অধিকার কেউ কাউকে দেয় না, আদায় করেই নিতে হয়।
লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১০:৪০:৪০ সকাল
নির্মম অত্যাচার সহ্য করতে করতে যখন কারো পিঠ দেওয়ালে ঠেকে যায়, তখন সে প্রতিবাদী হয়ে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। ইংরেজদের জুলুমের বিরুদ্ধে তিতুমীর ও ক্ষুধিরামেরা প্রতিবাদ করেছিলেন নিজেদের হাতে যা কিছু ছিল তা দিয়েই। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর জুলুমের বিরুদ্ধে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন বাংলা মায়ের শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা। যুগে যুগে মজলুমেরা অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে এইভাবে প্রতিবাদ করে ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল হয়ে আছেন।
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়েই রাজপথ কাঁপিয়েছিল। এক নূর হোসেনের মৃত্যুতেই স্বৈরাচারের পতন হয়েছিল, কারণ তখন জনগনের জন্য পুলিশের দরদছিল, তাই তারা স্বৈরাচারের হুকুমে দ্বিতীয়বার গুলি চালায়নি। পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ নূর হোসেন আজও গনতন্ত্রের প্রতীক হয়ে আছে।
বর্তমান ক্ষমতাসীনেরা যখন বিরোধী দলে ছিলেন, তখন তাদের আন্দোলন কেমন নিষ্ঠুর ও হিংস্র ছিল তা মনে পডলে এখনো চোখের পানি আপন গতিতেই চলে আসে। ২৮শে অক্টোবরে লগি-বৈঠা দিয়ে সাপের মত পিটিয়ে মেধাবী ছাত্রদেরকে হত্যা করে তাদের লাশের উপর নৃত্য করতে দেখেছি। সেইদিন বিশ্ববিবেক অবাক হয়ে সেই নিষ্ঠুর হত্যাকান্ড উপভোগ করেছিল, মানবতা ঘুমরে ঘুমরে কেঁদেছিল। আর চেতনার ব্যবসায়ী বিশেষ ধরনের প্রাণী যারা মানুষের কাতারে পড়েনা তারা উল্লাসে ফেটে পডেছিল!
পরবর্তিতে আমরা দেখেছি, নিজেদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়ীত করার জন্য দেশপ্রেমিক ৫৭ জন সেনা অফিসারকে নির্মমভাবে হত্যা করতে, ইসলামি শক্তিকে নিঃশেষ করার জন্য তৌহিদী জনতার উপর দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিতে যা শতভাগ মানবতা বিরোধী! ২৫শে মার্চের কালোরাত দেখিনি, কিন্ত ৫ই মে এর নিষ্ঠুর কালোরাত দেখেছি, নিজের চোখেই দেখেছি ইসলামি টিভি ও দিগন্ত টিভিকে সরাসরি সম্প্রচার করার অপরাধে কিভাবে গলা টিপে হত্যা করেছিল, ঐ সময় আমার রুমের সবাই টিভির সামনেই বসা ছিলাম।
পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর তান্ডব না দেখলেও সাতক্ষীরা ও সারাদেশব্যাপী আওয়ামী যৌথবাহিনীর তান্ডব দেখতেছি। বিগত ৫ বছরের মধ্যে ক্ষমতাসীনেরা এইরকম হাজারো উদাহরণের সৃষ্টি করেছে, যা কমবেশি আমরা সবাই জানি। শত শত জামাত-শিবিরের কর্মীদের পাখির মত গুলি করে হত্যা করলে তাতে কিছুই যায় আসেনা, কিন্তু শিবির সন্দেহে নির্মমভাবে কুপিয়ে বিশ্বজিতকে হত্যা করার অপরাধে হত্যাকারীদের ফাঁসির আদেশ হল, যদিও তা কখনো বাস্তবায়নের সম্ভাবনা নাই। এই থেকে অন্তত এটা বুঝতে পারলাম, ৯০% মুসলিমের দেশে ইসলাম প্রিয় তৌহিদী জনতার নুণ্যতম মানবাধিকার না থাকলেও ৭% হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকার এখনো কিছুটা আছে! ক্ষমতাসীনদের হিন্দু মন্দিরে হামলা ও ভাংচুর করে জামাত-শিবিরের উপর দায়ভার চাপানোর নোংরা রাজনীতি কারো অজানা নয়, ধরা পড়লে লীগ আর ধরা না পড়লে তা জামাত-শিবিরের তান্ডব!! শেষ পর্যন্ত অসহায় জামাত-শিবিরকে হিন্দু মন্দির পর্যন্ত পাহারা দিতেই হলো!! যারা প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য নিজ দলের লোক পর্যন্ত খুন করতে পারে, হিন্দু মন্দিরে ও হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নিষ্ঠুর হামলা করতে পারে, তাদের দ্বারা পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ পুডিয়ে মারা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
পেট্রোল বোমা মারতে গিয়ে যখন কেউ হাতেনাতে ধরা পড়ে তখন সেটা ছাত্রলীগ অথবা যুবলীগ, আর ধরা না পড়লে জামাত-শিবিরের তান্ডব!! সারা দেশে ক্ষমতাসীনদের অফিস থেকেই পেট্রোল বোমা উদ্ধার হয়!! এই নোংরা রাজনীতি আর কত! আমার প্রশ্ন হলো, জামাত-শিবিরকে দেখামাত্র গুলির আদেশ থাকলেও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপকারীদের হাতেনাতে ধরার পর ও ব্রাশফায়ার করা হয়না কেন??? কেন ঐ হিংস্র জানোয়ারদের ছেড়ে দেওয়া হয়?
ইনশাআল্লাহ বাংলার জমিনে সত্যের বিজয় হবেই, যে রকম ইংরেজ বিরোধী,পাকিস্তান বিরোধী ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন গুলো সফল হয়েছিল। অতীতের মত নাস্তিক ও বাকশাল বিরোধী এই মহান আন্দোলন কেও কেউ ব্যর্থ করতে পারবেনা, কারন মজলুম জনতার পিঠ আজ দেওয়ালে ঠেকে গেছে।
হিংস্র নেতাদের নির্দেশে যেই সমস্ত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা অতি উৎসাহী হয়ে মজলুম জনতার উপর নির্মম হামলা চালাচ্ছে, এই মজলুমেরা কখনো তাদের ক্ষমা করবেনা, একান্ত বিপদের সময় ঐ হিংস্র নেতারাও পাশে থাকবেনা।
আওয়ামীলীগ, বি.এন.পি, জামাত-শিবির, হেফাজত ও রাম-বাম কেউ আমাদের পর না, আমরা সবাই একই আলোবাতাসে, একই সমাজে বড হয়েছি, আজ কেন আমরা অবৈধ নোংরা রাজনীতির শিকার হয়ে রক্তাক্ত হবো? আল্লাহর কসম করে বলতেছি, ইসলাম প্রিয় তৌহিদী জনতা কখনো কাউকে শত্রু মনে করেনা, তারা সবাইকে দ্বীনি ভাই মনে করে। কারন তাদের বন্ধুতা ও শত্রুতা সবই আল্লাহর জন্যই।
বিষয়: বিবিধ
১৬৬৩ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক সুন্দর ও অনেক কিছু জানলাম ।ধন্যবাদ ভাইয়া ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন