو من المواسم المحدثة المبتدعة التي لا أصل لها، وما قيل من قَسْمِ الأرزاق فيها لم يثبت
অর্ধ শাবানের রাত্রির ব্যাপারে অনেক হাদীস ও আছার বর্ণিত হয়েছে। যদ্বরা এ রাতের মাহাত্ম্য ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। সালাফ বা পূর্বসুরীদের মধ্যে কেউ কেউ এ রাতে বিশেষ করে নামায আদায় করতেন। শাবান মাসের রোজার ব্যাপারে বিশুদ্ধ হাদীস এসেছে। তবে শুধুমাত্র পনেরতম দিবসে একটি রোজা পালন করার কোন মূলভিত্তি নেই। বরং তা মাকরূহ। তিনি আরো বলেন, তদ্রƒপ এটিকে রকমারী খাদ্য, হালুয়া তৈরি ও সাজ-সজ্জা প্রকাশের উপলক্ষ বানানো বিদআত। যার কোন ভিত্তি নেই। আর এ রাতে রিযিক বন্টিত হয় এ মর্মে যা কিছু বলা হয় তা প্রমাণিত হয়নি” ।
ইমাম ইবনু নুজাইম আল-মাসরী বলেন,
ومن المندوبات إحياءُ ليالي العشر من رمضان وليلتي العيدين وليالي عشر ذي الحجة وليلة النصف من شعبان كما وردت به الأحاديث وذكرها في الترغيب والترهيب مفصلة والمراد بإحياء الليل قيامه وظاهره الاستيعاب ويجوز أن يراد غالبه، ويكره الاجتماع على إحياء ليلة من هذه الليالي في المساجد،
যে রাতগুলোকে জাগ্রহ রাখা মুস্তাহাব, সেগুলো হচ্ছে: রমাদানের দশরাত্র, দুই ঈদের দুই রাত্র, জিলহাজ্জ মাসের দশ রাত্র ও শাবানের মধ্যরাত্র। এ মর্মে একাধিক হাদীস রয়েছে। তারগীব ও তারহীব কিতাবে এগুলোর বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। রাতকে জাগ্রহ রাখার অর্থ হলো, ইবাদাতের মাধ্যমে বিনিদ্র রজনী কাটানো। পুরো রাত বা রাতের বেশির ভাগ সময়, দুটোই হতে পারে। এ সব রাতে ইবাদাতের জন্য মসজিদের একত্রিত হওয়া মাকরুহ”।
আল্লামা মুবারাকপুরী তার তুহফাতুল আহওয়াজী নামক গ্রন্থে বলেন,
اعلم أنه قد ورد في فضيلة ليلة النصف من شعبان عدة أحاديث مجموعها يدل على أن لها أصلاً… فهذه الأحاديث بمجموعها حجة على من زعم أنه لم يثبت في فضيلة ليلة النصف من شعبان شيء والله تعالى أعلم
“অর্ধ শাবানের মাহাত্ম্যের ব্যাপারে একাধিত হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এগুলো সামষ্টিকভাবে প্রমাণ করে যে, এ রাতের একটি ভিত্তি আছে”। এসব হাদীস সামষ্টিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ যারা মনে করে অর্ধ শাবানের রাতের ব্যাপারে কিছুই সাব্যস্ত হয়নি। আল্লাহই ভালো জানেন”।
আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী অর্ধ শাবানের রাত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসগুলো নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি কথা শুরু করেছেন এভাবে,
্রحديث صحيح روي عن جماعة من الصحابة من طرق مختلفة يشد بعضها بعضاًগ্ধ،
“হাদীসটি ছহীহ। একদল সাহাবী থেকে বিভিন্ন সূত্রে তা বর্ণিত হয়েছে। যাদের একটি আরেকটিকে মজবুত করে”।
আরশেষ করেছেন এ কথা বলে,
্রوجملة القول أن الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلا ريب، والصحة تثبت بأقل منها عدداً، مادامت سالمة من الضعف الشديد كما هو الشأن في هذا الحديثগ্ধ،
মোটামুটি কথা হলো, এই সব ধারায় বর্ণিত হাদীসটি নিঃসন্দেহে ছহীহ বা বিশুদ্ধ। এর চেয়ে কমসংখ্যক সূত্র দিয়েও হাদীসের বিশুদ্ধতা প্রমাণিত হয়। যদি না তাতে প্রবল কোন দুর্বলতা থাকে। যেমনটি এই হাদীস”।
এ রাতের ব্যাপারে কোন বিশুদ্ধ হাদীস নেই, এ মতের প্রবক্তাদের দাবী খন্ডন করতে গিয়ে আল্লামা আলবানী বলেন,
্রليس مما ينبغي الاعتماد عليه، ولئن كان أحد منهم أطلق مثل هذا القول، فإنما أتي من قبل التسرع، وعدم وسع الجهد لتتبع الطرق على هذا النحو الذي بين يديكগ্ধ.
এটা নির্ভরযোগ্য কথা নয়। এ ধরনের কথা যদি কেউ সাধারণভাবে বলেও থাকে, তবে তা নিতান্তই তাড়াহুরোপ্রসূত। হাদীসটির সবগুলো সূত্র বা বর্ণনার ধারা গবেষণায় যথাসম্ভব শক্তি ব্যয় না করেই এমনটি বলা হতে পারে”।
এ রাতে করণীয়:
উপরোক্ত হাদীসগুলো দ্বারা এ রাতের মাহাত্ম্য প্রমাণিত হলেও সেগুলোতে এ রাতের করণীয় কি তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি। শুধুমাত্র হযরত আইশার হাদীসে কিছু নমুনা পাওয়া যায়। তবে করণীয়র চেয়ে এগুলোতে বর্জণীয় কাজের প্রতিই অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। আর সে গুলো হচ্ছে: ১. শিরক ২. অন্যদের প্রতি বিদ্বেষ পরায়ণ হওয়া, ৩. কাউকে হত্যা করা, ৪. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা; ৫.টাখনুর নীচে কাপড় পরা. ৬. মা-বাবার অবাধ্য হওয়া ৭. মদ সেবন করা। তাই এ রাত্রির মাহাত্ম্য অর্জন করতে হলে প্রথমেই এ সব কাজ থেকে নিজেকে পবিত্র করতে হবে। তাওবাহ ও পারস্পরিক সম্পর্ক সুসংহত করে নেয়ার মাধ্যমে। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানির মনোভাব পরিত্যাগ করতে হবে।
বেশির হাদীসে দুটো জিনিস বেশি এসেছে। শিরক ও বিদ্বেষ। কারণ এদুটো এমনই মারাত্মক অপরাধ, যা মানুষের ধার্মিকতার মূলে কুঠারাঘাত করে। শিরকের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে ধার্মিকতার কোন লেশমাত্র থাকে না। আর হিংসা-বিদ্বেষের মাধ্যমে মানুষের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। সমাজে অরাজকতা সৃষ্টি হয়। মুসিলম উম্মাহর মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি হয়। তাদের শক্তি খর্ব হয়ে যায়। বিজাতীয় অধিপত্য বিস্তৃত হয়। ইসলামের পতাকা হয় অবনমিত। এভাবে এক পর্যায়ে ধর্ম বিলুপ্ত হয়ে যায়। বিজাতীয় কৃষ্টিকালচার ও জীবনধারার প্রবল আঘাতে। তাছাড়া, যে ব্যক্তি অন্যদের প্রতি বিদ্বেষ পোষন করে তার ধার্মিতাবোধ ও ধর্মানুশীলন ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়ে পেয়ে তা শুন্যের কোটায় চলে যায়। কারণ ইসলামের প্রতীকী পর্যায়ের ইবাদাতগুলো সামষ্টিক চেতনাদীপ্ত। নামায, রোজা, যাকাত, হাজ্জ ও আমরু বিল মারুফ, অননাহই আনিল মুনকার ইত্যাদি। মুশাহিন অন্যদের সাথে এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামায পড়তে যেমন পছন্দ করেনা, তেমনি অভাবীদের প্রতি যাকাতের হাত প্রসারিত করতে পারে না….এভাবেই তার ধর্মবোধ নষ্ট হয়ে যায়। এক কথায়, শিরক আল্লাহর সাথে আর বিদ্বেষ মানুষের সাথে সম্পর্ক বিনষ্ট করে দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ধর্মকেই ধ্বংস করে দেয়।
এছাড়া ও যে কাজ গুলো করা যেতে পারে, তাহলো,
ক. নফল নামায, জিকির-আজকার, তিলাওয়াত,ইলম চর্চা, দুআ ইত্যাদি। তবে তা একাকী করাই উত্তম। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এ রাতের কোন নির্দিষ্ট নামায বা অন্যকোন নির্দিষ্ট ইবাদাত নেই। যেমনটি অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়। এ রাত উপলক্ষ্যে, জামাতের সাথে বিশেষ ধরনের নামায আদায় করা, কিংবা অনিবার্য মনে করে মিলাদ মাহফিল করা বা মিষ্টি-হালুয়া ইত্যাদি বিরতণ, কিংবা ভাগ্য রজনী মনে করে সারা বছর ভালো খাওয়া যাবে এ নিয়্যতে এ রাতে রকমারী সুস্বাদু খাদ্য ব্যঞ্জনা খাওয়া, মসজিদ-মাজার ইত্যাদি আলোকসজ্জিত করা, ঈদ উৎসবের আমেজ নিয়ে আড়ম্বতাপূর্ণ পরিবেশে একত্রিত হওয়া, এ রাতকে লাইলাতুল কদরের সমপর্যায়ে নিয়ে প্রাপ্তির চেয়ে অধিক প্রদান করা এগুলো সবই হচ্ছে বাড়াবাড়ি।
পরের দিন রোজা রাখা যাবে কিনা?
প্রথম কথা হলো, রাসূল (স.) শাবান মাসের বেশির ভাগই রোজা রাখতেন। মেযনটি নিচের হাদীসদ্বয় দ্বারা প্রমাণিত হয়।
روى أسامة بن زيد عن رسول الله صلى الله عليه وعلى آله وسلم، أنه سأله قائلاً: يا رسول الله لم أرك تصوم من شهر من شهور العام كما تصوم من شهر شعبان ! فقال عليه الصلاة والسلام: ذلك شهر يغفل عنه كثير من الناس بين رجب ورمضان، وهو شهر ترتفع فيه الأعمال إلى الله عز وجل، فأحب أن يرتفع عملي إلى الله وأنا صائم
হযরত উসামাহ বিন যাইদ থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূল স. কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, শাবান মাসে আপনি যে পরিমান রোজা রাখেন, আপনাকে অন্য কোন মাসে এত রোজা রাখতে দেখিনা। তখন রাসূল বললেন, রজন এবং রমাদানের মধ্যে অবস্থিত শাবান সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই উদাসীন। তাছাড়া, এ মাসে মানুষের আমলগুলো আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়, তাই আমি চাই রোজাদার অবস্থায় যেন আমার আমলগুলো আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়”।
খ. হযরত আইশা থেকে বণিত।
وَلَمْ أَرَهُ صَائِمًا مِنْ شَهْرٍ قَطُّ أَكْثَرَ مِنْ صِيَامِهِ مِنْ شَعْبَانَ ، كَانَ يَصُومُ شَعْبَانَ كُلَّهُ ، كَانَ يَصُومُ شَعْبَانَ إِلا قَلِيلا .
রাসলূকে (স.) শাবান মাসের মত এত রোজা অন্য কোন মাসে রাখতে দেখিনি । তিনি পুরো শাবান কিংবা এর অধিকাংশ অংশই রোজা রাখতেন।
দ্বিতীয়ত: শুধু ১৫ই শাবান দিবসে একটি রোজা রাখা যাবে কিনা, এ ব্যাপারে একটি হাদীস রয়েছে। তবে হাদীসটি বিশুদ্ধ না হওয়ায় তা প্রমাণযেগ্য নয়।
হাদীসটি হচ্ছে:
عن عَلِيِّ بن أبي طَالِبٍ قال، قال رسول الله –صلى الله عليه وسلم-: (إذا كانت لَيْلَةُ النِّصْفِ من شَعْبَانَ فَقُومُوا لَيْلَهَا وَصُومُوا نَهَارَهَا فإن اللَّهَ يَنْزِلُ فيها لِغُرُوبِ الشَّمْسِ إلى سَمَاءِ الدُّنْيَا فيقول: ألا من مُسْتَغْفِرٍ لي فَأَغْفِرَ له، ألا مُسْتَرْزِقٌ فَأَرْزُقَهُ، ألا مبتلى فَأُعَافِيَهُ، ألا كَذَا ألا كَذَا حتى يَطْلُعَ الْفَجْرُ
“হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স.) ইরশাদ করেন, অর্ধ শাবান যখন আসে, তখন তোমরা এর রাত্রিটিকে (ইবাদাতের মাধ্যমে) জাগ্রত রাখো এবং তার (পরবর্তী) দিবসে রোজা রাখ। কারণ আল্লাহ এ রাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে প্রথম আকাশে নাযিল হন এবং বলতে থাকেন, কেউকি আছো ক্ষমা প্রার্থনাকারী, আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো, কেউ কি আছো রিযিক অন্বেষণকারী, তাকে রিযিক দেবো, কেউ কি আছো বিপদাপন্ন/অসুস্থ, তাকে বিপদমুক্ত/সুস্থতা দেব। কেউ কি আছো…কেউকি আছো..? এভাবে সুর্যাস্ত পর্যন্ত বলতে থাকেন”।
এ হাদীসটি ইবনু মাজাহ বর্ণনা করেছেন। তবে হাদীসটির সনদ অত্যন্ত দুর্বল। এ জাতীয় দর্বল সনদবিশিষ্ট হাদীস দিয়ে প্রমাণ পেশ করা সমীচিন নয়। এ ব্যাপারে সরাসরি হাদীসবিশারদদের মতামত দেখা যাক:
ইমাম ইবনুল যাওযী বলছেন, هذا حديث لا يصحُّ হাদীসটি শুদ্ধ নয়। ইরাকী ও ইমাম আইনী বলেন, إسناده ضعيف এর সনদ দুর্বল। ইমাম ইবনু শিহাব আল-বুসাইরী বলেন,
هذا إسناد فيه ابن أبي سبرة، واسمه أبو بكر بن عبد الله بن محمد بن أبي سبرة. قال أحمد بن حنبل، ويحيى ابن معين: يضع الحديث
এর সনদের মধ্যে রয়েছেন ইবনু আবী সুবরাহ। তার পুরো নাম, আবু বকর বিন আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন আবি সুবরাহ। ইমাম আহমাদও ইয়াহইয়া বিন মায়ীন বলেন তার সম্পর্কে: তিনি হাদীস জাল করেন।
ইমাম বুখারী বলেন: লোকটি দুর্বল। নাসাঈ বলেন, متروك الحديث তার হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়। ইবনু হিব্বান বলেন,
كان ممن يروي الموضوعات عن الثقات، لا يجوز الاحتجاج به.
আবু সুবরাহ জাল হাদীস বর্ণনাকারীদের একজন। তার বর্ণনা দিয়ে প্রমাণ পেশ করা বৈধ নয়।
ইমমা আলবানী বলেন: হাদীসটি খুবই দুর্বল কিংবা বানোয়াট।
তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো,
أنّ من صام هذا اليوم بنية صوم يوم من شعبان، أو الأيام البيض أو وافق يوم الاثنين أو الخميس فلا شيَء عليه، بل أصاب السنة كما هو معلومٌ عند أهل الشأن؛ فالنية هي الحدّ الفاصل في صيام هذا اليوم، وصدق الصادق المصدوق بقوله: (إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى..)
যদি কেউ এ নিয়্যাত করে ১৫ শাবানের রোযা রাখে যে, এটি শাবান মাসের একটি দিনের রোযা কিংবা বেজোড় দিবসসমূহ অথচা তা সোম ও বৃহস্পতিবারের অভ্যাসগত রোযার সাথে মিলে যায়, তাতে কোন সমস্যা নেই। বরং এর মাধ্যমে সে সুন্নতেরই অনুসরণ করলো। নিয়্যাতই এখানে পার্থক্য নির্ণয়কারী। রাসূল (স.) বলেন, নিয়্যাতের উপরই নির্ভরশীল মানুষের আমল”।
মোট কথা, এ রাতের মাহাত্ম্য আছে, তবে সীমালংঘনের সুযোগ নেই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন