ছোট কালের হাস্যকর ধারনা বনাম আজকের বাস্তবতা!!!
লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ২০ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৪:০১:৩৬ বিকাল
প্রতিদিনের মত আজকেও সকালের আরামের ঘুমটা বাবার চেঁচামেচিতে ভেংগে গেল। হাত-মুখ ধুয়ে(ওযু) ফজরের নামাজটা সেরে নিলাম, যদিও তখন নামাজ পড়াটা ভাল করে শিখিনি! নামাজ না পড়লে যে সকালের নাস্তাটাই কপালে জুটবেনা! যতটাতাড়াতাড়ি সম্ভব নামাজটা শেষ করেই বাবার খাটের পাশে ছুটে যেতাম। কারণ বাবা উনার বালিশের পাশে ছোট একটা বক্সের মধ্যে একেকদিন একেক রকমের নাস্তা আমার জন্য রাখতেন। কখনো পাউরুটি, কখনো পেটিস, কখনো ডাইনিছ, কখনো বা ফুলকেক, আবার কখনো ২টা বড় বেলা বিস্কুট! মক্তবে বসার জন্য আম্মু খুব সুন্দর করে ফুলের নকশা করে একটা বটনি (মাদুর) বানিয়ে দিয়েছিলেন। আম্মু আমাকে মক্তবের ড্রেস পরিয়ে মাদুরটাকে ভাজ করে আমার হাতে দিয়ে বলতেন, "খবরদার কারো সাথে দুষ্টমি করবিনা, হুজুর যা পড়তে বলে তা মনযোগ দিয়ে পড়বি!"
কারণ পড়ার জন্য কোনদিন অভিযোগ না আসলেও দুষ্টমির জন্য অভিযোগের কোন শেষ ছিলনা!! দুষ্টুমি না করলে যে আমার ভালই লাগতো না!! হুজুর আমার পড়ার জন্য সুনাম করলেও দুষ্টমির জন্য শাসন করতে একটুও অলসতা করতেন না, কিন্তু আমার সমস্যা টা ছিল অন্য জায়গায়! হুজুর নিজে শাসন করার পরেও আবার যখন আব্বুর কাছে আমার বিরুদ্ধে দুষ্টমির অভিযোগ করতেন, তখন খুব খারাপ লাগতো, কারণ তখন আব্বুর হাতেও পিটানি খেতে হত!!! এই জন্য হুজুরকে খুব বিরক্তিকর মনে হতো! মক্তবে হুজুরের কথা গুলো মনযোগ দিয়ে শুনতাম, মনেহয় এই জন্যই অল্প সময়ের মধ্যেই নূরানি কায়দা, ছিরবা, ও কোরআন এক বার খতম করে মক্তবের জীবন শেষ করতে পেরেছিলাম।
মক্তবে হুজুর কোরআন তিলাওয়াত শিখানোর পাশাপাশি হালাল-হারাম ও ইসলামের মৌলিক বিষয় গুলো ও শিখাতেন। হুজুর সুদ খাওয়ার পরিণাম খুব ভয়ানক ভাবেই আলোচনা করতেন, সুদখোরদের পরিবারে খানা খেতেও নিষেধ করতেন! একদিন হুজুরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, "হুজুর সুদ কারা খায়? হুজুর উত্তর দিয়েছিলেন, কোন প্রকৃত মুসলিম সুদ দিতে ও খেতে পারেনা, কারণ দুইটাই সমান অপরাধ।" হুজুরের কথার গভীরে যাওয়ার মত বয়স তখন আমার হয়নি তাই হুজুর নির্দিষ্ট করে কারো নাম না বলায় আমি আমার ছোট মেমোরীতে ধরে নিয়েছিলাম, সুদ অন্যান্য খাবারের মত এটাও একটা খাবার, হয়তো এটা ভাতের সাথে তরকারীর মতই খায়, আর কোন প্রকৃত মুসলিম যেহেতু সুদ খেতে পারেনা, তাই এটা হিন্দুরাই খায়!!!
প্রাইমারি স্কুলে আমার অনেক হিন্দু ক্লাসমেট ছিল, অন্যান্য ক্লাসমেটদের মত তাদের সাথেও আমার ভাল সম্পর্ক ছিল। স্কুলের পাশে অনেক হিন্দু বাড়ি (আমার এলাকায় হিন্দুর সংখ্যা বেশি) আছে। ঐ সমস্ত বাড়িতে বিয়ে অথবা পুজার অনুষ্ঠান হলে মধ্যাহ্ন বিরতিতে স্কুলের অনেক ছাত্র-ছাত্রীরা যেত। কিন্তু আমি যেতাম না। আমার হিন্দু ক্লাইমেটরা বাড়ি থেকে কোন খাবার জিনিষ নিয়ে আসলে তা স্কুলের অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীরা খেলেও আমি খেতাম না, এতে আমার হিন্দু বন্ধুরা অনেক রাগ ও করতো। একদিন আমার হিন্দু বন্ধুরা বাড়ি থেকে অনেক নাস্তা নিয়ে আমার অন্যান্য বন্ধুদের মাঝে বিলিকরার পর সবাই এসে আমাকে ধরলো, তুই আমাদের কোন খাবার নিস না কেন?? সকল মুসলিম ছেলেরা খেতে পারলে তোর সমস্যা কি??? অবস্থাটা এমন দাঁড়ালো, হয় তাদের দেওয়া খাবার খেতে হবে, না হয় আজ থেকে তাদের সাথে সকল প্রকার বন্ধুতা বন্ধ করে দিতে হবে!!! আমার উপর তাদের যথেষ্ট আন্তরিকতা ছিল, তাই আমি চিন্তা করলাম আজ সব কথা তাদেরকে বলে দিব!!! আমি বললাম, তোরা হিন্দু তোদের খাবারের মধ্যে সুদ আছে, তোরা সুদ দিয়ে খাবার রান্না করিস, তোরা ভাতের সাথে সুদ ও খাস!!! আমাদের হুজুর বলেছেন কোন প্রকৃত মুসলিম সুদ খেতে পারেনা, সুদ দাতা ও সুদ গ্রহিতা দুইজনেই জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। আর জাহান্নামের আগুনের গরম দুনিয়ার আগুনের চেয়ে ৭০ গুন বেশি, সাথে সাপ-বিচ্ছুর কামড়তো আছেই!!! তাই আমার পক্ষে তোদের ঘরের তৈরি কোন খাবার খাওয়া সম্ভব না।
আমার কথা গুলো শুনে তারা একে অপরকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো সুদ কি??? আমরা তো খাবারের সাথে কোন সুদ খাইনা!! এটা কি ধরনের খাবার তা আমরা কোনদিন দেখিওনি!!! সেইদিন আমার হিন্দু বন্ধুরা আমাকে বুঝানোর অনেক চেষ্টা করেও বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছিল!!!
আজ আর শিশুকাল নেই, পবিত্র কোরআনের তাফসীর, হাদিস ও ইসলামী সাহিত্য অধ্যায়ন করে বুঝতে সক্ষম হয়েছি, আসলেই সুদ কি? আর সুদ কারা খায়!!! মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে সূরা বাকারার (২৭৮-২৭৯) আয়াতে বলেছেন; "আল্লাহকে ভয় করো আর লোকদের নিকট তোমাদের যে সুদ পাওনা বাকি রয়েছে সেগুলো ছেড়ে দাও, যদি তোমরা ঈমান এনে থাকো। আর যদি তোমরা এমনটি না করো, তাহলে যেনে রেখো এটা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষনা।"
সন্মানীত পাঠক ভাই ও বন্ধুগন, আজ আমার ছোট কালের ধারনাটার পরিবর্তন হয়েছে বটে, তবে এখন আর হিন্দুদের নয়, মুসলিম নামধারী সুদখোর দের কেই কোরআন ও হাদিসের আলোকে বেশি ঘৃণিত ও অভিশপ্ত মনে করি।কারণ আল্লাহর উপর ঈমান নাই বলে অমুসলিমরা অনায়াসেই সুদ দিতে ও নিতে পারে! কিন্তু একজন মুসলিম সুদ সম্পর্কে সবকিছু জানার পর ও যখন সুদের সাথে যুক্ত হয়, তখন সামাজিকভাবে ঐ সমস্ত সুদখোর মুসলিমদের বয়কট করা ঈমানের দাবী নয় কি?????
বিষয়: বিবিধ
৪৭৬৪ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুদ হলো সকল শোষন এর মুল।
বর্ণনার সাবলীলতায় ইসলামে অতি নিকৃষ্ট-ঘৃণিত একটি বিষয় নিয়ে সুন্দর উপস্হাপনা!
সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে যাওয়া 'সুদ'এর বিষাক্ততা থেকে অবশ্যই বেচে থাকার প্রচেষ্টা চালাতে হবে মুসলিম কে!
অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহু খাইরান!!!
আমি কমেন্ট ব্লগার ভাইয়া!
আপনাদের নান্দনিক উপস্হাপনা থেকে কিছু শেখার আশায় আসি এই আংগিনায়!
ভাল থাকার শুভ কামনা রইল!!
ভাল থাকবেন অনেক!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন