প্রিয় লেখকঃ আমার প্রিয় লেখক একজন জীবন্ত কিংবদন্তী, সালাম হে প্রিয়..
লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ০১ জুন, ২০১৫, ১১:৫৫:২৯ সকাল
ছোটবেলায় দুখুমিয়ার গল্প পড়ে অনেক অনেক আবেগ আপ্লুত হয়েছি, জানার আগ্রহে কৌতুহলী মন নিয়ে বড় আপুকে দুখুমিয়া সম্পর্কে অযথা নানান প্রশ্ন করেছি। দুখুমিয়া কেমন দুষ্টমি করতো, কেমন করে স্কুল পালাতো, পাড়ার ছেলেদের ও ক্লাসের ছাত্রদের পিটাইতো কিনা, ডাঙ্গগুলি, কানামাছি, মার্বেল, হা-ডু-ড়ু এবং বৃষ্টিতে ভিজে কাদার মধ্যে ফুটবল খেলতো কিনা? পুকুর পাডের অনেক উঁচু গাছ থেকে পুকুরে লাফ দিত কিনা? সুতোর কল দিয়ে খেজুর গাছ থেকে পাখি ধরতো কিনা? চেঙ্গা মুঁয়া অথবা ঝোপঝাড়ে আগুন লাগাতো কিনা? দুষ্টমির জন্য দুখুমিয়াকে কেউ বকা দিত কিনা! ক্লাসে স্যারের টেবিল থেকে 'ছক' চুরি করে বোর্ডে অথবা দেওয়ালে লিখালিখি করতো কিনা? অযথা ক্লাসের কোন ছাত্রকে ক্ষেপানোর জন্য তার অজান্তে তার পিঠের উপর "আমি কলম চোর/ আমি বই চোর/আমি গরু চোর" এই ধরনের কোন স্টিকার লাগিয়ে দিত কিনা? এই ধরনের নানান প্রশ্ন করতাম। কারন সব ধরনের দুষ্টমি আমি করতাম। পড়ালেখার জন্য স্কুলের শিক্ষকদের হাতে কখনো মাইর খাওয়ার রেকর্ড না থাকলেও দুষ্টমির জন্য আম্মু, আব্বু, আপু, মক্তবের হুজুর ও স্কুলের শিক্ষকদের হাতে মাইর খাওয়ার রেকর্ড আছে। পিটানি খাওয়ার সময় আফসোস করে বলতাম, "মিঃদুখুমিয়া, তোমার মা-বাবা ও বড় বোন না থাকার কারনেই তুমি পিটানি খাওয়ার হাত থেকে বেঁচে গেছ, না হয় তোমার কপালেও আমার মত দুঃখ ছিল"!
'ছুটি' গল্পের দুরন্ত ফটিকের কারনে রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর ও আমার প্রিয় লেখকে পরিনত হয়েছিলেন। যতবারই গল্পটা পড়তাম, ততবারই আফসোস করে বলতাম, বেচারা ফটিক, তুই কোলকাতা না গিয়ে যদি আমার বাড়িতে আসতি, তাহলে দুইজনে মিলে এলাকায় দুষ্টমির রাজত্ব কায়েম করতে পারতাম!
কলেজ জীবনে কিছু ইসলামিক মাইন্ডের মেধাবী ছাত্রদের সাথে চলাফেরা করার সুবাদে আমি পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে গিয়েছি। তারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করা, নিয়মিত কোরান হাদিস অধ্যায়ন করা, ইসলামি সাহিত্য পড়া ও সর্বনিম্ন ৬ ঘন্টা পড়ালেখা করা আমার জন্য বাধ্যতামূলক করে দিয়েছিলেন। ইসলামি সাহিত্য পড়তে গিয়ে একদিন নসিম হিজাজির লিখা "খুন রাঙ্গা পথ" বইটি হাতে পেলাম, ৪৪৮ পেইজের বইটি যত পড়লাম ততই মোয়াজজেম আলীর চরিত্রে নিজেকে হারিয়ে পেললাম, জানতে পারলাম ভারতবর্ষের ইতিহাস, আরোও নানান ঘটনা।'খুন রাঙ্গা পথ', 'কায়সার ও কিসরা' এবং 'সীমান্তে ঈগল' ইতিহাস সমৃদ্ধ এই বইগুলোর কল্যানে নসিম হিজাজির ভক্ত হয়ে গেলাম।
সালাউদ্দিন আইয়্যুবি(র) কে নিয়ে লিখা আসাদ বিন হাফিজের ৩০ পর্বের ক্রুসেড সিরিজের সবগুলো বই পড়ে অভিভূত হলাম।পৃথিবীর ইতিহাসে এই রকম আল্লাহ ভীরু, ন্যায়পরায়ণ, উদার, বিচক্ষণ ও কৌশলী,দুনিয়া কাপানো সমরনায়ক খুব বিরল। মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি, অতীতের মত বর্তমান মুসলিম গাদ্দার ও মুনাফিক শাসকদের শায়েস্তা করে, ইহুদী নাসারা ও মুশরিকদের নাস্তানাবুদ করে সারা দুনিয়াব্যাপী ইসলামের মহান পতাকা আবার উড্ডয়ন করতে তিনি যেন আরেকজন সালাউদ্দিন আইয়্যুবি(র), তাঁর বন্ধু নুরউদ্দিন জঙ্গী(র) ও তাঁর সহযোগী দুনিয়া সেরা গোয়েন্দা প্রধান আলী বিন সুফিয়ানের মত ব্যক্তি আমাদেরকে উপহার দেন। এই সিরিজের মাধ্যমে আসাদ বিন হাফিজও আমার প্রিয় লেখকদের একজন হয়ে গেলেন।
যে বইটি পড়ে ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিমদের আগমন থেকে শুরু করে ১৯৪৭ এর দেশ বিভাগ পর্যন্ত মুসলিমদের সুখ-দু:খের নির্মম ইতিহাস জেনেছিলাম, বার বার চোখ দুটি অশ্রুসিক্ত হয়েছিল, সেটি হচ্ছে; আব্বাস আলী খানের রচিত "বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস" আমি মনে করি বাংলার প্রতিটি মুসলিমের এই বইটি পড়া উচিত, তাহলে সে তার শিকড় সমন্ধে জানতে পারবে। ৫১৮ পেইজের এই বইটির মাধ্যমে মরহুম আব্বাস আলী খান(র)ও আমার প্রিয় লেখকদের একজন হয়ে গেলেন।
উপ-মহাদেশের স্বনামধন্য ইসলামিক চিন্তাবিদদের লিখা ইসলামি সাহিত্য গুলো প্রায় নিয়মিতই অধ্যায়ন করি। এইসকল ইসলামি চিন্তাবিদদের মাঝে যাদের লিখা সাহিত্য আমার মনের খোরাক যুগিয়েছে তাঁরা হলেন, সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদী(র), অধ্যাপক গোলাম আযম(র), আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদি, নঈম সিদ্দিকী, ডঃ জাকির আব্দুল করিম নায়েক, খুররম জাহ মুরাদ, জয়নব আল গাজ্জালী ও আবুল আসাদ। কোরআন ও হাদিসের আলোকে লিখা এই সাহিত্য গুলোর প্রতিটা পেইজ গভীরভাবে অনুধাবন ও বিশ্লেষণযোগ্য। শুধুমাত্র অন্ধ বিরোধিতা ও ফতোয়াবাজির জন্য নয়, বরং ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে বুঝার জন্য দল, মত নির্বিশেষে সবাই দরদভরা মন নিয়ে এই সন্মানীত লেখকদের লিখা সাহিত্য গুলো পড়তে পারেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর আব্দুল জলিলের লিখা "অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা" এবং মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাছিনার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান রেন্টুর লিখা "আমার ফাঁসি চাই" বই ২টা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। একটা দলের প্রতি আমার অন্ধবিশ্বাস চিরতরে দূর করে দিয়েছে এবং আঙ্গুল দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আসল সত্যটাই দেখিয়ে দিয়েছে। এই দুইজন লেখককে আল্লাহ জান্নাত দান করুক।
জনপ্রিয় লেখক মাইকেল এইচ. হার্টের "বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১০০ মনীষীর জীবনী" বইটি দুইবার পড়েছি। বিশ্বের সেরা ১০০ মনীষীর সাথে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার জন্য এবং একজন অমুসলিম হয়েও এই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ মুহাম্মদ(সঃ) কে এক নাম্বারে স্থান দেওয়ার জন্য এই লেখককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছি। শিব খেরার 'তুমিও জিতবে' বইটি আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এছাড়াও আরোও অনেক পরিচিত/অপরিচিত লেখকের অসংখ্য বই পড়েছি যেগুলো আমার মনের খোরাক যুগিয়েছে। সকল লেখকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
মুহতারাম শ্রদ্ধেয় লেখক আবুল আসাদ তাঁর সাইমুম সিরিজের "আহমদ মুসা" চরিত্রকে কোরআন, হাদিস ও ইসলামি সাহিত্যজ্ঞানে ভরপুর একজন আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান ও আগ্নেয়াস্ত্র জ্ঞানে সমৃদ্ধ, দূরদর্শিতা সম্পন্ন, নির্যাতিত-নিপীড়িত মুসলিমদের কান্ডারী, যোগ্য সংগঠক ও কালেমার পতাকা বিশ্বব্যাপী বুলন্দিত করার জন্য এক নিবেদিত ধর্মপ্রাণ মুসলিমের চরিত্রে ফুটিয়ে তুলেছেন। সাইমুম সিরিজের ১ম পর্ব "অপারেশন তেলআবিব" থেকে ৫৩ তম পর্ব "রাইন থেকে আরেন্ডসী" পর্যন্ত পড়ে পরের পর্বের জন্য অপেক্ষারত। ৫৩টি পর্বে ৯৩৬৭ পেইজে সমৃদ্ধ সাইমুম সিরিজের আমার প্রিয় কিংবদন্তী লেখক মুহতারাম আবুল আসাদ আমার হৃদয় দখল করেই আছেন। সারা বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের প্রকৃত ইতিহাস জানার জন্য, মানবতার ফেরিওয়ালা, অভিশপ্ত ইহুদী, ঘৃণিত খৃস্টান ও মুশরিকদের নানাবিধ চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের প্রকৃত চেহারা চিনার জন্য, ঈমানকে জাগ্রত ও স্বভাব - চরিত্রকে ঠিক রাখার জন্য সকল মুসলিমের সাইমুম ও ক্রুসেড সিরিজের বইগুলো পড়া উচিত। আমার প্রিয় কিংবদন্তী লেখক মুহতারাম আবুল আসাদ স্যারের "কালো পঁচিশের আগে ও পরে" মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ৩৫২ পেইজের তথ্যপ্রমাণ সমৃদ্ধ নিরপেক্ষ এই বইটি পড়ে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারলাম।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ আমার প্রিয় লেখক রাজশাহী জেলার বাগমারা থানার নরসিংহপুর গ্রামে ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম.এ পাশ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তাঁর লেখক ও সাংবাদিকতা জীবনের শুরু। তিনি কয়েকটি দৈনিক ও সাপ্তাহিকে রাজশাহী সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেছেন। ছাত্রজীবনে কলেজ ম্যাগাজিনসহ পত্র-পত্রিকায় লিখিত তাঁর রাজনীতি ও সংষ্কৃতি বিষয়ক প্রবন্ধাদি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ১৯৭০ সালে ১৭ই জানুয়ারী দৈনিক সংগ্রামে সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তিনি সার্বক্ষণিক সাংবাদিক জীবনের শুরু করেন। ১৯৮১ সালে তিনি দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহন করেন। তিনি সুপরিচিত একজন প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট। তিনি বর্তমানে সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তাঁর বহুমুখী সাহিত্যকর্ম অব্যাহত রেখেছেন।
হে আল্লাহ, তুমি আমার প্রিয় লেখক আবুল আসাদ স্যারকে শারিরীক সুস্থতা দান করো, উনাকে হায়াতে তাইয়্যেবাহ দান করো।
বিষয়: বিবিধ
৩৭৭৪ বার পঠিত, ৩৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ভদ্রলোকের নাম সম্ভবত কর্ণেল হামিদ(রানি হামিদের স্বামি এবং কায়সার হামিদের বাবা) উনার বইয়ের নামটাও মনে নেই। ৭১ থেকে ৭৫ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী নিজের চোখের সামনে যা দেখেছেন তাই তুলে ধরেছেন। চমৎকার একটি বই>। দুঃখিত নামটা মনে করতে পারছিনা। পড়ে দেখতে পারেন।
আবারও দুঃখিত আমি নিজে কিছু বাড়তি কথা বলে ফেললাম। আপনার প্রিয় তালিকাটি আসলেই সুন্দর হয়েছে।
কর্নেল হামিদ
আবুল আসাদের একশ বছরের রাজনীতিটাও সংগ্রহে রাখতে পারেন। আমার সংগ্রহে আছে। কিন্তু এখনও পড়া হয়ে ওঠেনি।
আপনার কালেকশনে যদি না থাকে তাহলে আপনাকে একটা লিংক দিতে পারি, ঐখান থেকে ফ্রি তে সবগুলো ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমি বুঝতে পারছিনা আপনি যে পরিমাণ দুষ্টুমির বর্ণনা দিয়েছেন তাতে আপনার বিজ্ঞানী টাইপ কিছু হওয়ার কথা । কোথাও কিঞ্চিৎ ভূল হচ্ছে না তো ?
যাই হোক, আপনার একজন যোগ্য লোককেই প্রিয়র তালিকায় স্থান দিয়েছেন । এমন কা্ন্ডারী যুগে যুগে শত শত আসা দরকার ।
আপনার উৎসাহ মুলক মন্তব্য অনেক অনেক ভাল লাগলো। সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
অনেক পথভুলা তরুন কে সঠিক পথে এনেছে সাইমুম। বাপ-মা এর ভয়ে যারা ইসলামি বই বাসায় নিতে সাহস করত না তারা সেবার বই মনে করে সাইমুম পড়েছে মজা পেয়েছ এবং সত্য জেনেছে।
যাদেরকে আপনার প্রিয় তালিকায় রেখেছেন তারা আমারও প্রিয়। তবে এক জনের নাম বলতে বললে ব্লব,'সাইয়্যেদ মৌদূদী'।
ধন্যবাদ।
চমৎকার, সবালীল বর্ননায় সুখপাঠ্য লিখনীটির জন্য শুকরিয়া! অনেক অনেক শুভকামনা জানবেন!
আপনার সফলতা কামনা করছি!
মন্তব্য করতে লগইন করুন