ভালবাসার এতটাই পরিবর্তন হয়! এতো ভাগাভাগি হয়!!
লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ০৫ জানুয়ারি, ২০১৫, ১২:১৬:১০ রাত
যখন শিশু ছিলাম তখন এতটাই অসহায় ছিলাম যে পায়খানা, পস্রাব করলেও মুখ দিয়ে বলতে পারতামনা! শুধু কান্না করা ছাড়া আর কোন উপায়ও ছিলনা। ক্ষুধা লাগলেও একই উপায় অবলম্বন করতাম। আমার কান্নার আওয়াজ শুনে পৃথিবীর আর কেউ না বুঝলেও আমার মা জননী ঠিকই বুঝে নিতেন নিশ্চই আমি কোন সমস্যায় আছি! তখন হাতের সব কাজ অসমাপ্ত রেখে পরম স্নেহ মমতা দিয়ে আমার কান্নার সমাধান দিতে ছুটে আসতেন! বিছানায় ও কাপড়ের মধ্যে পায়খানা, পস্রাব করে, গায়ে ধুলো বালি লাগিয়ে মাকে যে কত কষ্ট দিয়েছি তার সঠিক হিসাব আল্লাহই ভাল জানেন। শিশু কালে মায়ের প্রতি এতটাই নির্ভরশীল ছিলাম, মা একটু চোখের আড়াল হলেই কান্না করে দিতাম। মায়ের কোল ছাড়া অন্যকারো কোলকে নিরাপদ মনে করতাম না, তাই পরিচিত মুখ ছাড়া অন্যকারো কোলেও যেতাম না। কি নিখুঁত ভালবাসা!!
যখন শিশুকালটা পার হয়ে গেল, তখন খাবার সময়টা ছাড়া অন্যসময় আম্মু আর শত চেষ্টা করেও আমাকে কাছে পেতেন না।কারণ মায়ের ভালবাসার মধ্যে ভাগ বসালো খেলার সামগ্রী ও খেলার সাথীরা! কতযে খুজতেন আর কতযে ডাকাডাকি করতেন তার কোন সীমা ছিলনা। যখন স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় হলো, তখন মায়ের দায়িত্ব যেন আরোও বেড়ে গেল। অ-আ-ক-খ-১-২-1-2 এগুলো লিখাতে ও শিখাতে গিয়ে আম্মু কতইনা কষ্ট করেছেন!! স্কুলে যাবার প্রস্তুতি থেকে শুরু করে স্কুল থেকে ফিরে এসে খাবার খাওয়া পর্যন্ত কাজগুলো যেন আম্মুর রুটিন ডিউটি হয়ে গিয়েছিল। পরীক্ষার সময় মাঝেমাঝে আম্মুকেই পরীক্ষার্থী মনে হত! আমি যেন পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করতে পারি, এই জন্য আম্মুর পরিশ্রমের কোন ত্রুটি ছিলনা। ভাল রেজাল্টের পর মনে মনে ভাবতাম, আমার আম্মুই সেরা শিক্ষক, তিনি অনেক কিছুই জানেন, আম্মুকে ছাড়া কিছুই বুঝতাম না।
যখন স্কুল জীবন পেরিয়ে কলেজ জীবনে প্রবেশ করলাম, তখন ভাবতাম, আম্মু আর কিইবা জানেন! পুরাতন যুগের মানুষ!! এবার আম্মুর ভালবাসার মধ্যে কলেজের বন্ধুরাও ভাগ বসাতে লাগলো। এখন শিশুকালের মত আম্মুকে আর গুরুত্বপূর্ণ মনেই হয়না!! তবুও আম্মু অপেক্ষায় বসে থাকতেন, কখন আমি কলেজ থেকে ফিরবো, তারপর একসাথে খানা খাবেন।
কৈশোর থেকে মায়ের ভালবাসার মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মেই একজন এসে সরাসরিই ভাগ বসিয়ে ফেলে! যদি কেউ বলে কৈশোর ও যৌবনের শুরুতে আমি মনের মাঝে কোন মেয়ের ছবি আঁকিনি, তবে বুঝতে হবে সে মিথ্যা বলছে, না হয় সে হিজডা!! সময়ের ব্যবধানে বিয়ের পিঁডিতে বসতে হয় আর বিয়ে করাটা ফরজ। মানব জাতির বংশ বিস্তারের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান ও রাসূল (সঃ) প্রদর্শিত পন্থা মোতাবেক একটা মেয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হয়। কিন্তু দেখা যায়, যথাযথ ইসলামিক জ্ঞান না থাকার কারণে অনেকেই মায়ের চেয়েও স্ত্রীকে বেশি মর্যাদা দিয়ে দেয়, মাকে সংসারে গুরুত্বহীন মনে করে। সমাজের কিছুলোক স্ত্রীর প্রতি বেশি ভালবাসা দেখাতে গিয়ে গর্ভধারিণী মাকে বিদ্ধাশ্রমে পাঠাতেও দ্বিধা করেনা!!! আমি স্ত্রীকে অমর্যাদা করার কথা বলতেছিনা, কোরআন ও হাদিসে মা ও স্ত্রীর অধিকার খুব সুন্দর ভাবেই বর্ননা করা আছে। যার মর্যাদা যতটুকু তাকে ততটুকুই দিতে হবে, তবেই সংসারে শান্তি বিরাজ করবে।
সময়ের ব্যবধানে বাবার মত করে প্রিয় মা জননীও দুনিয়া থেকে চলে যাবেন। কিন্ত মায়ের অমর ভালবাসা থেকেই যাবে। দোয়া করি আল্লাহ যেন আমার আম্মুকে হায়াতে তাইয়্যেবাহ দান করেন। আর আমার বাবাকে যেন জান্নাতের মেহমান বানিয়ে নেন। এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে মা-বাবার ভালবাসাই একমাত্র নিঃসার্থ ভালবাসা। বাবা যতদিন জীবিত ছিলেন, আমার পরামর্শ দাতা হিসেবেই ছিলেন। এখন আম্মুই আমার পরামর্শ দাতা। মনের অজান্তে বাবার মনে কতযে কষ্ট দিয়েছি, তার কোন হিসাব নাই। বাবা আমাদের মানুষের মত মানুষ করতে গিয়ে সারাজীবন শুধু কষ্টই করে গেলেন, সুখ কি জিনিষ তা দেখে যেতে পারলেন না। বাবার হাজারো স্বপ্ন অপূর্ণ থেকেই গেল।
হে আল্লাহ, হে মহান পরওয়ারদেগার তুমি আমার বাবাকে এবং সন্মানীত পাঠকদের মধ্যে যাদের বাবা মা চিরদিনের মত চলে গেছেন তাদের সবাইকে তুমি ক্ষমা করে তোমার জান্নাতের মেহমানদের মধ্যে শামিল করে নিও। তোমার মনোনীত দ্বীন ইসলামকে যেন পরিপূর্ণভাবে বুঝতে ও মেনে চলতে পারি এবং সর্বোপরি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যেন তোমার দ্বীনের উপর অটুট থাকতে পারি সেই তৌফিক দান করিও।
বিষয়: বিবিধ
২১৪৮ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মায়ের প্রতি ভালবাসা সে তো ঈমানেরই পুর্ণতা!
কতই না হতভাগা আমরা-রহমতের আধার 'মা'এর প্রতি যথাযথ কর্তব্য-দায়িত্ব পালন করতে পারি না!
আল্লাহ পাক সবাই কে এই তৌফিক দান করুন! মা-দের কে হায়াতে তাইয়েবাহ দান করুন! আমিন!!
অভিনন্দন সুন্দ্র লেখায়
আমি তো গতকাল সকাল ৯.৩৬ এ কমেন্ট করছি !
সুন্দর লেখনীর জন্য অভিনন্দন আপনাকে.....সাথে আরো সুন্দর সুন্দর লেখা পোস্টের আহবান!
মন্তব্য করতে লগইন করুন