রাসূল (সঃ) এর কারাবরণ ও পশুর চামড়া ভক্ষণ!!!
লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ১৯ মার্চ, ২০১৫, ০৩:০০:২২ রাত
ইসলামের শত্রুরা তাদের সকল প্রকার ষড়যন্ত্র, জুলুম নির্যাতন ও ফন্দি ফিকির চালিয়েও যখন ইসলামের অগ্র গতিকে থামাতে ব্যর্থ হলো এবং হযরত ওমর (রা) ও হযরত হামজা (রা) এর মত সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ইসলাম গ্রহনের দৃশ্য দেখলো তখন তারা স্বাভাবিকভাবেই দিশাহারা হয়ে উঠলো। তারা রাসূল (সঃ) কে হত্যা করার জন্য সকল প্রকারের প্রচেষ্টা চালিয়েও শুধুমাত্র আবুতালেবের জন্যই ব্যর্থ হলো। আবুতালেবের সাথে একাধিকবার কথা-বার্তা বলার পরও আবুতালেব রাসূল (সঃ) কে নিজের অভিবাবকত্ব থেকে বের করতে প্রস্তুত হননি। শুধু আবুতালেবের জন্য বনু হাশেম গোত্র ও রাসূল (সঃ) এর সাথে সর্ম্পকচ্ছেদ করতে পারেনি। এই কারনে মক্কার কাফের ও মুশরিকেরা নবুয়তের ৭ম বছরের মুহাররম মাসে মক্কার সকল গোত্রকে ঐক্যবদ্ধ করে বনু হাশেম গোত্রকে বয়কট করার চুক্তি সম্পাদন করলো ইতিহাসের সেই নিকৃষ্ট চুক্তিতে স্থির করা হলো,
"বনু হাশেম গোত্র যতক্ষন পর্যন্ত মুহাম্মদ (সঃ) কে আমাদের হাতে সমর্পণ না করবে এবং তাঁকে হত্যা করার অধিকার না দিবে ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ তাদের সাথে কোন আত্বীয়তা রাখবেনা, বিয়ে শাদীর সম্পর্ক পাতাবেনা, লেনদেন ও মেলামেশা করবেনা এবং কোন খাদ্য ও পানীয় দ্রব্যও তাদের কাছে পোঁছাতে দেওয়া হবেনা"
গোত্রীয় ব্যবস্থায় এ সিদ্ধান্তটা ছিল অত্যন্ত মারাত্বক এবং চূডান্ত পদক্ষেপ। এই চুক্তির ফলে সমগ্র বনু হাশেম গোত্র অসহায় অবস্থায় "শিয়াবে আবুতালেব" নামক উপত্যকায় তিন বছর যাবত অবরুদ্ধ হয়ে পডেছিলেন।
এই সময়ের মধ্যে বনু হাশেম গোত্রের অবস্থা যে কতটা নির্মম হয়েছিল তার বিবরণ পড়লে পাষানের মন ও গলে যায়। তারা ক্ষুধা নিবারণের জন্য কাঁটাযুক্ত গাছের পাতা চিবিয়ে এবং পশুর শুকনো চামডা পর্যন্ত সিদ্ধ করে খেয়েছিলেন। দীর্ঘদিন কাঁটাযুক্ত গাছের পাতা খেতে খেতে প্রায় সবার মুখ রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের পায়খানা ছাগলের লাদির মত হয়ে গিয়েছিল। অবস্থা এতটাইনির্মম হয়েছিল যে, বনু হাশেম গোত্রের নিষ্পাপ শিশুরা ক্ষুধার যন্ত্রনায় যখন কাঁদতো, তখন বহুদূর পর্যন্ত তার মর্মভেদী শব্দ শোনা যেত। আর নির্দয়, নিষ্ঠুর পাষাণ কোরায়েশরা এই মর্মভেদী কান্নার আওয়াজ শুনে আনন্দে আত্বহারা হয়ে যেত!
সমগ্র বনু হাশেম গোত্র একমাত্র ইসলামি আন্দোলনের নেতার কারনেই এই নিষ্ঠুর বন্দীদশায় নিক্ষিপ্ত হলো। বয়কট এতটাই চরম ছিলযে একবার হযরত খাদিজা (রা) এর ভাতিজা তার ভৃত্যকে দিয়ে কিছু গম পাঠালে পথে আবু জেহেল তা ছিনিয়ে নিল। পরবর্তিতে কাবা ঘরের দেওয়ালের সাথে ঝুলানো চুক্তি পত্রটি উইপোকা খেয়ে পেললে ঐ চুক্তি বাতিল হয়ে যায়, সমগ্র বনু হাশেম গোত্র অবরুদ্ধতা থেকে মুক্তিলাভ করে।
মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারার ১৫৫নং আয়াতে বলেন, "আর নিশ্চই আমি ভীতি, অনাহার, জান ও মালের ক্ষতি, উপার্জন ও আমদানি হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো, এই অবস্থায় যারা ধৈর্য ধারন করেন, তাদের সু-সংবাদ দাও" মহান আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে তাঁর প্রিয় বান্দাদের এই ভাবেই পরীক্ষা করেন। দীর্ঘ তিন বছর শিয়াবে আবুতালেবে চরম ক্ষুধার যন্ত্রণা, দুগ্ধজাত শিশুদের মর্মভেদী কান্নার আওয়াজ, সমগ্র গোত্রের নিদারুণ মানসিক যন্ত্রনা, সবকিছুই মুহুর্ত্বের মধ্যেই সমাধান হয়ে যেত যদি প্রিয় রাসূল (সঃ) কাফের ও মুশরিকদের সাথে আফোস করতেন! কিন্তু প্রিয় রাসূল (সঃ) সকল প্রকার প্রলোভন, জুলুম, নির্যাতন নিজের ব্যক্তিগত সুখ-শান্তি সবই কোরবানি করে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে ধৈর্যের চূড়ায় অবস্থান করে হাসি মুখেই সব সহ্য করেছেন, তবুও তিঁনি বাতিল শক্তির সাথে কোন প্রকার আফোস করেননি। শুধুমাত্র আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করার জন্যই সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন।
আজ পৃথিবীর যে প্রান্তেই কোন ব্যক্তি বা দল ইকামতের দ্বীনের কর্মসূচী নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করতেছে, সাথে সাথে তার উপর সাগরের স্রোতের মতই জুলুম, নির্যাতন, অপবাদ ও নিপীড়ন ধেয়ে আসে।ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, আফ্রিকা, মিয়ানমার, চিন, ইন্ডিয়া এবং স্পেনে মুশরিক, ইহুদী ও খ্রিষ্টানেরা সরাসরি মুসলিমদের হত্যা করতেছে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিশর ও ইন্দোনেশিয়াতে মুসলিম নামধারী শাসকেরা ইহুদী, খ্রিষ্টান ও মুশরিকদের প্রতিনিধি হিসাবে নানান অজুহাতে প্রতিনিয়ত ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের হত্যা করেই যাচ্ছে। এই সমস্ত মুসলিমদের একটাই অপরাধ তারা বাতিল শক্তির রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে, মহান আল্লাহর উপর শতভাগ আস্থা রেখে নিজের জীবনের চেয়েও ইকামতে দ্বীনের কাজকে বেশি ভালবেসেছে। আজ ইকামতে দ্বীনের প্রিয় নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা সারাবিশ্ব জুড়ে শিয়াবে আবুতালেবের মতই অবরুদ্ধ হয়ে আছে, চরম জুলুম, নির্যাতন তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবুও তারা একটুও ধৈর্যহারা হননি, বরং ফাঁসির মঞ্চে গিয়েও দৃঢ কন্ঠে বলেছেন "আমার প্রতি ফোটা রক্ত যেন ইসলামি আন্দোলনের কর্মীরা ইসলামকে বিজয়ী করার পেছনে কাজে লাগায়"
সন্মানীত মুসলিম পাঠকবৃন্দ, আমাদের সবাইকে মহান আল্লাহর দরবারে ফিরে যেতেই হবে, এই দুনিয়া খুবই ক্ষনস্থায়ী। আমরা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছি কিনা তা আল্লাহ আমাদের জিজ্ঞেস করবেননা, কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই জিজ্ঞেস করবেন, আমরা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কে কতটুকু চেষ্টা করেছি। আজ দুনিয়ার সকল নাস্তিক্যবাদী শক্তি ইসলাম নামক বাতিটাকে নিবিয়ে দেওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ, আর আমরা মুসলিম দাবিদারেরা জেগে জেগেই ঘুমাচ্ছি!!!
বিষয়: বিবিধ
৩০৭২ বার পঠিত, ৩১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শাসক দল আজ এইভাবেই, জাহেলী স্টাইলে ঘোষ্ণা জামাত শিবিরের সাথে কোন সম্পর্ক রাখা যাবে না, তাদের বাড়িতে দাওয়াত খাওয়া যাবে না, তাদের মেয়েদের কেউ বিয়ে করবে, এবং তাদের কোন ছেলেও আমাদের মেয়েদের বিয়ে করতে পারবে না।
কঙ্গোর হুতু সম্প্রদায় ক্ষমতায় থাকাকালে সমগোত্রীয় বিদ্রোহী সম্প্রদায় তুতসীদের উপর চালায় নির্মম বর্বরতা। কোন হুতু যদি তুতসী মেয়েদের বিয়ে করত, সাথে সাথে ধরর সেই হুতু লোকটিকে জবাই করে ফেলত, গোপনাংগ কেটে বাঁশে ঝুলিয়ে মিছিল করে রঙ ফূর্তি করত, নারীদের ধর্ষণ করার জন্য এইডস আক্রান্ত রোগীদের ছেড়ে দেয়া হত, একজন নারীর ধর্ষণ উপভোগ করার জন্য হাজারো মানুষ ভীড় করে দাঁড়াত, কখনো ধর্ষণ নারীর যৌনাঙ্গে উত্তপ্ত গরম পানি ঢেলে গর্ভ নষ্ট করে দিত।
কঙ্গোর প্রসংগ এই জন্য টানলাম, বিদ্বেষ থাক্লে বিয়ে পর্যন্ত করা যাবে না!
আমরা শুনেছি মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের মহিলা কর্মীর কারাগার থেকে ফিরে এসে তার উপর দৈনিক অসংখ্যবার পুলিশ কর্তিক ধর্ষণের ভয়াবহতা।
দেখেছি বাংলাদেশও যৌথ বাহিনীর অভিযানে মা বোনের ইজ্জত নষ্ট করতে উদ্যাম আদিমতায় মেতে উঠা। তবু বাংলা জমীনসহ পৃথিবীর দেশে দেশে ইসলাম টিকে, কর্মীরা আরোবেশি তেজদ্দীপ্ত হয়ে কাজ করছে। ইনশাআল্লাহ আগামী দিনেও করে যাবো।
আপনার লিখাটি অসম্ভব ভাল হয়েছে। খুব মনোযোগ দিয়ে পড়লাম।
আপনাদের উভয়ের জন্য দোয়া রইল, আর যারা কারাবরণের এ সুন্নাতের অনুসারী তাদের জন্যও
কিন্তু সত্য সবসময় সত্যই।
অনেক ধন্যবাদ।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর লেখাটার জন্য ।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
@আবু জান্নাত: যথার্থ বলেছেন
আজ ইকামতে দ্বীনের কর্মীরা ফাঁসির মঞ্চে উপবিষ্ট, যারা বাহিরে আছে তারাও প্রতিনিয়ত বাতিলের বুলেটে জাজরা হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থা মসজিদের কোনে বসে বসে জিকির করার চেয়ে আন্দোলন বেশি দরকার।
রাসূল (সঃ) যে আন্দলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সেই আন্দলনের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছি আজ বাংলাদেশে।
অতএব, তখনকার আন্দলনের নেতারা যেমন জুলুমের পথ পাড়ি দিয়ে ইসলামের বিজয় কেতন উড়িয়েছিলেন তেমনি আজকের আন্দলনও বিজয়ের বন্দরে একদিন নোঙ্গর, ফেলবে ইনশা'আল্লাহ।
সুন্দর পোস্টের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন