এক দৈত্যরাজ এবং আমার জীবনের প্রথম চাকুরী ও তিক্ত অভিজ্ঞতা!!! (৩য় পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ১০ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০২:৩৫:২৭ রাত



পকেটে যা ছিল সব কিছুই দৈত্যরাজ নামের ছিনতাইকারীকে নিজ হাতে তুলে দিয়ে এলোমেলো চিন্তা করতে লাগলাম!!! সবকিছুই যেন হঠা এলোমেলো হয়ে গেল, কিছুতেই যেন মনকে স্থির রাখতে পারতেছিনা! কারণ টাকা ছাড়া পুরুষ জাতি মহিলার চেয়েও খারাপ!! আমার পকেট কখনো একেবারে খালি থাকতো না, একান্ত খারাপ অবস্থাতেও সামান্য কিছু হলেও পকেটে থাকতো, এটাই আমার স্বভাব!!! একদিকে আমার পার্শ্বের সিটে দৈত্যরাজ মশাই নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে, অন্যদিকে আমার কখনো অজানা নিকট ভবিষ্যতের দৃশ্য, কখনো কলেজ ক্যম্পাসে বন্ধুদের সাথে দুষ্টমির দৃশ্য, কখনো ক্যম্পাসে প্রতিপক্ষের সাথে হা-ডু-ড়ু (ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া) খেলার দৃশ্য, কখনো পড়ন্ত বিকেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার দৃশ্য, কখনো বন্ধুদের সাথে কলেজে যাওয়ার পথে বাসের কন্ট্রাক্টর কে বোকা বানানোর দৃশ্য, কখনো মা-বাবার বকুনি খাওয়ার দৃশ্য, কখনো বাড়িতে পিচ্ছিদের সাথে দুষ্টমির দৃশ্য কখনো টিউশনিতে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ-দানের দৃশ্য, কখনো শীত সকালে খেজুর গাছ থেকে শালিক পাখির রস চুরির দৃশ্য, কখনো রান্নাঘরে মায়ের পার্শ্বে বসে ভাপা পিঠা খাওয়ার দৃশ্য, আবার কখনো মা-বাবা ও ছোট ভাই-বোনের বিদায়বেলার অশ্রুসিক্ত মুখের দৃশ্য এলোমেলো ভাবে মনের পর্দায় ভেসে উঠতে লাগলো!!!

ইতোমধ্যে সায়েদাবাদ বাস স্টপেজে বাস এসে থামলো, বাস থেকে সব জিনিষ-পত্র নিয়ে সি.এন.জিতে রাখলাম, দুপুর ২টার দিকে তেজগাঁও থানার নাবিস্কো মোড়ে অবস্থিত দৈত্যরাজ মশাইয়ের ভাড়া করা ফ্লাটে উঠলাম। পরিবারের সবাই আমাকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করলো। বিশেষ করে পঞ্চমশ্রেণীর ছাত্রটা অনেক আন্তরিকতা দেখালো, যেন আমি তার অনেক দিনের পরিচিত!!! সবার সাথে পরিচিত হবার পর আমাকে একটা রুমে নিয়ে বসানো হল। কিছুক্ষণ পর দৈত্যরাজ মশাই এসে বললেন, ওয়াশ রুম থেকে হাত মুখ ধুয়ে ডাইনিং টেবিলে এসো, নিশ্চই অনেক ক্ষুধা লেগেছে!!! মূলত আমিও এইঅপেক্ষায় ছিলাম, কারণ ইতোমধ্যে আমার পেটের অবস্থা তেরোটা বেজে গেছে, যদিও লজ্জায় দৈত্যরাজকে কিছু বলতে পারিনি!!!

দীর্ঘ ৩৬০ কি.মি বাস ভ্রমণ, ক্ষুধা ও নানাবিধ টেনশনে আমি এত বেশি ক্লান্ত ছিলাম যে, খাওয়ার পর আমি আর ১০ মিনিটের বেশি বসতেই পারলামনা, ঘুমের কাছে হার মেনে ঐ রুমেই ঘুমিয়ে পড়লাম! সন্ধার পর আমার ঘুম ভাংলো, তাডাতাডি উঠেই নামাজ পড়ে নিলাম। নামাজ শেষে দেখলাম পড়ার টেবিলে ৫ম, ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর তিন ছাত্র-ছাত্রী আমার জন্য অপেক্ষা করতেছে, ওদের কে এই অবস্থায় দেখে আমার ভালই লাগলো, কারণ দীর্ঘদিন টিউশনি করতে করতে ঐটা আমার নেশায় পরিণত হয়ে গেছে(এখনো অফিসের ড়িউটি শেষে আবুধবিতে SKBZ Bangladesh Islamia Private School(English medium) ও Islamia English School( British Curriculum) তে অধ্যায়নরত ৪টা টিউশন করি)। সবার সাথে নতুন করে পরিচিত হলাম, কার কোন বিষয়ে দূর্বলতা রয়েছে এবং কার রোল নং কত, সব জিজ্ঞেস করে পড়ানোর প্রতি মনযোগ দিলাম।

রাত ১০ টায় পড়ালেখা শেষ করে এশারের নামায পড়ে সবাই একসাথে ডাইনিং টেবিলে খেতে বসলাম। ভাত-তরকারী রান্না করা যা ছিল, সব টেবিলে নিয়ে আসা হলো! ভাতের পাতিল দেখেই আমি টেনশনে পড়ে গেলাম!!! পাতিলের সবগুলো ভাত সবাইকে বন্টন করে দেওয়া হলো, পরিমাণে আমাকে একটু বেশিই দেওয়া হলো। আন্টি (দৈত্যরাজের স্ত্রী) বললেন গ্রাম থেকে যারা আসে তারা ভাত একটু বেশি খায়, আসলেই তাই!!! আমার ছাত্র-ছাত্রীদের প্লেটে যা দেওয়া হয়েছে তারা তাও খেতে পারলোনা, অথচ আমার পেট বলতেছে, আমাকে যে পরিমান দেওয়া হয়েছে ঐ রকম আরো ২ প্লেট দিলে হয়তো তার চাহিদা মিটতো!!! বাড়িতে তিন বেলা ভাত খাওয়ার পরও সারাদিন আরো নানান কিছু খাইতাম! কিন্তু চক্ষু লজ্জায় তা তো আর মুখে প্রকাশ করা যায়না! ঐ ভাত গুলো খেয়ে মনে হয় আমার ক্ষুধা আরো বেড়ে গেল! তবুও পেটের দুঃখ মনের মধ্যেই চাপিয়ে রাখতে বাধ্য হলাম!!!!!

খাওয়া শেষে দৈত্যরাজ মশাই বললেন, চলো তোমাকে মেসে দিয়ে আসি!! কথাটা শুনেই কেমন জানি হতাশ ও অপমান বোধ করলাম! তবুও মুখে কষ্টের হাসি টেনে বললাম, চলেন! দৈত্যরাজের বাসা থেকে ২০০ মিটার দুরে একটা ব্যাচেলর মেসে আসলাম। রুমের ভিতরে ২জন লোক ছিল, তার মধ্যে একজন সিগারেট টানতেছে আর অন্যজন গলা ফাটিয়ে মোবাইলে কথা বলতেছে!!! দৈত্যরাজ ওদের কে বললেন, এর নাম মামুন, আমার বাচ্চাদের মাস্টার, তোমাদের সাথে থাকবে আর আমার বাসায় খাবে।দৈত্যরাজ চলে গেল, কিন্তু ওরা দৈত্যরাজের কথার প্রতি মনযোগী ছিল বলে মনেই হলোনা!!! রাত এগারোটার মধ্যে রুমের সব সদস্য চলে আসলো, সবাই দৈত্যরাজের হাত ধরেই গ্রাম থেকে ঢাকাতে এসেছে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যে! কেউ ২/৩ মাস ধরে বেকার, আবার কেউ বয়লার অপারেটর, কেউ হেলপারের জব পেয়েছে অনেক দিন পর!!! যে সবচেয়ে ভাল বেতন পায়, তার বেতন হচ্ছে ৪০০০ টাকা, তাও দুই বছর চাকুরী করার পর এই অবস্থায় এসেছে!ছোট একটা রুমে ৭ জন লোককে থাকতে দেখে, তাও আবার সিগারেট টানা অবস্থায়! আমার মন চাচ্ছিল ঐ অবস্থায় বাড়িতে ছলে আসতে!!! মাস্টার পরিচয় দেওয়াতে সবাই আমার সাথে ব্যবহার করলো! ২ জন কে বেকার রেখে রুমে আরো একটা লোক নিয়ে আসাতে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল আগামিকাল সন্ধায় সবাই মিলে দৈত্যরাজের সাথে একটা বুঝাপড়া করবেই...........চলবে

আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন http://www.bdmonitor.net/blog/blogdetail/detail/10481/4341216/58458#.VIdc1aSoXqA

বিষয়: বিবিধ

১৯০৯ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

292884
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৩:০০
আফরা লিখেছেন : আপনার দৈত্যরাজের কাহীনি জানতে খুবই ভাল লাগছে ।শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া ।
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৩:১৪
236524
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : দৈত্যরাজের ফাদে পড়ে আমি ৬ মাস যাবত যে কষ্ট করেছি, তা কোনদিন ভুলতে পারবো না। যদি আপনাদের ভাল লেগে থাকে তাহলে আমার কষ্ট করে লিখাটা সার্থক হবে। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৬:০২
236531
নোমান২৯ লিখেছেন : ভাইয়া রাত ২.৩৫ এ পোস্ট করছে|Happy Happy তাই অনেক আশা নিয়ে আসছিলাম ভাইয়ার সাথে ভাব জমাতে|Tongue Tongue Tongue কিন্তু দেখি দুটো নিশাচর আগেই খাতির জমায় ফেলছেWorried Worried Worried Liar Liar

১০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৫৮
236747
আফরা লিখেছেন : নোমান আপু, ভাইয়া যদি ২:৩৫ পোষ্ট করেছে আমার এখানে তখন মাত্র রাত ৯:৩৫ তাই আমাকে নিশাচর বলা বেআইনী ।বেআইনী কথা বার জন্য আপনার শাস্তি হওয়া উচিত কি না তাই বলেন ?@ নোমান ভাইয়া
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:০২
236755
আফরা লিখেছেন : নোমান আপু, ভাইয়া যদি ২:৩৫ পোষ্ট করেছে আমার এখানে তখন মাত্র রাত ৯:৩৫ তাই আমাকে নিশাচর বলা বেআইনী ।বেআইনী কথা বার জন্য আপনার শাস্তি হওয়া উচিত কি না তাই বলেন ?@ নোমান ভাইয়া
292889
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৩:১১
নাছির আলী লিখেছেন : আফরা আপুর মত আমার কাছেও দৈত্যরাজের কাহীনি অনেক ভালো লাগলো। অনেক ধন্যবাদ
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৩:১৬
236525
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, পরের পর্বগুলো আরোও আকর্ষণীয় হবে। আসা করি সাথে থাকবেন।
292900
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৫:৫৮
নোমান২৯ লিখেছেন : খারাপ লাগেনিHappy Happy|তবে ভাইয়া আপনাদের বাড়ি মিঠাছাড়ার আশেপাশে? Tongue Tongue
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৮:৩২
236544
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : হা হা হা, নোমান ভাই, আপনার কমেন্টস অনেক ভাল লাগলো, মজা পেলাম, আমি আবুধাবি টাইম ১২ টায় পোষ্ট করেছি, পোষ্ট করার ৩০ মিনিটের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেছি,এখন ফজরের নামায পডে একটু অনলাইন এ আসলাম। জি আমার বাডি মিঠাছড়া বাজার থেকে ২ কি.মি পশ্চিম দিকে, আপনার বাড়ি কোথায়?
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:২৮
236602
নোমান২৯ লিখেছেন : ফকির হাটের আরো পশ্চিমে?
292958
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:১৯
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : কঠিন বাস্তবতা ওহ.......Crying Crying
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৩২
236585
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : কমন পড়েছে মনে হয়Tongue
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৩৫
236589
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : Crying Crying Crying Crying Crying
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৬
236660
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : আপনাদের সাথে কিছুটা শেয়ার করার জন্য ঘটনা গুলু হুবহু তূলে ধরার চেস্টা করতেছি। আপনাকে ধন্যবাদ
293011
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৭
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : নোমান ভাই, আমার বাডি দূর্গাপুর বাজারের উত্তর পাশে।
293018
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:০৪
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : দূর্গাপুর বাজারের উত্তর পাশে মিয়া বাড়ি।
293030
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৪০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
293031
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৪২
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ, রিদওয়ান ভাই
293910
১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:৪০
কাহাফ লিখেছেন :

চলার পথে নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়েই মন্জিলে মকসুদে পৌছতে হয়!
ভাল লাগল উপস্হাপনা! বিষাদময় অনুভূতি আচ্ছন্ন করল যদিও!!
১০
294415
১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০২:১০
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আশা করি পরের পর্ব আরোও ভাল লাগবে। পরের পর্বটা খুব তাডাতাডি লিখে শেষ করবো।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File