সন্মানীত অভিভাবকদের প্রতি টিউটরের কিছু পরামর্শ।
লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ২০ মে, ২০১৫, ০৫:৩০:৪৬ বিকাল
আমার আগের পোষ্টে "১২ বছরের টিউশনি জীবন ও কিছু বিচিত্র অভিজ্ঞতা" সম্পর্কে কিছু লিখেছিলাম। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নানান ধরনের অভিভাবকদের সাথে আমার মিলিত হওয়ার সুযোগ হয়েছে। কিছু অভিভাবকদের এমনও দেখেছি, যারা মনে করেন সন্তানের পড়ালেখার সব দায়-দায়িত্ব টিউটরের! শুধু টিউটরের কাছে পড়লেই পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট নিশ্চিত, অভিবাবকদের কোন প্রকার ভূমিকার প্রয়োজন নাই, মাঝেমাঝে পড়ার টেবিলে এসে ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে নানান রকমের অভিযোগ করবেন, আর বলবেন আপনার পড়া যদি না পারে তাহলে আপনি আপনার ইচ্চেমত পিটাবেন, মনে হয় টিউটরের দায়িত্বই শুধু পিটানো! আর ছেলেমেয়েরা পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করতেই হবে, রেজাল্ট একটু খারাপ হলে যাবতীয় দোষ টিউটরের! টিউটর বেটা যেন টিউশন টা নিয়েই ফাইস্যা গেছে!
সব জান্তা টাইপের কিছু অভিবাবক আছে, যারা টিউটর কে সব সময় পড়ানোর ব্যাপারে কোন না কোন দিক নির্দেশনা দিবেই দিবে। নিজেদের সন্তানদের প্রতি ওভার কনফিডেন্স রাখবে, আর টিউটরের বিন্দু পরিমান হলেও দোষ ধরার চেষ্টা করবেই। ক্লাসের টেস্ট পরীক্ষায় কোন বিষয়ে যদি নাম্বার একটু কম পায়, তাহলে এতবেশি পেরেশানি দেখাবে, যেন এই ছেলে মেয়েদের দিয়ে ভবিষ্যতে কিছুই হবেনা, এদের নিয়ে উনাদের জীবনটাই বরবাদ হয়ে গেছে! সাথে সাথে অভিযোগ করবে, শুধুমাত্র ছেলেমেয়েদের না, এই কম নাম্বারের পিছনে টিউটরের ও গাফিলতি ছিল! আর পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করলে সব কৃতিত্ব ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের হয়ে যায়, ভাল রেজাল্টের পিছনে টিউটরের তেমন কোন ভূমিকাই থাকেনা! এমনকি টিউটরের সামনেই ছেলেমেয়েদের শাসন করা শুরু করে! এ যেন "ঝি কে মেরে বৌকে শিখানো"! ফাইনাল পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করার পর এই রকম একজন অভিবাককে একবার কিছু কড়া কথা বলেছিলাম।
কিছু অভিভাবক আছে, যারা সার্বক্ষণিক তাদের অভাব অনটনের কথা টিউটর কে বলবেই! টিউটরের বেতন দেওয়ার সময় এমন একটা ভাব দেখাবে যেন অনেক কষ্ট করেই টাকাটা দিচ্ছে! অথচ তাদের যাবতীয় সব কাজ বরাবরই হয়, টাকার জন্য কিছুই থেমে থাকেনা, শুধুমাত্র টিউটরের সামান্য টাকাটা দিতে আসলেই তাদের পেটের ব্যাথা বেড়ে যায়! আবার কিছু ব্যতিক্রম ধরনের অভিবাবক আছে, যারা সব সময় একটা বড় লোকি ভাব নিয়ে থাকেন, টিউটর যেন তাদের বেতনভুক্ত কর্মচারী! তাদের সন্তানগুলো যেন ননীর পুতুল, শাসন করাতো দূরে থাক ধমক দিয়ে কথা বলাও যাবেনা! তাদের কথামত টিউটর কে পড়াতেই হবে, ভাবখানা এমন যেন তাদের টিউশনির টাকা দিয়েই টিউটরের পেট চলে! আমার কথা হলো, টিউটরের সাথে গরিবের ভাব ধরারও দরকার কি, আবার বড় লোকি ভাব দেখানোর ও দরকার কি??
দীর্ঘদিনের টিউশনির জীবনে কিছু অভিভাবক পেয়েছি, যারা সু-শিক্ষিত, সচেতন ও আন্তরিক। তারা হাজারো কর্মব্যস্ততার মাঝেও নিজেদের সন্তানদের পড়ালেখার খবর রাখেন, টিউটরের খবর রাখেন এবং আপ্যায়নের ব্যাপারেও যথেষ্ট আন্তরিকতা দেখান। এই ধরনের অভিভাবকদের সন্তানদের পড়াতেও যেকোন টিউটর উৎসাহবোধ করেন, সর্বোপরি উনাদের সন্তানেরা কখনো খারাপ রেজাল্ট করেনা।
অভিভাবকদের বলবো, আপনারা সন্তানের পড়ালেখার সব দায়-দায়িত্ব শুধু টিউটরের উপর ছেড়ে দিবেন না, নিজেরাও খোজ খবর রাখবেন। টিউটর আপনার সন্তানদের ১-২ ঘন্টা দেখবে, কিন্তু বাকি সময় আপনাদেরকেই দেখতে হবে। সন্তানদের অতিরিক্ত আদরও করবেননা আবার খুব বেশি শাসন ও করবেন না। আপনার সন্তান সবকিছু সময়মত করতেছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব আপনার। সন্তানদেরকে আধুনিকতার মধ্যে ছেড়ে দিবেন না, ইসলামিক বিষয় গুলো মেনে চলতে অনুপ্রাণিত করুন। প্রত্যেক টিউটর তার ছাত্র-ছাত্রীদের ভাল রেজাল্ট করানোর জন্য আপ্রাণ চেস্টা করেন। ছাত্র-ছাত্রীদের খারাপ রেজাল্ট কোন টিউটর কামনা করেন না। আপনাদের সন্তানদের ভাল রেজাল্ট করানোর জন্য মাঝেমাঝে টিউটরেরা এত বেশি ব্যস্ত হয়ে যান যে, নিজের ব্যক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলোও তখন তাঁর কাছে গুরুত্বহীন হয়ে যায়। ছাত্র-ছাত্রীদের ভাল ফলাফল দেখে টিউটর কতটা আনন্দিত হয়, তা শুধুমাত্র একজন টিউটরই বুঝবেন। টিউটরকে টিউটরের মর্যাদা দিন, অযথা টিউটরকে জ্ঞান দিবেন না। বর্তমানে অনেক অভিভাবক স্কুলে পড়ুয়া সন্তানদের অতিরিক্ত আদর ও বিশ্বাস করে তাদের হাতে দামি মোবাইল তুলে দেন। এই মোবাইলটাই আপনার সন্তানের অধঃপতনের কারণ হতে পারে যদিও আপনি এখন বুঝতেছেন না, কিন্তু যখন বুঝবেন তখন আপনার মান-সন্মান সবই শেষ, আর কিছুই করার থাকবেনা। স্কুলজীবনে ছাত্র-ছাত্রীদের মোবাইলের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করিনা। কারন বয়সের কারনে সঙ্গতভাবেই আপনার সন্তানের মধ্যে ১০০% আবেগ কাজ করবে, সে ভাল-খারাপ কিছুই বুঝবেনা।
একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে আপনাকে আপনার ছেলে-মেয়ের খবর রাখতেই হবে। আপনার সন্তান কোন ধরনের ছেলে-মেয়েদের সাথে আড্ডদেয়, কোথায় যায়, কি করে সব খবর রাখবেন। যাবতীয় বাংলা ও হিন্দি মুভি এবং নাটক-উপন্যাস থেকে আপনার সন্তানকে বিরত রাখার চেষ্টা করবেন। পড়ালেখার পাশাপাশি তারা যেন অবশ্যই কোরআন, হাদিস ও ইসলামি সাহিত্যের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে এবং কোন ভাবেই যেন নামায ছেড়ে না দেয় এই বিষয়গুলো ভালভাবেই খেয়ালে রাখবেন। আপনার কাছ থেকে কোনভাবেই যদি স্কুল জীবনে প্রশ্রয় পেয়ে যায়, তাহলে পরবর্তিতে আপনি আর কন্ট্রোল করতে পারবেন না। আপনার সন্তানকে ইসলামী কালচারের সাথে চলতে অভ্যস্ত করুন, তাহলে আপনি দুনিয়া ও পরকাল উভয় জায়গায় সন্মানীত হবেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে পরিপূর্ণভাবে ইসলামকে বুঝার ও মেনে চলার তৌফিক দান করুন, ছুম্মা আমিন।
আমার টিউশন সম্পর্কিত আগের লিখাটি পড়তে ক্লিক করুন....
http://www.monitorbd.net/blog/blogdetail/detail/10481/4341216/64968#.VVxwVVKZEdU
বিষয়: বিবিধ
৪৪৯০ বার পঠিত, ৩৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একটা মেয়ে ভারী দুষ্ট তার জন্য একটা গৃহশিক্ষক রাখা হয়েছে দুইদিন সে শিক্ষক এসে আর আসে না খবর নিয়ে জানা গেল ছাত্রী এত দুষ্ট টিচার ভয় পেয়েছে আর আসবে না । ভাইয়া এরকম কোন অভিজ্ঞতা নেই ।
আবুধাবীতে আপনি আমার উত্তরসূরী!মানে আমিও প্রাথমিক প্রবাস জীবনে টিউশনি করেছিলাম, ১৯৮৯-৯০ সালে।
সে দেশে গুণি জন্ম নেয়না
এটা যেমন সত্যি ঠিক তেমনি
যে দেশে টিউটরদের সম্মান করবেনা
সে দেশে মেধা জন্ম নিবে না ।
অনেকের ঘরে দেখেছি ও শুনেছি টিউটরকে সকালে রং চা দিয়ে পরোটা দেয় । এমন ভাবে ভাত দেয় যেন টিউটরটি খেতে না পেয়ে আশ্রয় নিয়েছে । নিজেদেরকে টিউটরের মালিক মনে করে ।
আমার লিখাটা কষ্ট করে পড়ার জন্য ও সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
কিছু কিছু অবিভাবকের দিক-নির্দেশনা শুনে মনে হয় আমি পড়া্ইতে যায়নাই যেন তাদের কাছে আমি পড়তে গেছি ।
আমাদের এখানে আমরা বাচ্চাদের আরবী ও বাংলা পড়ানোর জন্য ছোট একটা প্রতিষ্ঠান করেছি। সপ্তাহে দু দিন । এখানে মেয়েদের আমি পড়াই। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি বাবা মায়েরা বাচ্চাকে আমাদের কাছে পাঠিয়েই নিশ্চিত হয়ে যান উনাদের ছেলে মেয়ে একাবারে দুদিন এসেই সব শিখে ফেলবে! উনাদের কোন সচেতনতা নেই বাচ্চা কি পড়লো, কতো টুকু অগ্রসর হলো, কেনো পারছে না! শুধু মনে করেন আমাদের দায়িত্ব সন্তানদের পুরোদস্তুর শিক্ষিত বানিয়ে দেয়া!
খুবি কষ্টের! তবে কিছু সচেতন অভিভাবক আছেন যাদের কারনে মনে সান্তনা আসে!
আপনার এবং আপানর স্টুডেন্টদের জন্য শুভকামনা রইলো! জাযাকাল্লাহু খাইর!
আর এক ফাজিল ছাত্রী জানত আমি কাঁচা লবণ খাইনা। তার মা বাবা গ্রামে বেড়াতে গেলে সে অনেক অনুনয় বিনয় করে আমাকে নিজের হাতে রেধে খাওয়াবে বলে দাওয়াত দেয়। সরল মনে খেতে বসে দেখি সব কিছুই লবণ ছাড়া। বিষটা আমি বুঝতে না পের যেইনা লবণ চেয়েছি অমনি বাসা সুদ্ধ সবাই হেসে গড়াগড়ি যাচ্ছে। ততক্ষণে বিষয়টা আঁচ করতে পেরেছি কিন্তু ভাগ্যে লবণ জোটেনি। এই হল ফাজিল ছাত্রীদের ফাজলামর নমুনা। অবশ্য ওরা আমাকে স্যারই মনে করত না। কারন আমার আর ওদের মধ্যে এক ক্লাসের ব্যাবধান ছিল। আমি পড়তাম ঢাকা সিতি কলেজে একাদশ শ্রেণীতে আর ওদের একজন পড়ত সাইন্স ল্যাবরেটরি স্কুলের দশম শ্রেণীতে আর একজন পড়ত ধানমণ্ডির একটা ভালো স্কুলে নামটা সম্ভবত কামরুন্নাহার গার্লস স্কুল।
কিছু কিছু অভিভাবকের আচরনে মাঝে মাঝে খুব কষ্ট লাগে।
কষ্ট করে আমার লিখাটা পড়েছেন এবং মজার অভিজ্ঞতার একটা মন্তব্য করেছেন এই জন্য সত্যিই আমি আনন্দিত। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
টিউটরদের সুন্দর লিখেছেন শ্রদ্ধেয় ভাই!
ছাত্রদের আদর্শিক পরিবর্তনে টিউটরদের ভূমিকা থাকলেও অভিভাবকদের ভূমিকাই সব চেয়ে বেশী!
অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহ জানাচ্ছি!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন