বাসর রাতেই তালাকের সিদ্ধান্ত, অতঃপর বাস্তবায়ন!!!
লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ১২ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৮:২৬:৫৪ সকাল
খন্দকার সাহেব সর্বমহলে পরিচিত একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি, সর্বস্তরের লোকজন উনাকে শ্রদ্ধা করেন। টাকা-পয়সা, গাড়ি-বাড়ি, চাকর-চাকরানী কন কিছুই খন্দকার সাহেবের কমতি নাই।খন্দকার সাহেবের বয়স ৩০ চলতেছে, এই বয়সে একজন জীবন সাথী না হলেই নয়!!! পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিলেন, মহা ধুমধামের সাথে এবার বিয়ের কাজটা সেরে পেলবেন। অনেক যাচাই বাছাইয়ের পর খন্দকার সাহেব অবশেষে চৌধুরী সাহেবের বড় কন্যাকে জীবন সাথী হিসেবে পছন্দ করলেন। বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হলো, বন্ধু-বান্ধব, আত্বিয়-স্বজন ও অনেক মান্য-গন্য ব্যক্তিকে বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া হলো। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত সকল মেহমানদের জন্য সব ধরণের আয়োজন সম্পন্ন করা হলো।
নির্দিষ্ট তারিখে মহা ধুমধামের সাথে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হলো। পুষ্পসজ্জিত বাসরঘরে পুষ্পসজ্জায় খন্দকার সাহেবের স্ত্রী অপেক্ষা করতেছে। খন্দকার সাহেব কক্ষে প্রবেশ করেই দেখলেন, উনার স্ত্রী কি যেন লুকানোর চেষ্টা করতেছে!!! (অর্থাৎ সাবেক প্রেমিকের কাছ থেকে শেষ বারের মত বিদায় নিয়ে স্মৃতিমধুর ছবি গুলো ডিলেট করা অবস্থায়) বিচক্ষণ খন্দকার সাহেব বিষয়টা গভীর সন্দেহের সাথে দেখলেন!! তৎক্ষণাৎ স্ত্রীকে কিছু না বলে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলেন। আদর-সোহাগের একপর্যায়ে তিনি কৌশলে স্ত্রীর মোবাইলটা হস্তগত করেই গ্যালারীতে বেশ কিছু প্রেমিক-প্রেমিকার গোপন ছবি দেখতে পেলেন!!! ছবি গুলো দেখেই তিনি আর স্থির থাকতে পারলেন না। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারতেছেন না, আবার সহ্যও করতে পারতেছেন না!!! কারণ গৃহভর্তি মেহমান! সবচেয়ে বড় কথা হলো বিষয়টার সাথে খন্দকার সাহেবের মান-সন্মান জডিত!!! এমতাবস্থায় তার স্ত্রী কান্নাজড়িত কন্ঠে অনুরোধ করে বললেন, আমি অতীতে যা করেছি, ভবিষ্যতে আর কোনদিন ঐ রকম কিছু করবো না, আপনি যে ভাবেই চলতে বলবেন, আমি ঠিক সেইভাবে চলবো, আমি পূর্ণ মনযোগ দিয়ে আপনার সংসার করবো!! খন্দকার সাহেব কিছুক্ষন চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিলেন, স্ত্রীকে তালাক দিবেন, তবে এখন না, পরে!!!
সময়ের ব্যবধানে এই দম্পতির কোলজুড়ে ৮টি সন্তান আসলো। খন্দকার সাহেব ব্যবসা-বানিজ্য ও সমাজসেবা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারনে সন্তানদের পেছনে খুব বেশি সময় দিতে পারলেন না। কিন্তু তার সু-শিক্ষিত সচেতন স্ত্রী সন্তানদের পিছনে লেগেই থাকলেন। সন্তানদেরকে মানুষের মত মানুষ করতে গিয়ে নিজের সব কিছুই বিলিয়ে দিলেন। একজন আদর্শ মা হিসেবে সন্তানদের জন্য যা কিছু করা দরকার, তার সবকিছুই করলেন। সন্তানেরাও মা কে নিরাশ করলেন না, প্রতিটা পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করে সেরা ছাত্র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে মায়ের পরিশ্রম সার্থক করলেন। আজ খন্দকার সাহেবের প্রতিটা সন্তান সামাজিক ভাবেই সু-প্রতিষ্ঠিত, সমাজের মানুষের সুখে-দুঃখে ছায়া হয়ে থাকেন, সর্বোপরি তারা মানুষের মনের মাঝে স্থান করে নিতে পেরেছেন। খন্দকার সাহেবের নাতি- নাতনীরাও প্রতিটা পরীক্ষায় মেধার সাক্ষর রেখে চলেছেন।
পাশের বাড়ির জমিদার নারায়ণ বাবুর সাথে খন্দকার সাহেবের বেশ ভাল বন্ধুতা। খন্দকার সাহেব মনের সব গোপন কথা জমিদার নারায়ণ বাবুর সাথে শেয়ার করেন। কিন্তু নারায়ণ বাবু মুখে বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ করলেও মূলত সে কখনো খন্দকার সাহেবের উন্নতি চায়না। জমিদার নারায়ণ বাবুর চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে কারণ খন্দকার সাহেবের ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনীদের ক্রমাগত উন্নতি, ও জনপ্রিয়তা যেন প্রতিনিয়ত সবকিছুকেই ছাড়িয়ে যাচ্ছে !!! তাই নারায়ণ বাবু আজ খন্দকার সাহেবের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ! অবশেষে কৌশলে জমিদার নারায়ণ বাবু তার প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হলেন।
বিবাহের ৪২ বছর পর আজ খন্দকার সাহেব তার পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে এক জরুরি সভার আয়োজন করলেন। সভায় সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে খন্দকার সাহেব বললেন, আজ থেকে ৪২ বছর আগে আমি বাসর ঘরে আমার স্ত্রীর অবৈধ প্রেমের কথা জেনে যাওয়ার পর তাকে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কিন্তু আমি আমার সন্মানের দিকে তাকিয়ে তখন তা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। তাই আজ আমি আমার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি।
মুহুর্ত্বের মধ্যেই পরিবারের সকল সদস্য বিভক্ত হয়ে গেল, বেশিরভাগ সদস্য তার প্রতিবাদ করলো। তারা নানান রকমের যুক্তি দিল, কিন্তু খন্দকার সাহেব কারো কথার গুরুত্ব না দিয়ে তার বন্ধু জমিদার নারায়ণ বাবুর পরামর্শে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিল। মুহুর্ত্বেই খন্দকার সাহেবের ছেলেরা ভয়ানক মরণ খেলায় মেতে উঠলো, চুরমার হয়ে গেল পরিবারের সকল স্বপ্ন, সকল অগ্রগতি !
সমাজের মানুষের প্রশ্ন, ৪২ বছর পরে খন্দকার সাহেবের সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন কি সঠিক হয়েছে!!! পরিবারের সন্মান ও অগ্রগতির দিকে তাকিয়ে খন্দকার সাহেব এই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন না করলে কি হতো না!!! এটা কি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল!!! বিয়ের পর যেহেতু খন্দকার সাহেবের স্ত্রী খন্দকার সাহেবের প্রতিটা কথাই মেনে নিয়ে সংসারের উন্নতির জন্য নিজের সকল সুখ বিসর্জন করে দিয়েছেন, সেহেতু ঐ স্ত্রীকে তালাক দিয়ে, পরিবারের মধ্যে অশান্তির সৃষ্টি করে খন্দকার সাহেব কি অপরাধ করেননি??????
বিষয়: বিবিধ
২৬১৮ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
রুপকতার মোড়কে উপস্হাপিত গল্পের উদ্দিষ্ট বিষয় বুঝতে অসুবিধা হয় নি!
ভূল কে শুধরে নিয়ে সঠিকতার পথে চলাই কাম্য সবার, যা খন্দকারের স্ত্রী করে ছিল!
পক্ষান্তরে- স্বীয় একগুয়েমী আর নির্বুদ্ধিতায় বন্ধুর মুখোশে চরম শত্রু নারায়ণদের কুপরামর্শে বেকুব খন্দকার যা করল,তা কোন ভাবেই গ্রহনযোগ্য হতে পারে না!!!
আপনিই বলুন, বিচার টা কি এতোই গুরুত্বপূর্ণ ছিল???
বুঝেও আমরা সবাই চুপ!!!
আর জামায়াতের এইসব নেতারা তাদের ৭১ এ কৃত কাজের জন্য কোন কালেও ক্ষমা চায় নি খন্দকার সাহেবের স্ত্রীর মত । আর তারা দেশের জন্য খাটা তো দূরের কথা ,কারণ তারা এই দেশটাকেই তো স্বীকার করেনি ! উল্টো তারা ৭১ এ ঠিক কাজই করেছে বলে দাম্ভিকতা দেখায় ।
কিসের সাথে কিসের তুলনা
বাংলাদেশের জন্য আপনার যে কষ্ট লাগে তার ১০০ ভাগের ১ ভাগও কি ছিল উনাদের এই ৪২ বছরে লেগেছিল ?
হাজার , হাজার , লক্ষ লক্ষ মানুষকে যারা মেরেছে বা মারতে সাহায্য করেছে তাদের কি বিনা বিচারেই পার পাইয়ে দেওয়া উচিত হচ্ছিল ?
বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠন গুলোর মধ্যে আজ পর্যন্ত কেউ ছাত্র শিবিরের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি,চাঁদাবাজি,ধর্ষণ, দলীয় কোন্দল, মাদকসেবন ও মাদক ব্যবসায়ের অভিযোগ তুলতে পারিনি। তারা ছাত্র সমাজের হাতে অস্রের পরিবর্তে খাতা কলম,কোরান হাদিস ও ইসলামি সাহিত্য তুলে দিচ্ছে, সিনেমা হলে নিয়ে যাবার পরিবর্তে ছাত্র সমাজকে মসজিদে নিয়ে যাচ্ছে।
ভাই হতভাগা, এবার আপনিই বলুন, কারা দেশকে ভালবাসে??? কারা দেশের জন্য ও দেশের জনগনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে??
মন্তব্য করতে লগইন করুন